একজন অনন্যসাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন
০৩ জুন ২০২৩, ০৭:২৫ পিএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩, ০১:০৩ এএম
আলহামদুলিল্লাহ। লক্ষ-কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় মুখপত্র, স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যের পতাকাবাহী দৈনিক ইনকিলাব আজ পদার্পণ করল ৩৮তম বর্ষে। প্রাজ্ঞ আলেম, দক্ষ সংগঠক, সফল রাজনীতিবিদ, বহুভাষাবিদ, অসাধারণ বাগ্মী, চারিত্রিক মাধুর্যে অনন্য, মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর মালিকানায় ও ব্যবস্থাপনায় ১৯৮৬ সালের ৪ জুন আত্মপ্রকাশ করে ইনকিলাব। তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র এ এম এম বাহাউদ্দীনের ওপর, যিনি সবেমাত্র বের হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে। একদিন সাংবাদিকদের আপ্যায়ন শেষে বলে দিলেন ইনকিলাবের পলিসি। বিভিন্ন সময়ে বলা সে সব কথা আজও মনে পড়ছে। মোটামুটিভাবে তা হলো: ‘আমরা ইসলামের ব্যাপারে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখ-তা ও স্বার্থের ব্যাপারে সর্বদা থাকব অটল, অবিচল, আপসহীন। আমরা মুসলিম উম্মাহর যে কোনো বিপদ-আপদ মুসিবতে কলম সৈনিক হিসেবেই তাদের পাশে দাঁড়াব। আমাদের লক্ষ হবে নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা। আমরা জনগণের সমস্যা-সংকটের কথা, অভাব-অভিযোগের কথা, দুঃখ-বেদনার কথা, আশা-আকাক্সক্ষার কথা, কল্যাণের কথা তুলে ধরব বলিষ্ঠভাবে। করো প্রতি অনুরাগ বা বিরাগবশত: প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরতে কুন্ঠিত হব না। আমরা চরমপন্থি হব না। মধ্যপন্থি অবলম্বন করব। দেশের প্রতি থাকবে আমাদের গভীর ভালোবাসা। দেশের আইনের প্রতি থাকবে শ্রদ্ধা ও আনুগত্য। জাতি বর্ণ, ধর্ম, নির্বিশেষে সকল নাগরিকের প্রতি থাকব উদার ও সমদৃষ্টিভঙ্গি। আমরা দায়বদ্ধ কেবলমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে।
এই নীতিমালাকে সামনে রেখে শুরু হলো অগ্রযাত্রা। নবীন সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন হাল ধরলেন শক্ত হাতে।
তার বিস্ময়কর প্রতিভা, অপূর্ব কর্মদক্ষতা, দূরদর্শিতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, চুলচেরা বিশ্লেষণ, দার্শনিকসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি, প্রশাসনিক দক্ষতা, আদর্শে অবিচল দৃঢ়তা মুগ্ধ করল সহকর্মীদের। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে পরিচালিত হতে থাকল ইনকিলাব। শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ থাকল না জনপ্রিয়তা, বিদেশে অবস্থানরত বাঙালি পাঠকদেরও মন জয় বরে নিলো অবলীলাক্রমে। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আমেরিকা বিভিন্ন স্টেটে ভ্রমণকালে আমি সচক্ষে দেখেছি ইনকিলারের প্রতি প্রবাসী বাঙালিদের গভীর অনুরাগ। সউদী আরব, ইরাক ও জর্ডানে দেখেছি ইনকিলাবে প্রকাশিত অনেক নিবন্ধ, সংবাদভাষ্য আরবিতে অনুবাদ করে আরব ভাইদের মধ্যে বিতরণ করতে।
ইনকিলাবের ৩৭ বছরের পথ পরিক্রমায় বাধা-বিপত্তিও কম আসেনি। প্রতিষ্ঠাতার ঘোষিত নীতি-আদর্শে অবিচল থেকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাওযাতে, অনেকের কায়েমী স্বার্থে লেগেছে চরম আঘাত, কুমতলব হাসিলে যারা ব্যর্থ হয়েছে, তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে, ক্রুদ্ধ হয়েছে, ক্ষিপ্ত হয়েছে, আক্রমণ করেছে ইনকিলার ভবনের ওপর। ট্রাকচাপা দিয়ে সম্পাদক মহাদয়কে গাড়িসহ পিষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। তাঁর বাসভবনে গুলি চালিয়েছে। মামলার পর মামলা ঠুকেছে, গ্রেফতারের পরোয়ানা জারি করেছে অভিযান চালিয়েছে। কখনো দু-এক দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পত্রিকার প্রকাশনা। আবার কখনো কর্মচারীদের মধ্য অসন্তোষ ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে কুচক্রীরা। কখনো মেশিনরুমে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু উর্দুতে একটা প্রবাদ আছে না ‘আগার টল্লাত কোহে টল্লাত না টল্লত ফকির।’ ‘পাহাড় টলে, কিন্তু ফকির টলেনি।’ তেমনি শত বাধাবিপত্তিতে টলেনি আদর্শগত প্রাণ, দৃঢ়চেতা, আত্মপ্রত্যয়ী সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন। ক্ষণিকের জন্যও তাঁকে স্পর্শ করেনি হতাশা-নৈরাশ্য। হননি কখনো কিংকর্তব্যবিমূঢ়। দারুণ দুরবস্থার মধ্যেও তিনি সহকর্মীদের উদ্দীপিত ও উজ্জীবিত করেছেন
‘তোমার সম্মুখে ওই শোনিতাক্ত যুদ্ধের ময়দান
তোমার পশ্চাতে ওই প্রেতছায়া জিঞ্জির জিন্দান
তবু হে অভিযাত্রিক আগাও সম্মুখপানে স্থির লক্ষ্যে দুর্বার নির্ভীক।’
সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন যেন তারই প্রতীক। সব প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে তিনি ইনকিলাবী চেতনা নিয়ে ইনকিলাবকে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন একটানা ৩৭ বছর ধরে। একটা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে সুদীর্ঘ ৩৭ বছর মোটেই কম কথা নয়! এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কেবল তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকেননি, তাঁর প্রবাদ প্রতীম পিতার মিশনেরও খোঁজখবর রেখেছেন। সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবি-দাওয়ার সপক্ষে বহু প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও ফিচার নিয়মিত ইনকিলাবে ছাপিয়েছেন। সংগঠনের সকল সংবাদ প্রকাশ করেছেন। দেশের পীর-মাশায়েখ ওলামায়ে কেরামের সাথে যোগাযোগ কায়েম করছেন। এভাবে সর্বমহলের ইসলামপন্থিদের সাথে গড়ে উঠেছে তাঁর সম্পর্ক। হয়ে উঠেছেন সকলের আস্থাভাজন প্রিয়পাত্র। তাঁর পিতা হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) যখন দারুণভাবে অসুস্থ, সয্যাশায়ী তখন ২০০৫ সালের ৪ জুলাই সোমবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দৈনিক ইনকিলাবের উদ্যোগে আয়োজন করেছেন ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলন। এমন মহাসম্মেলনের দৃষ্টান্ত এ দেশের ইতিহাসে বিরল, যেখানে বিভিন্ন সিলসিলার প্রখ্যাত পীর ছাহেবান, বিভিন্ন মতাদর্শের ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী স্কলারগণ একত্রিত হয়েছেন। বক্তব্য রেখেছেন, সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবলি পাস করেছেন।
এ মহাসম্মেলনের সবকিছুই ছিল চিত্তাকর্ষক। সবার বক্তব্যই ছিল আকর্ষণীয়। আমরা এখানে উদ্বোধনী ভাষণের স্বল্প কিছু তুলে ধরছি:
‘দেশে ইসলামী আদর্শকে বিজয়ী করতে হলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। অনৈসলামিক কালচার পৌত্তলিক সংস্কৃতির সয়লাব ঠেকাবার কর্মসূচি নিতে হবে। নইলে বিজাতীয় অপসং¯তির উদ্দাম প্রবাহে আমাদের নবপ্রজন্ম স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলবে। মন-মানসিকতার দিক থেকে তারা বিজাতির গোলামে পরিণত হবে। আর এই পথ ধরে রাজনৈতিক গোলামিও অনিবার্য হয়ে উঠবে। কালচারের পথ ধরে এক ভয়ঙ্কর দানব আমাদের গ্রাস করার জন্য ধেয়ে আসছে; তার মোকাবেলা করতে হবে। সমাজকে এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তাদের সামনে এর বিকল্প তুলে ধরতে হবে। ইসলামী জ্ঞান আহরণের সাথে সাথে মুসলমানদের আধুনিক জ্ঞানও আহরণ করতে হবে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি করায়ত্ত করতে হবে। আল্লাহর দ্বীনকে সর্বক্ষেত্রে বিজয় করার জন্য সুগোপযোগী হাতিয়ারে অবশ্য সমৃদ্ধ হতে হবে।’
এ মহাসম্মেলন সফলভাবে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জনাব বাহাউদ্দীন যেমন সকলকে মুগ্ধ করেছেন তেমনি সবার মনে এ আস্থাও সৃষ্টি হয়েছে যে, তাঁর মহান পিতার আরাধ্য কার্যাবলি ও স্বপ্ন বাস্তব রূপদানের যোগ্যতাও রয়েছে তাঁর মধ্যে।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নব রূপের রূপকার ও সভাপতি হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ইন্তেকাল করেন ২০১৯ সালের ২৬ জানুযারি সোমরার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন সয্যাশায়ী। তার পক্ষে যখন সংগঠনের গুরুদায়িত্ব পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন তিনি ওয়ার্কিং কমিটির সভা আহ্বান করিয়ে কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে জনাব এ এম এম বাহাউদ্দীকে জমিয়াতের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নিযুক্ত করেন। দায়িত্বপ্রাপ্তির পর দীর্ঘদিন রোগভোগান্তে মাওলানা হুজুর সকলকে শোকসাগরে ভাসিয়ে চিরদিনের জন্য দুনিয়া ছেড়ে পাড়ি জমান পরকালের পথে। জমিয়াতের ওয়ার্কিং কমিটি এক সভায় মিলিত হয়ে পুনর্গঠন করে নতুন ওয়ার্কিং কমিটি। সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচন করা হয় সুযোগ্য পিতার সুযোগ্য পুত্র আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনকে। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয় মাওলানা কবি রূহল আমীন খানকে। অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমাদ মোমতাজীকে মহাসচিব পদে পূর্ববত বহাল রেখে, অন্যান্য পদ পূরণ করে পূর্ণাঙ্গ করা হয় কমিটি। মাওলানা এম এ মান্নানের সার্থক উত্তরসুরি, দৈনিক ইনকিলাবের নির্ভীক সম্পাদক কর্মবীর এ এম এম বাহাউদ্দীনকে জমিয়াতের কর্ণধার রূপে পেয়ে আনন্দিত হয় মাদরাসার শিক্ষক সমাজ। শুরু হয় তার নেতৃত্বে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার অভিযাত্রা। চিহ্নিত করা হয় সমস্যাবলি ও তা সমধানের উপায় শুরু হয় অবিরাম কর্মতৎপরতা। এর সাথে চলতে থাকে গণসংযাগের কাজও। সাড়া পড়ে যায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। জনাব বাহাউদ্দীনকে প্রধান অতিথি করে আয়োজন করা হয় জেলায় জেলায় সম্মেলনের। এই পর্যায়ে প্রথম সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় দেশের সর্বদক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের সৈকত শহর কক্সবাজারে। এক দিকে নীল সাগর আর নীল আকাশের কোলাকুলি, অপর দিকে সবুজ মেঠো পাহাড়ের লীলায়িত নয়নাভিরাম রূপমাধুরী। এই মনোরম নিঃসর্গের ক্যানভাসে জমায়েত একই সুন্নতি লেবাসে ভূষিত বিশাল জনতা। তকবির আর স্বাগত ধ্বনিতে মুখরিত আকাশ-বাতাস। সে কী আবেগ! সে কী উদ্বেল উচ্ছ্বাস! তরুণ শিক্ষকরা যেন বেশি খুশি তরুণ নেতাকে পেয়ে। সুদৃশ্য তোরণ। রঙ-বেরঙের মালিকা আর ফুলের পাপড়ি বর্ষিত শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন। তিলাওয়াতে কালামে পাক, হামদ ও নাতের সুর মূর্ছনার পর চলে জনতার বক্তৃতা, নেতার বক্তৃতা। কক্সবাজারের পর ইসলামের প্রবেশদ্বার বন্দর নগরী, শত আউলিয়ার পুণ্য স্মৃতিধন্য সংগ্রাম ও আন্দোলনের পাদপীঠ চট্টগ্রাম। তারপর মোমেনশাহী জেলা শহর। যমুনা পেরিয়ে সিরাজগঞ্জ। সেখান থেকে পদ্মাপাড়ের সীমান্ত নগরী শাহমখদুম, নিয়ামাতুল্লা ওলির স্মৃতিধন্য রাজশাহী। এভাবে উত্তর বা দক্ষিণবঙ্গ হয়ে প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে অনুষ্ঠিত হয় সভা-সমাবেশ। সর্বত্র দৃষ্ট হয় একই দৃশ্য। শিক্ষক-জনতার আবেগ-উচ্ছ্বাস, নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা, শৃঙ্খলা। সে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা।
সভা-সম্মেলন, মহাসম্মেলন এবং নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, মন্ত্রণালয়ের সাথে দেন-দরবার, মন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের পর বৈঠক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ ও বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে।
জমিয়াতের দাবির অনেকটাই ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে, বাকিগুলোও পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ। সময় সামনে এগোবে, নতুন নতুন সমস্যারও উদ্ভব হবে তারও সমাধান করতে হবে। এ এক চলমান প্রক্রিয়া। অবশ্য যোগ্য নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন রাখতে হবে অব্যাহত। আল্লাহর মেহেরবানিতে যোগ্য নেতৃত্ব আছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করে, ঐক্যকে অটুট রেখে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সামনে। পরিসর স্বল্প। আর দু-একটি কথা বলে নিবন্ধের ইতি টানব।
জনাব এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে সম্মেলন-মহাসম্মেলন হয়েছে অনেক। তার মধ্যে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলনের ওপর কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। আর একটি মহাসম্মেলনের কথা না বললেই নয়। সে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ। সে ছিল অভূতপূর্ব এক মহাসম্মেলন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তো সম্মেলন-মহাসম্মেলন অনুষ্ঠানেরই জায়গা। সেখানে অহরহ তা হয়েও থাকে। কিন্তু আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, দাড়িওয়ালা, টুপি পরিহিত সুন্নতি লেবাসে ভূষিত জনতার, মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্রদের ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিশালায়তন ইসলামি মহাসম্মেলন কখনো হয়েছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু তা একবার হয়েছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের উদ্যোগে, এই সংগঠনের সুযোগ্য সভাপতি আলহাজ এ এম এম বহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ সালে। অনেকের কাছে সে এক অমূল্য স্মৃতি, গৌরবদীপ্ত ইতিহাস। এ সম্মেলনে মেহমান হিসেবে যোগদন করেছিলেন (তৎকালীন) শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সংসদ সদস্য বিএইচ হারুন এবং অনেক শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
ইসলামি আরবি বিশবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি শতবর্ষের এ জন্য মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি থাকাকালে বহু বছর দীর্ঘ আন্দোলন করেছেন জমিয়াতের ব্যানারে সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন ও অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন শতাব্দীর এ দাবি পূরণ করলেন, প্রতিষ্ঠা করলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, তখন জমিয়াত সভাপতি জনাব বাহাউদ্দীন যে শুকরিয়া জ্ঞাপন ও স্মৃতিচারণ করলেন তা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। পূর্ববর্তীদের প্রতি শ্রদ্ধা-সৌজন্য প্রদর্শন ও তাদের অবদানের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি প্রদানের তা এক অনন্য উদাহরণ। যদিও তা তখন প্রকাশিত হয়েছে তবুও পুনরুল্লেখ করার প্রতি মনের তাকিদ অনুভব করছি।
