টেকসই উপকূল ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে
০৩ জুন ২০২৩, ০৭:৪০ পিএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩, ০১:০৩ এএম
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল যেমন সংকটাকীর্ণ তেমনি সম্ভাবনাময়। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, জীবিকা নির্বাহে ঝুঁকি, অভাব অনটনে বিক্ষুব্ধ-বিপর্যস্ত এক জনপদ এটি। ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি, জোয়ার-ভাটার বিস্তৃতি ও লবণাক্ততার প্রভাবÑ এ তিনটি নির্দেশকের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মোট উপকূলীয় জেলা ১৬টি। এর মধ্যে পূর্ব উপকূলে রয়েছে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর; মধ্য উপকূলের অন্তর্ভুক্ত ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, শরীয়তপুর এবং পশ্চিম উপকূলের আওতাভুক্ত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা। উপকূলীয় জেলাগুলোতে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা সাড়ে ৩ কোটির বেশি। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ মহামারি সৃষ্টিকারী নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে একরকম যুদ্ধ করে টিকে আছে। প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট নানাবিধ কর্মকা-ের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও নানা ধরনের পানিবাহিত রোগের সাথে লড়াই করে চলতে হয়। অভাব-অনটন ও মানবেতর জীবনযাপন যেখানে অধিকাংশ মানুষের নিত্য সঙ্গী। সেই সাথে সুপেয় পানীয়জলের অভাব, ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি, মাটি ও পানিতে অতিমাত্রায় লবণাক্ততা, নানা রকমের দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিসহ নানাবিধ কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকৃত মানুষের জীবন ও জীবিকার ধারা যেমন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে, ঠিক তেমনি এ অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কর্মকা- হয়েছে মন্থর।
পরিসংখ্যান বলছে, উপকূলীয় জেলাসমূহের ১৩১টি উপজেলা লবণ পানির আগ্রাসনে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। মাটি ও পানি অতিমাত্রায় লবণাক্ততার জন্য লবণ সহনশীল কৃষি বা মৎস্য চাষে মানুষের জীবনযাত্রার মানের দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। বৈরী প্রতিকূলতা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততার প্রভাব প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে ফেরে উপকূলের শ্রমজীবী মানুষকে। লবণাক্ততার তীব্রতা অত্যাধিক বেশি হওয়ায় ফসল উৎপাদনে হিমশিম খেতে হয় উপকূলবাসীকে। পশ্চিম উপকূলের আওতাভুক্ত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার মানুষের চিংড়ি চাষ প্রধান উপজীব্য হলেও চিংড়ি ঘেরে পানি সরবরাহকৃত নদীসমূহে অধিক পলি জমা হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময়ে বেশিরভাগ চিংড়ি ঘের পানি পায় না। ফলে চিংড়ি চাষিরা সময়মত চিংড়ির পোণা ঘের বা জলাশয়ে ছাড়তে পারে না। এছাড়া চিংড়ির নানা ধরনের রোগবালাইয়ের আধিক্যের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের চিংড়ি চাষিরা চিংড়ি চাষে লাভবান তো দূরের কথা সারাবছরে বিনিয়োগের টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে না। চিংড়ি উৎপাদনে আনুষঙ্গিক সকল খরচের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে চিংড়ির বাজারমূল্যের নেতিবাচক প্রভাব চিংড়ি চাষিদের অনেকটা কোণঠাসা করেছে। তার উপর চিংড়ি চাষিদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভিটেমাটি হারিয়ে সবকিছু নিঃস্ব হওয়ার মতো উদাহরণ তো হরহামেশাই চোখে পড়ে।
টেকনাফের নাফ নদের মোহনা থেকে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত নদী রায়মঙ্গল-কালিন্দী পর্যন্ত উপকূল অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। এছাড়া নদীমাতৃক এই দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০০ নদ-নদী রয়েছে। বর্তমানে যেসব নদী রয়েছে সেগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,১৫৫ কি. মি.। দেশের আনাচে কানাচে জালের মতো বিস্তৃত এসব নদ, নদী ও সমুদ্রের কারণে দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ বাংলাদেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব আজ বিশ্বব্যাপী পরিলক্ষিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৮৫টি আবহাওয়াজনিত তীব্র দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আবার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ-বিপদাপন্নতায় পৃথিবীতে বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের উপর কারও হাত নেই ঠিকই কিন্তু দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাতেও বেশ ঘাটতি রয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ষাটের দশকে দেশের ১৩ জেলায় ৫৮১০ কি. মি. উপকূলীয় এলাকায় ১৩৯টি পোল্ডার বা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। অবাক হলেও সত্যি, স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূল সুরক্ষায় নতুন একটি পোল্ডারও তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। পাকিস্তান আমলে তৈরি বেড়িবাঁধ সংস্কার আর পুনঃনির্মাণেই কেটে গেছে অর্ধশত বছরেরও বেশি সময়। দীর্ঘকাল আগে নির্মিত এসব বাঁধ সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা এখন আর সামাল দিতে পারছে না। ৭১০ কি. মি. দীর্ঘ উপকূল রেখার প্রায় ১৫,০০০ বর্গ কি. মি. উপকূলীয় এলাকা এখনো অরক্ষিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রমতে, ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়সহ একের পর এক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উক্ত বাঁধসমূহের বেশিরভাগ অংশ নাজুক হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র সুপার সাইক্লোন সিডরে উপকূলীয় ৩০ জেলার ২৩৪১ কি. মি. বাঁধ বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিলীন হয় ৩৯১ কি. মি. এবং ১৯৫০ কি. মি. বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৩৮টি পোল্ডারের ১৬৫১ কি. মি. বেঁড়িবাধের মধ্যে ৬৮৪ কি. মি. বিধ্বস্ত হয়। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে উপকূলীয় ১০ জেলার ৪৭৮ কি. মি. বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে বিলীন হয়ে যায় এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬৭৮ কি. মি.।
সম্প্রতি উপকূলবাসী চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে পার করেছে সুপার সাইক্লোন ‘মোখা’কে মোকাবেলা করার সময়। আমাদের সৌভাগ্য, মোখা এদেশের উপকূলে আঘাত হানেনি। আঘাত হানলে মোখার প্রভাবে যে ক্ষয়ক্ষতি হতো সেটা বিগত দিনে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়সমূহের সব ক্ষয়ক্ষতিকে হার মানাতো। এটা জোর গলায় বলা যায়, বিশ্বমন্দার এই সময়ে মোখার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিকে কাটিয়ে ওঠাও বেশ দুরুহ হতো। মোখা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানেনি ঠিকই কিন্তু পরবর্তীতে যে মোখার মতো অন্য কোনো সুপার সাইক্লোন আসবে না, সেটার আশঙ্কা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অধিক গুরুত্বের সাথে আমলে নেওয়া উচিত। মোখা আঘাত হানলে সরকারের পক্ষ থেকে দুর্যোগ পরবর্তী জনগণকে যে ত্রাণ বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো সেই অর্থ উপকূল অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজে ব্যয় করা যেতে পারে, যাতে করে পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলা করতে এলাকাবাসী কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়। শুধুমাত্র দুর্যোগ কাছে এলেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়, যথোপযুক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি কিংবা বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকার সংবাদ। এরপর দুর্যোগ কেটে গেলে আর সেই বেড়িবাঁধের খবর থাকে না। সরকার হয়তোবা বাজেট দেয়। কিন্তু সেই বাজেট কাগজে-কলমেই থেকে যায়। বাধ্য হয়ে উপকূল অঞ্চলে সেসব বাঁধ জীবনের প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে তোলে। স্থানীয় জনগণের এমন অভিযোগ রয়েছে যে, তারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ সংস্কার করে আর বিল তুলে নেয় সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারা ভুক্তভোগীদের মাথা বিক্রি করে নিজের আখের গোছাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। দুর্যোগ আবির্ভূত হওয়ার পর অপ্রতুল ত্রাণ নিয়ে সেগুলো বিতরণ নাটক এবং ফটোসেশনেই বেশি আগ্রহ দেখিয়ে থাকে জনপ্রতিনিধিরা। সেজন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেট বরাদ্দ এবং সেই বরাদ্দ যেন যথাযথভাবে ব্যয় হয় সেজন্য নির্ভরযোগ্য মনিটরিং সেল গঠন করার দাবিও করেছে স্থানীয় জনগণ। অবশ্য দুর্যোগকালীন সময়ে উপকূলীয় অঞ্চলের দুর্গত মানুষদের সীমাহীন দুর্ভোগ তাদের অনেকটা সয়ে গেছে। তারা ভালোভাবেই বুঝে গেছে, প্রকৃতির সাথে লড়াই করে আপন চেষ্টাতেই নিজেদের প্রতিরক্ষা বলয় নিজেদেরই তৈরি করে বেঁচে থাকতে হবে। প্রকৃতির সাথে লড়াই করতে করতে তারা আবিষ্কার করছে লড়াইয়ের নতুন নতুন পদ্ধতি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা দেখে আসছে, সরকারি ত্রাণ বা সুযোগ-সুবিধা তাদের পর্যন্ত আসতে আসতে সেগুলো নাই হয়ে যায়। বহুজনের হাত বদলে যখন তাদের কাছে পৌঁছায় তখন সেই ত্রাণের আর অস্তিত্ব থাকে না। এছাড়া নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বা জনপ্রতিনিধিদের যারা ত্রাণ বিতরণ করে তাদের মুখ চিনে ত্রাণ কার্যক্রম জনগণকে হতাশ করে। তাই তারা সরকারি ত্রাণের আশা বাদ দিয়ে জোর গলায় সকলে একাত্মতা প্রকাশ করেছে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের।
