সমাজ কল্যাণে পথিকৃৎ নবীজি সা:
৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম
যিনি সারা জাহানের রব, সর্বশক্তিমান, যার দয়ায় আজ কলম ধরতে পেরেছি। যিনি আমাদের শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন, সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর। তিনি মানব জাতির শ্রেষ্ঠ নেতা হিসাবে যাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেই সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (সাঃ) এর প্রতি অশেষ ছালাম ও দরুদ। যিনি সারা জগতের রহমত স্বরূপ এসেছেন এই দুনিয়ায়। তিনি হলেন হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ)।
রাসূল (সাঃ) এর জন্মের আগে মক্কা নগরী ছিল অন্ধকারে ঢাকা। সারা আরব দেশের মানুষের মধ্যে তখন গোমরাহি বিরাজ করত। সে যুগে সভ্যতা ঈমানদারী একা নিভৃতে কেঁদে বেড়াত। চারিদিকে শিরক, অন্যায় অবিচার হত্যা যুদ্ধ বিগ্রহ ইত্যাদির সমারোহ ছিল।
এই অন্ধকারের পর্দা সরিয়ে এক মহা আলোকের আবির্ভাবের বড় প্রয়োজন হয়েছিল। তাইতো মহান রাব্বুল আলামিন তার সেরা বিচক্ষণতা দিয়ে এক মহান উদ্দেশ্যে এই পৃথিবীর বুকে তার সৃষ্ঠির শ্রেষ্ঠ মাখলুকাত শ্রেষ্ঠ মানুষ আমাদের নবী (সাঃ) কে প্রেরণ করেন। আবির্ভাব হয় এক পবিত্র সত্তার, যার পবিত্র আলোতে সারা পৃথিবী মাতোয়ারা।
রাসূল (সাঃ) তাঁর জীবন দিয়ে মানুষের কল্যাণে সমাজ সেবা করে গেছেন এটাই আজকের মূল আলোচ্য বিষয়।
সমাজ সেবা মূলক কাজ কি বা কাকে বলে সে সম্পর্কে আমি একটু আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করছি।
সমাজ সেবা হচ্ছে সমাজের মানুষের জন্য এমন কিছু কাজ করা, যাতে সমাজের মানুষ সুখে শান্তিতে সাচ্ছন্দে এবং নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে। সমাজ দেশ তথা মানুষের উন্নতি করার জন্য মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকার জন্য যে কোনো ভাবে সহযোগিতা করা এবং সমাজ থেকে ক্ষতিকর নিয়ম বা অভ্যাস দূর করে সমাজে আল্লাহর নিয়ম প্রতিষ্ঠা করাই সমাজ সেবা বা সমাজ সংস্কার। যা মানুষের উপকার বা কল্যাণ বয়ে আনে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সমাজ সেবাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম এই কাজকে তাকওয়াপূর্ণ কাজের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফেরানোর মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ রয়েছে আল্লাহ, শেষ বিচারের দিনে, ফেরেস্তাগণ, আসমানী কিতাব ও নবীদের বিশ্বাসে এবং আল্লাহ প্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, অভাবগ্রস্ত, গৃহহীন ও সাহায্য পার্থীদের সাহায্যার্থে নিজ সম্পদ বিতরণে, দাসত্ব মোচনের ব্যয়ে। (সূরা বাকারা: ১৭৭)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সমাজ কল্যাণ মূলক কাজের বিবরন দিয়ে কখনো শেষ করতে পারবো না। যার সৃষ্টিই হয়েছিল এই উদ্দেশ্যে। তিনি সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে তার নিজের সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন। তাঁর জীবনের আর্দশ আজো সমাজের কল্যাণে নিয়োজিত।
আমি প্রথমে মানুষের মনে তাওহীদ বা ঈমান প্রতিষ্ঠার কথা বলছি।
ইসলামী সংবিধানের প্রথম মৌলিক ধারা হচ্ছে ইবাদত বন্দেগী একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। অর্থাৎ আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় , সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তিনি একচ্ছত্র অবিনশ্বর । আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। মানুষ শুধু তাঁরই ইবাদত করবে। তিনি এক ও অদ্বিতীয় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর প্রেরিত রাসুল। অন্তর দিয়ে এ কথা বিশ্বাস করা সে অনুযায়ী কাজ করার নাম ঈমান। ঈমান বা বিশ্বাসের মূল্য আল্লাহ তায়ালার কাছে অত্যান্ত দামি। তাইতো মুসলমানের কাছে ঈমানের চেয়ে মহামূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। ঈমান প্রতিষ্ঠা করা সমাজের অন্যতম কল্যাণকর কাজ। ঈমানের ওপর ভিত্তি করে মানুষের ইহকাল পরকালের হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত হবে। আল্লাহ বলেন, ওহে যারা ঈমান এনেছো , তোমাদের পিতাদেরকে ও তোমাদের ভাইদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না যদি তারা ঈমানের উপর কুফুরিকে প্রাধান্য দেয়। আর তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই জালিম। (সূরা তাওবা )।
মানুষকে হিদায়াত করার জন্য ঈমানের পথে নিয়ে আসাই ছিল তাঁর জীবনের মূলকথা। কতইনা কষ্ট পেয়েছেন কতই না যাতনায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছেন মানুষকে ঈমানের পথে নিয়ে আসার চেষ্টায়।
রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ইসলাম প্রচারের দাওয়াত নিয়ে জিব্রাইল (আঃ) আসার পরই তিনি নিজের ঘরে গিয়ে খাদিজা (রাঃ) কে আল্লাহর নির্দেশের কথা খুলে বলেন। খাদিজা (রাঃ) ঘটনা শুনার পরেই কালিমা (লা ইলাহা ইলাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ) পাঠ করে ঈমান আনেন। সেদিন সেই মুহুর্ত থেকেই শুরু হয় তাঁর ইসলাম প্রচারের কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর স্থাপিত । এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লার বান্দা ও রাসুল। নামাজ আদায় করা। যাকাত আদায় করা । আর হজ্জ আদায় করা এবং রমযানের রোজা রাখা।
আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি বিশ্বাস আনা এবং ইসলামের যে পাঁচটি স্তম্ভ আছে সেগুলো পালন করাই ঈমান। যা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই নবুয়াত পাপ্তির প্রথম দিন থেকেই খুব গুরুত্ব সহকারে শুরু হয়েছিল তার ঐকান্তিক চেষ্টা। এই কাজই নবুয়াত প্রাপ্তির পরে প্রধান সমাজ কল্যাণমুলক কাজ।
রাসূল (সাঃ) কে শান্তি, মুক্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত হিসাবে আখ্যায়িত করে কুরআনে এরশাদ হয়েছে, -আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতরূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা আল আম্বিয়া)।
সমাজে তাঁর শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ ও পদ্ধতি ছিল অনন্য। যুদ্ধ -বিগ্রহ, কলহ- বিবাদ, রক্তপাত, অরাজকতা দূরীভূত করে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ও সৌহার্দ সম্প্রীতির ভিত্তিতে তিনি একটি কল্যাণমূলক আদর্শ সমাজ গঠন করতে সক্ষম হন।
এক আল্লাহর একত্ব ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ব্রতে ইসলাম ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচারক বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর চিন্তাজগতকে তদানীন্তন বিশ্ব সমাজের যে দুটো ব্যপার সর্বাপেক্ষা বেশি আলোড়িত করেছিল এবং যে দুটো ব্যপারে তাঁর দৃষ্টি সবচেয়ে বেশি নিবদ্ধ হয়েছিল, তা হলো সমাজের দরিদ্র মানুষ ও অবহেলিত নারী। বিশ্বনবী ছিলেন দরিদ্র মানুষ ও অভাগী নারী সমাজের দরদী বন্ধু এবং দুর্গত মানবতার চির মহান দূত, শান্তি ও সাম্যের মহাসেনা, সমাজ সংস্কারে সিদ্ধ সাধক, প্রেম ভালবাসায় পরম পুরুষ। তাঁর অন্তরের একান্ত কামনা ও উদ্দেশ্য ছিল সকলের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য এক আর্দশ সমাজ গঠন করে আদর্শ জীবন ধারা স্থাপন করা।
