প্রশ্ন: নারীদের আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
উত্তর: ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য না করে উভয়কে সমভাবে জ্ঞানার্জনের আদেশ দিয়েছে। কুরআনের নির্দেশও তাই। কুরআন সকল মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছে পড়ার জন্য (সূরা ‘আলাক/০১), বিস্তর চিন্তা-গবেষণা করতে (সূরা সোয়াদ /২৯), এবং একই সাথে ব্যাপক অনুধাবন করতে (সূরা বাকারাহ্/১৬৪)। এমনকি বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে লুক্কায়িত বিভিন্ন নিদর্শন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে (সূরা যারিয়াত/২০)। ইসলামে গরিষ্ঠ ধর্মাচার নারী-পুরুষ সবার জন্যই একই রকম। এমনকি, রাসুল সা. জ্ঞানার্জন নারী-পুরুষ সব ধরনের মুসলমানদের উপর আবশ্যক করে দিয়েছেন (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২২৪)।
কুরআন ও হাদীসে শুধু নারীশিক্ষার কথা পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়নি। শিক্ষা সম্পর্কে যে কথাই বলা হয়েছে, তা নর ও নারী উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। নর ও নারীর জন্য আলাদাভাবে কোনো আলোচনা করা হয়নি। তথাপি ইসলামে নারী শিক্ষা বললে আমাদের কাছে সাধারণত যে চিত্র ফুটে উঠে তা হলো: মক্তবের প্রাথমিক শিক্ষা, কুরআন পড়তে জানা, বেশ কিছু দুআ-দরুদ জানা থাকার পাশাপাশি নামাজে পঠিতব্য কয়েকটি সূরা মুখস্থ জানা থাকাকেই বুঝি। এককথায় ধর্মীয় শিক্ষার প্রাথমিক লেভেলকেই আমরা বুঝে থাকি। অথচ, নারীদের ইসলামি শিক্ষার জগত যেমন বিস্তৃত তেমনি যখন বলা হয়, নারীদের আধুনিক শিক্ষা, তখনও এটার পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত। নারীদের ইসলামি শিক্ষার ব্যাপকতা সম্পর্কে সোনালি যুগে উল্লেখযোগ্য প্রমানাদি মেলে, যেমন: নারী সাহাবিদের মধ্যেও হাদিসের উপর প-িত, আইনজ্ঞ, ফতোয়াবিদ, লেখক, ফকিহ, ও দাঈ ছিলেন। হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন হাদিস বিশেষজ্ঞ, উম্মে সালামা (রা.) ছিলেন মুহাক্কিক, জয়নব বিনতে আবু সালামা ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য আইনজ্ঞ। সামুরা বিনতে নুহাইক আসাদিয়া (রা.) ছিলেন একজন অন্যতম দ্বীনের দাঈ। ‘তিনি বাজারে ঘুরে ঘুরে ভালো কাজের আদেশ করতেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতেন। কোনো (অন্যায় দেখলে) সাথে সাথে দু›হাতে প্রতিহত করতেন’ (আল-ইস্তিয়াব : ২/৭৬)।
আধুনিক শিক্ষা নারীদের কেন প্রয়োজন: বর্তমান প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের এই যুগে নারীরা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। এমনকি, ইসলাম নারীদের সর্বক্ষেত্রে সমানভাবে অধিকার প্রদান করেছে কেবল পুরুষদের কর্তৃত্বকে বরণ করার মাধ্যমে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: “পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেনে” (সূরা নিসা/৩৪)। বস্তুত, এখানে যে কর্তৃত্ব প্রদানের কথা আল্লাহ বলেছেন তা পারিবারিক জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে যেহেতু পুরুষরাই নারীদের ব্যয়ভার অনেকাংশে বহন করেন। এখানে, পরিচালনার ভারটি পুরুষদের উপরে বর্তানোর মাধ্যমে নারীদের কর্তৃত্ব হরণ করা হয়নি এবং অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়নি। বরং গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে চিকিৎসা, শিক্ষাদান, প্রযুক্তিগত বিদ্যায় শালীনতা রক্ষার মাধ্যমে মুসলিম মেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে কোন বাঁধা নেই। মহান আল্লাহর কাছে জ্ঞানীদের মর্যাদা সর্বাগ্রে। যেমন তিনি বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দেবেন। আর যা কিছু তোমরা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ অবহিত”(সূরা মুযাদালা/১১)। এছাড়া অন্যত্র জ্ঞানীদের মর্যাদে কথা বলেছেন এভাবে: “আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? বুদ্ধিমান লোকেরাই তো নসীহত কবুল করে থাকে” (সূরা যুমার/০৯)। জ্ঞানার্জনের আবশ্যকতা বান্দাদের মাঝে বুঝাবার জন্য আল্লাহ জ্ঞানার্জনের জন্য দুআও শিক্ষা দিলেন এভাবে: “হে আল্লাহ্ আমাকে জ্ঞান দান করুন” (সূরা ত্বহা/১১৪)।
বস্তুত, নারীদের শিক্ষা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। কেননা, নারী কখনো মা, কখনো বোন, কখনো ছাত্রী আবার কখনো পরিবারের কর্তী হিসেবে আবির্ভূত হন। তাছাড়া মা ই তার সন্তানের প্রথম শিক্ষক। সামগ্রিকভাবে সুশিক্ষিতা মা স্বভাবতই জ্ঞানী, চরিত্রবান, ব্যক্তিত্ব সম্পন্না, নিষ্ঠাবান, নম্র ও ভদ্র। শিক্ষিত মায়ের এসব গুণ আপনাআপনিই সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত হয়।
সুতরাং, ইসলাম নারীদেরও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে সুসভ্য হতে উৎসাহিত করেন। তবে এ ক্ষেত্রে পর্দা রক্ষার মত ফরজ বিধানকে অকাট্যভাবে মেনে চলা অত্যাবশ্যকীয় একটি বিধান। একই সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রচারেও বেশ তাগাদা রয়েছে। যেমন: ইরশাদ হচ্ছে: “হে নবী পরিবার! তোমাদের গৃহে যে আল্লাহর বাণী পাঠ করা হয় এবং হিকমত পরিবেশন করা হয় তা তোমরা স্মরণ কর এবং প্রচার কর” (সূরা আহযাব/৩৪)।
সুতরাং আসুন, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করার মাধ্যমে কুরআন এবং সুন্নাহের আলোকে মুসলিম নারীদেরও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য উৎসাহিত করি।
উত্তর দিচ্ছেন: সানা উল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার, শিক্ষক ও গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঝিকরগাছায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
কেবল সেবন নয় মাদক ব্যবসায়ও জড়িত তারকারা, ডিসেম্বরের পরে দেখে নেবে কে?
গাবতলীতে আরাফাত রহমান কোকো ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি লালু
যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর
৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা
নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা
খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো
কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু
বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১
কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম দুর্ভোগে পথচারীরা
মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা
বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন
যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার
আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন