ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২১ কার্তিক ১৪৩১
পাহাড়ে অবৈধ জনবসতি

হারিয়ে যাচ্ছে গহিন অরণ্য

Daily Inqilab এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে

১১ জুন ২০২৩, ০৮:২১ পিএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

সেই ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের আজ একি হাল! সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাজুড়ে রয়েছে বিস্তৃীর্ণ বনাঞ্চল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এ এলাকাজুড়ে রয়েছে বিশাল প্রাকৃতিক ও সৃজিত বন। যেখানে আজ থেকে মাত্র ১০/১৫ বছর পূর্বেও ছিল শাল-গজারির গহীন অরণ্য। ছিল নানা প্রজাতির প্রাণীবৈচিত্রের অভয়ারণ্য। সেই গহীন অরণ্য যেমন ধ্বংস করা হয়েছে। তেমনই পশু-পাখি থেকে শুরু করে বাঘ-ভল্লুক, সিংহ-হরিণসহ জীব-জন্তুু জানোয়ারও আজ বিলুপ্তির পথে। পাহাড় ধ্বংস, প্রাণীবৈচিত্রের আবাসস্থলে মানুষের অবৈধ ঘনবসতি গড়ে উঠায় হিংস্র জীব-জন্তুু-জানোয়ার আজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যে পাহাড়ে জীব-জন্তু জানোয়ার থাকতো সে বনেই অবৈধ দখলদাররা ঘনবসতি গড়ায় আবাসস্থল হারিয়ে কিছু কিছু জীব-জন্তুু জানোয়ার খাদ্য ও বাসস্থানের সন্ধাণে চলে আসছে লোকালয়ে। বনাঞ্চল হয়ে পড়ছে জীববৈচিত্র্য শুন্য। আশ্রয় ও খাদ্যের অভাবে বন্যহাতির পাল আসছে লোকালয়ে খাদ্যের সন্ধাণে। ভাঙছে বাড়িঘর। খেয়ে সাবার করছে আবাদি ফসল। হাতি তাড়াতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরিহ জনগণ।

জানা যায়, বন বিভাগের গাফিলতি ও অবহেলা এবং সংরক্ষণের অভাব ও বনাঞ্চল বেদখলে বাড়ি-ঘর নির্মাণের সহযোগিতায় জনবসতি গড়ে উঠায় এবং ধ্বংসের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্যবাহী জীববৈচিত্র্য। প্রবীণ লোকজন বলেন, মাত্র ১ যুগ আগেও এখানকার ছোট-বড় ও মাঝারি পাহাড়ি টিলা ও সমতল পাহাড়ে ছিল অসংখ্য বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

গারো পাহাড়ের শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, আলহাজ শরিফ উদ্দিন সরকার, আলহাজ রেজাউর রহমান মাস্টার, আলহাজ গোলাম মোস্তফা ও সরোয়ারর্দী দুদু মন্ডল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তখন গহীন অরণ্যে অবাধে ঘুরে বেড়াত বাঘ, ভালুক, মেছো বাঘ, হারিণ, বানর, হুনুমান, শিয়ালসহ হিংস্র জীব-জন্তুু-জানোয়ার। পাখ-পাখালীর কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো গারো পাহাড়। অবাধে ঘুরে বেড়াতো হাতি বাঘ, ভালুক, হরিণ, শিয়াল, ময়ূর, বন মোরগ-মুরগি, আরো কত নাম না জানা পাখ-পাখালী। দেখা যেতো বানর, হুনুমান, কাঠবিড়ালী, কাটবানরসহ নানা জীব-জন্তুু-জানোয়ার। তাছাড়া চিল, শকুন, কাঁনিবক, জাইঠাবক, ঘুঘু, শালিক, মাছরাঙ্গাঁ, বউকথাকউ, ধনেশপাখিতো ছিলই।

পাহাড়ি নদী-নালা, খাল-বিল ও ঝড়নায় ছিল বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ। কিন্তুু আজ সেই জীববৈচিত্র বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যাও টিকে আছে তারও অস্তিত্ব হুমকির মুখে। অথচ এককালে গারো পাহাড়জুড়ে ছিল বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য।

কিন্তুু বাড়ছে জনবসতি, মানুষের সংখ্যা, কমছে পশু-পাখি-জীব-জন্তুু-জানোয়ারের সংখ্যা। বিলুপ্ত হয়ে গেছে স্তনপায়ী বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ। পাকপাখালী।

গারো পাহাড়ের নওকুচি গ্রামের মো. আমেজ উদ্দিন ও প্রবীণ কোঁচ নেতা শ্রী ধীরেন্দ্র কোঁচ বলেন, মাত্র ১০-১২ বছর আগেও গারো পাহাড় ছিল গহীন অরণ্য। দিনদুপুরে ও সীমান্তবর্তী গভির অরণ্যে বাঘ-ভালুক, হরিণ, হাতির ভয়ে মানুষ চলাফেরা করতে পারতো না। তখন বাঘ, ভালুক, হাতি, বনগরু ও শিয়ালের ডাক-চিৎকারে পাহাড়ি মানুষের ঘুম ভেঙে যেত। গাছে গাছে, ডালে ডালে ছিল বানরের দল, অবাধে সারা আকাশজুড়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতো শকুন, চিল, বক, ঘুঘু আর কতই না নাম না জানা পাখ-পাখালি। কিন্তুু পাহাড়ে জনবসতি-জনসংখ্যাবৃদ্ধি ও অবাধ বৃক্ষনিধনে বনাঞ্চল ধ্বংসে চরম হুমকির মূখে পড়ে জীববৈচিত্র। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যেই অনেক জীব-জন্তুু-জানোয়ার, পশু-পাখ-পাখালী বিলুপ্তই হয়ে গেছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ফারুক আল মাসুদ বলেন, গারো পাহাড়ের প্রাণীবৈচিত্র্য আমাদের জাতীয় সম্পদ। যে কোনভাবেই হোক এই জাতীয় সম্পদ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা বদ্ধপরিকর। এ জন্য শিকারিরাও যাতে এই জাতীয় সম্পদ শিকার করতে না পারে, সে জন্য স্বজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বন বিভাগকে। আমরা সহযোগিতায় প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বেআইনী শিকার ও তৎপরতা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জিন প্রযুক্তিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিজ্ঞানীদের নতুন কৌশল আবিস্কার

জিন প্রযুক্তিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিজ্ঞানীদের নতুন কৌশল আবিস্কার

নেত্রকোনার মদনে রাইফেলসহ ৩ মাদক ব্যাবসায়ী গ্রেফতার

নেত্রকোনার মদনে রাইফেলসহ ৩ মাদক ব্যাবসায়ী গ্রেফতার

কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান পেয়েছে ঢাকাই সিনেমা 'প্রিয় মালতি'

কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান পেয়েছে ঢাকাই সিনেমা 'প্রিয় মালতি'

মাগুরায় নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ

মাগুরায় নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ

ফরিদগঞ্জে গৃহবধূ আসমার লাশ গোসলের সময় দেখা যায় আঘাতের চিহ্ন, দুই দেবর পলাতক

ফরিদগঞ্জে গৃহবধূ আসমার লাশ গোসলের সময় দেখা যায় আঘাতের চিহ্ন, দুই দেবর পলাতক

নির্মাণকাজে গুণগতমান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না- খুবি উপাচার্য

নির্মাণকাজে গুণগতমান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না- খুবি উপাচার্য

অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতাই কি দেশে ফেরাবে শেখ হাসিনাকে?

অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতাই কি দেশে ফেরাবে শেখ হাসিনাকে?

নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ই সাংগঠনিক কাঠামোতে রাখা হবে- ছাত্রদল সম্পাদক নাছির

নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ই সাংগঠনিক কাঠামোতে রাখা হবে- ছাত্রদল সম্পাদক নাছির

বিশ্বনাথ পৌর সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতির রিমান্ড মঞ্জুর

বিশ্বনাথ পৌর সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতির রিমান্ড মঞ্জুর

বোয়িং ধর্মঘটের সমাপ্তি,কর্মীরা ৩৮% বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবে সম্মতি জানালেন

বোয়িং ধর্মঘটের সমাপ্তি,কর্মীরা ৩৮% বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবে সম্মতি জানালেন

গুম কমিশনে জমা পড়েছে ১৬০০ অভিযোগ

গুম কমিশনে জমা পড়েছে ১৬০০ অভিযোগ

তাবলিগের বিরোধের কারণ সরকারের বোঝা দরকার : নেয়ামাতুল্লাহ ফরিদি

তাবলিগের বিরোধের কারণ সরকারের বোঝা দরকার : নেয়ামাতুল্লাহ ফরিদি

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট দেয়া ও গণনা হয় যেভাবে !

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট দেয়া ও গণনা হয় যেভাবে !

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে শুধুই আলেম-ওলামা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে শুধুই আলেম-ওলামা

কান্নায় রয়েছে যেসব উপকারিতা

কান্নায় রয়েছে যেসব উপকারিতা

জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংগঠন ‘ইউএনআরডাব্লিউএ' এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো ইসরাইল

জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংগঠন ‘ইউএনআরডাব্লিউএ' এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো ইসরাইল

দিনাজপুরের খানসামায় ১১ বছর আগের চাঁদাবাজি ও বিএনপি'র কার্যালয় ভাংচুরের মামলা

দিনাজপুরের খানসামায় ১১ বছর আগের চাঁদাবাজি ও বিএনপি'র কার্যালয় ভাংচুরের মামলা

চাঁদপুরে ডিম ছাড়ার পর ইলিশের গবেষণা

চাঁদপুরে ডিম ছাড়ার পর ইলিশের গবেষণা

নিষেধাজ্ঞা শেষ পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরায় ব্যস্ত জেলেরা

নিষেধাজ্ঞা শেষ পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরায় ব্যস্ত জেলেরা

বগুড়ায় ২০ টাকায় পঁচা পেয়াজ কিনে ৮০ টাকায় বিক্রি, কেজিতে লাভ ৬০ টাকা

বগুড়ায় ২০ টাকায় পঁচা পেয়াজ কিনে ৮০ টাকায় বিক্রি, কেজিতে লাভ ৬০ টাকা