বিশ্ব নবী (দ:) এর প্রেম : মাতৃভুমির ভালোবাসা

Daily Inqilab সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আসাদ

১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম

মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি মাতৃভুমি। কর্মময় জীবন, দেশে ও বিদেশে অবস্থান করি।জন্মভুমি ও দেশের মায়ায় হৃদয় ভরপুর।অনুভব করি,আবেগ,অনুভুতি দিয়ে।কোন প্রকার অবহেলা হৃদয় মাঝে বাসা বাধতে পারে না। যেন বিনা সুতার বাধন।

এখন প্রশ্ন,স্বদেশ প্রেম কাকে বলে? জন্মভুমির প্রতি গভীর ভালোবাসা,আবেক,অনুভুতি ও মমতাবোধকে স্বদেশ প্রেম বলে। ইসলাম ধর্মে স্বাধীন-সাবভৌম রক্ষার নিমিত্তে স্বদেশ প্রেম আবশ্যক। এরশাদ হচ্ছে-‘যেখানে তাদের পাবে হত্যা করবে এবং যে স্থান থেকে তারা তোমাদের বের করে দিয়েছে তাদেরও সে স্থান থেকে বের করে দেবে’(বাকারা-১৯১)। বিশ্ব নবী (দ) এর জন্ম ভুমির প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল। হিজরতের সময় বার বার জন্ম ভুমির দিকে ফিরে তাকাছিলেন। প্রত্যেক নবী ও রাসুল (দ) কে দেশ থেকে বহিস্কার করা ও হুমকি দেয়া হয়েছে। নবী-রাসুলগণের হৃদয় ছিল স্বদেশ প্রেমের ভান্ডার। তারা কখনো স্বদেশের প্রতি অবহেলা করেন নি। এরশাদ হচ্ছে-‘তাদের সম্প্রদায়ের দাম্ভিক নেতারা বলল,হে শোয়াইব! আমরা তোমাকে এবং তোমার সঙ্গে যারা ইমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বহিস্কার করবই অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে। সে বলল,যদিও আমরা তা ঘৃণা করি তবুও’ (আরাফ-৮৮)।

ইসলামে স্বদেশ প্রেমে মাতৃভুমি কথাটি খুবেই গুরুত্ব পুর্ণ। এ ব্যাপারে বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘প্রত্যেক মানুষের উচিৎ দেশকে ভালোবাসা।

যে লোক দেশকে ভালোবাসে না,সে প্রকৃত ইমানদার নয়’। বিশ^ নবী (দ) এর স্বভাব,চরিত্র ছিল স্বদেশ প্রেমের উজ্জল নক্ষত্র। তিনি স্বদেশ প্রেম কে সবার উর্ধেŸ ও প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসতেন। জন্ম ভুমি মক্কা থেকে মদিনায় আল্লাহর নির্দেশে হিজরত করেন। তিনি মদিনা যাবার পথে বার বার পিছনে ফিরে তাকান। কারত কন্ঠে উচ্চারন করেন,‘হে আমার স্বদেশ! তুমি কতই না সুন্দর! আমি তোমাকে কতই না ভালোবাসি।
আমার আপন গোত্রের লোকেরা যদি ষড়যন্ত্র না করত,আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না’।মদিনায় হিজরতের পর বিশিষ্ট সাহাবী আবু বক্কর ছিদ্দিক ও বিলাল (রা) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তারা মক্কার স্মৃতি স্মরনে কবিতা আবৃতি করেন। বিশ^ নবী (দ)আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন,‘হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি-তেমনি তার চেয়ে বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন’(বুখারী)।

তিনি (দ) বিশে^র ইতিহাসে দেশ প্রেমিক হিসাবে মহান উদারতার নজির স্থাপন করেন।একজন দেশ প্রেমিক মানুষ কর্তব্য পরায়ন, দায়ীত্ব সচেতন, স্বদেশ প্রেমে উৎসাহী।প্রেমের অভাবে মানুষ্যত্বের মৃত্যু ঘটে।যারা দেশকে ভালোবাসে না, তারা অকৃতজ্ঞ,রাষ্ট্রদ্রোহী,জঘন্য ও প্রকৃত ইমানদার নয়। একটি দেশের চারি দিকে রাষ্ট্রীয় সীমা রেখা থাকে। সীমান্ত রক্ষায় রয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। সীমানা রক্ষী বাহিনী,অতন্দ্র প্রহরী।

বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘একদিন ও এক রাতের সীমান্ত পাহারা ক্রমাগত এক মাসের সিয়াম সাধনা ও সারা রাত নফল ইবাদত কাটানো অপেক্ষা উত্তম’(মুসলিম)। দেশ প্রেম জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। বিশ^ নবী বলেন,‘দুটো চোখ জাহান্নামের আগুন র্স্পশ করবে না। একটি চোখ আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে আর একটি চোখ যা সীমান্ত পাহারায় বিনিদ্র রজনী যাপন করে’(তিরমিযি)।

‘যে ব্যক্তি স্বদেশ প্রেম রক্ষার বিনিদ্র রজনী যাপন করে, তাদের জন্য জান্নাত’।হযরত আনাস (রা) বলেন,আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসাবে রাসুল (দ) এর সঙ্গে গেলাম। অভিযান শেষে রাসুল (দ) যখন ফিরে এলেন,উহুদ পাহাড় তার দুষ্টি গোচর হলো। তিনি বলেন,এই পাহাড় আমাদের ভালোবাসে,আমরাও পাহাড়কে ভালোবাসি’(বুখারী)।
হিজরত করে মদিনায় এসে রাসুল (দ) প্রায়ই মক্কায় ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। এরশাদ হচ্ছে-‘যিনি তোমার জন্য কোরআনকে জীবন বিধান বানিয়েছেন, তিনি তোমাকে অবশ্যই তোমার জন্ম ভুমিতে ফিরিয়ে আনবেন’(কাসাস-৮৫)

স্বদেশ প্রেম বা ভালোবাস আল্লাহ প্রদত্ত একটি নিয়ামত। যা মানুষকে বেচে থাকার সাহস ও প্রাণ বির্সজন দিতে সাহসী করে তুলে। স্বদেশ প্রেম ছাড়া স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব,দেশের সাফল্য ও উন্নয়নের চাকা সচল থাকতে পারে না। এরশাদ হচ্ছে,‘আমি আমার রাসুলগণকে সুস্পষ্ট নির্দশনসহ প্রেরন করেছি এবং তাদের সঙ্গে নাজিল করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি। যাতে মানুষ ন্যায় বিচার প্রতিষ্টা করতে পারে।’(হাদিদ-২৫)।

সুতুরাং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ন্যায় প্রতিষ্টা,পারস্পারিক সহযোগিতা,ভ্রাতৃত্ব পুর্ণ সর্ম্পক স্থাপন এবং ইসলামী আইন ও দন্ডের বিধান কার্যকর করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা ও নিজস্ব সংস্কৃতিবোধ রয়েছে। সে হিসাবে প্রত্যেক মুসলমানের স্বাধীনতা.সামরিক,সংস্কৃতিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক আগ্রাসন ও আধিপত্যে বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার অধিকার রয়েছে। আমাদের দেশে ১৯৭১ ইং সালে ২৫ শে মার্চ পাক বাহিনী হঠাৎ করে বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পরে। তখন মুক্তি বাহিনী ধমর্, বর্ণ ও দল-মত নির্বিশেষে ঐক্য ও আতœ ত্যাগের বিনিময়ে ২৬ শে মার্চ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে অগনিত মানুষের জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে দেশের স্বাধীন-সাববৌমত্ব রক্ষা করে। সে হিসাবে মুক্তিকামী জনতার স্বদেশ প্রেম ও দেশাতœবোধের ভুমিকা উল্লেখ্য যোগ্য।

পরিশেষে বলতে চাই,আমাদের সবুজ মাঠ রক্তাক্ত। রক্তে মাখা নদীর ¯্রােত। বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আজ এদেশ বিশ^ মাঝে অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে এ দেশকে স্বাধীন-সাবভৌম দেশ হিসাবে উপহার দিয়েছে,তাদের কে মহান আল্লাহ শহীদ হিসাবে কবুল করুক। তাদের প্রতি জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা,গভীর ভালোবাসা। আমরা প্রতি বছর ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস হিসাবে দিনটি পালন করি।
১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। মহান আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বিজয় দিবসকে যথাযথ ভাবে পালন করার শক্তি ,সার্মথক দান করুক। প্রত্যেক নাগরিকের হৃদয় মাঝে গভীর ভালোবাসা জাগ্রত হোক। এই কামনা করছি।

লেখক-গ্রন্থকার,সহকারী অধ্যাপক, পঞ্চগড় সুরুন আলা নুর কামিল মাদ্রাসা


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়দিনের ধর্মীয় ইতিহাস ও তাৎপর্য
ইসলামি অর্থনীতির স্বরূপইসলামি অর্থনীতির স্বরূপ
হাজারো পীর-আউলিয়ার শিরোভূষণ সৈয়দ সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসি (র.)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ঘুষ : দেয়া-নেয়া দুটিই অপরাধ
আরও

আরও পড়ুন

পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা

পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা

ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা

ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা

মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই

মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল

পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল

মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার

মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার

মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা

মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা

সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১

সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১

আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের

আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের

ঢাকা ফাইট নাইট ৪.০-এ জয়ী মোহাম্মদ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ ফাহাদ

ঢাকা ফাইট নাইট ৪.০-এ জয়ী মোহাম্মদ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ ফাহাদ

শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া

শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া

মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন

মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন

টাঙ্গাইলে কাকুয়ায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ

টাঙ্গাইলে কাকুয়ায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ

নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন

নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহীর আদালতে আ:লীগের সাবেক এমপি আসাদের রিমান্ড মঞ্জুর

রাজশাহীর আদালতে আ:লীগের সাবেক এমপি আসাদের রিমান্ড মঞ্জুর

বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জবর দখল করে ছাদ ঢালাই

বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জবর দখল করে ছাদ ঢালাই

লাকসামে সরকারি খাল পাড়ের মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়

লাকসামে সরকারি খাল পাড়ের মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়

কালিহাতীতে মারামারির সন্ধিগ্ধ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

কালিহাতীতে মারামারির সন্ধিগ্ধ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড দলে নেই স্টোকস, ফিরলেন রুট

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড দলে নেই স্টোকস, ফিরলেন রুট