সুদ: আর্থিক সংকট বয়ে আনে
২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
সৃষ্টির শুরুতে হয়তো এ সমস্যাটা ছিলো না। আল্লাহর এ বিশাল দুনিয়ায় আল্লাহর দেয়া রিজিকের ছিলো ছড়াছড়ি। এর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ প্রয়োজনে কিছু কিছু জিনিস তৈরি করতেও শিখেছিলো। পরবর্তীকালে মানুষ তার চাহিদা অনুসারে পণ্য বিনিময় করতে শিখলো। এরও পরে এলো প্রতীকি মুদ্রা এবং সবশেষে এলো মুদ্রার ব্যবহার। মুদ্রার বিনিময়ে মানুষ আপন চাহিদার দ্রব্য সংগ্রহ করতে বুঝলো। আর এ জন্যে সঙ্গত কারণেই মুদ্রা উপার্জনের তাগিদও অনুভূত হলো মানবজীবনে। এ তাগিদ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অনুভব করেন। সবাই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য অর্থ ব্যয় করেন। আরও ব্যয় করেন বিলাসদ্রব্য, নেশার দ্রব্য সংগ্রহ করতে, সম্পদ পুঞ্জিভূত করতে, এমনকি নিজের বড়ত্ব জাহির করার উদ্দেশ্যও। কাজেই নিজি নিজ মেধা আর দক্ষতা নিয়ে প্রচ- পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জনে নিয়োজিত থাকেন প্রত্যেকেই। এ জন্য কেই কৃষিকাজ করেন কিংবা করান, কেউ শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। আর কেউবা কায়িক শ্রমের দ্বারাই এ চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। উপার্জন এবং উপার্জিত অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে অপরাপর মানুষের সঙ্গে ইসলামের অনুসারীদের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
একজন মুসলমান সবসময় লক্ষ্য রাখবেন তার উপার্জন যেনো শরীয়ত নিষিদ্ধ কোনো অবৈধ পন্থায় না হয়। এমনকি এ ক্ষেত্রে সন্দহের থেকেও দূরে থাকা। তিনি এও খেয়াল রাখবেন, তার উপার্জনে যেনো প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সুদ প্রবেশ না করে। কেননা সুদকে আল্লাহ তায়ালা হারান ঘোষনা করেছেন। সুতরাং শতসহস্র প্রলোভনেও একজন মুসলমান আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করতে পারে না। পক্ষান্তরে অপর কোনো ধর্মাবলম্বীদের এ ধরণের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। খুব সম্ভবত হিন্দু ও ইহুদি সমাজ থেকেই সুদ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ একটা অমানবিক অর্থনৈতিক কর্মকা-। কেননা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারা যায়, ঋণ তো অভাবীরা গ্রহণ করেন। আর যারা ঋণ দেন, তারা তো নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পর উদ্বৃত্ত অর্থটাই কেবল ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ করেন। আপনার গ্রাম বা মহল্লার দরিদ্র চাষী, একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা একজন শ্রমজীবীর কথা চিন্তা করে দেখুন, সুদের ভিত্তিতে ঋণ গড়োহোণ করলে তার অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
মনে করি, রিহান নামক ব্যক্তির নিজস্ব আয়ে বছরে দশ মাস ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। শেষ দুই মাসে সে সুদে টাকা দিয়ে সংসারের আয় বাড়ানোর কাজে বিনিয়োগ করলো। দ্বিতীয় বছর সব মিলিয়ে সে বারো মাস চলার মতো সামর্থ্য অর্জন করলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও পূর্ববর্তী বছরের ঋণ এবং সুদ পরিশোধের পর অবশিষ্ট অর্থে তার নয় মাস চললো। সুতরাং এ বছর তার তিন মাসের ব্যয় নির্বাহ করতে হবে নতুন করে ঋণ গ্রহণ করে। এবার হিসেব করে দেখুন, সুদে টাকা ধারি দিয়ে এ নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবাটির পথে বসতে ক›বছর সময়ের প্রয়োজন হবে? এভাবেই সুদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থাত মারপ্যাঁচে পড়ে একটি পরিবার থেকে শুরু করে আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে হতদরিদ্র ও নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
অর্থনীতি অনেক জটিল বিষয়। এ বিষয়ে বড় বড় প-িত যারা আছেন, তারা এর পক্ষে-বিপক্ষে জটিল জটিল সব যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম। এমনকি মহা মহা যুক্তি আর বড় বড় রেফারেন্স টেনে তারা সুদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার মহাত্ম্যও প্রমাণ করে ছাড়বেন, সন্দেহ নেই তাতে। আমার মরো স্বল্প বিদ্যা নিয়ে এসব বিতর্ক করাটাই একপ্রকার আহাম্মকি। তবে সবিনয়ে একটা কথা তো জিজ্ঞেস করতে পারি, আমাদের দেশের যে সমস্ত এনজিও সুদের বিনিময়ে অর্থ বিনিয়োগ করে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে আসছেন। বিগত দশ-বিশ বছরের একটা পরিসংখ্যান নিয়ে দেখুন তো, এতে ফুকে ফেঁপে ওঠছে কারা? দরিদ্র ঋণগ্রহীতারা, নাকি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলো। নিঃসন্দেহ দ্বিতীয় পক্ষই। কিন্তু কেনো?
আমার ধারণা, রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও হয় ব্যাপারটা ঠিক এমনটিই হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন তহবিল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যে ঋণ দেয়া হচ্ছে, এর পরিণাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয়াবহ রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। একটি উন্নয়নশীল দেশকে সম্পূর্ণ মুখাপেক্ষী ও পরনির্ভরশীল করে দেয়ার প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ঋণ দেয়া হয় অনুৎপাদনশীল খাতে। ফলে সুদসহ ঋণের বোঝাটা হয়ে দরিদ্র জাতির ঘাড়ে চেপে বসে সিন্দবাবদের মতো। আর উৎপাদনশীল কোনো খাতে কিছু টাকা ঋণ বরাদ্দ হলেও এর সঙ্গে জুড়ে দেয়া হাজারো শর্ত। ফলে দাতার টাকার সিংহভাগ দাতার ঘরেই চলে যায়। মাঝখান থেকে সুদসহ কিস্তির টাকা যোগাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হয় দরিদ্র দেশগুলোকে। দাতাগোষ্ঠীর কেষ্টবিষ্টুরা এবারে কিছুটা উদার হয়ে যান, এমনকি ঋণের অথবা সুদের খানিকটা তারা মাফও করে দেন। ফলে আমরা উন্নয়নশীলরা বগল বাজিয়ে বাহবা দেই, বাহ, এ না হলে কি আর দাতাগোষ্ঠী!
আমি বলি কি, আমরা মুসলমানেরা তো পরলোকের কল্যাণ কামনা করি অর্থাৎ আখেরাতে বিনিময় পাওয়া যাবে, এ আশা নিয়ে দান খয়রাত করি। কিন্তু যাদের ধারণা আখেরাত বলতে কিছুই নাই, এ পার্থিব জীবনটাই সবকিছু। তারা নিঃস্বার্থে দান খয়রাত করতে যাবে কোন দুঃখে। আর মানবতা, সহানুভূতি, করুণা এগুলো তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিধানে শোভা বর্ধনের মত শব্দ বৈ নয়। যা হোক, এরপর কিন্তু দাতাগোষ্ঠী আসল প্যাঁচটা কষতে শুরু করে। ওরা দরিদ্র দেশটির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাত্র শুরু করে। সোজাসুজি বলে দেয়, অমুক অমুক শর্তগুলো মেনে নাও, নাইলে ঋণ পাবে না। এতে করে উন্নয়নশীল দেশের কর্ণধাররা পড়েন উভয় সংকটে। ওদের কথা না শুনলে ঋণ পাওয়া যাবে না, স্থবির হয়ে পড়বে উন্নয়ন প্রকল্প; আর শর্তগুলো, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থ-বিরোধীই হয়ে থাকে। মেনে নিলে দেখা দেয় দেশব্যাপী গণ-অসন্তোষ আন্দোলন ও অশান্তি। সরকার পড়ে যায় উভয় সংকটে। এমনকি এ সংকটের গ্যাঁড়াকলে পড়ে কোনো কোনো দেশের সরকারের পতনও ঘটে যায়।
এইটাই হলো, আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত একটা ব্যবস্থার বিষময় ফল। মানবতার কল্যাণে নিবেদিত দীন ইসলামে এর কোনো স্থান নেই। তাইতো রাসুল (সা.) বলেছেন, ‹সুদ ও ব্যভিচার যখন কোনো দেশ বা শহরে ব্যাপক হয়ে দাঁড়াবে, তখন তাদের ওপর আল্লাহর আযাব অনিবার্য। ( মুসতাদরাকে হাকিম: ৩৪৪) সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা এবং এর প্রতিরোধ স্বরূপ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
লেখক: প্রিন্সিপাল, শ্যামপুর কদমতলী রাজউক মাদরাসা ঢাকা।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি
ঘনকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