ইসরাইলিরা মুশরিক ও কুফ্ফার দুটোই
০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
ইসরাঈল জাতি কাফের ও মুশরিক দুটোই। আল কুরআনের আলোকে নি:সন্দেহে তারা কাফের এবং সাচ্চা মুশরিকও বটে। শুধুমাত্র জ্ঞানপাপীরাই বলতে পারে যে, তারা মুশরিক নয়। সত্যিকার অর্থে মুশরিক কাকে বলে তার সংজ্ঞাই তারা জানেন না। পৃথিবীর পুরাতন জাতিগুলোর মধ্যে অত্যন্ত প্রাচীন জাতি হলো, ইসরাঈল তবে কিন্তু হঠকারী, বিশ^াসঘাতকতা ও অহংকারী জাতি হিসাবেও তারা বিশ^ ইতিহাসের পাতাকে কলংকিত করেছে। অভিশপ্ত এ জাতির ওপর আল্লাহর ক্রোধ বার বার আপতিত হয়েছে। হযরত ইবরাহিম আ: বিবি সারাকে নিয়ে বাবেলে বসবাস করতেন। সেখানে হযরত ইসহাক আ: জন্মগ্রহণ করেন। হযরত ইসহাক আ: এর পুত্র ছিলেন হযরত ইয়াকুব আ: যার অপর নাম ছিল ইসরাইল। বংশ পরস্পরায় এই বনী ইসরাঈল জাতিতে আল্লাহ তা’আলা অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। উল্লেখিত নবী-রাসুলদের মধ্যে হযরত মুসা: ছিলেন অন্যতম। অভিশপ্ত এ জাতি তাদের অসংখ্য নবীকে হত্যা করেছে। হযরত মুসা আ: এর সাথে তাদের বেয়াদবি, অবাধ্যতা ও হঠকারিতা ছিল সবচেয়ে বেশী। নবী মুহাম্মদ সা: এর সাথেও তাদের বিশ^াসঘাতকতার তালিকা দীর্ঘতম।
আল্লাহর সত্তা, তাঁর গুণাবলী, অধিকার ও ক্ষমতা-ইখতিয়ারে কোন ভাবে অন্য কাউকে ভাগ বসানোর নাম শিরক। শিরক দুই প্রকার। যথা: শিরকে জলী ও শিরকে খফী। উভয় শিরক অত্যন্ত বিপদজনক। প্রকাশ্যে আল্লাহর সাথে শিরক করা আর মনে মনে বিশ^াসে শিরক করা। অন্য কাউকে ভাগ বসানো মানে নিজেদেরকে আল্লাহর মোকাবেলায় অপ্রতিদ্বন্ধী মনে করা, অন্য মানুষ, মানবগোষ্ঠী, কোন আত্মা, জিন, ফেরেশতা অথবা কোন বস্তুগত, কাল্পনিক বা আনুমানিক সত্তাও হতে পারে। শিরকে জলী থেকে শিরকে খফী আরো মারাত্মক। কারণ এটি তাওহীদবাদীদের মধ্যে থেকে শিরককে ছড়িয়ে দেয়। কারণ প্রকাশ শিরককে মানুষ চিনতে পারে কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে অবস্থান করে শিরকের চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে দেয়া সহজ হয় শিরকে খফী ওয়ালাদের মাধ্যমে।
ইসরাঈল জাতি মুশরিক ছিল তার বড় প্রমাণ কুরআন দিচ্ছে। যথা: এক, আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ইহুদীরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র এবং খৃষ্টানরা বলে, মসীহ আল্লাহর পুত্র। এগুলো একেবারেই আজগুবী ও উদ্ভট কথাবার্তা। তাদের পূর্বে যারা কুফরিতে লিপ্ত হয়েছিল তাদের দেখাদেখি তারা এগুলো নিজেদের মুখে উচ্চারণ করে থাকে। আল্লাহর অভিশাপ পড়–ক তাদের ওপর, তারা কোথা থেকে ধোকা খাচ্ছে!”(সুরা তাওবা:৩০) অথচ তাওহীদের মর্মবানী হচ্ছে তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নাই, তাঁর কোন সন্তান নেই তিনি কারো সন্তান নন। সুরা ইখলাসে বলা হয়েছে,“বলো, তিনি আল্লাহ,একক। তিনি অমুখাপেক্ষী। তাঁর কোন সন্তান নেই তিনি কারো সন্তান নন। তার সমতুল্য কেউ নেই।” মুশরিকরা প্রতি যুগে খোদায়ীর এ ধারণা পোষণ করে এসেছে যে, মানুষের মতো খোদাদেরও একটি জাতি বা শ্রেনী আছে। তার সদস্য সংখ্যাও অনেক। তাদের মধ্যে বিয়ে-শাদী এবং বংশ বিস্তারের কাজও চলে। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকেও এ জাহেলী ধারণা থেকে মুক্ত রাখেনি। তাঁর জন্য সন্তান-সন্তুতিও ঠিক করে নিয়েছে।
দুই, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “ইহুদী ও খৃষ্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়পাত্র। তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তাহলে তোমাদের গোনাহের জন্য তিনি তোমাদের শাস্তি দেন কেন?”(সুরা মায়েদা:১৮) এই চিন্তা-চেতনা কি শিরকের অন্তর্ভুক্ত নয়? তাদের এ সকল অপরিণামদর্শী মারাত্মক গোনাহের জন্য মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময় তাদের ওপর আযাব ও গযব নাযিল করেছেন। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলাই প্রশ্নাকারে বলছেন, “তারা যদি আল্লাহর সন্তানই হয়ে থাকে তাহলে তিনি তাদের ওপর বিভিন্ন সময়ে আযাব-গযব নাযিল করেছেন কেন? আল্লাহ তা’আলা বলেন: “স্মরণ করো, যখন তোমরা মুসাকে বলেছিলে, “আমরা কখনো তোমার কথায় বিশ্বাস করবো না, যতক্ষণ না আমরা নিজ চক্ষে আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখবো।” সে সময় তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের ওপর একটি ভয়াবহ বজ্রপাত হলো, তোমরা নি¯প্রান হয়ে পড়ে গেলে। কিন্তু আবার আমি তোমাদের বাচিঁয়ে জীবিত করলাম, হয়তো এ অনুগ্রহের পর তোমরা কৃতজ্ঞ হবে।” (সুরা বাকারা ঃ ৫৫-৫৬)
তিন, আল্লাহ তা’আলা বলেন,“স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আমি মুসাকে চল্লিশ দিন-রাত্রির জন্য ডেকে নিয়েছিলাম। তখন তার অনুপস্থিতিতে তোমরা বাছুরকে নিজেদের উপাস্যে পরিণত করেছিলে। সে সময় তোমরা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করেছিলে।”(সুরা বাকারা: ৫১) মুসা আ: কর্তৃক বনী ইসরাঈলরা ফিরাউনের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মিসর ছেড়ে যখন সাইনা বা সিনাই উপদ্বীপে পৌঁছে গেল তখন মহান আল্লাহ হযরত মুসা আ: কে চল্লিশ দিন-রাত্রির জন্য তুর পাহাড়ে ডেকে নিলেন। ফেরাউনের দাসত্ব মুক্ত হয়ে যে জাতিটি এখন মুক্ত পরিবেশে স্বাধীন জীবন যাপন করছে তার জন্য শরী’আতের আইন এবং জীবন যাপনের বিধান দান করার জন্যই মূলত: মুসা আ: কে আল্লাহ ডেকে নেন। আর ক’দিনে তারা শিরকে লিপ্ত হলো। গাভীর বাছুর পুজায় লিপ্ত হলো।
চার, বনী ইসরাঈলীরা আল্লাহকে দোষারূপ ও গালমন্দ করতো। তারা আল্লাহকে গরীব বলে দোষারূপ করেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন যারা বলে, আল্লাহ গরীব এবং আমরা ধনী। এদের কথাও আমি লিখে নিবো এবং এর আগে যে আম্বিয়াদেরকে এরা অন্যায়ভাবে হত্যা করে এসেছে তাও এদের আমলনামায় বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি তাদেরকে বলবো, এই নাও, এবার জাহান্নামের আযাবের মজা ভোগ করো।”(সুরা আলে ইমরান: ১৮১) আল কুরআনে যখন আল্লাহ তা’আলার বক্তব্য উচ্চারিত হলো: ( কে আল্লাহকে ভালো ঋণ দেবে।) তখন ইহুদীরা বিদ্রুপ করে বলতে লাগলো: হ্যাঁ, আল্লাহ গরীব হয়ে গেছেন, এখন তিনি বান্দার কাছে ঋণ চাচ্ছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত বাঁধা, আসলে তো বাঁধা ওদেরই হাত এবং তারা যে বাজে কথা বলছে সে জন্য তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে। আল্লাহর হাত তো দরাজ, যেভাবে চান তিনি খরচ কওে যান।”(সুরা মায়েদা:৬৪) আরবী প্রবাদ অনুযায়ী কারোর হাত বাঁধা থাকার অর্থ কৃপণ। দান-খয়রাত করার ব্যাপারে তার নিস্ক্রিয়। কাজেই ইহুদীদের একথার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ কৃপণ।
পাঁচ, আল্লাহর অভিশাপ: আল্লাহ তা’আলা বলেন,“বনী ইসরাঈল জাতির মধ্য থেকে যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে তাদের ওপর দাউদ ও মারয়ামপুত্র ঈসার মুখ দিয়ে অভিসম্পাত করা হয়েছে। কারণ তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং বাড়াবাড়ি করতে শুরু করেছিল। তারা পরস্পরকে খারাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখা পরিহার করেছিল, তাদের গৃহীত সেই কর্মপদ্ধতি বড়ই জঘন্য ছিল।”(সুরা মায়েদা:৭৮-৭৯) এই ঈসরাঈল জাতি শুধুমাত্র মুসা আ:, দাউদ আ: ও ঈসা আ: এর সাথে বেয়াদবী ও হঠকারীতা দেখায়নি বরং ইয়াকুব আ: থেকে নিয়ে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত যত নবী ও রাসুল এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সাথে বেয়াদবী, বিশ^াসঘাতকতা করেছে এবং প্রত্যেককে তারা বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়েছে। আল কুরআনের উল্লেখিত আয়াতে শুধুমাত্র দাউদ আ: ও ঈসা আ: কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা উভয়ে এদেরকে অভিসম্পাত দিয়েছেন। তারা আল্লাহকে দোষারোপ করেছিল। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “এদের যেখানেই পাওয়া গেছে সেখানেই এদের ওপর লাঞ্জনার মার পড়েছে। তবে কোথাও আল্লাহর দায়িত্বে বা মানুষের দায়িত্বে কিছু আশ্রয় মিলে গেলে তা অবশ্যি ভিন্ন কথা, আল্লাহর গযব এদেরকে ঘিরে ফেলেছে। এদের ওপর মুখাপেক্ষীতা ও পরাজয় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এসব কিছুর কারণ হচ্ছে এই যে, এরা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করতে থেকেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। এসব হচ্ছে এদের নাফরমানী ও বাড়াবাড়ির পরিণাম।”(সুরা আলে ইমরান:১১২)
ছয়, নবীদের হত্যা ও সামাজিক বিশৃংখলা: তারা অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। এসব হচ্ছে এদের নাফরমানী ও বাড়াবাড়ির পরিণাম।”(সুরা আলে ইমরান:১১২) তারা পৃথিবীর অইসরাঈলীদের থেকে নিজেদের শ্রেষ্টজ্ঞান করে। যেখানেই তারা অবস্থান করেছে সেখানেই সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ তা’আরা বলেন,“ তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ বিপর্যয়সৃষ্টিকারীদের কখনো পছন্দ করেন না। (সুরা মায়েদা:৬৪)
আরো অসংখ্য আয়াত থেকে তাদের মুশরিক ও কাফের হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং কেহ যদি কুরআন দেখতে ও বুঝতে চোখ ও কলব বন্ধ করে রাখে তবে তার কাছে দুনিয়ার সকল কিছুই সমান সমান। আল্লাহ এদের চক্ষু ও অন্তর খুলে দিন।
লেখক: ইসলমী চিন্তাবিদ, কলামিষ্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আনজার গ্রুপের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের সংবর্ধনা
মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন
মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা
পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা
মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল
মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার
মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা
সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১
আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের
ঢাকা ফাইট নাইট ৪.০-এ জয়ী মোহাম্মদ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ ফাহাদ
শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন
টাঙ্গাইলে কাকুয়ায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ
নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন
রাজশাহীর আদালতে আ:লীগের সাবেক এমপি আসাদের রিমান্ড মঞ্জুর
বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জবর দখল করে ছাদ ঢালাই