ইনকিলাব দেশের ইসলামপ্রিয় জনতার মুখপত্র
০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৭ এএম
দৈনিক ইনকিলাবের বিষয়ে স্বল্প পরিসরে বর্ণনা করা প্রায় অসম্ভব। হাজারও বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সফলতার সাথে ৩৮ বছরের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দৈনিক ইনকিলাব আজ ৩৯তম বছরে পদার্পণ করেছে। এ আনন্দঘন সময়ে ইনকিলাব পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি রইলো প্রাণঢালা অভিনন্দন। দৈনিক ইনকিলাব শুধু জনগণের কথা বলে। জনগণের সংসদ নামে পরিচিত। অন্যান্য দৈনিক পত্রিকা আর ইনকিলাবের মাঝে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এদেশে তখন হাতে গোনা যে কয়টি সংবাদপত্র ছিল তার প্রায় সবই ছিল সেকুলার ভাবাদর্শপূর্ণ। ইসলামের কথা, ইসলামি সংস্কৃতি, ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার কথা পত্রিকাগুলোতে ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। আমাদের দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ দেশে ইসলামের সেবায় অনেক খেদমত করেছেন। তাঁরা হাজার হাজার মাদরাসা, খানকা প্রতিষ্ঠা করেছেন। বার্ষিক বিভিন্ন ধর্মীয় মাহফিলের মাধ্যমে জনগণকে নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু এসব সংবাদ আমাদের দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমেই অনুপস্থিত থাকতো। শত চেষ্টা করেও এসব সংবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা যখন সম্ভব হচ্ছিল না, তখনই এই বিষয়টি অনুধাবন করলেন আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন আলহাজ্ব মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)।
মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) মাদরাসা শিক্ষকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দায়িত্ব নিয়ে জমিয়াতকে সাংগঠনিক রূপে সুসংগঠিত করে মাদরাসাসহ বেসরকারি শিক্ষকদের ভাগ্য উন্নয়নে অনেক সভা সমাবেশ করেছেন, বহু চেষ্টার করেও এসকল সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশের ক্ষেত্রে বারবার আশাহত হয়েছেন। খর্ব হৃদয়ের দহনকে শক্তিতে রূপান্তর করে সেখান থেকেই ইনকিলাব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠার পর মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এ মহৎ ও চ্যালেঞ্জিং কাজের দায়িত্ব দিলেন তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসুরী বড় সন্তান এ এম এম বাহাউদ্দীন’কে। তিনি ছিলেন একবারেই নবীন সম্পাদক। তাঁর পিতার আদর্শে ও পরামর্শে বনানীর একটি ভাড়া বাড়ি থেকে যাত্রা শুরু হয় আপোসহীনভাবে ইসলাম ও জনগণের কথা বলতে। বাছাই করা সেরা সাংবাদিক, আন্তর্জাতিক মানের কলামিস্টদের নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে অল্পদিনেই দেশ-বিদেশে একটি জনপ্রিয় সংবাদপত্র হিসেবে জায়গা করে নেয় দৈনিক ইনকিলাব।
আমি দেখেছি, ইনকিলাব প্রকাশের পূর্বে এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ইনকিলাবের জন্য মক্কা মুকাররামা, মদীনা মুনাওয়ারা, বাগদাদের বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর মাজারসহ আরো অসংখ্য পবিত্র স্থান জিয়ারাতের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছেন। হক্কানী পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামার কাছে দোয়া কামনা করেছেন। ছারছীনা দরবারের মরহুম পীর সাহেব শাহ্ সূফী আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ (রহ.)্, ফুলতলী দরবারের মরহুম পীর মাওলানা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (রহ.), চরমোনাই দরবারের মরহুম পীর মোহাম্মদ ফজলুল করীম (রহ.), বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের মরহুম পীর মোহাম্মদ হাশমত উল্লাহ (রহ.)সহ দেশের উল্লেখযোগ্য দরবাবের পীর সাহেবগণ ও যেসকল দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরামের আন্তরিকতা ছিল দৈনিক ইনকিলাবের প্রতি তাঁদের মধ্যে মরহুম মাওলানা আমিনুল ইসলাম (রহ.), মরহুম মাওলানা ওবায়েদুল হক (রহ.), মরহুম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন আক্তার (রহ.), মরহুম মাওলানা ফজুলল হক আমিনী (রহ.)সহ অসংখ্য আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখগণ। এক কথায় বলা যায় দৈনিক ইনকিলাব দেশের ইসলাম প্রিয় তৌহীদি জনতার মুখপাত্র। তারই সুফল আজ গোটা ইনকিলাব পরিবার ও মুসলমানগণ ভোগ করছে।
মরহুম হুজুরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারই সুযোগ্য পুত্র এ এম এম বাহাউদ্দীনের দূরদর্শী পদক্ষেপ ও সুদূরপ্রসারী ভাবনায় আজও অপরিবর্তিত রয়েছে দৈনিক ইনকিলাব। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজ আদর্শ থেকে একটুও বিচ্যুত হয়নি ইনকিলাব, বরং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভীত আরো সুদৃঢ় হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো যখন বিশ্বব্যাপী ইসলামের আলো নিভিয়ে দেয়ার চক্রান্তে মাতোয়ারা, সকলেই ধীরে ধীরে তাঁদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলছে, ঠিক তখন ইসলামকে উজ্জীবিত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অকুতভয় সৈনিকের ন্যায় দৈনিক ইনকিলাব তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে স্পষ্ট সংবাদ প্রকাশ করেছে। একই সাথে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যেসকল লেখা দৈনিক ইনকিলাবের মাধ্যমে সবার সম্মুখে উপস্থাপিত হয়েছে তা সত্যিকারার্থেই বিরল। ইসলামী ভাবধারাসম্পন্ন দৈনিক ইনকিলাব কেবল সংবাদ প্রকাশ করে, এমনটি নয়। বরং জনগণকে আদর্শ ও নিষ্ঠাবান সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদাপূর্ণ আসনে আসীন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
সময়োপযোগী লেখনির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি, অহিংসা, মানবতাবোধ জাগ্রত করার কাজ করছে, যা পত্রিকাটির সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও নানাবিধ ফিচারের মাঝে স্পষ্ট ফুটে ওঠে। তথ্য ও প্রযুক্তির অসৎ ব্যবহারে কারণে বিশ্ব আজ হুমকির মুখে, বিশেষ করে এর প্রভাবে যুবসমাজ ক্রমশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এসব থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে, দেশের যুবকদের অভিশাপের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সকলের মাঝে ইসলামী মূল্যবোধ পৌঁছে দিচ্ছে। এ পত্রিকা ১৯৮৬ সালে ৪ জুন প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিন যুগের বেশি সময় ধরে ইসলামের সেবায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। দেশের অন্যান্য পত্রিকার সাথে দৈনিক ইনকিলাবের তুলনা কখনই হবে না। এ পত্রিকা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যই ছিল ইসলামের সেবা। জাতীয়, আন্তর্জাতিক, ব্যবসা, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজনীতি, খেলাধুলা ও বিনোদনের পাশাপাশি দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, দরবার-খানকা, মাহফিল, দ্বীনি মজলিস, মাদরাসা শিক্ষা, ইসলামী মূল্যবোধ ও কালচার সম্পর্কিত সংবাদ বিশ্বের দরবারে উপস্থাপনের একমাত্র প্লাটফর্ম দৈনিক ইনকিলাব।
ইসলামের সেবায় নিবেদিত দৈনিক ইনকিলাব দেশের ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে, মাদরাসা শিক্ষার প্রচার-প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পত্রিকাটিতে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন-অগ্রগতি বিশেষ করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবি দাওয়ার বিষয়ে যে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে তা এদেশের আলেম-ওলামা কোনদিনই ভুলবে না। চিরবঞ্চিত ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা দৈনিক ইনকিলাবই গুরুত্ব সহকারে লিখে যাচ্ছে। অপরদিকে এদেশের ইসলামি সংস্কৃতি, ইসলামি তাহজিব-তামাদ্দুন একমাত্র ইনকিলাবই লালন করে বলে আমি দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি। মাদরাসা শিক্ষক তথা ধর্মপ্রাণ মানুষদের শত বছরের দাবি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রেখেছে দৈনিক ইনকিলাব ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। এককথায় বলা যায় মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইনকিলাব, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্স একই বৃত্তে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে পথ চলেছে আপন মহিমায়। বর্তমানে দেশে অগণিত সংবাদপত্র প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু ইনকিলাব ব্যতিক্রম। তদুপরি ইনকিলাবের সাহসী সম্পাদকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পত্রিকাটির ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রয়েছে। দেশ, জনগণ, মুসলিম বিশ্বের ঐক্যসহ ইসলামের সেবায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এই জাতীয় পত্রিকা। আল্লাহপাক দৈনিক ইনকিলাবের মহৎ উদ্দেশ্য, সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে কবুল করুন। আমিন।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের
টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক
জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা
গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার
লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু
না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি
‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন
বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী
আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
সিলেট সীমান্তে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ
২ মার্চকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানালেন মঈন খান
সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে যা বললেন বদিউল আলম
সিংগাইরে সাংবাদিক মামুনের বাবার ইন্তেকাল
বিরামপুরে ধান-ক্ষেত থেকে হাত বাধা আদিবাসী দিনমজুর মহিলার লাশ উদ্ধার!
আওয়ামী শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, তাদের আরেকটা নাম দিয়েছি স্যাডিস্ট: মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুবিকে ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা
লাল পাহাড়ের দেশকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অরুণ চক্রবর্তী