হজ আদায়ে বিলম্ব কাম্য নয়
১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম

হজ্বের গুরুত্ব : হজ্ব শারীরিক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ফরয ইবাদত। হজ্ব আদায়ে সক্ষম এমন শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি হজ্বে যাওয়া-আসার ব্যয় এবং হজ্ব আদায়কালীন সাংসারিক ব্যয় নির্বাহে সক্ষম এমন সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর জীবনে একবার হজ্ব ফরয। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, মানুষের মধ্যে যারা বায়তুল্লাহয় পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ গৃহের হজ্ব করা ফরয। [সূরা আলে ইমরান: ৯৭] সাহাবী আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে বললেন, হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হজ্ব কি প্রতি বছর করতে হবে? এ কথা শোনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন কিন্তু লোকটি না থেমে এ প্রশ্নটি একে একে তিনবার করলেন। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে প্রতি বছর হজ্ব করা ফরয হয়ে যেতো, আর তখন তোমারা তা করতে সক্ষম হতে না। [মুসলিম, হাদীস : ১৩৩৭; আহমদ, হাদীস : ১০৬০৭]
হজ্বের ফযীলত : বিভিন্ন হাদীসে হজ্বের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। নি¤েœ কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। ১.হজ্ব পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মুছে দেয়। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রার রা. বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ্ব করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। [তিরমিযী, হাদীস : ৮১১] অন্য বর্ণনায় আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল। [বুখারী, হাদীস : ১৫২১; মুসলিম, হাদীস : ১৩৫০] ২.হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান হল জান্নাত। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। [বুখারী, হাদীস : ১৭৭৩; মুসলিম, হাদীস : ১৩৪৯] ৩.হজ্ব ও উমরাহ দারিদ্রতা দূর করে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা হজ্ব ও উমরা পরপর একত্রে পালন কর। কেননা হজ্ব ও উমরাহ দারিদ্রতা ও গুনাহসমূহ এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয়। [তিরমিযী, হাদীস : ৮১০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৭৮০]
হজ্ব আদায়ে বিলম্ব করা কাম্য নয় : যার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে সে যদি মৃত্যুর আগে যে কোনো বছর হজ্ব আদায় করে, তবে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু হজ্বের মৌলিক তাৎপর্য, যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে, হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা। বিনা ওজরে বিলম্ব না করা। কারণ যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। [আহমদ, হাদীস : ১৮৩৩; আবু দাউদ, হাদীস : ১৭৩২] অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ফরয হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে। [আহমদ, হাদীস : ২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/৩৪০] একটি হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিযিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজ্বের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত। [ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৫; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ১০৩১]
হজ না করার ভয়াবহ পরিণতি : সামর্থ্য থাকার পরও হজ না করার পরিণাম খুব ভয়াবহ। ফরয হজ ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি হজ্ব আদায়ে সামর্থ্য থাকার পরও তা আদায় না করে সে ইহুদি হয়ে মৃত্যু বরণ করুক বা খ্রিস্টান হয়ে তার কোনো পরোয়া নেই।’ (তিরমিজি : হাদীস, ৮১২) ওমর (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ করে না, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল না কি খ্রিস্টান হয়ে, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।’ (ইবনে কাসির : ১/৫৭৮) সুতরাং যাদের উপর হজ্ব ফরয হয়েছে, তাদের উচিত হলো, কালবিলম্ব না করে খুব দ্রুত ফরয হজ আদায় করা। অনেকেই মনে করেন, এত তাড়াহুড়ো কিসের? সময় তো আছেই। এক সময় আদায় করলেই তো হবে- এ সকল বহুবিধ চিন্তা কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই হজ আদায়ে বিলম্ব করেন। পরে দেখা যায়, হজ্ব আদয়ের জন্য যে সক্ষমতা দরকার তা আর থাকে না কিংবা হজ আদায়ের আগেই মৃত্যুবরণ করেন। তাই শেষ জীবনের ভরসায় না থেকে হজ ফরয হওয়া মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব তা আদায় করা ফেলা উচিত।
লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মুফতী, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলূম, তালতলা, মোমেনশাহী।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ

ক্রিলিক একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে -এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ

পুলিশ কোনো কিলার ফোর্স হতে পারে না : আইজিপি

হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল তারা এখন সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

সিএজি কার্যালয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের সাঁড়াশি অভিযান