কেয়ামত কীভাবে সংঘটিত হবে?
১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম
যখন জান্নাতি ব্যক্তি জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তখন বলবে, আমাদের পালনকর্তার সামনে আমাদের জন্য কে সুপারিশ করবে যেন আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি? এরপর লোকেরা পরস্পরে বলবে, এই সুপারিশের যোগ্য তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামের চেয়ে বেশি আর কে হতে পারে? তাকে আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছেন। তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন ও নিজের ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাকে সেজদা করিয়েছেন। এই ভাবনার পর লোকেরা হযরত আদম আলাইহিস সালামের কাছে গিয়ে সুপারিশ করার জন্য আবেদন জানাবে। হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর নিজের স্খলনের কথা স্মরণ হবে। এজন্য তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা সুপারিশ করার জন্য হযরত নূহ আলাইহিস সালাম-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ তায়ালার সর্বপ্রথম রাসূল। সেমতে লোকেরা হযরত নূহ আলাইহিস সালামের কাছে গিয়ে সুপারিশ করার জন্য আবেদন জানাবে। তারও নিজের স্কলনের কথা স্মরণ হবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা সুপারিশ করার জন্য হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর কাছে যাও। আল্লাহ তাআলা তাকে নিজের বন্ধু বানিয়েছেন। তারও নিজের স্খলনের কথা স্মরণ হলে তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর কাছে যাও। আল্লাহ তাআলা তাকে নিজের নৈকট্য দান করেছেন। তার সঙ্গে কথা বলেছেন ও তার উপর তাওরাত নাজিল করেছেন। সেমতে লোকেরা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কাছে গিয়ে সুপারিশ করার জন্য আবেদন জানাবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর কাছে যাও। লোকেরা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর কাছে এসে সুপারিশ করার আবেদন জানালে তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যাও। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর লোকেরা আমার কাছে আগমন করে সুপারিশ করার আবেদন জানাবে। আমি আল্লাহ তাআলার কাছে তিনটি সুপারিশ করব যেগুলো কবুল করার অঙ্গীকার মহান আল্লাহ আমার সঙ্গে করেছেন। আমি জান্নাতের কাছে এসে তার দরজার খিলে হাত দেবো। এ সময় আমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানানো হবে। যখন আমি জান্নাতে প্রবেশ করে মহান প্রতিপালককে অবলোকন করে তার সামনে সেজদাবনত হয়ে যাব। আল্লাহ তায়ালা আমাকে তার বড়ত্ব, মহত্ত্ব ও প্রশংসা করার এমন যোগ্যতা দান করবেন যা তার সৃষ্টির মধ্য হতে আর কাউকে প্রদান করেননি। এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি মাথা উঠান ও সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ কবুল করা হবে। আপনি প্রার্থনা করুন, আপনাকে প্রদান করা হবে। যখন আমি মাথা উত্তোলন করব তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আপনি কী চান? আমি আরজ করব, হে আল্লাহ! আপনি আমার সুপারিশ কবুল করার অঙ্গীকার করেছিলেন। অতএব, আমি জান্নাতিদের ব্যাপারে সুপারিশ করছি; যেন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি তাদের ব্যাপারে আপনার সুপারিশ কবুল করলাম ও তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি দিলাম।
সেই সত্তার কসম! যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, তোমরা পৃথিবীতে নিজেদের স্ত্রী ও ঘরগুলোকে এর চেয়ে বেশি চেননা যেভাবে জান্নাতের অধিবাসীগণ তাদের স্ত্রী ও ঘরগুলোকে চেনেন। অতএব, প্রতিটি পুরুষ ৭২ জন হুরের সঙ্গে সহবাস করবে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা এই জান্নাতি ব্যক্তির জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া আদম সন্তানদের মধ্য হতে দুইজন নারীর সঙ্গেও সহবাস করবে। আল্লাহর ইবাদত করার কারণে জান্নাতের নারীদের উপর এই দুজনের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হবে। তাদের মধ্য হতে প্রথম জনের সাথে ইয়াকুত পাথরের কামরায় স্বর্ণের পালঙ্কের উপর সহবাস করবে যা মণি-মুক্তায় ঘেরা থাকবে। এই নারী রেশমের সত্তর জোড়া কাপড় পরিহিত থাকবে। যদি জান্নাতি ব্যক্তি নিজের হাত তার দুই কাঁধের মাঝে রেখে হাতের দিকে তাকায়, তাহলে সে হাত সেই নারীর বুকের কাপড়, চামড়া ও গোশতের পেছন থেকে দেখা যাবে। তাছাড়া জান্নাতি ব্যক্তি তার পায়ের নলার অভ্যন্তরকেও দেখতে পাবে যেভাবে তোমাদের মধ্য হতে কেউ ইয়াকুত পাথরের টিউবে ঢাকা সুতা দেখতে পায়। স্ত্রীর কলজে তার জন্য আয়না হবে এবং তার কলজে স্ত্রীর জন্য আয়না হবে। যখন সে স্ত্রীর কাছে থাকবে তখন ক্লান্ত হবে না। অনুরূপভাবে স্ত্রীও পরিশ্রান্ত হবে না। সে যখনই স্ত্রীর কাছে আসবে তখন তাকে কুমারী পাবে। পুরুষের পুরুষাঙ্গ দুর্বল হবে না এবং নারীর যৌনাঙ্গও অভিযোগ করবে না। এ সময় তাদের মধ্যে ঘোষণা করা হবে, তোমাদের দুজনের মধ্য হতে কেউই পরিতৃপ্ত হবে না এবং তোমাদের বীর্যপাত হবে না। জান্নাতি পুরুষকে বলা হবে, তোমার জন্য আরো অনেক স্ত্রী রয়েছে। সে একে একে সকল স্ত্রীর কাছে যাবে ও ভোগ করবে। যে স্ত্রীর কাছেই যাবে সে বলবে, আল্লাহর কসম! আমি জান্নাতে তোমার মতো সুন্দর এবং তোমার মতো প্রেমময় আর কাউকে পাইনি।
