ক্রিকেট বিশ্বের অপরিচিত এক দেশের নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় শুরু হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের সর্ববৃহৎ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের খেলা। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র খেলবে কানাডার বিপক্ষে। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬ টায় শুরু হবে ম্যাচটি। একই দিন বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় গায়ানায় পাপুয়া নিউগিনির মুখোমুখি হবে আরেক সহ-আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই প্রতিবেদন যখন পাঠকের হাতে যাবে তখন শুরু হয়ে যাওয়ার কথা উদ্বোধনী ম্যাচ।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা একবারেই শূণ্যের কোটায়। কারণ দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে- আমেরিকান ফুটবল, বাস্কেটবল, বেসবল, আইস হকি ও সকার। সেখানেই ক্রিকেটের মেগা ইভেন্টের পর্দা উঠবে। অপরিচিত টেক্সাসেই হচ্ছে বিশ্বকাপের গোড়াপত্তন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে বিনোদন হিসেবে অনেক বেশি ক্রিকেট খেলা হয়ে থাকে। তবে আয়াজকদের ধারণা, ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটই নিয়মিতভাবে আয়োজন করা গেলে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াপ্রেমিদের কাছে ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজক কমিটির প্রধান নির্বাহী ব্রেট জোন্স এএফপিকে বলেন, ‘প্রথমত আমি মনে করি, যারা ক্রিকেটের অন্ধভক্ত, আমরা তাদের সঙ্গে আনন্দে মাততে চাই। এখানে খেলতে আসা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সরাসরি দেখার সুযোগ পেতে যাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমিরা। দ্বিতীয়ত হলো- এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে খেলাটির প্রতি আরো আগ্রহ বাড়বে এবং ক্রমান্বয়ে এখানে জনপ্রিয়তা লাভ করবে ক্রিকেট।’

যৌথ আয়োজক হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে আকর্ষনীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ এই ক্রিকেট উৎসব চলবে মাসব্যাপী। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও নিউইয়র্কের পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশ কিছু ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে বিশ^কাপের ম্যাচগুলো।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বড় কোনো ইভেন্ট এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বসচ্ছে। যদিও টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। ২০ দলের এই টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বের ১৬টি ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে নিউইয়র্কে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। টুর্নামেন্টের বাকি সবম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে গড়াবে। যারমধ্যে সুপার এইট পর্ব, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল থাকছে। ২৯ জুন বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে পর্দা নামবে এবারের বিশ^কাপের।

২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেট অর্ন্তভুক্ত হচ্ছে। ফলে এর পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া হিসেবে এবারের বিশ^কাপকে দেখছে আইসিসি। লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে টি-টোয়েন্টি ভার্সনে খেলা হবে। এই অলিম্পিক ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়মেজর লিগ ক্রিকেট। যেখানে খেলা হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। পাওয়া হিটিং ক্রিকেট, দর্শকদের আগ্রহের কারণে এই ফরম্যাটের জনপ্রিয়তা অনেকখানি বেড়ে যাবে। তবে এটি শুধুমাত্র আমেরিকান বাজারের উপরই নজর রাখছে না আইসিসি। ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে নতুন ক্রিকেট দেশগুলোকে বড় মঞ্চের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ করে দিচ্ছে তারা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে টেস্ট মর্যাদা দিয়ে বড় ফরম্যাটে খেলুড়ে দেশের সংখ্যা ১২তে উন্নতি করে ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেটকে প্রসার করতে পেরেছে আইসিসি। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে ক্রিকেটের উন্নতির মাধ্যম হিসেবে দেখছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং উগান্ডার মত দলের বড় মঞ্চে অভিষেক হতে যাচ্ছে। এ ছড়াও রয়েছে নেপাল, পাপুয়া নিউগিনি এবং ওমানের মত দলগুলো। যাদের বড় মঞ্চে নতুন হিসেবে ধরা হয়। এবারের আসরে বড় দলগুলোকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়ে বিশে^র সামনে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমান দিতে চায় তারা।

পাঁচটি করে দল নিয়ে চারটি গ্রুপ সাজানো হয়েছে এবারের আসরে। গ্রুপের সেরা দুই দল সুপার এইটে খেলবে। ছোট দলগুলো গ্রুপ পর্বের বাঁধা টপকাতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট দেখা যাবে।

২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের প্রথম আসরের শিরোপা জয় করে ভারত। সদ্য সমাপ্ত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করেই বিশ^কাপের দল সাজিয়েছে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট টিম ইন্ডিয়া। অন্যদিকে অভিজ্ঞ ব্যাটার স্টিভেন স্মিথকে ছাড়াই বিশ^কাপ পুনরুদ্ধারের মিশনে নামবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ^কাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ না থাকলেও অজিদের বিশ^কাপ দলে অভিজ্ঞতার অভাব নেই। ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্সের মত বিশ^ জয়ী ক্রিকেটাররা রয়েছেন। এছাড়া শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবীদার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ২০২২ সালে সর্বশেষ আসরে শিরোপা জয়ী দলের সদস্য তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকসকে ছাড়াই এবার খেলতে নামবে ইংলিশরা। হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পর নিজের ফিটনেস ফিরে পেতে লড়ছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ভালোভাবেই বিশ^কাপের প্রস্তুতি শেষ করেছে ইংল্যান্ড। এদিকে ঘরের মাঠে বিশ^কাপ হওয়ায়, তৃতীয়বারের মত শিরোপা জয়ের স্বাদ পেতে বদ্ধপরিকর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় এবং ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের শিরোপা জিতেছিল ক্যারিবীয়রা। দু’বারই ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ছিলেন ড্যারেন সামি। এবার দলটির কোচের ভূমিকায় আছেন স্যামি। এছাড়া শিরোপা জয়ের দৌড়ে আছে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কাও। বিশ^কাপের আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ডের কাছে চার ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে প্রোটিয়ারা। আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মূল ক্রিকেটারদের ছাড়া গত এপ্রিলে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ করে নিউজিল্যান্ড। তবে আইপিএলের অভিজ্ঞতা বিশ^কাপে কাজে লাগিয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা জিততে চায় কিউইরা।

ছোট দল হিসেবে বিশ^কাপে চমক দেখাতে পারে বাংলাদেশ। যদিও বিশ^কাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে টাইগাররা। কিন্তু বড় মঞ্চে জ¦লে উঠতে বদ্ধপরিকর তারা। গত ওয়ানডে বিশ^কাপে চমকে দেখিয়েছিল আফগানিস্তান। এবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও জ¦লে উঠতে চায় তারা।