স্বভাবতই বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত নদীগুলো অনেক বেশি খরাস্রোতা হয়। এসব নদীর দুইপাশে দীর্ঘস্থায়ী কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ ছাড়া মাটির বাঁধ কোনভাবেই টেকসই হয় না। এজন্য খরাস্রোতা নদীসমূহে টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের শতকরা ৫০ ভাগ গাছের এখন আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেসব গাছ হাওয়া হয়ে গেছে। ফলে ৭১০ কি. মি. উপকূলীয় এলাকা লবণাক্ততা ও ঝড় জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেজন্য উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী করার প্রকল্প জোরদার করতে হবে। নতুন বাঁধ নির্মাণ করে সেখানে সবুজ বন তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের জন্য সাইক্লোন শেল্টারের নামে ৭০৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যা সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রতিজন মানুষের জন্য বরাদ্দ দুই বর্গফুট জায়গা। এত অল্প জায়গায় একজন মানুষের জন্য বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব নয়। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বরাদ্দকৃত এই জায়গা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তার উপর দুর্যোগ আঘাত হানার ৫৬ ঘণ্টা আগে আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে জনগণের যেতে বলা হয়। জায়গার অপ্রতুলতার কারণে অনেকে যেতে চায় না। ফলে দুর্যোগ আঘাত হানার কারণে অনেকেরই মৃত্যু হয়। তাই উপকূল অঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টারের সংখ্যা অবশ্যই বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশের উপকূলাঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। উপকূলের বহুবিচিত্র ব্যবহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ম্যানগ্রোভ বন, মাছ শিকার, চিংড়িচাষ সংক্রান্ত কর্মকা-, পর্যটন, নৌবাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, জাহাজ ভাঙা, তেল ও গ্যাস সন্ধান ইত্যাদি। প্রায়শই উপকূলের প্রাকৃতিক সম্পদ প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বহুবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশে সত্যিকারের সমন্বিত উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় পরিবেশগত বিবেচনাগুলির সমন্বয় বিধানের কিছুটা অভাব রয়েছে। উপকূলীয় জমির অবাধ বেসরকারিকরণ পরিবেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। মৎস্যজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি, উপকূলীয় সম্পদের অতিব্যবহার, পানির মানের অবনতি, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন গ্রুপের রেষারেষি, চিংড়ি ঘের তৈরির জন্য ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস, প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, জোরপূর্বক ভূমি দখল, নদীশাসন, জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি প্রধান সমস্যাগুলির অগ্রাধিকারভিত্তিক সুরাহা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় অঞ্চল সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হলেও কিছু বিষয় নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পরিবেশবাদীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৪% শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত হতে পারে। তার নেতিবাচক প্রভাবে সাড়ে ৩ কোটি লোক জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকৃত মানুষদের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছে বাংলাদেশ। অসময়ে প্রবল বৃষ্টি, বর্ষাকালে অনাবৃষ্টি, লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির অভাব, শস্য কমে যাওয়া, নদীভাঙন, ফসলহানিসহ নানাবিধ কারণে উপকূলবাসী জীবনধারণে হিমশিম খাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে প্রায় প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক লোক গৃহহীন হয়ে যাচ্ছে। এ সকল বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে উপকূলবাসীকে রক্ষা করার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলোকে স্থানীয় মৎস্য ও কৃষিজীবী মানুষের জীবন ধারার সঙ্গে সমন্বয় করার পরিকল্পনা করতে হবে। উপকূলীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বিশেষ নজর দিতে হবে। শহর রক্ষা বাঁধ, সড়ক, রাস্তা, বাজার, আবাসন, স্যানিটেশন, স্কুল, কলেজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানির টেকসই পরিকল্পনা ইত্যাদির বিষয়ে কঠোর হতে হবে। উপকূল অঞ্চলকে ঘিরে যে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে সেই শিল্পকে আরও মজবুত করতে উপকূল অঞ্চল রক্ষায় দায়িত্ব নিতে হবে। সমুদ্রকেন্দ্রিক দেশের অন্যতম দু’টি প্রাকৃতিক সম্পদের একটি হচ্ছে সুন্দরবন এবং অন্যটি পর্যটন সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ কক্সবাজার। এই দু’টি প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিঅর্থনীতি ও বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের সুরক্ষা নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি আগামী দিনে বঙ্গোপসাগরকেন্দ্র্রিক সমুদ্রঅর্থনীতি বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি দাতা সংগঠনগুলোসহ সকল সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অতিদ্রুত গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
বিষয় : year
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান