দেশে দেশে আমার দেখা কোরবানি
১৬ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম
হজ ও কোরবানির সঙ্গে জড়িত হয়ে আছে হযরত ইব্রাহিম (আ.), হযরত ইসমাইল (আ.) ও মা হাজেরার স্মৃতি, আত্মত্যাগ ও আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের অনন্য কথা-কাহিনী। প্রতি বছর বিশ্বের লাখ লাখ সামর্থবান ও সক্ষম মুসলমান হজ পালনের জন্য মক্কায় জমায়েত হয়। হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। হজের প্রধান অনুষ্ঠান কোরবানি। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য এই কোরবানি। ১০ জিলহজ হাজীরা কোরবানি করেন। বিশ্বের দেশে দেশে মুসলমানদের মধ্যে যাদের সামর্থ আছে তারাও কোরবানি করে।
সউদি আরব
মক্কা-মদিনার পবিত্র ভূমি সউদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপন এক কথায় অনন্য অভিজ্ঞতা। লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতি এবং হজ পালন প্রধান আকর্ষণ। ফজরের নামাজের পর মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে কোরবানি শুরু হয়। পরিবারের সাথে একত্রিত হয়ে নামাজ আদায়, সুস্বাদু খাবারের আয়োজন এবং কোরবানির গোশত বিতরণ দিনটিকে বিশেষ করে তোলে।
তুরস্ক
তুরস্কে কোরবানির পশু কেনার জন্য বড় বড় বাজারে মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়। পূর্ব তুরস্ক থেকে কোরবানির পশু আনা হয়। তুর্কি পরিবারগুলো নিজেদের ঘরে বা নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করে। তুর্কি মিষ্টান্ন, বিশেষ করে বাকলাভা এবং ঈদের বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়। শিশুদের মধ্যে উপহার বিতরণ এবং পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর প্রচলন রয়েছে।
মিশর
মিশরে রাস্তায় রাস্তায় পশু কোরবানি করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট কোরবানির স্থান নির্ধারণ করা হয়। ভোরে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার পর কোরবানির কাজ শুরু হয়। জনপ্রিয় খাবার কুসারি, কাবাব ও ফালাফেল দিয়ে বিশেষ ভোজ আয়োজন করা হয়। সামাজিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গোশত বিতরণ ও দান করার প্রচলন রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় কোরবানি আমাদের দেশের মতোই উদযাপিত হয়। পরিবারের সাথে একত্রিত হয়ে নামাজ আদায়, পশু কোরবানি এবং গোশত বিতরণ করা হয়। গ্রামাঞ্চলে সময়টি খুবই প্রাণবন্ত থাকে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কোরবানির পশু কেনা ও বিতরণের ব্যবস্থা থাকে। ঐতিহ্যবাহী খাবার সাতে (শশলিক) ও রেন্ডাং বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা
কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ঈদুল আজহা উদযাপন ভিন্নধর্মী। মুসলিম কমিউনিটি মসজিদ বা ইসলামিক সেন্টারে একত্রিত হয় ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য। কোরবানি করার জন্য নির্দিষ্ট কোরবানির স্থানে যাওয়া হয়। কোরবানির গোশত সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান কাজ করে। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বারবিকিউ পার্টি আয়োজন এবং শিশুদের উপহার দেওয়া হয়।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধতা লক্ষণীয়। বিভিন্ন শহরের মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। কোরবানির পশু কেনা ও কোরবানি করার জন্য নির্দিষ্ট পশু খামার এবং কসাইখানা রয়েছে। কোরবানির গোশত দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়।
ফ্রান্স
ফ্রান্সে মুসলিম সম্প্রদায় উদ্দীপনার সাথে ঈদুল আজহা উদযাপন করে। প্যারিস, মার্সেই এবং লিয়োঁসহ বড় বড় শহরে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। সরকার অনুমোদিত পশু জবাই কেন্দ্র রয়েছে। মুসলিম পরিবারগুলো কোরবানির গোশত নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় এবং দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে।
জার্মানি
জার্মানিতে মুসলিম কমিউনিটির সদস্যরা একত্রিত হয়। বার্লিন, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং হামবুর্গসহ শহরের মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। কোরবানির পশু কেনার জন্য বিশেষ খামার এবং হালাল মাংসের দোকান রয়েছে। মুসলিম পরিবারগুলো কোরবানির গোশত নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় এবং কিছু অংশ দান করে।
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদুল আজহা উদযাপন হয়। আমস্টারডাম, রটারডাম এবং হেগের মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজের আয়োজন করা হয়। কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট স্থান এবং পশুর খামার রয়েছে। কোরবানির গোশত পরিবার এবং দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ডাচ এবং মুসলিম খাবারের সংমিশ্রণে বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়।
সুইডেন এবং অন্যান্য নর্ডিক দেশ
নর্ডিক দেশগুলোসহ সুইডেনে ঈদুল আজহা উদযাপন পারিবারিক ও সামাজিক মিলনের সুযোগ এনে দেয়। নর্ডিক দেশগুলোর বড় বড় শহরে মসজিদ রয়েছে এবং সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। সুইডেনে স্টকহোম, গোথেনবার্গ এবং মালমোর মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। কোরবানির পশু কেনা ও কোরবানি করার জন্য নির্দিষ্ট পশু খামার রয়েছে। মুসলিম পরিবারগুলো কোরবানির গোশত নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।
ঈদুল আজহা, মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব, যা পালন করা হয় আল্লাহর প্রতি মহানবী ইব্রাহিম (আ.) এর অগাধ বিশ্বাস এবং ত্যাগের স্মরণে।
ঈদুল আজহা বছরে একবার পালিত হলেও এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য এবং শিক্ষা সারা বছর ধরে মুসলিমদের জীবনে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। ঈদুল আজহার মূল উদ্দেশ্য হলো:
১. আত্মত্যাগ ও সংযম: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ত্যাগ ও সংযমের গুরুত্ব উপলব্ধি করা।
২. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য: আল্লাহর আদেশ এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাসের নিদর্শন হিসেবে আত্মত্যাগ করা।
৩. সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ: কোরবানির গোশত বিতরণের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধ প্রকাশ পায়।
লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
[email protected]
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের
টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক
জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা
গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার
লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু
না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি
‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন
বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী
আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
সিলেট সীমান্তে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ
২ মার্চকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানালেন মঈন খান
সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে যা বললেন বদিউল আলম
সিংগাইরে সাংবাদিক মামুনের বাবার ইন্তেকাল
বিরামপুরে ধান-ক্ষেত থেকে হাত বাধা আদিবাসী দিনমজুর মহিলার লাশ উদ্ধার!
আওয়ামী শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, তাদের আরেকটা নাম দিয়েছি স্যাডিস্ট: মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুবিকে ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা
লাল পাহাড়ের দেশকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অরুণ চক্রবর্তী