শুরু এবং শেষে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রশংসাই বান্দার জন্য পরম আনন্দের। আজকের এ মুহূর্তেও আমি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি তার অপার করুণায় দীর্ঘদিনের লালিত একটি স্বপ্নকে বলা চলে সর্বাংশে বাস্তবায়নের তওফিক দান করেছেন। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিশেষায়িত শিক্ষা, চিন্তা, অধ্যয়ন ও গবেষণার একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন লালন করেছেন এ দেশের লাখো কোটি ইসলামপ্রিয় সচেতন নাগরিক। এ দেশের প্রাতঃস্মরণীয় সকল ওলী-আওলিয়া, পীর-মাশায়েখ, উলামা ও বুদ্ধিজীবী মহল দীর্ঘদিন ধরে ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি সামনে নিয়ে একটি সুমহান লক্ষ্য ও স্বপ্নের সৌধ সাজিয়েছেন। বাংলাদেশ যুগের অতীত শাসনামলে ধাপে ধাপে এ দাবি পোক্ত হলেও সর্বাংশে এর বাস্তবায়ন কোনো শাসকের হাতেই হয়নি। এ সাফল্য ও সৌভাগ্য লেখা ছিল আজকের প্রধানমন্ত্রীর ললাটে। যাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহে ও নির্দেশনায় আমার দেখা এ যাবতকালের অন্যতম সফল শিক্ষামন্ত্রীর অকৃত্রিম মনোনিবেশ ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এ স্বপ্নটি আজ বাস্তব সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে। সংসদে বিল পাস থেকে শুরু করে আজ এ মুহূর্তে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় তার সার্বিক কার্যক্রম পূর্ণরূপে চালু করার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পেছনে এঁদের অবদান ভোলার মতো নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও মোবারকবাদ জ্ঞাপন করছি। এ মহান কাজে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তির প্রতিই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভ কামনা।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা দৃশ্যত কেবল শুরু হয়েছে কিন্তু এর চিন্তা, কল্পনা, ভাবনা ও স্বপ্ন যখন থেকে তখন থেকেই যে ইসলামি নেতৃবর্গ এর জন্য চেষ্টা, সংগ্রাম, শ্রম, মেধা, দোয়া ও আত্মনিবেদনের মাধ্যমে এই স্বপ্ন বা দাবিটির বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মধ্যে যারা দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছেন আর যারা দুনিয়ায় আছেন, এঁদের প্রত্যেকের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রাণভরে মোনাজাত করি, আল্লাহ তাদের মহান ইচ্ছা ও কর্ম-সাধনার উত্তম বদলা দান করুন।
এ মুহূর্তে আমি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি আমার মরহুম আব্বাজি মাওলানা এম এ মান্নান রহমাতুল্লাহি আলাইহকে, যার দূরদর্শী নেতৃত্ব বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনকে এশিয়ার বৃহত্তম অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠনে পরিণত করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের একক ও অনন্য এ সংগঠন বাংলাদেশের জন্য এখন ঐক্য, শৃঙ্খলা, সংহতি ও আদর্শিক সংগঠনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত; এমনকি প্রবাদ সংগঠনের রূপ পরিগ্রহ করেছে। দেশ ও জাতির গঠনমূলক প্রয়োজনে সামান্যতম সময়ের আহ্বানে দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে মাদরাসাপ্রধান, পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিপুলসংখ্যক উপস্থিতি নিশ্চিত করা শুধু জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পক্ষেই সম্ভব। এমন বহুমুখী জনপ্রতিনিধিত্বশীল পেশাজীবী সংগঠন, এতটা কোয়ালিটি উপস্থিতি দেশের আর কোনো অঙ্গনেই সম্ভব নয়, একথা এখন সবাই স্বীকার করছেন। এ মুহূর্তে আমার স্মরণ করতে গর্ববোধ হচ্ছে ওই সব মনীষীর পবিত্র স্মৃতির কথা, যারা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনকে নিজেদের দোয়া, মোনাজাত ও আন্তরিক সমর্থন এবং পৃষ্ঠপোষকতা দানে ধন্য করেছেন। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দাবি পূরণ নিয়ে বিভ্রান্তির একপর্যায়ে ওলীয়ে কামেল ছাহেব কেবলা ফুলতলী মাওলানা আবদুল লতীফ চৌধুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহ পীর ছাহেব ফুলতলী তার অপরিসীম আধ্যাত্মিক চেতনা নিয়ে সুদূর সিলেট থেকে রাজধানী অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চ, বিশ্ববিদ্যালয় দাবি আদায়ে মাওলানা এম এ মান্নান রহমাতুল্লাহি আলাইহের পাশে যেসব নূরানী চেহারা এখনো স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বল করছে সেই খতিব মাওলানা উবায়দুল হক জালালাবাদী, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক, ছারছীনার মুহতারাম পীর সাহেব কেবলা হযরত মাওলানা শাহ্ আবুজাফর মোহাম্মদ ছালেহ, মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, চরমোনাইয়ের মরহুম পীর সাহেব, রাজধানীসহ সারাদেশের প্রখ্যাত ওলামা-মাশায়েখ, দেশের ঐতিহ্যবাহী খানকা-দরবারের পীর এবং মাশায়েখে তরিকতপন্থীগণসহ নানা মত ও পথ নির্বিশেষে সকল স্তরের ইসলামি নেতৃত্ব এবং ব্যক্তিত্ব, যাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আন্তরিক অবদান, সমর্থন ও দোয়ার ফলে আজ এ বিশ্ববিদ্যালয়Ñ আজকের এ দিনে তাদের সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
আজকের দিনে বিশেষভাবে স্মরণ করতে হয় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক ও কর্মচারীদের একক ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সর্বস্তরের নেতৃবর্গকে, যাদের ঐকান্তিক সংগ্রাম ও সাধনায় এই মহান স্বপ্নটি বাস্তবে রূপ লাভ করতে পেরেছে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহান পৃষ্ঠপোষক, মুরুব্বি ও অতীত নেতৃবর্গের জন্যও এ সাফল্য একটি আনন্দের বিষয়। তারা রূহের জগতেও এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আনন্দিত বোধ করবেন বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চড়াই-উৎরাই বিশিষ্ট দীর্ঘ সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ সহকর্মীদের প্রতি রইল আমার অকুণ্ঠ শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়নে যারাই যেভাবে অবদান রেখেছেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পক্ষ থেকে তাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও মোবারকবাদ।
বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, যার ব্যক্তিগত আগ্রহ, আন্তরিকতা ও উদ্যোগের ফলে আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ জনগণের দাবি সূর্যের মুখ দেখেছে। ২০০৬ সালের সে সময়টি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়ে আছে, যখন জননেত্রী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্ট দীর্ঘ সময় নিয়ে অনুধাবন করেন। তার ধর্মপ্রিয় মন ব্যক্তিগতভাবে আলেম-ওলামাদের এ প্রাণের দাবিটি পূরণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুত হয়, যার প্রতিফলন আজ জাতি দেখতে পাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের গুরুত্ব, অবস্থান ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা এবং দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের ওপর এর প্রভাব বিষয়ে বুঝিয়ে বলেছেন আজকের পরিকল্পনামন্ত্রী বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী কামাল ভাই আ হ ম মোস্তফা কামাল।
উল্লেখ্য যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আ হ ম মোস্তফা কামাল (কামাল ভাই) ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কনসেপ্ট জানতে চাইলে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঐতিহাসিক এ দাবির বিষয়ে পূর্ণ ধারণা সংবলিত একটি সার-সংক্ষেপ তৈরি করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা কামাল ভাইয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে গভীর অভিনিবেশসহ অধ্যয়ন করেন। এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিশেষ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকারিতা ও বিশ্ব সভায় বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনের অবদান জ্ঞান-গবেষণা ও চিন্তা-দর্শনের প্রেক্ষিতে উপস্থাপন করার গুরুত্ব তাদের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে ‘শিক্ষাবন্ধু’ নূরুল ইসলাম নাহিদ সীমাহীন কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদের দাবিদার। তিনি যে ধৈর্য, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ পথ প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর জন্যও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। নানা মত ও পথের লোকজন নিয়ে সরকার। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সদিচ্ছা ও জনবান্ধব মনোভাবের ফলেই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। সংসদে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস করা এবং ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম উদ্বোধন পর্যন্ত সবগুলো পর্যায় অত্যন্ত দৃঢ়তা ও প্রজ্ঞার সাথে সম্পাদন শিক্ষামন্ত্রীরই কৃতিত্ব। এ পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় শিক্ষানীতি কমিশনের ড. কাজী খলীকুজ্জামান প্রমুখের ভূমিকাও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি শিক্ষামন্ত্রীর সকল সহকর্মী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যাদের অবদানও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এ পর্যায়ে কৃতজ্ঞতা ও গর্বের সাথে উল্লেখ করতে চাই জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের সংগ্রামে আমার সাহসী সহযোদ্ধা মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর কথা। জমিয়াতের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জনপ্রিয়মুখ মাওলানা মোমতাজী তার নিষ্ঠা, শ্রম, আন্তরিক তৎপরতা ও সচেতন দিকনির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে এ নিরলস নেতার সার্বক্ষণিক কর্মতৎপরতা জমিয়াতকে যেমন সাফল্যের পথে এগিয়ে নিচ্ছে, ঠিক তেমনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সকল দাবি-দাওয়া একে একে পূরণের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আমি আজকের এ সাফল্যের মুহূর্তে জমিয়াত মহাসচিবকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও মোবারকবাদ জ্ঞাপন করছি।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দীর্ঘ পথযাত্রার মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি- দাওয়া, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়ন ইত্যাদি ইস্যু বাংলাদেশের জনঘনিষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব, খানকাহ, দরবার, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারগণের এক সেতুবন্ধনের ভূমিকা রেখেছে। অতীত স্মৃতি রোমস্থন করলে আজ এ দাবি বাস্তবায়নে কত শত দৃশ্যপট, চিত্র ও ছবি যে স্মৃতির আয়নার ভেসে উঠবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। পুরনো পত্রিকা ও অ্যালবাম ঘেঁটে যদি সব দৃশ্যপট ও চিত্র তুলে আনা হয় তাহলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় হবে বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি, দাওয়াহ ও আধ্যাত্মিক আন্দোলনের সকল মত ও পথের মিলনমেলা। মনে পড়ে ওসমানী মিলিনায়তনে বাংলাদেশের ইতিহাসের স্মরণীয় ইসলামী সংহতির জীবন্ত ছবি ঐতিহাসিক জাতীয় ওলামা- মাশায়েখ সম্মেলনের কথা। একই মঞ্চে দেশের হৃদ্যতা, সংহতি ও সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছিল, তা হৃদয়জগতে বহু শতাব্দী ধরে বিরাজ করবে। বহু গুণীজন আজোবধি সেই গৌরব শ্রদ্ধাভরে উল্লেখ করেন যে, ঐক্য ও সংহতির একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ এই ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। এ সংহতি ও সম্প্রীতির সুদূরপ্রসারী মানস্তাত্ত্বিক প্রভাব বাংলাদেশের শতকরা ৯২ ভাগ জনগণের মনের জমিনকে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সামগ্রিক ইসলামী জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যের জন্য ক্রমান্বয়ে প্রস্তুত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
একটি জাতি বা সম্প্রদায় তার শ্রেষ্ঠত্ব ও কার্যকারিতা প্রমাণ করতে পারে কেবলই জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-যোগ্যতা ও দর্শনের মাধ্যমে। যে জাতির নৈতিক, দার্শনিক ও জ্ঞানগত ভিত্তি যত মজবুত তার স্থায়িত্ব, অবদান, প্রভাব এবং আর্থ- সামজিক, রাজনৈতিক ও ভূপ্রাকৃতিক শক্তি সামর্থ্য ও জ্ঞানগত-নৈতিক-দার্শনিক তথা বাংলাদেশ ও বিশ্বের কোটি কোটি ইসলামী ব্যক্তিত্বের জন্য নতুন এক যুগের সূচনা করতে পারে এ জ্ঞানকেন্দ্র। শিক্ষা, অধ্যয়ন, চিন্তা-গবেষণা, নীতি ও দর্শনের এই কেন্দ্র হতে পারে জ্ঞান গবেষণার বিশ্ব অভিযাত্রা এবং প্রাচ্য- প্রতীচ্যের চিন্তা-দর্শনের নতুন মিলনমেলা। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান- বিজ্ঞান ও জীবন দর্শনের উজ্জ্বলতম নতুন দিগন্ত। এ পর্যায়টি বাংলাদেশের হাজার হাজার মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য সত্যিই বহুল প্রতীক্ষিত এক শুভমুহূর্ত।
আমি দেশের বিখ্যাত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্বনামধন্য শিক্ষাবিদের সাথে এই প্রতিষ্ঠান-প্রাপ্তির আনন্দ ভাগাভাগির পাশাপাশি মহান মুরুব্বিদের এই আমানত এবং বিশ্বমুসলিমের প্রত্যাশার ধন এই জ্ঞানকেন্দ্রের প্রকৃত হক যথাযথ আদায়ে বলিষ্ঠ শপথ গ্রহণের আহ্বান জানাই। এ দেশের ইসলামি আরবি ঐতিহ্যের গবেষক, আলেম, শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষানুরাগী শ্রেণির সম্মিলিত সাধনার স্বপ্নের এ বিশ্ববিদ্যালয় ইনশাআল্লাহ একদিন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যেও আলোচিত সম্মানিত এবং মান্য প্রতিষ্ঠানরূপে পরিগণিত হবে, এটাই আজকের প্রত্যাশা। যারা এর সাথে যুক্ত ছিলেন বা আছেন আমরা কেউই একদিন থাকব না। কিন্তু এ গৌরব ও মহত্ত্ব অমর। মানুষের জ্ঞান-সাধনা ও নৈতিক-দার্শনিক অবদান অক্ষয় চিরন্তন। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সাথে যারা এর চিন্তা-চেতনা, আন্দোলন, কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, সক্রিয় ছিলেন তাদের অবদান ও স্মৃতিও থাকবে চির অম্লান। দোয়া করি যেন, মহান আল্লাহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই এ অমলিন আনন্দ আর অপার্থিব দায়িত্বের গুরুভার বইবার শক্তি দান করেন।
এই সঙ্গে আমরাও দোয়া করছি রাব্বুল আলামীন তাঁকে স্বার্থক ও বিজয়দীপ্ত দীর্ঘায়ু দান করুন, দ্বীন ও মিল্লাতের আরও খিদমত করার তাওফীক দিন। আমীন।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
বিষয় : year
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান