কাজী সালাউদ্দিন-সালাম মুর্শেদীর অর্থ কমিটির যত অনিয়ম পেয়েছে ফিফা

Daily Inqilab স্পোর্টস রিপোর্টার

১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৫৮ এএম

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ যে সব কারণে ফুটবলীয় কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম ফিফা ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থের অপব্যবহার। যার দেখভালের দায়িত্বে বাফুফের অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তাই এই দোষে সোহাগ যতটা দোষী তার চাইতে হাজার গুণে দোষী হচ্ছেন সালাম মুর্শেদী। আর সংস্থার প্রধান হিসেবে এই দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
নিয়মানুযায়ী ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থ খরচের নির্দিষ্ট কিছু খাত আছে। এই অর্থ নির্দিষ্ট একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখাটা ফিফার নিয়মে বাধ্যতামূলক। লেনদেনও শুধু সেখান থেকেই করার নিয়ম। ফিফার তদন্তে এখানেই বড় দাগে তিনটি অনিয়ম দেখা গেছে। এর মধ্যে আছে ফিফার তহবিলের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নগদে উত্তোলন করা, ফিফা সম্পর্কিত প্রকল্প বা প্রোগ্রামে অন্য অ্যাকাউন্টের টাকা ব্যবহার এবং ফিফা তহবিলের টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় করা।
ফিফা নৈতিকতা বিষয়ক কমিটির ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার বেশ কিছু লেনদেন বিশ্লেষণ করে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪ মার্কিন ডলার লেনদেনে আর্থিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি। এটি যাচাইকৃত লেনদেনের ১৭.৭৩ শতাংশ। এটিকে কোনোভাবেই তুচ্ছ বিবেচনা করা যায় না বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ফিফা ফান্ডের মাত্র ১২.৬৯ শতাংশ সঠিকভাবে লেনদেন করা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
ফিফার ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় পর্যালোচনা এবং নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বিডিও কর্তৃক ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরীক্ষা বিশ্লেষণ করেছে। এর মাধ্যমে ফরোয়ার্ড নীতিমালা প্রতিপালনে বাফুফে ক্রমাগত ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে ফিফার প্রতিবেদনে। ফিফা ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থ সদস্য অ্যাসোসিয়েশন (এ ক্ষেত্রে বাফুফে) যথাযথভাবে খরচ করছে কিনা, এ নিয়ে প্রতি বছর কেন্দ্রীয় পর্যালোচনা করে ফিফা। চেম্বারের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, ফান্ডের খরচের আওতায় থাকা খাতে নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বদলে বাফুফের পরিচালন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে খরচ করা হয়েছে। যেমন ২০১৬ সালের কেন্দ্রীয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই বছর ফিফা ফরোয়ার্ড ফান্ডে ৭ লাখ ৮ হাজার ৮২০ ডলার পেয়েছিল বাফুফে। এর মধ্যে মাত্র ৯০ হাজার ১৪ ডলার ফিফা নির্ধারিত অ্যাকাউন্ট থেকে খরচ করা হয়। যা প্রদেয় অর্থের মাত্র ১২.৬৯ শতাংশ।
এ ক্ষেত্রে কিছু উদাহরণও তুলে ধরা হয়েছে। যেমন :
- নারী ফুটবলে ভ্রমণ ও বেতন বাবদ ১ লাখ ৭ হাজার ৬৩৪ ডলার খরচের কোনো সহায়ক কাগজপত্র দেখানো হয়নি।
- জাতীয় দলের কোচ ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে ৪৪ হাজার ১০০ ডলার বেতন দেওয়া হয়েছে নগদে। আবার বাফুফের ব্যাংক রেকর্ডে দেখা যায়, এই বেতন ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। যাতে মনে হতে পারে, এই বেতন দুইবার দেওয়া হয়েছে।
- ২০১৪ ও ২০১৫ সালের প্রশাসনিক খরচ বাবদ ৩৫ হাজার ৫৭৩ ডলার খরচের কথা ২০১৬ সালেও উল্লেখ করা হয়। এখানেও দুইবার পরিশোধের ব্যাপার থাকতে পারে।
- বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাবগুলোকে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩৫ ডলার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। যেটা ফিফা ফরোয়ার্ড নীতিমালার অংশ নয়, ফিফার সঙ্গে সম্মতিক্রমেও হয়নি। তার ওপর, এই অর্থ বিতরণের পক্ষে যথাযথ প্রমাণও নেই, যার মধ্যে ৫৩ হাজার ৫৮৮ ডলার দেওয়া হয় নগদে।
এ সবের প্রেক্ষিতে ফিফার অডিট এন্ড কমপ্লায়েন্স কমিটি বাফুফেকে দেওয়া ফান্ড স্থগিত করে এবং ২০১৭ সালে একটি কর্ম-পরিকল্পনা ঠিক করে দেয়। কর্ম-পরিকল্পনা অনুসারে বাফুফেকে নগদ পরিশোধ ন্যুনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল। নগদ যা হবে, সেটিও যেন ফিফার সম্মতি সাপেক্ষে হয়। কিন্তু ইনভেস্টিগেটরি চেম্বারের তদন্তে দেখা যায়, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের কেন্দ্রীয় পর্যালোচনায়ও নগদ ব্যবহারের একই চিত্র উঠে এসেছিল। যার জেরে ফিফার অডিট এন্ড কমপ্লায়েন্স কমিটি ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে অর্থ ছাড়ে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৯ সালের পর্যালোচনায় পরিস্থিতির কিচুটা উন্নতি ঘটে। নিষেধাজ্ঞাও আংশিকভাবে তুলে নেওয়া হয়। তবে ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার দেখতে পায়, ফিফা ফান্ডে নগদ পরিশোধের ঘটনা আবারও ঘটেছে।
ফিফার নিয়োগ করা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বিডিওর ২০১৭-২০২০ নিরীক্ষায় দেখা যায়, ফিফা ফরোয়ার্ড ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ ফিফা সম্পর্কিত খাতে ব্যয় করার কথা থাকলেও সেটি অনুসরণ করা হয়নি। ফরোয়ার্ড প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন খাতের জন্য নগদ টাকা তোলা হয়েছে। কী উদ্দেশ্যে নগদ টাকা তোলা হয়েছে সেই ব্যাখ্যা বা প্রমাণপত্র বাফুফের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। বাফুফে নগদ খরচের যে হিসাব দিয়েছে, তার সঙ্গে তুলে নেওয়া নগদ অর্থের বড় অসঙ্গতিও পেয়েছে ফিফা। যার পরিমাণ ৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৫ ডলার। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বলেছে, নগদ অর্থ উত্তোলনের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার পূর্ববর্তী লেনদেন শনাক্ত করা অর্থপ্রদানের প্রমাণ পাওয়াটা কঠিন করে তুলেছে। এর মাধ্যমে তহবিল অপব্যবহার, প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার এবং প্রোগ্রামের বাইরের বিষয়ে খরচের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রেকর্ড সংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে শুরু হলো জাতীয় স্নুকার
মিলানকে হারিয়ে ৫১ বছর পর বোলোনিয়ার প্রথম শিরোপা
ছয় গোলের ম্যাচে ছায়া হয়ে রইলের মেসি
হামলার হুমকিতে ফের অনিশ্চয়তায় আইপিএল
শেষ মিনিটের নাটকীয়তায় জিতে বার্সার অপেক্ষা বাড়ালো রিয়াল
আরও
X
  

আরও পড়ুন

‘আলেম-ওলামাকে শত্রু বানালে ফ্যাসিস্টদের মতো পরিণতি ঘটবে’

‘আলেম-ওলামাকে শত্রু বানালে ফ্যাসিস্টদের মতো পরিণতি ঘটবে’

মৌলভীবাজার সীমান্তে আরো ৩০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ

মৌলভীবাজার সীমান্তে আরো ৩০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ

চল চল যমুনা যাই এ রাজনীতি আর হতে দেবো না -মাহফুজ আলম

চল চল যমুনা যাই এ রাজনীতি আর হতে দেবো না -মাহফুজ আলম

সাম্য হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে ইবি ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি

সাম্য হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে ইবি ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি

উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে: চরমোনাই পীর

উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে: চরমোনাই পীর

ভুল হলে শিক্ষা নিয়ে এগুতে চাই: মাহফুজ আলম

ভুল হলে শিক্ষা নিয়ে এগুতে চাই: মাহফুজ আলম

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের  জন্য হুমকিস্বরূপ বিভিন্ন ইসলামী দলে তীব্র প্রতিবাদ

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ বিভিন্ন ইসলামী দলে তীব্র প্রতিবাদ

ব্যতিক্রমী আরিফ, দেশে ফিরে যে বার্তা দিলেন বিএনপি নেতা কর্মীদের

ব্যতিক্রমী আরিফ, দেশে ফিরে যে বার্তা দিলেন বিএনপি নেতা কর্মীদের

এই সরকারের হাতে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয় :  মির্জা আব্বাস

এই সরকারের হাতে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয় :  মির্জা আব্বাস

কম্বল আত্মসাতের মামলায় সাবেক মহিলা এমপি কাজী হেলেন ও তার দুই ছেলের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা

কম্বল আত্মসাতের মামলায় সাবেক মহিলা এমপি কাজী হেলেন ও তার দুই ছেলের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা

আটঘরিয়ায় কলেজ নির্বাচনী ফরম তোলাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে আহত ৩০

আটঘরিয়ায় কলেজ নির্বাচনী ফরম তোলাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে আহত ৩০

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হলেন অধ্যাপক ফরিদ আহমদ সোবহানী

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হলেন অধ্যাপক ফরিদ আহমদ সোবহানী

বৃত্তির টাকায় প্রতারকদের চোখ, কঠোর নির্দেশনা মাউশির

বৃত্তির টাকায় প্রতারকদের চোখ, কঠোর নির্দেশনা মাউশির

গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না: তথ্য উপদেষ্টা

গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না: তথ্য উপদেষ্টা

জাপানের কাছে বাজেট সহায়তা চাইল বাংলাদেশ

জাপানের কাছে বাজেট সহায়তা চাইল বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না : ১২ দলীয় জোট

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না : ১২ দলীয় জোট

মেহেরপুরে মোটরসাইকেল সংঘর্ষে এনজিও কর্মী নিহত

মেহেরপুরে মোটরসাইকেল সংঘর্ষে এনজিও কর্মী নিহত

কিশোরগঞ্জ স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে  এক সন্তানের জননী পারুল

কিশোরগঞ্জ স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে  এক সন্তানের জননী পারুল

অভূতপূর্ব স্বাধীনতা ভোগ করছে গণমাধ্যম, দাবি প্রেস সচিবের

অভূতপূর্ব স্বাধীনতা ভোগ করছে গণমাধ্যম, দাবি প্রেস সচিবের

মির্জাগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের নেতার উপরে হামলা  প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

মির্জাগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের নেতার উপরে হামলা প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন