মহান হজ ঃ একটি অনন্য সওগাত
১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
মরু হাওয়ায় দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈলের শুকিয়ে যাওয়া কন্ঠ সিক্ত করতে কিভাবে সংগ্রহ করবেন একটু পানি। নিম্নভূমিতে কচি শিশুকে রেখে আরোহণ করলেন সাফা পাহাড়ের চূড়ায়। চতুর্দিকে দৃষ্টি ফেরালেন, কোথাও নেই পানির কোন চিহ্ন। ছুটলেন আবার সামনের পাহাড়টিতে। মারওয়ার চূড়ায় উঠে চতুর্দিকে দৃষ্টি ফেরালেন। না, কোথাও নেই পানি। আবার সাফাতে গিয়ে আরেকটু ভাল করে দেখার চেষ্টা। আবার মারওয়াতে, একে একে সাতবার দু’পাহাড়ের মধ্যে ছুটাছুটি করেও পানির সন্ধান না পেয়ে বিফল মনোরথে ছুটে এলেন কলিজার টুকরা সন্তানটির পাশে। এসেই দেখলেন কচি শিশুর সামনেই প্রবাহিত হচ্ছে যমযমের ফোয়ারা। সে যমজম থেকেই আজকে আমরা পানি পান করছি। মহিয়ষী সে মহিলার পুণ্যময় স্মৃতি সাফা- মারওয়ার মহান রাব্বুল আলামীন।
স্মরণ করুণ, বহুদিন পর নবী ইবরাহীম (আঃ) এসেছেন পরিবারকে দেখতে। উদীয়মান কিশোর ইসমাঈল কত সুন্দর হয়ে বড় হয়ে উঠছেন। পিতার মনে কত আশা। এ সন্তান তাঁর উত্তরসূরি হয়ে কত বিরাট দায়িত্ব পালন করবে। প্রভূর কাছ থেকে স্বপ্নে ইঙ্গিত এলো, কলিজার টুকরো সন্তানকে কুরবানী করে দিতে হবে। ঐশী নির্দেশ লংঘনের কোন উপায় নেই। অগত্যা ইসমাঈলকে ডেকে বললেন, ঐশী নির্দেশের কথা। সুযোগ্য সন্তান নির্ভীকচিত্তে বললেন, ‘‘হে পিতা! আপনার প্রতি প্রদত্ত নির্দেশ কার্যকরী করুন, আল্লাহ চান তো আমাকে ধৈর্য্যশীল হিসেবেই পাবেন’’-(ছাফ্ফাত ঃ ১০২)। সে নির্দেশ কার্যকরী করতে পিতা-পুত্র মিনা প্রান্তরে গেলেন। শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’য়ালা ইবরাহীম (আ:) কে বললেন, তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেছেন। সন্তানের পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী করার নির্দেশ দিলেন। সে কুরবানীই আজ আমরা ঈদুল আযহার দিনে আমল করে যাচ্ছি। হাজী সাহেবানরা মিনার সে প্রান্তরেই সে প্রক্রিয়ায় কুরবানী করে যাচ্ছেন। অতঃপর আসে বাইতুল্লাহ নির্মাণের ইতিহাস। পিতা-পুত্র প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম করে নির্মাণ করছেন আল্লাহর ঘর। আর প্রভূর কাছে ফরিয়াদ করছেন, হে প্রভূ! আমাদের এ প্রচেষ্টা কবুল করুন। আল্লাহ কবুল করলেন এবং নির্দেশ দিলেন ইবরাহীম (আ:)কে এ পবিত্র ঘরের হজ্ব আদায়ের জন্য আহ্বান জানাতে। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজও আমরা ছুটে যাই পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে সে ঘরের দিকে। তারপর এ ঘরকে এবং পবিত্র ভূমিকে ঘিরে রয়েছে আমাদের প্রিয় নবীর ইতিহাস। জন্ম সূত্রেই তিনি পিতৃহারা। তারপর মা হারিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইয়াতিম। দাদা এবং চাচার তত্ত্ববধানে এ মক্কার অলিগলিতেই তিনি বড় হলেন। চল্লিশ বৎসর বয়সে আল্লাহ তাঁর প্রকৃত দ্বীনের সন্ধান পেতে মক্কারই এক পাহাড়ে ধ্যানে মগ্ন থাকছেন দিনের পর দিন। সে হেরা গুহাতেই নাযিল হল (ইক্বরা ....পড়–ন আপনার প্রভূর নামে ....)।সে থেকেই শুরু হয়ে গেল ঐশী বিধান নাযিলের ধারা। মূর্তিপূজা থেকে উদ্ধার করে তাওহীদের দিকে আনতে শুরু করে দিলেন দাওয়াতী কাজ। প্রথমে সংগোপনে, তারপর প্রকাশ্যে। জাবাল আবু কুবাইছ যা সাফা পাহাড়ের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে ডাকলেন সবাইকে। আবেগ এবং যুক্তি সহকারে দাওয়াত দিলেন। আবু জাহ্ল গং শুধু প্রত্যাখ্যানই করলো না বরং এ দাওয়াতকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে তাদের সংকল্প ঘোষণা করলো। দীর্ঘ ১৩ বৎসর মক্কা নগরীতে দাওয়াতের ফলে বেশ কিছু নর-নারী ইসলাম কবুল কররেও অধিকাংশ মক্কাবাসী শেষ পর্যন্ত ইসলামের বিরুদ্ধেই চলে গেল এবং মুসলমানদের উপর