কিশোর বয়সে তিনি হিলফুল ফুযুল নামক শান্তি সংঘ গঠন করে সমাজের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আর্তমানবতার সেবা , অত্যাচারের প্রতিরোধ, অত্যাচারিতকে সহযোগিতা, শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা এবং গোত্রে গোত্রে সম্প্রীতি বজায় রাখা ছিল এই সংঘের অঙ্গিকার। মানুষের কল্যাণে তাঁর গড়া সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর প্রথম সাংগঠনিক রীতিতে প্রতিষ্ঠিত আর্দশ সমাজ সংস্কার মূলক প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে তিনি সমাজ জীবনে শান্তি শৃংখলা বিঘ্নকারী সকল কার্যক্রম প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিয়ে মক্কা থেকে যাবতীয় অন্যায় অত্যাচার ও সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদ করে সুশিল সমাজ গঠনে সচেষ্ট হন।
এক সময় তিনি হযরত আবু আইউব আনছারী (রাঃ) এর গৃহে সাত মাস অবস্থান করেন। সে বাড়ির নিকটেই একটি জায়গা ছিল। রাসূল (সাঃ) উহা ক্রয় করে ওখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। সেই মসজিদটির নামই মসজিদে নববী। মসজিদটি তৈরির কাজে তিনি নিজেই শরিক হয়েছিলেন। মসজিদ সংলগ্ন পূর্বপাশে তৈরি করা হয়েছিল একটি বৈঠকখানা। সেখানে থাকতেন ইসলামের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী একদল ঘরবাড়িহীন মুসলমান।
মদিনায় হিজরতের পরে তিনি আদর্শ ইসলামী সমজ প্রতিষ্ঠার জন্য, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নাগরিকদের মধ্যে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ মদিনা সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন। মানব ইতিহাসের প্রথম প্রশাসনিক ও লিখিত সংবিধান “মদিনা সনদ” যাতে সেখানে বসবাসরত সব ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনতা ও অধিকারের যথোপযুক্ত স্বীকৃতি ছিল। মদিনায় স্থায়ীভাবে সামাজিক শান্তি শৃংখলা রক্ষা এবং সেখানে বসবাসকারী অন্যান্য ধর্মবলম্বীদের বিশেষত ইহুদিদের সাথে তিনি এক শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। এভাবে তিনি মদিনার জীবনে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করে শান্তি প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ উদ্যোগ নেন। হিজরতের পরে মদিনায় মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। তারা তাদের সুখ দুঃখ ,অভাব অভিযোগ, বিপদাপদ সকল বিষয়েই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জানাত এবং তাঁর ওপর নির্ভর করত। আর রাসূল (সাঃ) যথাযথভাবে তাদের অভাব অভিযোগ, ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে দিতেন। কেউ কোনোভাবে বিপদে পড়লে তিনি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাকে বিপদ থেকে মুক্ত করতেন। রোগে শোকে প্রাণ দিয়ে তাদের সাহায্য করেছেন। তিনি মানুষের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করতেন । সে জ্ঞানের ভিত্তি হলো আল্লাহর পবিত্র কুরআন।কঠিন যন্ত্রনা দুঃখ কষ্ট সহ্য করে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে পাতরের আঘাত সয়েও তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন। সমাজের মানুষকে বিভ্রান্তির অন্ধকার থেকে সত্য ও ন্যায়ের আলোর পথে চলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আজীবন অসহায়, বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপিড়িত মানুষের সামাজিক শান্তি ও মুক্তির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। অভিশপ্ত দাসপ্রথা, যৌতুক প্রথাসহ সমাজের নানা ধরনের অনিয়ম এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ক্লান্তিহীন সৈনিক হয়ে লড়াই করেছেন। তিনি শুকনো রুটি খেতেন, তালি দিয়ে জামা পরতেন, ছেড়া চাটায়ের ওপর শয়ন করতেন। ভক্তদের দেওয়া অর্থ তিনি সাথে সাথে গরিবদের বিলিয়ে দিতেন। নিজের জন্য কিছুই রাখতেন না। দুনিয়ার এ দু’দিনের জীবনে তিনি গরিব থেকেই সমাজ আর সমাজের মানুষের কল্যাণ করতে পছন্দ করতেন।
কোরাইশদের হিংসার আগুনে পরিস্থিতি এমনই হয়েছিল যে বিভিন্ন সময়ে রাসুল (সাঃ) কে বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে এক একটি যুদ্ধে তার কত অবদান কত বিসর্জন রয়েছে। যুদ্ধ করেছেন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমাজ সংস্কার এবং সমাজের কল্যাণের জন্য।
ইসলামের ব্যাপক প্রচার প্রসারের পর তিনি বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানের সাথে অসংখ্য চুক্তি পত্র সাক্ষর করেন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর অনবদ্য ভূমিকার অন্যতম স্মারক হুদাইবিয়ার সন্ধি। শান্তির জন্য তিনি এই সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করেন ।
তাঁর সুনিপূণ পারর্দশিতা, অপরিসীম বুদ্ধিমত্তা এবং ইসলাম ও মুসলিম সমাজের প্রতি আন্তরিক দায়িত্বশীলতার কারণেই তিনি মক্কা জয় করেন। মক্কা বিজয়ের পরেও আরো যুদ্ধের সম্মুখীন তাঁকে হতে হয়েছে। এর মধ্যেও তাঁর কার্য সম্পাদন এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে মক্কাবাসী দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে।
একবার ছয় দিনের অবিরাম পথ চলার পর রাসূল (সাঃ) কুবাতে পৌঁছলেন। তখন ছিল রবিউল আওয়াল মাসের অষ্টম দিন। তিনি কুবা পল্লিতে চৌদ্দ দিন অবস্থান করেছিলেন। তখন তিনি স্থানীয় মুসলমানদের সহযোগিতায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। নির্মান কাজে তিনি নিজেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। এটাই ছিল ইসলাম জগতের প্রথম মসজিদ।
ইসলামের ভিত্তিগুলো মানুষকে বুঝাতে শিখাতে তিনি জীবনভর চেষ্টা করে গেছেন। ইসলামের বিধি বিধানগুলো নিজের জীবনের কাজ, চলাফেরার মধ্য দিয়ে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তাঁর জীবনই ছিল মানুষের জন্য। মানুষকে সঠিক শিক্ষা দানের জন্য তিনি ছিলেন রোল মডেল।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সবকিছু শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। তাকে পূর্ণ বিশৃংখলার মধ্যে শৃংখলা আনতে হয়েছে। দুর্বলতার মধ্যে শক্তির যোগান দিতে হয়েছে। বিভেদের মধ্যে অনৈক্যের মধ্যে ঐক্য আনতে হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তোমার ওপর এ গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে। আমি তোমার দুর্বহ বোঝা লাঘব করেছি, যা ছিল তোমার জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক। (সূরা ইনশিরাহ: ২-৩)
রাসূল (সাঃ) তাঁর নিজের জীবন দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছেন সমাজে মানুষ কীভাবে চলবে। তিনি সব গণতান্ত্রিক গুণাবলী থেকে কখনো বিচ্যুত হননি।
মনুষ্য সমাজের জন্য ইসলাম ধর্ম একটি ব্যাপক ও উদার ধর্ম। সে ধর্ম দ্বারা রাসূল (সাঃ) মক্কা ও মদীনাবাসীদের সকল ব্যবধান রহিত করেন। সকল গোষ্ঠী ও সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সকল ব্যবধান রোধ করে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেন।
শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী রাসূল (সাঃ) তাঁর অন্তর দৃষ্টিতে বুঝতে পেরেছিলেন, অভ্যন্তরীণ শান্তি সুনিশ্চিত না হলে এবং বহির আক্রমণের আশঙ্কা দূরীভূত না হলে জাতির উন্নতি হবে না। তিনি তাঁর তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন ইহুদিদের সাথে সন্ধি করার প্রয়োজন । সমাজের মানুষের শান্তির কথা ভেবেই রাসূল (সাঃ) ইহুদিদের সাথে সন্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সমাজের মানুষদের কুরআন শিক্ষা দেওয়া, দরিদ্র দুস্থকে সাহায্য করা ও মানবসেবার জন্য তিনি বহুবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। দরিদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে যেভাবে পেরেছেন সাহায্য করেছেন। ক্ষুধার্ত মানুষকে আহার দিয়েছেন। এ কাজকে তিনি ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে পালন করেছেন। তিনি বলেন-সে ব্যক্তি মুমিন নয়, যে উদর পূর্তি করে আহার করে অথচ তার প্রতিবেশী তার পাশে অভুক্ত থাকে।” (মিশকাত)।
তিনি রোগী ও দুর্বলের সেবা করেছেন। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলকে বিপদে শান্ত্বনা দিয়েছেন এবং সাহায্য করেছেন। শত্রুর বিরামহীন জঘন্যতম আক্রমণ থেকে মুসলমান সমাজকে রক্ষা করেছেন। সারা পৃথিবীর বুকে তিনি এমন এক রাজ্য স্থাপন করে গেলেন সে রাজ্যের কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন অন্তত পাঁচবার অপার করুণাময় আল্লাহর কথা স্মরণ করে তাঁর শুকর গুজারি এবং তাঁর বিজয় ঘোষণা করে।
সমাজের সকল পাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন, আমরণ একনিষ্ঠ সংগ্রাম যিনি অকুতভয়ে আজীবন নিঃশর্তভাবে পবিত্র মনে পালন করেন, তিনিই একমাত্র মুজাহিদ। এ দিক দিয়ে রাসূল (সাঃ) এর প্রথম জীবনে নবী নন, রাসূল নন, বরং সমাজকল্যাণ এবং সমাজ সংস্কারে তিনি ছিলেন মরুজগতের এক অচিন্তনীয় মুজাহিদ। জিহাদের যে পবিত্র উদ্দেশ্য তা কোনো রাজ্য বা রাজত্ব জয় নয় । বরং পাপ ও অন্যায়কে পরাস্ত করা। আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে আরবের মাটিতে আপসহীন আমরণ সংগ্রাম শুরু করেছিলেন রাসূল (সাঃ)। এ সংগ্রাম কোনো রাজ্য জয় বা কোন রাজকুমারীকে লাভের জন্য ছিল না। ছিল সমাজের কল্যাণের জন্য সমাজ সংস্কারে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অজ্ঞতার বিরুদ্ধে। জীবন সূচনার প্রতিটি পদক্ষেপ থেকে মৃত্যুর মহা মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন এ সংগ্রামে একেবারে অবিচল। তাই জীবনের প্রথম থেকে শেষ সময় পর্যন্ত আমরা রাসূল (সাঃ) কে নিখিল বিশ্বের এক নজিরবিহীন শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ রূপে দেখতে পাই। (চলবে)
লেখক-গবেষক, কলামিস্ট, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
রেমিট্যান্সে সুবাতাস: ডিসেম্বরের ২১ দিনেই এলো ২০০ কোটি ডলার
প্রশাসন ক্যাডারের ‘ইয়াং অফিসার্স’ ফোরামের সভাপতি শুভ, সাধারণ সম্পাদক জয়
ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও কেওক্রাডং বাংলাদেশ’র উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হলো ‘কোস্টাল ক্লিনআপ’
তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র জনতার বিজয়কে নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না
বিপিএল মিউজিক ফেস্ট: যান চলাচলে যে নির্দেশনা ডিএমপির
গাজীপুরের শ্রীপুরে মেঘনা গ্রুপের একটি বাটন তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
সোনারগাঁওয়ে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা নিহত
আনজার গ্রুপের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের সংবর্ধনা
মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুর্ভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন
মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা
পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা
মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন