ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব কেন?
১২ মার্চ ২০২৩, ০৭:০২ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
![](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2023March/sompadiyiyo-20230312190253.jpg)
সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় ফসলহানির আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রকাশিত খবর মোতাবেক, চলতি বছর জেলার ৫৪টি হাওরের ১ হাজার ৭৮টি ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ২০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধগুলো নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার অতিরিক্ত আরও ১০ দিন সময় বাড়ানো হলেও কোনো বাঁধের কাজই শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশের মতো কাজ হয়েছে, যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। একাধিক পত্রিকার প্রতিনিধির সরেজমিনে রিপোর্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি সমর্থিত হয়নি। প্রশ্ন হলো, নির্ধারিত, এমনকি বাড়তি সময়ের মধ্যেও ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হলো না কেন? অতঃপর যদি আগাম বন্যায় ফসল বিনষ্ট হয়, তাহলে দায় কে নেবে? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা লক্ষ করছি, এপ্রিল-মে মাসে ভারতের মেঘালয় ও আসামে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমাদের হাওর এলাকায় আগাম বন্যা দেখা দিচ্ছে। বন্যায় হাওরের উঠতি বোরো ধান ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছরও এমনটি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ২০১৭ সালের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। ওই বছর হাওর এলাকার বোরো ধান প্রায় সবই বিনষ্ট হয়ে যায়। কৃষকরা সর্বস্ব হারিয়ে শোচনীয় অবস্থার পতিত হয়। তখনও ফসল রক্ষা বাঁধ ঠিক সময়ে নির্মাণ না করার অভিযোগ ওঠে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তোলে কৃষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।
২০১৭ সালের ফসলহানির পরিপ্রেক্ষিতে প্রচলিত ঠিকাদারি ব্যবস্থা বিলোপ করে অংশীজন, প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রকল্প নির্ধারণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়। পিআইসিতে মূল অংশীজন কৃষক। অত্যন্ত দুঃখজনক, কয়েক বছর যেতে না যেতেই নতুন এই ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পিআইসি দখল করে নিয়েছে প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট। নব্য এই সিন্ডিকেটের নজর প্রকল্প নির্ধারণ ও ঠিক সময়ে তা বাস্তবায়নের চেয়ে প্রকল্পের সংখ্যা ও বাজেট বাড়ানোর দিকে। বলা বাহুল্য, লুটপাট ও অর্থ আত্মসাৎই এই সিন্ডিকেটের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের সিন্ডিকেটবাজি যদি চলে তবে কীভাবে ফসলরক্ষা বাঁধ ঠিক সময়ে ও মানসম্পন্নভাবে শেষ হওয়া আশা করা যায়? এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও হয়নি। কেন ব্যতিক্রম হলো? কাজ যথাসময়ে শুরু না হলে শেষ হবে কেমন করে? হাওর এলাকার ফসলরক্ষা বাঁধ কেবল নয়, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ সব ধরনের বাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারে অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাট অবধারিত বাস্তবতা। বাঁধের কাজের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব ও গড়িমসি অতি সাধারণ ব্যাপার। কাজ শুরু করতে বিলম্ব এবং কাজের মাঝে নানা উসিলায় বিরতিও নতুন নয়। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের লক্ষ্য থাকে, যে কোনো অজুহাতে কাজ বর্ষাকাল পর্যন্ত প্রলম্বিত করা। বর্ষা এলে, বন্যা হলে কাজের ত্রুটি, ফাঁকি সব ভেসে যায়। কাজ না করেও অর্থলাভে কোনো অসুবিধা হয় না। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বহুবার এজাতীয় প্রকল্পের কাজ শুষ্ক মওসুমে শেষ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
দেশে ধানের আবাদের মধ্যে বোরো ধানই প্রধান। আউশ-আমনের চেয়েও বোরোর আবাদ-উৎপাদন বেশি। আর হাওর এলাকায় একমাত্র আবাদই হলো বোরো। হাওর এলাকার কৃষক ও জনসাধারণ বোরোর ওপর শতভাগ নির্ভরশীল। দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও হাওরের বোরোর ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। মোট বোরো উৎপাদনের একটা বড় অংশের জোগান আসে হাওর এলাকা থেকে। এ থেকেই হাওর এলাকার ফসলরক্ষা বাঁধের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। যথাসময়ে সব ফসলরক্ষা বাঁধ যথাযথভাবে নির্মাণ ও মেরামত হতে হবে। এ ব্যাপারে কোনোরূপ ওজর-আপত্তি প্রদর্শনের অবকাশ নেই। অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতাই কাম্য। কারো অজানা নেই, আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে। চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আমনের ভরা মওসুমেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। খাদ্য মজুদের পরিমাণও কমছে। আশা করা হচ্ছে, বোরো মওসুমে আবাদ-উৎপাদন ভালো হলে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি কমবে। তেল, বিদ্যুৎ, সার ইত্যাদির দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার আশংকা থাকলেও কৃষকরা থেমে নেই, মাঠে সক্রিয় আছে, এটাই আশার কথা। অবশ্যই কৃষকদের কষ্টের সফল যে কোনো দুর্যোগ ও দুর্বিপাক থেকে রক্ষা করতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে রাখা যাবে না। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। বিলম্বের জন্য কারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
![দুবাই পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/inqilab-20250213084105.jpg)
দুবাই পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
![তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ! পাল্টা হুঁশিয়ারি চীনের](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/inqilab-20250213082828.jpg)
তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ! পাল্টা হুঁশিয়ারি চীনের
![চার লাল কার্ডের ম্যাচে লিভারপুলকে রুখে দিল এভারটন](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/4753-20250213075130.jpg)
চার লাল কার্ডের ম্যাচে লিভারপুলকে রুখে দিল এভারটন
![রিজওয়ান-সালমানের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের রান তাড়ার রেকর্ড](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/rizwan-century-cd22ff863cacd40d2203ba5bfc31b823-20250213065051.jpg)
রিজওয়ান-সালমানের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের রান তাড়ার রেকর্ড
![কফিন কাঁধে মিছিল, আ.লীগ নিষিদ্ধ চাইল ছাত্র-জনতা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/52-20250213005044.jpg)
কফিন কাঁধে মিছিল, আ.লীগ নিষিদ্ধ চাইল ছাত্র-জনতা
![শিরোপার স্বপ্ন নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/7-20250213001831.jpg)
শিরোপার স্বপ্ন নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ
![মেয়েদের ক্রিকেট](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/inq-graphics-20250213001619.jpg)
মেয়েদের ক্রিকেট
![এতীমের মা খ্যাত ফুলতলীর বড় ছাহেবের সহধর্মিণীর জানাযায় মানুষের ঢল : বিভিন্ন মহলের শোক](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/50-20250213001434.jpg)
এতীমের মা খ্যাত ফুলতলীর বড় ছাহেবের সহধর্মিণীর জানাযায় মানুষের ঢল : বিভিন্ন মহলের শোক
![নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ সংবিধান সংশোধন করতে পারে না](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/inq-graphics-20250212233015.jpg)
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ সংবিধান সংশোধন করতে পারে না
![মুন্সীগঞ্জে থেমে থাকা বাসে আগুনে ঘুমন্ত হেলপারের মৃত্যু](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/inq-graphics-20250212233028.jpg)
মুন্সীগঞ্জে থেমে থাকা বাসে আগুনে ঘুমন্ত হেলপারের মৃত্যু
![ডেভিল হান্টে ধরা আরো ৫৯১ জন](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/377-20250212233119.jpg)
ডেভিল হান্টে ধরা আরো ৫৯১ জন
![ডেভিল হান্ট অপারেশনে আশানুরূপ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি :গাজীপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/47-20250212233311.jpg)
ডেভিল হান্ট অপারেশনে আশানুরূপ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি :গাজীপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
![পুলিশে আস্থা ফেরাতে ডিসিদের প্রস্তাব](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/40-20250212233357.jpg)
পুলিশে আস্থা ফেরাতে ডিসিদের প্রস্তাব
![বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/23-20250212233409.jpg)
বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প
![নাফিজের নিথর দেহের সেই ছবির স্কেচ জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রচ্ছদে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/41-20250212233426.jpg)
নাফিজের নিথর দেহের সেই ছবির স্কেচ জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রচ্ছদে
![তিন ফুট বাই এক ফুটের সেল, টয়লেট ও বিছানা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/48-20250212233532.jpg)
তিন ফুট বাই এক ফুটের সেল, টয়লেট ও বিছানা
![আয়নাঘরেও উল্টো ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয় মাজেদকে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/42-20250212233607.jpg)
আয়নাঘরেও উল্টো ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয় মাজেদকে
![৭০০ থেকে ৮০০ আয়নাঘর থাকতে পারে সারা দেশে :প্রেস সচিব](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/49-20250212233657.jpg)
৭০০ থেকে ৮০০ আয়নাঘর থাকতে পারে সারা দেশে :প্রেস সচিব
![‘আয়নাঘর’ বীভৎস দৃশ্য দেখলেন ড. ইউনূস](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/38-20250212233730.jpg)
‘আয়নাঘর’ বীভৎস দৃশ্য দেখলেন ড. ইউনূস
![মানবাধিকারের চরম লংঘনকারী হাসিনা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2025February/SM/39-20250212234042.jpg)
মানবাধিকারের চরম লংঘনকারী হাসিনা