বিশ্বাসের বচন
১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম
বিশ্বাস এমন একটি বিষয়, যা ছাড়া কোন মানুষ চলতে পারে না। যারা নাস্তিক বলে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করে তারাও কোন না কোন কিছুতে বিশ্বাস করেই চলতে হয়। নিত্য দিন চলার ক্ষেত্রে অনেক কিছুকেই তারা বিশ্বাস করে। বিশ্বাস এবং জীবন এক সাথে গাঁথা। ব্যক্তি জীবন পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তাকে অনেক কিছু বিশ্বাসের উপর ভর করে চলতে হয়। এই বিশ্বাস ছাড়া কোন ভাবেই চলতে পারে কি? এই বিশ্বাস ছাড়া জীবনের গতি থেমে যায়। থেমে যেতে বাধ্য।
এই বিশ্বাস শব্দটাই তাদের গলার কাঁটা। এই কাঁটাকে তারা গিলতে পারে না, ফেলে দিতেও পারে না। তাই সব সময় যেন মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। এই ছটফটানী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে। আবার তারা এটাও বুঝতে পারে না যে, তাদের অবহেলা, হঠকারিতা, একঘুয়েমীর কারনে যে তাদের গলায় অবিশ্বাস তথা নাস্তিকতার কাঁটা আটকিয়ে আছে। তারপরতো আছে নরকের কঠিন যন্ত্রণা। মানে তাদের যন্ত্রণার আর শেষ নেই। তবে তারা মনে কিছু কিছু বিষয় বিশ্বাস করে, মুখে স্বীকার করে না, লেখনিতে স্বীকার করে না, সব সময় তাদের কলম বিশ্বাসের বিপক্ষেই চলতে থাকে। সব সময় বিশ্বাসকে অস্বীকার করেই চলতে থাকে। এমন ব্যক্তিদের আমরা নাস্তিক বলে থাকি। নাস্তিক্যবাদ নিয়ে তারা বড় হতে চায়। নাম যষ কুড়াতে চায়। বিশেষত ইসলাম বিদ্বেষী দেশী বিদেশী প্রভুদের আশীষ নিতে চায়। অথচ তারাও কোন না কোন কিছুতে বিশ্বাস করেই চলতে হয়। তাদের জীবন, তাদের পিতা মাতার পরিচয়, তাদের সন্তান স্ত্রীর ভালবাসা এগুলোতে বিশ্বাস ছাড়া তারা কি চলতে পারে? তাদের প্রশ্ন করলে জবাবে বলে না দেখে বিশ্বাস করা যায় না। অথচ কোন কিছু দেখা হয়ে গেলে তাকে তো আর বিশ্বাস বলে না, তখন বাস্তব হয়ে যায়।
অপর দিকে একটি দল আছে তারা বিশ্বাস অবিশ্বাস, আস্তিক নাস্তিক দুই নৌকায়ই পা রেখে চলে। যখন যার দিকে সুবিধা দেখে ঐ গান তারা গায়। আবার কেউ সার্বজনীন হতে চায়। সার্বজনীন হতে হলে সব কুল রাখতে হয়। কখনো পাকা ইমানদার আল্লাহ ওয়ালার ভান ধরতে হয়। তাদের মত ভাব গম্ভীর কথা বলতে হয়। তাদের মন যোগিয়ে লেখা লেখতে হয়। তাদের জলসায় তাদের লেবাস সুরতে বসে তাদের গুন গান গাইতে হয়। আবার কখনো বাজনা বাদক, ফকির মাজার, মন্দির প্যাগোডা এখানের পক্ষেও লেখনী চালাতে হয়। বিশ্বাসীদের সাথে তারা আগ কাতারে। আবার অবিশ্বাসীদের সাথে তারা আগ কাতারে। সবার পক্ষে আবার সকলের বিপক্ষে অবস্থান, বিশ্বাস নিয়ে তাকে সার্বজনীন সাজতে হয়। তবে সার্বজনীনতা আর মুনাফেকীর মধ্যে পার্থক্য আছে কি না আমার মোটা মাথায় এই বিষয়টি ঢুকানো অনেক কঠিন বৈ কি। এই সার্বজনীনতার লেবাস আজ বেশ পুড়ো বেশ গাঢ় বেশ মজবুত দেখা যায়। এই সার্বজনিনতার অপর নাম না কি আধুনিকতার আধুনিকতা মানে উশৃংখলতা, বেহায়পনা, পাগলামী নয় আধুনিকতা মানে আত্মসচেনতা, আত্মউপলব্ধি, অতিতের সাথে বর্তমানের সংযোগ সাধন করে ভবিষ্যতের পথ আরো সুন্দর সাবলীল মসৃণ করা। মানুষ অতিত থেকে ক্রমে ক্রমে করে সামনের দিকে এগিয়েছে। এই এগিয়ে যাওয়া অতিতকে অবহেলা করে নয়। বরং অতিতের দান, অতিতের কাজকে সম্মান করে।
আমি বিশ্বাসী। বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছি। বিশ্বাস নিয়েই চলতে চাই। বিশ্বাস নিয়েই মরতে চাই। আমার সকল চাওয়া যখন বিশ্বাস বা ইমানের উপরে তখন আমার সব কিছু হবে বিশ্বাসের সাথে সুসম্পর্কিত বিষয়। আমার ইমান যাকে সাপোর্ট করে না, আমার নাম যষের জন্য কি করে তাতে কলম চালাতে পারি। কি করে আমি অবিশ্বাসী, বিশ্বাস বিনাশী কাজে হাত দিতে পারি। একজন বেইমান, একজন মুশরেক, একজন মুনাফেক বা গাদ্দারের সাথে কি করে আমার গভীর সম্পর্ক, মায়ার সম্পর্ক, বন্ধুত্তের সম্পর্ক হতে পারে। মানুষ হিসেবে এসবের সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে কিন্তু বন্ধুত্বের সম্পর্ক নয়। আমি তাদের কল্যাণ কামনা করব, হেদায়েত কামনা করব। তাদের বিপদে সাহায্য করব। বিপদে তাদের পাশে থাকব। কিন্তু তাদের কাজকে, তাদের ধর্মীয় কাজকে সমর্থন করে নয়। তাদের ভাল কাজ আমি সমর্থন করব, আমার বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক কাজ এড়িয়ে যাব। কারন আমি চাই আমার লিখনির মূল্য মহান রবের কাছে পেতে, পরপারে পেতে। নাম যষ খ্যাতি এগুলোর কি ই বা প্রয়োজন। আমি যখন পরপারে এর প্রতিদান চাই, তাহলে আমাকে খুব হিসাবের মধ্যেই চলতে হবে, বসতে হবে। আমি মানুষ মানবতার কল্যাণ করে যাব। কারন ইসলাম মানুষ মানবতার ধর্ম। সে ধর্মের মানুষ হোক না কেন, মানুষ হিসাবে আমি সম্মান করে যাব। উপকার করে যাব। এটাই আমার লক্ষ্য। আমার সফলতা।
কবি সাহিত্যিক এমন এক কাজ, মহান রব কবিদের শানে কোরআনুল কারিমের ২৬ তম সুরা “সুরা শুয়ারা” নাযিল করে দিয়েছেন। এই সুরাতে তিনি বিশ্বাসী অবিশ্বাসী কবিদের চরিত্র এঁকে দিয়েছেন। এই সুরার শেষ দিকে ১২৪-১২৭ আয়াতে তিনি এই বিষয় উল্লেখ করেছেন। যারা পথভ্রষ্ট তারা কবিদের অনুসরন করে। আর কবিদের চরিত্র হল তারা উদভ্রান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়। (অর্থাৎ তারা কবিতা লেখার তাদিগে তাদের ভাব জাগার জন্য ছুটে বেড়ায়। কল্পনার রাজ্যে তারা হাবুডুবু খায়। মনে চিন্তায় যা আসে কবিতার ছন্দে তা লিখে নেয়।) তারা যা বলে তা তারা নিজেরাও মানে না, করে না। কত ভয়াবহ কথা, এই কথাগুলে অবিশ্বাসী বা মুনাফেক কবিদের শানে বলা হয়েছে। অল্প কথায় মহান রব তাদের চরিত্র চিত্রায়িত করেছেন। এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর বিশ্বাসী ইমানদার কবিদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবি হাসসান ইবনে সাবিত, আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, কাব ইবনে মালেক রাঃ তারা ছুটে যান রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পানে । তারা পেরেশান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল আমাদের কী হবে? সাথে সাথে মহান রব এর পরের আয়াত নাযিল করে দিলেন। তারা এর আওতাভুক্ত নয়, যারা ইমানদার নেক কাজ করে, আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করে, নির্যাতিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে (অর্থাৎ ইসলাম, আল্লাহ, নবীর শানে আঘাত করলে কবিতা দিয়ে তারা পাল্টা আঘাত করে শত্রুদের দিল এফোড় ওফোড় করে দেয়।) অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে কোথায় তাদের গন্তব্যস্থল।
উক্ত আয়াতগুলো একটু ভালভাবে চিন্তা করলে আমার গন্তব্য আমি জানতে পারি। ইমানদার বেইমান মুনাফেক প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবস্থা জানা হয়ে যায়। ইমানদারদের জন্য আরো হুশিয়ারী শোনা যায় ওমর রাঃ এর ঘটনায়। ওমর রাঃ এর খেলাফতকাল। নুমান ইবনে আদি ইবনে ফুজালাকে ইরাকের মাইছান এলাকার গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি একজন কবি ছিলেন। কবিদের হেয়ালী পনায় তিনি মদ্যপান, নাচ গানের সৌন্দর্য বর্ণনা করে একটি কবিতা লিখেন। ঘটনাক্রমে তার সেই কবিতা ওমর রাঃ এর কাছে পৌছে যায়। সাথে সাথে ওমর রাঃ তাকে গভর্ণর পদ থেকে বরখাস্ত করেন। তিনি সুরা হামিমের প্রথম তিন আয়াত উল্লোখ করে পত্র পাঠান তোমার কবিতা আমার জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক হয়েছে। তাই তোমাকে আমি বরখাস্ত করলাম। পরে তিনি ওমর রাঃ দরবারে হাজির হয়ে বললেন, হে আমিরুল মোমিনিন এটা ছিল আমার কবিতা, বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই। আমি জীবনেও মদ পান করিনি। নাচ গানের প্রতিও আকৃষ্ট হইনি। একমাত্র কাব্য চর্চার খাতিরেই এর অবতারনা। কিন্তু ওমর রাঃ তাকে আর স্বপদে বহাল করেননি।
এখন আমাকেই বেছে নিতে হবে, আমি কোন পথে যাব। আমার লেখা আমার কথা দ্বীনের বিপক্ষে যায় কি না। আমার অবস্থান, আমার অনুষ্ঠানে উপস্থিতি দ্বীনের বিপক্ষে যায় কি না। যদি যায় তখন আমার অবস্থান উপরোক্ত আলোচনায় পরিস্কার যে, আমি কোন পথের পথিক। আমার বিশ্বাস আমাকে বলে দিবে আমি কোন দিকে যাব। আর যদি সব দিকে চলতে চাই। তাহলে এটা পরিস্কার হয়ে যাবে আসলে আমি কে, আমার বিশ্বাস কি আসল বিশ্বাস, না কি বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা?
লেখক: গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন
মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা
পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা
মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল
মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার
মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা
সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১
আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের
ঢাকা ফাইট নাইট ৪.০-এ জয়ী মোহাম্মদ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ ফাহাদ
শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন
টাঙ্গাইলে কাকুয়ায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ
নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন
রাজশাহীর আদালতে আ:লীগের সাবেক এমপি আসাদের রিমান্ড মঞ্জুর
বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জবর দখল করে ছাদ ঢালাই
লাকসামে সরকারি খাল পাড়ের মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়