অত্যাচার, নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাতে লাগল। শেষ পর্যন্ত নবী করীম (সা:) এবং সাহাবায়ে কেরাম মক্কাভূমি ত্যাগ করে হিজরত করলেন মদীনা মনোয়ারার দিকে। রাসূল (সা:) কে চূড়ান্তভাবে কতল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো মক্কার কাফেরগণ যে দারুণ নাদওয়াতে বসে, পবিত্র কাবা থেকে খুব দূরে ছিল না সে মিটিং হলটি। কাফেরদের চোখে ধুলা দিয়ে নবী করীম (সা:) যে পাহাড়ের গুহায় লুকিয়েছিলেন, সে গারে ছাওর মক্কা শহরের অনতিদূরে আজও সাক্ষ্য বহন করছে, হিযরতের ইতিহাসের। মদীনা থেকে ৮ বৎসর পর পুনরায় বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করলেন তিনি তার জন্মভূমিতে। নির্মূল করে দিলেন শিরক আর মূর্তিপূজার আখড়া বাইতুল্লাহ থেকে। তারপর হজ্ব ফরয করা হলো। তিনি হজ্ব করলেন, আমাদেরকেও হজ্বের নির্দেশ দিলেন। সে থেকে শুরু হলো এ উম্মতের হজ্ব প্রক্রিয়া, যার ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। আমি যখন মক্কা-মদীনার অলিগলিতে পদচারণ করি, তাওয়াফ করি, এমনও তো হতে পারে যে, আমার পা কোন সময় এমন জায়গায় গিয়ে পড়ছে, যেখানে নবী করমী (সা:) পা দিয়েছিলেন। এমন অনুভূতি আর ইতিহাস মনে রেখেই হজ্ব করা উচিৎ।
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ বাইতুল্লাহ শরীফের হজ্ব সমাগত। যাদেরকে আল্লাহ তা’য়ালা তাওফিক দিয়েছেন তারা অনেকেই ইতিমধ্যে তালবিয়া আদায় করতে করতে পবিত্র ভূমিতে পৌছে গেছেন বা সহসাই পৌছে যাবেন। হজ্বের দিনগুলোতে হাজী সাহেবান তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, মুযদালেফা, আরাফাতে অবস্থান, মিনায় কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী ইত্যাদি বহুবিধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফযীলতের আমল সমূহে সদা ব্যস্ত থাকবেন। মূলত দুনিয়াদারীর সংশ্রব ত্যাগ করে একান্তভাবে আল্লাহমুখী হয়ে ইবাদতে মশগুল থেকে গুনাহ সমূহ মাফ করিয়ে নেয়ার সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকবেন। আর আমরা যারা হজ্বের কর্মে ব্যস্ত নই, তারা তো এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। যারা হজ্ব করছেন না, তাদের জন্য কি এ পবিত্র সময়ে কিছুই নেই। আল্লাহ তা’য়ালা দয়া পরবশ হয়ে আমাদেরকে একেবারে বঞ্চিত করেননি। তিনি আমাদের জন্য কিছু সুযোগ রেখেছেন। প্রথমতঃ দশই যিলহজ্ব কুরবানীর ঈদের দিন হাজী সাহেবান যেমন কুরবানী আদায় করবেন, আমাদেরও তাদের মত কুরবানী করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যাদের সামর্থ রয়েছে তাদের প্রতি কুরবানী করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন।দ্বিতীয়ত ঃ যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিনের আমলকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সূরা আল ফযরের মধ্যে এ দশটি দিনের কসম করেছেন। ‘‘ওয়া লায়ালিন আশর’’ অর্থাৎ দশটি রাত বলতে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিন বুঝানো হয়েছে বলে মুফাস্সিরীনে কেরামের সম্মিলিত অভিমত। প্রিয় নবীজী (সা:) হাদীস শরীফে এদিনগুলোর ফযীলত প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এ দিন গুলোর আমলের ন্যায় অন্য কোন দিনের আমল আল্লাহর কাছে এত পছন্দনীয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল এমন কি আল্লাহর পথে জিহাদ করলেও নয়? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করলেও নয়! তবে, যে ব্যক্তি নিজের জানমাল নিয়ে এমনভাবে জিহাদে গিয়েছে যে, আর কোনটা নিয়েই ফেরত আসেনি (এমন শাহাদাতের মর্যাদা অবশ্য সর্বোচ্চ)-বুখারী। ‘‘সেদিন আল্লাহ যত লোককে মাফ করে দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন, তা আর কোন দিন ঘটেনা’’-মুসলিম। এ দশটি দিনে বেশি বেশি করে নেক আমলের সুযোগ হাত ছাড়া করা নিশ্চয়ই ঠিক হবে না। এ সময়গুলোতে কি কি আমল করা উচিৎ। নফল আমলের মধ্যে সর্বোচ্চ হল নফল সালাত, বিশেষ করে সালাতুত্ তাহাজ্জোদ। কুরআন তেলাওয়াত, যিকর, ইস্তেগফার, দোয়া ও দরূদ ইত্যাদি। এ সময়ে নফল রোযার আমল করা খুবই উত্তম। দশ তারিখে যেহেতু ঈদ হওয়ার কারণে রোযা রাখা হারাম। তাই সেদিনটি বাদ দিয়ে তার পূর্বের ৯টি দিন রোযা রাখার চেষ্টা করা খুবই উত্তম ইবাদত। যারা ৯ দিন রোযা রাখতে পারবেন না, তারা অন্তত ৯ই যিলহজ্ব আরাফাতের দিন এবং সম্ভব হলে তার পূর্বের দিনটির রোযা রাখার চেষ্টা করা উচিৎ। নবী করীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, “আরাফাতের দিনের রোযা গত এবং আগামী এ দু’বৎসরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়ার কারণ হয়ে যায়’’-(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)। প্রিয় নবীজী (সা:) যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিনের রোযা (ঈদের দিন ছাড়া) রাখা কখনও ছাড়েননি’’-(আহমদ, নাসায়ী)। এ দশদিনের সর্বশেষ দিনটি কুরবানীর ঈদ। ইবরাহীম (আ:)’র কুরবানীর এ সুন্নাতকে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের ন্য জারী করে দিয়েছেন। আর তাতে আমাদের জন্য রেখেছেন নেকী অর্জনের অফুরন্ত সুযোগ। কুরবানীর এ বিশাল সওয়াবের কথা উল্লেখ করে প্রিয় নবীজী (সা:) ইরশাদ করছেন, “কুরবানীর ঈদের দিন পশু যবাই করে রক্ত প্রবাহ করার মত আর কোন আমল এত পছন্দনীয় নয় আল্লাহর কাছে। কুরবানীর পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি সহকারে আসবে বান্দার নেকীর ওজন বাড়িয়ে দিতে। পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায় (কবুল হয়ে যায়)। কাজেই পবিত্র মনে কুরবানী করো”-(ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)। অন্য হাদীসে তিনি বলেছেন, “প্রতিটি পশমে রয়েছে নেকী” (রিমিযী, আহমদ, ইবন মাজাহ)। এবার চিন্তা করে দেখুন, একটা পশুর কতগুলো পশম রয়েছে। দিবারাত্রি গুণতে থাকলেও কখনও গুণে শেষ করতে পারবেন নি? এত অগণিত পরিমাণ নেকী আল্লাহ দান করবেন কুরবানী করলে। কেউ কেউ প্রশ্ন করে বসেন: বাংলাদেশে যেহেতু গবাদি পশু কম। তাই এতগুলো গবাদিপশু কুরবানী না করে সম পরিমাণ মূল্য গরিব মিসকিনকে দান করে দিলে হয় না? প্রথমত: শরীয়তের হুকুম যেভাবে এসেছে সেভাবে পালন করার নামই ইবাদত। শরীয়তের হুকুমে পরিবর্তন আনার কোন ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। দ্বিতীয়ত: প্রথমেই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, কুরবানীর আমলে যে সওয়াব আছে লক্ষ কোটি টাকা দান খয়রাত করেও কুরবানীর আমলের সমপর্যায়ের সওয়াব অর্জন করা যাবেনা। যারা কুরবানী করবেন, তাদের জন্য খুবই ফযীলতের সুন্নাত আমল হচ্ছে যিলহজ্ব মাস প্রবেশ করলে শরীরের কোন পশম, দাঁড়ি, চুল, গোঁফ এবং হাত পায়ের নখ ইত্যাদি কাটবেন না-(মুসলিম)। কারো কাটতে হলে যিলহজ্ব মাস আসার আগেই কেটে নিবেন। তবে কেউ যদি আগে খেয়াল না করে থাকেন, আর যিলহজ্ব মাস এসে যায় এবং নখ, চুল, বা অনাকাংখিত পশম বেড়ে গিয়ে থাকে, কেটে নেয়া জায়েয আছে। হারাম নয়। শুধু সুন্নাতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবেন। উপরের লেখার আলোকে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিনের আমলের ফযীলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। আজকের লেখায় সে দশদিনের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিবস আরাফাহ, ঈদুল আযহা এবং তৎপরবর্তী আইয়ামুত তাশরীক সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এদিন সমস্ত হাজী সাহেবান সকাল থেকেই তালবীয়া উচ্চারণ করতে করতে আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়ে যাবেন। দুপুর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফে আরাফাহ বা আরাফাতে অবস্থানের সময়। সেখানে যোহর ও আসরের সালাত আদায় শেষে আল্লাহ তা’য়ালার কাছে কায়মনোবাক্যে দু’আ করতে থাকবেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করছেন, “আরাফাতের দিনে আল্লাহ এত বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন যা আর কোন দিন ঘটেনা। আল্লাহ তাদের অনেক কাছে চলে আসেন এবং ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন’’-(মুসলিম)। অন্য হাদীসে এসেছে, “আল্লাহর কাছে আরাফাতের দিনের চেয়ে আর কোন দিন এত পছন্দের নেই। আল্লাহ সেদিন দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। দুনিয়াবাসীদেরকে নিয়ে আসমানের ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, দেখ, আমার বান্দারা এলোমেলো চুল আর ধুলায় মলিন, ক্লান্ত দেহে হজ্বের উদ্দেশ্যে দূর দূরান্তের রাস্তা পাড়ি দিয়ে সমবেত হয়েছে। আমার রহমতের তামান্না করছে, অথচ আমার আযাব তারা দেখেনি। আরাফাতের ঐ দিনে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রদান করা হয়, তা আর কোন দিন ঘটেনা’’-(ইবনে হাব্বান)। তিনি আরও বলেছেন, আরাফাতের দিনে আল্লাহর অবারিত রহমতের বর্ষণ, আর বড় বড় গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়ার অবস্থা দর্শন করে শয়তান এত ভেঙ্গে পড়ে যে মর্ম যাতনায় সে একেবারে ক্ষুদ্রাকৃতির হয়ে যায়। ব্যর্থ, বিপর্যস্ত হয়ে ক্রোধের আগুনে জ্বলতে থাকে’’-(মুওয়াত্তা)। আরাফাতের ময়দানে এত ফযীলতের মধ্যে ডুবে থাকবেন সৌভাগ্যবান হাজী সাহেবান। কিন্তু আমরা যারা এবার হজ্ব করতে যাইনি, তাদের করণীয় আমল কি? আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকেও সুযোগ দিয়েছেন কিছু আমল করার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, “আরাফাতের দিনের ১টি রোযা গত বৎসর এবং আগামী বৎসর এ দু’বৎসরের গুনাহ মাফ হওয়ার কারণ হয়ে যায়’’-(মুসলিম)। কাজেই এ দিনের রোযা রাখার সুযোগ হাত ছাড়া করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। উপরোল্লিখিত হাদীসে সগীরা গুনাহ বুঝানো হয়েছে। কবীরা গুনাহসমূহ মাফ করানোর জন্য তাওবাহ করা জরুরী। আরাফাতের দিনে যে দু’আ সর্বাধিক পরিমাণে পড়া দরকার তা হচ্ছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু তা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্পে শাইয়্যিন ক্বাদীর-(তিরমিযী)।যিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে হাজী সাহেবান পবিত্র ভূমিতে হজ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ আদায় করবেন। মুযদালিফা থেকে ফযরের পর পরই মিনায় গমন করবেন। জামরাতুল আকাবাতে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। কুরবানী করবেন। মাথার চুল কাটবেন। ইহ্রাম খুলে জামা কাপড় পরবেন। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ ও ছাফা মারওয়ায় ছায়ী (সাফা-মারওয়ায় দৌড়াদৌড়ি) করবেন। সংখ্যার দিক থেকে হাজীদেরকে সর্বাধিক পরিমাণ কাজ দশই যিলহজ্ব করতে হয় বিধায়, এ দিনটিকেই লক্ষ্য করে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার। হাজীদের কাজে আংশিকভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে দিয়েছেন ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ। হাজীদের অবশ্য ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব নয়। যারা হজ্ব করবেন না তাদের জন্য ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। হাজীরা মিনায় বা মক্কাতে কুরবানী করবেন। আর অন্যরা মালিকে নেছাব হলে নিজ জায়গায় কুরবানী করবেন। (চলবে)
লেখক: পাঠানপাড়া (খান বাড়ি), কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