এক ইনিংসেই বেন স্টোকস বুঝিয়ে দিলেন বিশ্বকাপের আগে তাকে ফেরাতে কেন এত মরিয়া ছিল ইংল্যান্ড।অধিনায়ক জস বাটলারের অনুরোধে অবসর ভেঙে ফেরেন একদিনের ফরম্যাটে।নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে করেছিলেন লড়াকু এক ফিফটি।তবে তৃতীয় ওয়ানডেতেই বাঁহাতি অলরাউন্ডার রেকর্ড গড়া এক ইনিংসে খেলে বুঝিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের শিরোপা ধরে রাখার মিশনে কেন তাকেই এখনও 'ট্রাম্পকার্ড' ম্নে ক্রা হচ্ছে।
বোল্ট,জেমিসন,ফার্গসনদের মত তারকা পেসারদের সমানে পিটিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার খেললেন ১৮২ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। মাত্র ১২৪ বলে ১৫ চার ও ৯ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি ওয়ানেডেতে ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও।পরে পুরো নিউজিল্যান্ড দল মিলে করতে পেরেছে ১৮৭ রান। ১৮১ রানের বিশাল জয়ে ৪ ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে ইংল্যান্ড।
বুধবার ক্যানিংটন ওভালে টস হেরে ব্যাট করতে নামা স্বাগতিকদের শুরুটা ভালো হয়নি।কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্টের সুইং বোলিংয়ে দলীয় স্কোর ১৫ পেরুনোর আগেই জনি বেয়ারেস্টো ও জো রুটকে হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড।এরপর থেকে শুরু স্টোকস অধ্যায়।ডেভিড মালানকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এই দুইজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে বড় সংগ্রহের পথে এগোতে থাকে ইংল্যান্ড। দুজনে মিলে ১৯৯ রানের জুটি গড়েন মাত্র ১৬৪ বলে।অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন মালান।আউট হন ৯৫ বলে ৯৬ রানের এক দারুণ ইনিংস খেলে।
অনপ্রান্তে থাকা স্টোকস অবশ্য এদিন থামার কোন নামই নিচ্ছিলেনা।কেরিয়ারের চতুর্থ শতক পেরিয়ে ব্যাট চালাতে শুরু করেন খুনে মেজাজে। লেখ সাইডে একের পর এক কিউই পেসারদের যেভাবে বাউন্ডারীর বাইরে আছড়ে ফেলছিলেন স্টোকস,তা দেখে যে কারো মনে হতেই পারে ব্যাটিং মনে হতেই পারে ব্যাটিংটা বুঝি পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ!দ্রুত রান তুলতে গিয়ে বাটলার ফিরে গেলেও স্টোকস ঝড়ে ওটা পেরিয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল।যথেষ্ট বল বাকি থাকায় প্রথম ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ রানের মাইলফলক স্পর্শের সুযোগও ছিল তার সামনে। তবেব্যক্তিগত রেকর্ডের কোন ভাবনায় ছিল না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের।দলীয় স্কোর আরও দ্রুত বাড়ানোর প্রচেষ্টায় ১৮২ তে থামে তার ইনিংস। তার আউট হওয়ার পর ইংল্যান্ড লোয়ার অর্ডার।শেষদিকে বোল্টের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বল বাকি থাকতে ৩৬৮ রানে আলআউট হয় ইংলিশরা। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবের মধ্যেও মাত্র ৫১ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন বোল্ট।
এত রান তাড়া করে আগে কখনোই জিতেনি নিউজিল্যান্ড।পারেনি এবারও।রানের পাহাড়ের জবাব দিতে নেমে শুরুতে দ্রুত উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে কিউইরা। রান তাড়ার কোনো পর্যায়েই ইংল্যান্ডকে ন্যূনতম চাপে ফেলতে পারেনি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা । গ্লেন ফিলিপসের ৭৬ বলে ৭২ রানের ইনিংস ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি কেউ। ৩৭ রানেই ৪ উইকেট হারানোর পর ড্যারিল মিচেল, রাচিন রবীন্দ্র ও কাইল জেমিসনকে নিয়ে ব্যবধান একটু কমান ফিলিপস। কিউইরা আলআউট হয় ১৮৭ রানে।ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতে ১৮১ রানের বড় ব্যবধানে।উড,রশিদকে ছাড়া খেলতে নেমেও কোন অসুবিধা হয়নি স্বাগতিকদের। ইংল্যান্ডের ৬ বোলারের ৫ জনই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। ক্রিস ওকস ও লিয়াম লিভিংস্টোন নেন ৩টি করে উইকেট।১৬ রানে ৩ উইকেট পার্টটাইম স্পিনার লিভিংস্টোনের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং পারফরম্যান্সও।
২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে স্টোকস বীরত্বেই শিরোপা খরা ঘুচেছিল ইংলিশদের। অবসর ভেঙে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় অধ্যায়টা যেভাবে শুরু করলেন, তাতে মনে হচ্ছে আগামী মাসে ভারতে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের হয়ে ফের বিশেষ কিছু অর্জনেরও ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা এই অলরাউন্ডার ।