দোয়া-মুনাজাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত
১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
নু’মান ইবনে বাশীর রা: বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“দোয়া বা প্রার্থনাই ইবাদাত। এ কথা বলে তিনি কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন:“তোমাদের রব বলেন, আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। যারা গর্বভরে আমার ইবাদাত বা দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা অচিরেই লাঞ্ছিত ও অপমানিতে হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”(সুরা মুমিন:৬০) (তিরমিযি, কিতাবুল দাওয়াত, বাব ফাযলিদ দোয়া)
এ আয়াতে দোয়া ও ইবাদাত শব্দ দু’টিকে সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা প্রথম বাক্যাংশে যে জিনিসকে দোয়া শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে দ্বিতীয় বাক্যাংশে সে জিনিসকেই ইবাদাত শব্দ দ্বারা প্রকাশ হয়েছে। এ দ্বারা এ কথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, দোয়াও ঠিক ইবাদাত তথা ইবাদাতের প্রাণ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না এমন লোকদের জন্য “অহংকার ও গর্ভভরে আমার ইবাদাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়” কথাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহর কাছে দোয়া করা ইবাদাত বা বন্দেগী বা দাসত্বের দাবী। এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার অর্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গর্ব ও অহংকারে ডুবে আছে। এ কারণে নিজের স্রষ্টা ও মনিবের কাছে দাসত্বের স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা করে। সুতরাং দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত।
আরবীতে সাওয়াল ও মুনাজাতকেও দো’য়া বলা হয়। সাওয়াল মানে চাওয়া এবং মুনাজাত মানে চুপে চুপে কথা বলা। আল্লাহর সাথে বান্দার সকল কথা, যিকর ও প্রার্থনাকেই মুনাজাত বলা হয়। হাদীসে সালাতকে মুনাজাত বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“যখন কেউ সালাতে থাকে তখন সে তার প্রভুর সাথে ‘মুনাজাত’ (গোপনে কথাবার্তায়) রত থাকে।” (বুখারী, আবওয়াবুল মাসাজিদ, বাব হাক্কিল বুযাকি..) অন্য এক হাদীসে তিনি বলেন,“যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার প্রভুর সাথে মুনাজাতে রত থাকে; অতএব কিভাবে এবং কি বলে মুনাজাত করছে সে দিকে যেন খেয়াল রাখে (অর্থাৎ বুঝে ও মনোযোগ সহকারে সালাত পড়ে)।” হাদীসটি সহীহ (মুয়াত্তা মালিক, সহীহ ইবনে খুযাইমা ও মুসতাদরাক হাকিম) আল্লাহর সাথে কথাবার্তা, প্রার্থনা ও দোয়াকে মুনাজাত বলা হয়, কারণ তিনি বান্দার সবচেয়ে কাছে। তাঁ সাথে বান্দার কথা গোপনে ও চুপে চুপে হয়। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করেন, “আমাদের প্রভু কি আমাদের কাছে, না দূরে? যদি কাছে হন তবে আমরা তাঁর সাথে মুনাজাত করবো বা চুপে চুপে কথা বলবো। আর যদি তিনি দূরে হন তাহলে আমরা জোরে জোরে তাঁকে ডাকবো ।” জবাবে আল্লাহ তা’আলা নিচের আয়াতটি নাযিল করেন। বলেন,“ “আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে. তাহলে তাদেরকে বলে দাও, আমি তাদের কাছেই আছি। যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তারা আমাকেই ডাকা ও আমার ওপর ঈমান আনা উচিত এ কথা তাদেরকে শুনিয়ে দাও, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে।”(বাকারাঃ১৮৬) ( তাফসীরে ইবে কাসীর)
হযরত আবু যার রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন,“হে আমার বান্দাগণ, আমি যাকে পথ দেখাই সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। অতএব, তোমরা আমার কাছে সঠিক পথ প্রার্থনা কর, তাহলে আমি তোমাদের সঠিক পথ দান করব। হে আমার বান্দাগণ, শুধুমাত্র আমি যাকে ভাইয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। অতএব, তোমরা আমার কাছে খাদ্য চাও, আমি খাদ্য দান করব। হে আমার বান্দাগণ, আমি যাকে পোশাক পরিধান করিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই উলঙ্গ। অতএব, তোমরা আমার কাছে বস্ত্র প্রার্থনা কর, তাহলে আমি তোমাদেরকে বস্ত্র দাান করব।
এ জন্য দোয়া ও মুনাজাতের গুরুত্ব অত্যধিক। হযরত আবু হোরাইরা রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর কাছে দোয়া বা প্রার্থনার চেয়ে সম্মানিত বস্তু আর কিছুই নেই।”(তিরমিযি, কিতাবুদ দাওয়াত, বাব ফাদলিদ দোয়া ও মুসতাদরাক হাকিম)
হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যমিনের বুকে যে কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে-যে দোয়ায় কোন পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কিছু চায় না-আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেনই। হয় তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দিবেন অথবা তদনুযায়ী তার কোনো বিপদ কাটিয়ে দিবেন।”(তিরমিযি, কিতাবুল দাওয়াত, বাব ইনতিযারিল ফারজ ও মুসতাদরাক হাকিম)
হযরত আব হোরাইরা রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে মুখ তুলে কোনো কিছ প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে দিবেনই। তাকে তা সাথে সাথে দিবেন অথবা (আখিরাতের জন্য) তা জমা করে রাখবেন।”(মুসনাদে আহমাদ)
হযরত সালমান ফারিসী রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ লাজুক, দয়াবান। যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দু’খানা হাত উঠায় তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।”(তিরমিযি, কিতাব দাওয়াত, বাব দোয়ায়িন নাবিয়্যি ও ইবনে মাযাহ)
হযরত সাওবান রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দোয়া ছাড়া আর কিছুই তকদীর উল্টাতে পারে না। মানুষের উপকার ও কল্যাণের কাজেই শুধু আয়ু বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় মানুষ গোনাহ করা ফলে তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়।”(আল মুসতাদরিক হাকিম ও তিরমিযি, কিতাবুল ক্বদর)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে বিপদ বা মুসিবত নাযিল হয়ে গিয়েছে এবং যা এখনো নাযিল হয়নি ্এরূপ সকল বিপদ কাটাতে প্রার্থনা উপকারী।”(তিরমিযি, কিতাব দাওয়াত, বাব দোয়ায়িন নাবিয়্যি)
লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গাবতলীতে আরাফাত রহমান কোকো ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি লালু
যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
কুষ্টিয়া চিনিকলসহ দেশের ৬ চিনিকল চালু হওয়ায় ভারতের দম্ভ খতম!
নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর
৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা
নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা
খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো
কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু
বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১
কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম দুর্ভোগে পথচারীরা
মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা
বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন
যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার
আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা