উত্তম ও অধম জীবন সামগ্রী
২০ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম
“তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও এবং তাঁর দিকে ফিরে এসো, তাহলে তিনি একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তোমার উত্তম জীবন সামগ্রী দিবেন এবং অনুগ্রহ লাভের যোগ্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অনুগ্রহ দান করেন।”(সুরা হুদ:২)
আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন এ ধরণের মতামত চলে আসছে যে, দুনিয়ায় মুসলমান গরীবি বা ফকিরী হালতে জীবন যাপন করবে এ কথা ভেবে যে, সে দুনিয়ায় দু’দিনের মুসাফির। কিন্তু উপরোল্লেখিত সুরা হুদের ২ নং আয়াতে আমরা বিপরীত চিত্র দেখতে পাচ্ছি। সেখানে বলা হচ্ছে, মুসলমানগণ ধন-সম্পদ, সচ্ছল ও সুখী-সমৃদ্ধ হতে পারে। অর্থাৎ দুনিয়ায় তাদের অবস্থান করার জন্য যে সময় নির্ধারিত রয়েছে সেই সময় পর্যন্ত খারাপ ভাবে নয় ভালভাবেই থাকবে। আল্লাহর নিয়ামতসমূহ নিয়মিত তাদের ওপর বর্ষিত হতে থাকবে। তারা বরকত ও প্রাচুর্যলাভে ধন্য হবে। সচ্ছল ও সুখী-সমৃদ্ধ থাকবে। শান্তিময় ও নিরাপদ জীবন যাপন করবে। কোন প্রকার লাঞ্চনা,হীনতা ও দীনতার সাথে নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার সাথে থাকবে। সুরা নহলের ৯৭ নং আয়াতে এভাবে বলা হয়েছে: “যে ব্যক্তি ইমান সহকারে সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী,আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো।” আমাদের মাঝে সাধারণভাবে এমন একটি বিভ্রান্তিও ছড়িয়ে আছে যে, আল্লাহভীতি, সাধুতা ও দায়িত্বানুভূতির পথ অবলম্বন করলে মানুষ আখিরাতে লাভবান হলেও হতে পারে কিন্তু এর ফলে তাদের দুনিয়া বরবাদ হয়ে যায়। এ মন্ত্র শয়তান প্রত্যেক দুনিয়ার মোহে মুগ্ধ অজ্ঞ-নির্বোধের কানে ফুকে দেয়। এ সংগে তাদেরকে এ প্ররোচনাও দেয় যে, এ ধরণের আল্লাহভীরু ও সৎলোকদের জীবনে দারিদ্র,অভাব ও অনাহার ছাড়া আর কিছুই নেই। মহান আল্লাহ এ ধারণার প্রতিবাদ করে উল্লেখিত আয়াতে বলেন, এ সঠিক পথ অবলম্বন করলে তোমাদের শুধু আখিরাতেই নয় দুনিয়ায়ও সমৃদ্ধ হবে। আখিরাতের মতো এ দুনিয়ায় যথার্থ মর্যাদা ও সাফল্য ও এমন লোকদেও জন্য নির্ধারণ করেন, যারা আল্লাহর প্রতি যথার্থ আনুগত্য সহকারে সৎ জীবন যাপন করে, যারা পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত চরিত্রের অধিকারী হয়, যাদের ব্যবহারিক জীবনে ও লেনদেনে কোন ক্লেদ ও গ্লানি নেই, যাদের ওপর প্রত্যেকটি বিষয়ে ভরসা করা যেতে পাওে, যাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি কল্যাণের আশা পোষণ করে এবং কোন ব্যক্তি বা জাতি যাদের থেকে অকল্যাণের আশাংকা করে না।
এ ছাড়া ‘মাতাউল হুসন’ উত্তম জীবন সামগ্রী শব্দের মধ্যে আরও একটি দিকও রয়েছে এ দিকটি দৃষ্টির অগোচরে চলে যাওয়া উচিত নয়। কুরআন মজিদের দৃষ্টিতে দুনিয়ার জীবন সামগ্রী দু’প্রকারের। এক প্রকারের জীবন সামগ্রী আল্লাহ বিমুখ লোকদেরকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করার জন্য দেয়া হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে তারা নিজেদেরকে দুনিয়া পূজা ও আল্লাহ বিস্মৃতির মধ্যে আরো বেশী করে হারিয়ে যায়। আপাত দৃষ্টিতে এটি নিয়ামত ঠিকই কিন্তু গভীরভাবে নিরীক্ষণ করলে দেখা যাবে এটি আল্লাহর লানত ও আযাবের পটভূমিই রচনা করে। কুরআন মজিদ মাতাউল গারুর তথা প্রতারণার সামগ্রী নামেও একে স্মরণ করে।
দ্বিতীয় প্রকারের জীবন সামগ্রী মানুষকে আরো বেশী কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত করে। এভাবে সে আল্লাহর, তাঁর বান্দাদের এবং নিজের অধিকার আরো বেশী করে আদায় করতে সক্ষম হয়। আল্লাহর দেয়া উপকরণাদির সাহায্যে শক্তি সঞ্চয় করে যে দুনিয়ায় ভালো, ন্যায় ও কল্যাণের উন্নয়ন এবং মন্দ, বিপর্যয় ও অকল্যাণের পথ রোধ করার জন্য আরো বেশী প্রভাবশালী ও কার্যকর প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। এ হচ্ছে কুরআনের ভাষায় উত্তম জীবন সামগ্রী। অর্থাৎ এমন উন্নত পর্যায়ের জীবন সামগ্রী যা নিছক দুনিয়ার আয়েশ আরামের মধ্যেই খতম হয়ে যায় না বরং পরিণামে আখিরাতেও শান্তির উপকরণে পরিণত হয়। যাকে মাতাউল হুসন বা উত্তম দ্রব্য সামগ্রী বলা হয়। মাতাউল হুসন ও গারুর আরো কথা হলো, যারা মাতাউল গারুর তথা ধন সম্পদে প্রতারণার স্বীকার তারা বৈষয়িক ও ভোগবাদী, যারা কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য জীবন ধারণ করে, এক একটি পয়সার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত হয়ে যায় এবং লাভ লোকসানের খতিয়ানের প্রতি সব সময় শ্যেন দৃষ্টি রেখে চলে, তারা কখনো মহান উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যের জন্য কিছু করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না। আপাত দৃষ্টিতে মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের জন্য তারা অর্থ ব্যয় করে ঠিকই কিন্তু এ ক্ষেত্রেও তারা নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, বংশীয় বা জাতীয় বৈষয়িক লাভের হিসাব নিকেশটা আগেই করে নেয়। এই মানসিকতা নিয়ে এমন একটি দীনের পথে তারা এক পাও অগ্রসর হতে পারে না, যার দাবী হচ্ছে পার্থিব লাভ ক্ষতির পরোয়া না করে নিছক আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে নিজের অর্থ ব্যয় করতে পারে। এটিই মাতাউল গারুর।
কিন্তু মাতাউল হুসন তথা উত্তম দ্রব্য সামগ্রীর অধিকারীরা ভিন্নতর বৃত্তির অধিকারী হয়। তাদের প্রসারিত দৃষ্টি বিপুল মনোবল ও উদার মানসিকতা বিশেষ করে আল্লাহর নির্ভেজাল সন্তুষ্টি অর্জনের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী অনুভূত হয়। ভোগবাদী বস্তুবাদী নৈতিকতার পরিবর্তে উল্লেখিত নৈতিক গুণাবলী বিকাশ সাধিত হয়। ধন সম্পদ নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর তা আত্মীয় স্বজন, অভাবী, জনকল্যাণমূলক ও আল্লাহর পথে সংগ্রামের উদ্দেশ্যে ব্যয় হয়। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ব্যয় করা হয়।
লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