আর জাহান্নামের যোগ্য ব্যক্তিরা জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ তায়ালার বহু সৃষ্টি নিজেদের কৃতকর্মের কারণে জাহান্নামে যাবে। তাদের মধ্য হতে কতক লোককে জাহান্নামের আগুন পা পর্যন্ত জালাবে। কাউকে পায়ের নলা পর্যন্ত জ্বালাবে। আর কাউকে হাঁটু পর্যন্ত জ্বালাবে। কতকগ লোককে কোমর পর্যন্ত জ্বালাবে এবং কোন কোন ব্যক্তিকে চেহারা ছাড়া সারা শরীর জ্বালিয়ে দেবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা চেহারার উপর আগুনকে হারাম করে দিয়েছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর আমি আমার উম্মতের এসব লোকের ব্যাপারে সুপারিশ করব যারা জাহান্নামে চলে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন আপনি যাদের কে চেনেন তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিন। আমি লোকদের বের করে আনব। এমনকি তাদের মধ্যে হতে কেউই জাহান্নামে থাকবে না। এরপর আল্লাহ তায়ালা সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন, তখন প্রত্যেক নবী ও শহীদ সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, সেসব লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে দাও যাদের অন্তরে এক দিনার সমপরিমাণ ঈমান আছে। সেমতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। এমনকি তাদের মধ্য হতে কেউই জাহান্নামে বাকি থাকবে না। এরপর সুপারিশ করা হবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, যাদের অন্তরে অর্ধদিনার, দিনারের এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে দাও। এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, যাদের অন্তরে এক ক্যারট পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে দাও। এরপর আল্লাহ তায়ালা বলবেন, যাদের অন্তরে এক দানা পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে দাও। ফলে এসব লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্য হতে কেউই জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবেনা। এমনকি প্রত্যেক এমন ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের করে দেওয়া হবে যে কখনো আল্লাহ তাআলার জন্য নেক আমল করেনি। আর যে ব্যক্তি সুপারিশ করার যোগ্য হবে সে অবশ্যই সুপারিশ করবে। এমনকি অভিশপ্ত শয়তানও আল্লাহর রহমতে সুপারিশ পাওয়ার আশা করতে থাকবে। এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি অবশিষ্ট রয়েছি। আমি সবচেয়ে দয়ালু ও করুণাময়। এরপর তিনি জাহান্নামে নিজের হাত ঢুকিয়ে অগণিত লোককে তা হতে বের করে আনবেন, যারা জ্বলে পুড়ে কয়লার মতো হয়ে যাবে। এরপর তাদেরকে একটি নির্ঝরিণীতে ফেলা হবে যাকে ‘সঞ্জীবনী ঝরনা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এরপর তারা সেই দানার মতো উত্থিত হবে যা ড্রেনের পাশে উৎপন্ন হয়ে থাকে। যেদিকে সূর্যের রোদ পড়ে সে দিক দিয়ে সবুজ হয় এবং যেদিকে সূর্যের রোদ পড়ে না সেদিকে হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। এরপর তারা কোঁকড়া তৃণমূলতার মতো উত্থিত হবে। এমনকি তারা পিঁপড়ার মতো অধিক পরিমাণে উত্থিত হবে। তাদের কাঁধে ‘আল্লাহ তাআলা কর্তৃক মুক্তকৃত জাহান্নামি’ বাক্যটি লেখা থাকবে। জান্নাতের অধিবাসীরা এই লেখা দেখে তাদের চিনতে পারবে যে, তারা কখনো নেক আমল করেনি। যখন পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা চাইবেন তখন পর্যন্ত এভাবেই তারা জান্নাতে অবস্থান করবে এবং এই লেখা তাদের কাঁধে ঝুলন্ত থাকবে। এরপর তারা আবেদন করবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের দেহ থেকে এই লেখা মুছে দিন। তখন এই লেখা মুছে দেওয়া হবে। (সমাপ্ত)
ভাষান্তর: আবদুল কাইয়ুম শেখ
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
কুষ্টিয়া চিনিকলসহ দেশের ৬ চিনিকল চালু হওয়ায় ভারতের দম্ভ খতম!
নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর
৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা
নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা
খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো
কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু
বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১
কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম দুর্ভোগে পথচারীরা
মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা
বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন
যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার
আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়