হতাশার বিশ্বকাপ শেষে ফিরে বললেন তাসকিন

সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ফর্মহীনতাই ডুবিয়েছে!

Daily Inqilab স্পোর্টস রিপোর্টার

২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম

৭ ম্যাচে ৩ জয়- কোচ, ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বিসিবি প্রধানের ‘আত্মতুষ্টি’র খবর এরই মধ্যে জানা গেছে। তবে সামর্থ্য আর সুযোগ থাকার পর আরো ভালো কিছু না করতে পারার দায় কি এড়াতে পারে ক্রিকটাররা! সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে অ্যান্টিগা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি, এরপর দুবাই হয়ে ঢাকা ফেরার ভ্রমণক্লান্তি। এসব সঙ্গী করেই গতকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছেছে শেষটা ভালো না হওয়ায় হতাশ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দেড় মাসের দীর্ঘ সফর শেষে গতকাল সকালে ঢাকায় ফেরা বেশির ভাগ ক্রিকেটারকে দেখে এমনই মনে হচ্ছিল। দলের সঙ্গে এদিন ঢাকায় ফেরেননি লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। সাকিব আগের রাতেই ঢাকায় এসেছেন। সৌম্য ও লিটন আসবেন আজ। এ ছাড়া কোচিং স্টাফের সদস্যরা দুবাই থেকে যে যার মতো ছুটিতে গেছেন। তারা এলে হয়তো হবে বিশ্বকাপে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব-নিকেষ, চলবে চুলচেরা বিশ্লেষণ, হবে সমালোচনা। তার আগে দেশের মাটিতে পা দিয়ে স্পষ্ট করেই সহ-অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ বললেন সিনিয়র দুই ক্রিকেটারের ফমহীনতাই এই ব্যর্থতার বড় কারণ।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছিলেন ভীষণ মলিন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে তাদের ব্যর্থতা বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার পথ করে দেয় রুদ্ধ। এই দুজনের ফর্মহীনতা গোটা আসরে ভুগিয়েছে দলকে। নয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবকটিতে খেলা অলরাউন্ডার সাকিব চলতি আসরে করেন হতাশ। সাত ইনিংসে তিনি ১৮.৫০ গড় ও ১০৬.৭৩ স্ট্রাইক রেটে করেন মাত্র ১১১ রান। এর মধ্যে ৬৪ রানই আসে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে। বল হাতেও সাকিব ছিলেন নিষ্প্রভ। উইকেট নিতে পারেন ¯্রফে তিনটি। উইকেটশূন্য ছিলেন সাত ম্যাচের পাঁচটিতেই। ফিনিশারের ভূমিকাতে মাহমুদউল্লাহও চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হন। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে দলে ফিরে এসে উদাহরণ তৈরি করা অভিজ্ঞ ক্রিকেটার জায়গামতো জ্বলে উঠতে পারেননি। সাত ম্যাচে ১৫.৮৩ গড়ে তিনি করেন মোটে ৯৫ রান। মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইক রেটের দশা ছিল একদমই বেহাল (৯৪.০৫)। পাঁচ ম্যাচে হাত ঘুরিয়ে উইকেট নিতে পারেন কেবল একটি। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যমকে তাসকিন বলেন, ‘দুজন সিনিয়রের ফর্মে না থাকা আমাদের দলে অবশ্যই প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু মাঠের বাইরে প্রভাব পড়েনি। ৪৭ দিনের মতো একসঙ্গে ছিলাম, সবার আচরণ খুব ভালো ছিল, সবাই একসঙ্গে ছিলাম। মাঠের বাইরে সব তো ঠিকই ছিল। আসলে দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা ছন্দে না থাকলে ওই দলে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আশা করছি, দ্রুত এসব কাটিয়ে উঠে সামনে ভালো কিছু করব।’

সুপার এইটে ওঠার পর আর একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি আফগানদের হারিয়ে সেমিতে জায়গা পাওয়ার সুযোগও হাতছাড়া করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সেদিন ১২.১ ওভারে ১১৬ রান তাড়া করতে হতো তাদেরকে। এমন পরিস্থিতিতে সাকিব প্রথম বলেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে নেন গোল্ডেন ডাকের স্বাদ। অদ্ভুত অ্যাপ্রোচ নিয়ে মাহমুদউল্লাহ সাতে নেমে আউট হন ৯ বলে ৬ রানে। গোটা বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বারবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার এইট পর্বের শেষ ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্সের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তাসকিন প্রথমেই বললেন, ‘না, আসলে সত্যি কথা বলতে, ভালোর তো শেষ নেই। হ্যাঁ, আরও অনেক ভালো হতে পারত। বিশেষ করে শেষ ম্যাচটা, আমরা সবাই একটু হতাশ হয়েছি। আমরা জেতার চেষ্টা করেছি প্রথমে, ১২ ওভারের মধ্যে, যখন বুঝতে পারলাম ১২ ওভারের মধ্যে শেষ করা সম্ভব না, তখন স্বাভাবিকভাবে খেলার চেষ্টা করেছিল সবাই। তাও জিততে পারিনি।’ তাসকিন যোগ করেন, ‘হ্যাঁ, ইতিবাচক দিক আছে। পুরো টুর্নামেন্টে বোলিং যথেষ্ট ভালো করেছে। সুপার এইটে এসেছি। সর্বপ্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা তিনটা জয় পেয়েছি। মানে পজেটিভ আছে। কিন্তু নেগেটিভের সংখ্যাটা একটু বেশি। সবার মতো আমরাও জানি, প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো হয়নি।’

বোলিং বিভাগের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স নিয়ে তাসকিনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, ‘বোলিং ইউনিট আগাগোড়াই কয়েক বছর ধরে ভালো করছে। সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। সামনে আরও ভালো হবে। ভালোর তো শেষ নেই।’ বোলিংয়ের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দলের ব্যাটিং ব্যর্থতার বিষয়টিও এসেছে তাসকিনের কথায়, ‘আর ব্যাটিং, বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রে যখন খেলা হয়েছে, তখন উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কম ছিল। আপনারা যদি পরিসংখ্যান দেখেন, অন্য দেশের বড় বড় ব্যাটসম্যানকেও সেখানে ধুঁকতে হয়েছে। সেখানে বোলারদের একটু বাড়তি সুবিধা ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার পর আমরা কিছুটা ভালো উইকেটে খেলেছি।’ পরে এ কথাও বলেছেন, ‘কিন্তু আমি বাংলাদেশ দলের হয়ে ক্রিকেট খেলার সময়, লাস্ট ১০ বছর ধরে খেলছি, কখনোই এত লম্বা ব্যাডপ্যাচ দেখিনি। আশা করি এটা কাটিয়ে উঠবে।’

এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলারদের তালিকার শীর্ষ দশে আছেন রিশাদ হোসেন ও তানজিম হাসান। দুজনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমবারের মতো তাসকিনের মুখে হাসি ফুটল, ‘তানজিম সাকিব, রিশাদ লিডিং উইকেট টেকারদের মধ্যে ছিল, টপ ফাইভে। সব মিলিয়ে ভালো করেছে। এটা খুবই ইতিবাচক যে বাংলাদেশ থেকে ভবিষ্যতের তারকা উঠে আসছে। এর মধ্যে বিশ্বকে বোঝানো হয়েছে, আমাদের মধ্যে সামর্থ্য আছে।’ পরের কথায় আবার আফগানিস্তান ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনেছেন তাসকিন, ‘এখন আসলে আমরা সবাই ব্যথিত, সমর্থকরাও। বিশেষ করে কয়েকটা ম্যাচ আমাদের জেতার কথা ছিল, পারিনি। শেষ ম্যাচটা আমরা ১২.১ ওভারে আমাদের সবারই পরিকল্পনা ছিল জেতার। আমরা সে ইনটেন্ট নিয়েই খেলা শুরু করেছি। একটা পর্যায়ে যখন দেখলাম যে হবে না ১২ ওভারে, তখন স্বাভাবিকভাবে জেতার চেষ্টা করা হয়, তারপর আমরা ওটাও চেষ্টা করে পারিনি।’


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দাপুটে ফুটবলে কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেন

দাপুটে ফুটবলে কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেন

বেলিংহ্যাম ম্যাজিকে অবিশ্বাস্য জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড

বেলিংহ্যাম ম্যাজিকে অবিশ্বাস্য জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড

ফিলিপিন্সের আতশবাজি গুদামে বিস্ফোরণে নিহত ৫

ফিলিপিন্সের আতশবাজি গুদামে বিস্ফোরণে নিহত ৫

আবার বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর হংকং

আবার বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর হংকং

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

নেত্রকোনায় বারহাট্টায় ছেলের কাঠের চেলার আঘাতে বাবা নিহত

নেত্রকোনায় বারহাট্টায় ছেলের কাঠের চেলার আঘাতে বাবা নিহত

নিরাপত্তা জোরদার সহ হুমকি দাতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবীতে সিলেটে মানববন্ধন

নিরাপত্তা জোরদার সহ হুমকি দাতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবীতে সিলেটে মানববন্ধন

ভারতের সাথে চুক্তি দেশকে আজীবন গোলামে পরিণত করবে: মির্জা ফখরুল

ভারতের সাথে চুক্তি দেশকে আজীবন গোলামে পরিণত করবে: মির্জা ফখরুল

রামুর বাঁকখালী নদী থেকে ভাসমান গলাকাটা লাশ উদ্ধার

রামুর বাঁকখালী নদী থেকে ভাসমান গলাকাটা লাশ উদ্ধার

ভারতীয় রেল ট্রানজিট আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে: ফখরুল

ভারতীয় রেল ট্রানজিট আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে: ফখরুল

ছাগলকাণ্ডে বিতর্কিত মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজকে সাংবাদিকদের নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে : ডিইউজে

ছাগলকাণ্ডে বিতর্কিত মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজকে সাংবাদিকদের নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে : ডিইউজে

বান্দরবানে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের অন্যতম সহযোগী আটক

বান্দরবানে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের অন্যতম সহযোগী আটক

কুমিল্লায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

কুমিল্লায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের যে কোনো একটি রোপণে পরিবেশমন্ত্রীর আহ্বান

ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের যে কোনো একটি রোপণে পরিবেশমন্ত্রীর আহ্বান

ঈদগাঁও রেল স্টেশনে ট্রেন থামানোর পদক্ষেপ নিতে আইনী নোটিশ

ঈদগাঁও রেল স্টেশনে ট্রেন থামানোর পদক্ষেপ নিতে আইনী নোটিশ

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর ৩৯৪তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর ৩৯৪তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

কমিউনিটি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ৫৪তম সভা অনুষ্ঠিত

কমিউনিটি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ৫৪তম সভা অনুষ্ঠিত

তরুণদের জন্য ভিসা প্ল্যাটিনাম ফ্লেক্সি কার্ড চালু করেছে ব্র্যাক ব্যাংক

তরুণদের জন্য ভিসা প্ল্যাটিনাম ফ্লেক্সি কার্ড চালু করেছে ব্র্যাক ব্যাংক

ঢাকার সব ইউনিয়নের হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়া সহজ হলো বিকাশ-এ

ঢাকার সব ইউনিয়নের হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়া সহজ হলো বিকাশ-এ

ঢাকায় ইরানের শহীদ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রায়িসির স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ঢাকায় ইরানের শহীদ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রায়িসির স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত