ফখর তাণ্ডবে অসম্ভবকে সম্ভব করল পাকিস্তান
০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৮ পিএম | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২১ পিএম
বোলারদের ম্লান দিনে খুব কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়েছিলেন ব্যাটাররা। জিততে হলে গড়তে হত রান তাড়ার বিশাল রেকর্ড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফখর জামানের রেকর্ড গড়া খুনে ইনিংসে বৃষ্টি আইনে সেই ম্যাচ জিতে গেল পাকিস্তান।
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ৩৫তম ম্যাচে বেঙ্গালুরুতে শনিবার পরে ব্যাটিং করেও পাকিস্তান জিতেছে ২১ রানে। ৪০১ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েও হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হলো নিউজিল্যান্ডকে।
২৫.৩ ওভারে কিউইদের সংগ্রহ ছিল ১৭৯ রান। একই সময়ে পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে জমা করে ২০০ রান।
পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরি হাঁকানোর দিনে ৮১ বলে ১১টি ছক্কা ও ৮ চারে ১২৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন ফখর। ৬৩ বলে ২ ছক্কা ও ৬ চারে আপরাজিত ৬৬ রানে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন অধিনায়ক বাবর আজম। দ্বিতীয় উইকেটে তারা ১৪১ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৯৪ রান যোগ করেন।
তাদের এই জুটি বিশ্বকাপে যে কোনো উইকেটের পাকিস্তানের রেকর্ড। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই রান তাড়ায় সাঈদ আনোয়ার ও ওয়াজাহাতউল্লাহ ওয়াস্তির উদ্বোধনী জুটিতেও এসেছিল ১৯৪ রান।
পাকিস্তানের জয়ে সেমি-ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
লক্ষ্য ছিল ৪০২ রানের। হারলেই সেমিফাইনালের আশা শেষ- পাকিস্তানের এমন সমীকরণের সামনে লক্ষ্য তাড়ায় প্রথমে ২২.৩তম ওভারে হানা দেয় বৃষ্টি। এসময় পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ১৬০ রান। ততক্ষণে সেঞ্চুরি হয়ে গেছে ফখরের।
দুই ঘণ্টা খেলা বন্ধের পর যখন শুরু হয়, ম্যাচ নেমে আসে ৪১ ওভারে। বাবর আজমদের নতুন লক্ষ্য ঠিক হয় ৩৪২ রান। তার মানে বাকি ১৯.৩ ওভারে ১৮২ রান তুলতে হত বাবর আজমদের। ফখর–বাবর মিলে ৪ ওভারে ৪০ রান তুলে নেওয়ার পর আবারও বৃষ্টির হানা। এবার পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে রান ১ উইকেটে ২০০। বৃষ্টি আইনে পাকিস্তান ২১ রানে এগিয়ে থাকায় শেষ হাসি হাসে তারাই।
এই জয়ে আসরে সেমিফাইনালের আশা টিকে রইল পাকিস্তানের। ৮ ম্যাচে ৪ জয়ে তাদের পয়েন্ট ৮। সমান পয়েন্ট নিয়েও নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় পাঁচে উঠে এসেছে পাকিস্তান। তবে সমান ম্যাচ ও জয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে চারেই আছে নিউজিল্যান্ড।
বৃষ্টি–বাগড়ার আগপর্যন্ত পাকিস্তানের সামনে ছিল রেকর্ড রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপে সাড়ে তিন শর বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই, কিন্তু ওভারপ্রতি ৮–এর বেশি রান তুলে সেটিই করতে হতো বাবরদের। আর এই ম্যাচ হারলেই লিগ পর্ব থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যেত।
এমন সমীকরণের সামনে দ্বিতীয় ওভারেই আব্দুল্লাহ শফিককে হারায় পাকিস্তান। এরপর আর নিউজিল্যান্ডকে সুযোগ দেননি ফখর-বাবর জুটি। সময়ের সাথে সাথে উত্তাল হয়েছে ফখরের ব্যাট। থেমে থাকেননি বাবরও।
৩৯ বলে ফিফটি করেন বাবর। এরপর আরও খুনে ব্যাটিং শুরু করে ৬৩ বলে তুলে নেন শতক। পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপে এটিই এখন দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। তার ১১ ছক্কা বিশ্বকাপে এক ইনিংসে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। ১৯৯৬ আসরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১ ছক্কা মেরেছিলেন শাহিদ আফ্রিদিও।
একদিনের ক্রিকেটে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ২০ ওভারের মধ্যে সেঞ্চুরি করলেন এই পাক ব্যাটার।
নিউ জিল্যান্ডের এই হারে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমি-ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত হলো দক্ষিণ আফ্রিকার। আসরে প্রথম চার ম্যাচে জয়ের পর টানা চারটি হারল কিউইরা।
৯৩ রানে দাঁড়িয়ে মিচেল স্যান্টনারকে ছক্কা হাঁকিয়ে পৌঁছান ৯৯ রানে। এরপর সিঙ্গেল নিয়ে পূরণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম শতক। পাঁচ ম্যাচ পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিরে ৭৪ বলে ৭ ছক্কায় ৮১ রানের ইনিংসে দলকে জেতান তিনি।
পাক বোলাররা অবশ্য একদম ভালো করতে পারেননি। তাদের তুলোধুনা করে শতক তুলে নেন রাচিন রবীন্দ্র। ৫ রানের জন্য শতক পাননি চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা কেন উইলিয়ামসন। দুজনের রেকর্ডের দিনে শীর্ষ সারির অন্য ব্যাটারদেরও ছোট ছোট কিন্তু কার্যকর অবদানে রানের পাহাড় গড়ে নিউজল্যান্ড।
৯৪ বলে ১৫টি চার ও ১ ছক্কায় ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন রাচিন। আসরে এটি তরুণ এই অলরাউন্ডারের তৃতীয় শতক। দেশটির হয়ে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের এক আসরে তার চেয়ে বেশি শতক নেই আর কারও।
৯৫ রানের ইনিংসে স্টেফেন ফ্লেমিংকে ছাড়িয়ে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান স্কোরার এখন উইলিয়ামসন। এই তারকার রান ১০৮৪, ফ্লেমিংয়ে ১০৭৫।
দ্বিতীয় উইকেটে এই দুইজন গড়েন ১৪২ বলে ১৮০ রানের জুটি। এরপর ছোট ছোট জুটিতে দ্রুত রান তোলে ব্ল্যাক ক্যাপস বাহিনী।
শেষ ২০ ওভারে ওভারপ্রতি নয়ের উপরে রান তোলে তারা। কার্যকর ইনিংস খেলেছেন ড্যারেল মিচেল (১৮ বলে ২৯), মার্ক চাপম্যান (২৭ বলে ৩৯), গ্লেন ফিলিপস (২৫ বলে ৪১) ও মিচেল স্যান্টনার (১৭ বলে ২৬*)।
পাক বোলারদের মধ্যে ওভারপ্রতি আটের নীচে রান দিয়েছেন কেবল ইফতিখার আহমেদ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম। ১০ ওভারে ৯০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য শাহিন শাহ আফ্রিদি। ১০ ওভারে ৮২ রানে কেবল এক উইকেট হাসান আলির।
এই ম্যাচেও খরুচে হারিস রউফ ১০ ওভারে ৮৫ রান দিয়ে পেয়েছেন কেবল ১ উইকেট। আগা সালমান ২ ওভারে ২১ রান দেওয়ার আর আর বোলিংয়েই আসেননি। ১০ ওভারে ৬০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন ওয়াসিম।
দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের প্রাপ্তি, নেট রান রেট একটু বাড়াতে পারা। ম্যাচ জিতে দুই পয়েন্ট ছিনিয়ে নেয় পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৪০১/৬ (কনওয়ে ৩৫, রাচিন ১০৮, উইলিয়ামসন ৯৫, মিচেল ২৯, চাপম্যান ৩৯, ফিলিপস ৪১, স্যান্টনার ২৬*, ল্যাথাম ২*; অতিরিক্ত ২৬; শাহিন ১০-০-৯০-০, হাসান ১০-০-৮২-১, ইফতিখার ৮-০-৫৫-১, হারিস ১০-০-৮৫-১, ওয়াসিম ১০-০-৬০-৩, সালমান ২-০-২১-০)।
পাকিস্তান: (২৫.৩ ওভারে লক্ষ্য ১৮০ রান) ২৫.৩ ওভারে ২০০/১ (অব্দুল্লাহ ৪, ফখর ১২৬*, বাবর ৬৬*; অতিরিক্ত ৪; বোল্ট ৬-০-৫০-০, সাউদি ৫-০-২৭-১, স্যান্টনার ৫-০-৩৫-০, ফিলিপস ৫-১-৪২-০, সোদি ৪-০-৪৪-০, মিচেল ০.৩-০-১-০)।
ফল: বৃষ্টি আইনে পাকিস্তান ২১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফখর জামান।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
হাসিনার দুর্নীতি অনুসন্ধানে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত
মুজিবনগরে ইসলামী ব্যাংক এর এজেন্ট শাখায় দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত
কুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা শনিবার, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন
বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
ভাসমান ডিপো স্থায়ীকরণ ও জ্বালানি তেল সরবরাহের দাবীতে মানববন্ধন
শরীয়তপুর জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে
নোবিপ্রবিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা
আশুলিয়ায় বাসা বাড়িতে অবৈধ তিতাস গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
বরবাদ' সিনেমার দ্বিতীয় অংশের শুটিংয়ে মুম্বাইয়ের পথে শাকিব
কেরানীগঞ্জে অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্য র্যাবের হাতে গ্রেফতার
শিবালয়ে খাবারের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে গৃহকর্তার সর্বস্থ লুটে নেয়া চক্রের এক সদস্য আটক
ইমরানের খানের বিচার পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক সংসদীয় সংস্থা
কুড়িগ্রামে যুবদল নেতার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ
নাঙ্গলকোটে দুর্ঘটনায় পৌর স্বাস্থ্য সহকারীর মৃত্যু
ইউক্রেনে সংঘাতের দ্রুত অবসান চান ট্রাম্প
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন
নোয়াখালীতে বাসচাপায় শ্রমিকের মৃত্যু,আহত ২
মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে নওগাঁ
নির্বাচনের রোড ম্যাপ দেন অতিসত্বর : আবুল কালাম আজাদ
উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ করা হল ‘হট ডগ’