বিনোদনদায়ীর আবেগী বিদায়
০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
আউট হয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময়ই আবেগাপ্লুত মনে হচ্ছিল ডেভিড ওয়ার্নারকে। ম্যাচ শেষে যখন দাঁড়ালেন মাইক্রোফোনের সামনে, বারবার ধরে এলো তার কণ্ঠ, ছলছল করে উঠল চোখ। আবেগের প্রবল জোয়ার সামাল দিয়েই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার জানালেন তার বিদায়ী প্রতিক্রিয়া। রেকর্ড-অর্জন তার কম নেই টেস্ট ক্যারিয়ারে। তবে সবার হৃদয়ে তিনি জায়গা ধরে রাখতে চান রোমাঞ্চকর ও বিনোদনদায়ী একজন হিসেবে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা বেশ আগেই দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। বিদায়ের দিনটিও এসে গেল। ক্যারিয়ারের শেষ দিনেও চেনা সেই দাপুটে ব্যাটিংয়ে ফিফটি করে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে শেষবারের মতো মাঠ ছেড়ে যান এই সংস্করণে। ঘরের মাঠে পরিবার-পরিজন আর নিজ শহরের দর্শকের সামনে শেষ ইনিংসেও দারুণ ব্যাট করে বিদায়, ম্যাচ জিতে দলের ৩-০ ব্যবধানের জয়, সব মিলিয়ে এভাবে শেষ করতে পারায় দারুণ আপ্লুত ওয়ার্নার, ‘স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার এটি (এমন বিদায়)। ৩-০ ব্যবধানের জয় এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের দুর্দান্ত ১৮ মাস বা ২ বছর পথ ধরে এভাবে শেষ করতে পারা দারুণ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে জয়, সিরিজ ড্র করে অ্যাশেজ ধরে রাখা, (ওয়ানডে) বিশ্বকাপ জয় এবং এরপর এখানে ফিরে ৩-০ ব্যবধানে জয় অসাধারণ সব অর্জন এবং গ্রেট এক দল ক্রিকেটারের সঙ্গে এখানে থাকতে পেরে আমি গর্বিত।’
ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগের দিন। তার পরও টেস্টের চতুর্থ দিনে গ্যালারিতে প্রায় ২৫ হাজার দর্শক ভিড় করেছিল। তাদের বড় অংশই যে ওয়ার্নারকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। গ্যালারিতে ছিলেন ওয়ার্নারের বাবা-মা, স্ত্রী ক্যান্ডিস ও তার তিন মেয়েও। তাদের কথা বলতে গিয়ে আরেকবার আবেগ ছুঁয়ে গেল ওয়ার্নারকে, ‘পরিবার আমার জীবনের বিশাল অংশজুড়ে আছে এবং তাদের সহায়তা ছাড়া কিছু করা যায় না। আমাকে খুব চমৎকার ও দারুণভাবে গড়ে তোলার কৃতিত্ব বাবা-মায়ের। আমার ভাই স্টিভ, ওর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি আমি..। এরপর ক্যান্ডিস এলো জীবনে এবং আমাকে একরকম পথে ফেরাল। দারুণ একটি পরিবার আমাদের এবং ওদের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত আমি লালন করি যতেœ। জীবন দিয়ে ভালোবাসি ওদেরৃ আর বলতে চাই না, কারণ আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছি। তবে ধন্যবাদ ক্যান্ডিস, যা কিছু করেছো, সবকিছুর জন্য। আমার জন্য তুমিই গোটা দুনিয়া এবং আমি কৃতজ্ঞ।’
কদিন পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজ। সেখানে থাকবেন না ওয়ার্নার। হয়তো তাকে দেখতে হবে গ্যালারি থেকে বা চোখ রাখতে হবে টিভি পর্দায়। টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসেও ব্যাট হাতে দেখা গেছে সেই চেনা ওয়ার্নারকে। আগ্রাসী সব শট, সুইপ-রিভার্স সুইপ, দাপুটে পুল, সবই দেখা গেছে। নিজের রূপে থেকেই বিদায় নিতে পারা তাকে বাড়তি তৃপ্তি দিচ্ছে, ‘আমরা বিনোদনের জগতের মানুষ এবং আমি খুবই খুশি যে মাঠে নেমে সেটিই করতে পেরেছি, সবসময় যা করি। টি-টোয়েন্টি দিয়ে শুরু করেছিলাম, এরপর এখানে (টেস্টে) এসেও সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি, সব শট খেলেছি, যেভাবে খেলতে পছন্দ করি, সেভাবেই খেলেছি।’
ক্যারিয়ার শেষ করলেন ১১২ টেস্ট খেলে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি টেস্ট কেউ খেলেনি, এত রান কেউ করেননি। সব দেশ মিলিয়েই টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ সফলতম ওপেনার তিনি। নিজের মতো খেলেই ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন, আড়াইশ পেরিয়েছেন আরেক দফায়। ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন রেকর্ড তিনবার।
এই সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের শেষ দিনটিতে অবধারিত প্রশ্নটিও এলো, লোকের কাছে কিভাবে স্মরণীয় থাকতে চান ওয়ার্নার? তার উত্তরে মিশে থাকল তার ক্রিকেট দর্শনই, ‘স্মরণীয় হয়ে থাকতে চাই রোমাঞ্চকর ও বিনোদনদায়ী একজন হিসেবে। আশা করি, যেভাবে খেলেছি, তাতে সবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। আশা করি, বাচ্চারা ও উঠতিরা আমার পথ অনুসরণ করবে। সাদা বলের ক্রিকেট থেকে টেস্ট ক্রিকেটে এসে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে... এটিই খেলাটির চূড়া। কাজেই পরিশ্রম করে যাও লাল বলের ক্রিকেট খেলতে, কারণ এটিও বিনোদনদায়ী। সবসময় অকৃত্রিম থাকার চেষ্টা করেছি, কখনোই বদলাইনি। সবসময়ই বলেছি এবং এখনও বলব। এটিই আমি বিশ্বাস করি, নিজের প্রতি সৎ থাকা। টেস্ট ক্রিকেটেও আমি সাহসী ও নির্ভীক থেকেছি। নিজের ধরনেই খেলেছি এবং দাপট দেখাতে চেয়েছি। এমন একজন হিসেবেই মনে থাকতে চাই, যে খেলাটাকে এগিয়ে নিত, প্রবল গর্বিত ও অনুরাগী একজন, চেষ্টার কোনো কমতি যে রাখেনি।’
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখন কেবল টি-টোয়েন্টিতেই দেখা যাবে ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকে। ২০০৯ সালে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ৪৩ বলে ৮৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস দিয়ে। পরে তিনি সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গড়েছেন সব সংস্করণেই। এখন সেই অভিযান শেষ করতে চান টি-টোয়েন্টি দিয়েই। আপাতত তার দৃষ্টি আগামী জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুটি ট্রফির ছোঁয়া পেয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার। টি-টোয়েন্টিতেও সেই স্বাদ দুবার না পেলে কী আর চলে! ক্যারিয়ার শেষের আগে এখন সেটিই লক্ষ্য তার। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা পুরোপুরি থামাতে চান এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার, ‘হ্যাঁ, সেটিই বলা যায় আমার শেষের লক্ষ্যৃ আমার শেষটা হবে টি-টোয়েন্টি দিয়েই। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম টি-টোয়েন্টি দিয়ে, শেষও করব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়েই। এটিই সবচেয়ে উপযুক্ত। খেলাটাকে আমি সত্যিই ভালোবাসি। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আরেকটি বিশ্বকাপ জিততে চাই আমি।’
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা
বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ
বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান
গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২
ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক
পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ
আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ
সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!
গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ
গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম
সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা
গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের
বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক
লক্ষ্মীপুরে ড্রামট্রাকের চাপায় প্রাণ গেল দুই অটোরিকশা যাত্রীর
মানিকগঞ্জে পদ্মায় বড়শিতে ধরা পরল ৯ কেজি ওজনের বোয়াল
রাজশাহী নার্সিং কলেজের ১৪ শিক্ষার্থী ফেল করে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিলেন
মেলানিয়া ট্রাম্প বাজারে আনলেন নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি
সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার
শরীয়তপুর পৌরসভার বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
সাইফ ইস্যুতে মেজাজ হারালেন অভিনেতা জাকি শ্রফ