এবার আঁখি খাতুন ক্যাম্প ছাড়লেন
২৮ মে ২০২৩, ০৯:১৪ পিএম | আপডেট: ২৯ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
হঠাৎ করে নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই সংকটে আছে দেশের নারী ফুটবল। বিশেষ করে বেতন বকেয়া পড়ায়, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) প্রতিশ্রুত খেলোয়াড়দের সম্মানী বৃদ্ধি না হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন খেলার বাইরে থাকার কারণে এখন অনেকটাই মনমরা লাল-সবুজের নারী ফুটবলাররা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গত শুক্রবার জাতীয় দলের ফুটবলার সিরাত জাহান স্বপ্নার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা এবং জাতীয় নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত। এ দু’টি ঘটনা যখন লাল-সবুজের নারী ফুটবলকে পুরোটাই নাড়িয়ে দেয় তখনই মেলে আরেক খবর। আর তা হলো, রোববার বাফুফের ক্যাম্প ছেড়েছেন সাফজয়ী জাতীয় নারী দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। তিনি সিরাজগঞ্জে নিজ বাড়িয়ে গেছেন। যাওয়ার আগে নাকি আঁখি বাফুফেকে বলে গেছেন, তার মা অসুস্থ। মা সুস্থ হলে ফিরে আসবেন। তবে কবে ফিরবেন, সেটা বলে যাননি।
জাতীয় নারী দলের একের পর এক খেলোয়াড়ের এমন বিদায় ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। বেড়িয়ে আসছে নানা তথ্য। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, বাফুফে নাকি প্রায় সময়ই সাবিনা খাতুনদের বেতন নিয়ে গড়িমসি করে। অহরহই নারী ফুটবলারদের বেতন বকেয়া রাখে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি। মে মাস প্রায় শেষ হলেও এপ্রিলের বেতন এখনো পাননি নারী ফুটবলাররা। তাদের বেতনের অংকটা যৎসামাণ্য হলেও সময় মতো তা দেয়না বাফুফে। ফুটবলারদের মধ্যে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন পান সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। বাকিরা আগের মতোই ১০/১৫ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। যদিও সাফ শিরোপা জেতার পর এই সম্মানী বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাফুফের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। কিন্তু তিনি তা বাস্তবায়ন করেননি। সাফের মতো বড় টুর্নামেন্টে সাফল্য পাওয়ার পর মাত্র দশ/পনের হাজার টাকা বেতন নিয়ে ফুটবলারদের অনেকেরই অসম্মতি। বেতন স্বল্পতা নিয়ে ক্ষোভ তো রয়েছেই, এর চেয়েও বড় ক্ষোভ খেলতে না পারার। গত আট মাসে একটি ম্যাচও খেলতে পারেনি মেয়েরা। মিয়ানমারে সাবিনাদের অলিম্পিক বাছাই সফর বাতিল করেছে বাফুফে। প্রীতি ম্যাচও বাতিল হয়েছে। নারী ফুটবলারদের মধ্যে অনেকের দেশের বাইরে লিগ খেলার প্রস্তাব ছিল, কিন্তু তাদের যেতে দেওয়া হয়নি দেশে ফ্রাঞ্চাইজ লিগ হবে বলে। অথচ সেই ফ্রাঞ্চাইজি লিগ নিয়েও তৈরী হয়েছে অনিশ্চয়তা। দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েও বাংলাদেশের মেয়েরা আট মাস খেলার বাইরে। অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তান, ভূটান, নেপাল একাধিক প্রীতি ম্যাচ এবং টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। অথচ বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন সাবিনারা। তাই অবসাদে ভুগছেন লাল-সবুজের নারী ফুটবলাররা।
খেলতে না পেরে এবং আর্থিক সমস্যায় সাবিনারা যখন অবসাদে ভুগছেন তখন স্থানীয় কোচরা অস্বস্তিতে রয়েছেন ব্রিটিশ টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল থমাস স্মলিকে নিয়ে। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের নিবেদিত প্রাণ গোলাম রব্বানী ছোটন ও মাহবুবুর রহমান লিটুর চেয়ে টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলির প্রতিই বেশি আস্থা বাফুফে সভাপতির। অথচ এই পলই নাকি মেয়েদের সামনে অনেক সময় স্থানীয় কোচদের সমালোচনা করেন। যা তাদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পল ছুটি কাটিয়ে ১৪ মে’র পর ঢাকায় ফিরলেও অনুশীলন করাচ্ছেন না। তবে তার হয়ে ট্রেনার ইভান রাজলভ খবরদারী করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইভানের আচার-আচরণে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে স্থানীয় কোচিং স্টাফে। পল শুধু নারী দলের কোচিংয়েই নয়, জাতীয় পুরুষ দলের কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রেও ভুমিকা রাখেন। স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা পলের মাধ্যমেই বাফুফেতে এসেছেন। ফিটনেস কোচ ইভান রাজলভও পলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটবলে চাকরি নিয়েছেন।
বিভাগ : খেলাধুলা