আসরে টিকে থাকতে হলে কেবল জয় পেলেই হতো না, জিততে হতো বড় ব্যবধানে। মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত দুর্দান্ত শতকে সেই ভিত গড়ে দিয়েছিলেন ব্যাট হাতে। পরে বল হাতে দারুণভাবে নিজেদের দায়িত্ব সারলেন তাসকিন আহমেদ-শরিফুল ইসলামরা। আফগানিস্তানকেও বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে উঠে গেল বাংলাদেশ।

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে রোববার ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে আফগানদের ৮৯ রানে হারায় টাইগাররা। টস জিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান তোলে সাকিব আল হাসানের দল। আফগানদের বিপক্ষে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হতো আফগানদের। কিন্তু ৪৪.৩ ওভারে দলটির ইনিংস গুটিয়ে যায় ২৪৫ রানে।

বাংলাদেশ ইনিংসের গল্প মিরাজ আর শান্তকে ঘিরে। ডান হাতের আঙুলে ব্যথা নিয়ে শেষ উঠে যাওয়ার আগে ১১৯ বলে ৭টি চার ও তিন ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১১২ রানের ইনিংস খেলেন মিরাজ। শান্ত ১০৫ বলে ৯টি চার ও দুই ছক্কায় করেন ১০৪ রান। তৃতীয় উইকেটে তারা উপহার দেন ১৯৪ রানের জুটি।

পরে বল হাতে ৪৪ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন তাসকিন। ৩৬ রানে তিনটি নেন শরিফুল। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে ব্রেক ধ্রু এনে দেন মিরাজ এবং হাসান মাহমুদও।

বাংলাদেশের আফগানদের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ছিল ৩০৬, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস এটি। গত মার্চে সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৬ উইকেটে করা ৩৪৯ রান দলীয় সর্বোচ্চ।

বল হাতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারেই সফলতা পেলেও টানা তিনটি ফিফটি জুটিতে চোখ রাঙাচ্ছিল আফগানিস্তান। তবে সময়মতো উইকেট তুলে নিয়ে দলকে জয়ের পথে রাখেন বোলাররা।

একটা পর্যায়ে আফগানদের সংগ্রহ ছিল ৩৬ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৩ রান। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন ম্যাচের নায়ক মিরাজ। এরপর আর কোনো জুটিই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

দিনের সবচেয়ে দামি উইকেট হাসান মাহমুদের। ৭৪ বলে ১০টি চার ও এক ছক্কায় ৭৫ রান করা ইব্রাহীম জাদরানকে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত করেন তরুণ এই পেসার। এর আগে রহমত শাহকে (৫৭ বলে ৩৩ রান) বোল্ড করে দিনের সবচেয়ে বড় জুটি বিচ্ছিন্ন করেন তাসকিন। দ্বিতীয় উইকেটে ইব্রাহীম-রহমত জুটি যোগ করেন ৭৯ রান।

শেষ দিকে কয়েকটি চোখ ধাঁধানো শটে আফগান সমর্থকদের উল্লাসের সুযোগ এনে দেন রশিদ খান। জয়-পরাজয়ে তা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

দিনের শুরুতেই চমক হিসেবে আসে মোহাম্মাদ নাঈম শেখের সাথে মিরাজের ওপেনিংয়ে নামা। তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে গত ম্যাচে ওপেনিংয়ে নামানো হয় তানজিদ হাসান তামিমকে। কিন্তু অভিষেক ম্যাচে কোনো রান না করেই আউট হয়ে যান এই তরুণ। এই ম্যাচে তাকে বাদ দিয়ে নাঈমের সাথে মিরাজকে পাঠায় দল।

এদিনের দলে ছিল আরও দুটি পারিবর্তন। শ্রীলঙ্কা ম্যাচের দল থেকে বাদ পড়েন মুস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মেহেদি হাসানও। একাদশে জায়গা পান আফিফ হোসেন ও শামিম হোসেন। মুস্তাফিজের জায়গায় খেলেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ।

টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা দারুণ কাজে দেয়। নাঈম-মিরাজের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। দশম ওভারে জুটি বিচ্ছিন্ন হয় দলীয় ৬০ রানে। দারুণ খেলছিলেন নাঈম। কিন্তু মুজিব-উর রহমানের গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান। করেন ৩২ বলে ৫ চারে ২৮ রান। ৪ বলের মধ্যে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়ও। গুলবাদিন নাইবের বলে স্লিপে হাশমতউল্লাহ শহিদির বামে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন। এরপরই উইকেটে সুর তোলে মিরাজ-শান্তর ব্যাট।

মিরাজের পর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্তও। গত ম্যাচে ৮৯ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটার এবার পা পিছলে পড়ে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনক রান আউট হয়ে যান।

শেষ দিকে দ্রুত রান তোলেন সাকিব ও মুশফিক। সাকিব ১৮ বলে চারটি বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। নিজের ভুলে রান আউট হওয়ার আগে ১৫ বলে ২৫ রান করেন মুশফিক।

মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ছক্কা উড়িয়ে ওয়ানডে অভিষেক উদযাপন করেন শামিম। কিন্তু তিনিও হন রান আউটের শিকার। ৬ বলে এই তরুণ মিডলঅর্ডার করেন ১১ রান।

আফগান বোলারদের সবাই-ই ছিলেন খরুচে। ১০ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য রশিদ খান। ১০ ওভারে ৬২ রান দিয়ে ১ উইকেট দলের আরেক সেরা বোলার মুজিবের। ওভারপ্রতি ছয়ের নিচে রান দিয়েছেন কেবল মোহাম্মাদ নবি, ১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে তিনিও উইকেটশূন্য।

বাংলাদেশ সুপার ফোরে উঠলে লাহোরেই খেলবে তাদের প্রথম ম্যাচ। একই মাঠে এই গ্রুপের শেষ ম্যাচে মঙ্গলবার মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৫ (নাঈম ২৮, মিরাজ ১১২ আহত অবসর, হৃদয় ০, শান্ত ১০৪, মুশফিক ২৫, সাকিব ৩২*, শামিম ১১, আফিফ ৪*; অতিরিক্ত ১৮; ফারুকি ৬-১-৫৩-০, মুজিব ১০-০-৬২-১, গুলবাদিন ৮-০-৫৮-১, করিম ৬-০-৩৯-০, নবি ১০-০-৫০-০, রশিদ ১০-১-৬৬-০)।

আফগানিস্তান: ৪৪.৩ ওভারে ২৪৫ (রহমানউল্লাহ ১, ইব্রাহীম ৭৫, রহমত ৩৩, হাশমতউল্লাহ ৫১, নাজিবুল্লাহ ১৭, নবি ৩, নাইব ১৫, করিম ১, রশিদ ২৪, মুজিব ৪, ফারুকি ১*; অতিরিক্ত ২০; তাসকিন ৮.৩-০-৪৪-৪, শরিফুল ৯-১-৩৬-৩, হাসান ৯-১-৬১-১, সাকিব ৮-০-৪৪-০, আফিফ ১-০-৬-০, মিরাজ ৮-০-৪১-১, শামিম ১-০-১০-০)।

ফল: বাংলাদেশ ৮৯ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)।