বগুড়ার খেড়ুয়া মসজিদ
০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম
উত্তরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া জেলায় অনেকগুলো প্রাচীন মসজিদ আছে। এর মধ্যে ইসলামী স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো খেড়ুয়া মসজিদ। মসজিদের গায়ে উৎকীর্ণ শিলালিপি অনুযায়ী এটির নির্মাণকাল ১৫৮২ সাল। সেই হিসেবে ২০২৪ সালে এর বয়স দাঁড়ায় ৪৪২ বছর।
চুন, সুড়কি ও ইটের সমন্বয়ে গড়ে তোলা এই মসজিদের এখন পর্যন্ত টিকে থাকাটা বিস্ময়কর বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নামাজ পড়তে এসে বিস্ময়ে অভিভূত হন মুসলমানরা। মুসলমান ছাড়াও ইতিহাস ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ের শিক্ষার্থী এবং গবেষকরাও ছুটে আসেন এই মসজিদ চত্বরে।
মসজিদটির নাম কেন খেড়ুয়া মসজিদ সেটার কোনো সদুত্তোর নেই কারো কাছে। ইতিহাসবিদ মোহাম্মদ জাকারিয়া নিজের মতামত ও ব্যাখ্যায় বলেছেন, আরবি/ফারসি ভাষায় খেড়ুয়া শব্দের ব্যবহার নেই। তবে ফার্সিতে ‘খায়েরগাহ’ শব্দের প্রচলন আছে, যার অর্থ কোনো স্থান বা শহরের ভেতরে। হয়তো দুর্গের ভেতরে এই মসজিদটি হওয়ায় খায়েরগাহ মসজিদই কালক্রমে খেড়ুয়া মসজিদে রূপান্তর হয়েছে।
বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটির নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়ভাবে ইমাম-মোয়াজ্জিন নিয়োগ করা করা আছে। নামাজ আদায় ও দেখভালের দায়িত্ব তারাই পালন করেন। বিশেষ উল্লেখের বিষয়, খেড়ুয়া মসজিদের ছাদে কোনো লোহা বা কাঠের বিম ব্যবহার করা হয়নি। মোটা দেয়ালের নির্মিত গম্বুজগুলো এমনভাবে বানানো হয়েছে যে সেগুলোই বিমের কাজ করছে। সম্ভবত এই নির্মাণ শৈলীর কারণে এত দীর্ঘদিন ঝড়, ভূমিকম্প মোকাবেলা করে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এটি। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ১৭ দশমিক ২৭ মিটার লম্বা আর ৭ দমমিক ৪২ মিটার চওড়া। এর পূর্ব প্রান্তে তিনটি খিলান দরজা। মাঝখানেরটা বড় এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে দরজা রয়েছে। পূর্বের বড় দরজার নিচে রয়েছে মূল্যবান কালো পাথরের পাটাতন। মসজিদের ভেতরের পশ্চিমের দেয়ালে অপূর্ব কারুকাজের তিনটি মেহরাব। মসজিদের নিচের অংশ মোঘল স্থাপত্যরীতির আর ওপরের অংশটি লোদি ও শুরি সালতানাতের রীতির প্রতিফলন প্রমাণ করে মসজিদ নির্মাণকালেই হয়তো ক্ষমতার পরিবর্তনÑ পাল্টা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে।
এর চার কোণে দেয়াল থেকে একটু সামনে চারটি বিশাল মিনার রয়েছে। আর ছাদের ওপর রয়েছে তিনটি ৩.৭১ মিটার ব্যাসের অর্ধ গোলাকৃতির গম্বুজ, যার কার্নিশ ধনুকের মতো বাঁকা। এর তলায় রয়েছে সারিসারি খিলান আকৃতির অলংকৃত প্যানেল। মোটা দেয়ালের গাঁথুনি অপূর্ব। নান্দনিক বৈচিত্রে ভরা এর ইটের গাঁথুনির বিন্যাস। সামনের অংশের ইটে আছে ফুল-লতা-পাতা খোদাই করা বাহারি নকশার অপূর্ব সমাহার। এর বৈচিত্র্যময় মিনার, গম্বুজ, নকশা ও ইটের গাঁথুনিতে পুরো স্থাপত্যটি অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দন। মুল মসজিদের সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা আয়তাকার মাঠ। মসজিদের ধার ঘেঁষে রয়েছে তাল, নারকেল, আম ও কদম গাছের সারি, যা খুবই দৃষ্টিনন্দন। প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর এই মসজিদ ও মসজিদ চত্বর ইটের প্রাচীরের ওপর লোহার রেলিং দিয়ে ঘিরে দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
বগুড়ার শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী শহীদিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুর রহমানের মতে, বগুড়ার শেরপুর শহর থেকে শহরতলীর খন্দকার টোলায় অবস্থিত খেড়ুয়া মসজিদের যাওয়ার রাস্তাটি ভালোমত সংষ্কার করা খুবই জরুরি। এছাড়া শেরপুর বাস ও বেবিটেক্সি, অটো রিক্সা স্ট্যান্ড এবং ধুনট মোড় বাস স্ট্যান্ড ঐতিহাসিক স্থাপনা খেড়ুয়া মসজিদ, শাহ তুর্কানের মাজার, শালবাগান ও ধড় মোকাম ইত্যাদি পর্যটন স্পটের রাস্তাগুলোর নাম ও দূরত্ব উল্লেখ করে কয়েকটি তীর চিহ্ন দেওয়া থাকলে সফরকারী পর্যটকদের জন্য সুবিধা হতো।
লেখক: দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ সংবাদদাতা ও ব্যুরো প্রধান, বগুড়া।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু
দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা