ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
পাহাড়ে অবৈধ জনবসতি

হারিয়ে যাচ্ছে গহিন অরণ্য

Daily Inqilab এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে

১১ জুন ২০২৩, ০৮:২১ পিএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

সেই ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের আজ একি হাল! সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাজুড়ে রয়েছে বিস্তৃীর্ণ বনাঞ্চল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এ এলাকাজুড়ে রয়েছে বিশাল প্রাকৃতিক ও সৃজিত বন। যেখানে আজ থেকে মাত্র ১০/১৫ বছর পূর্বেও ছিল শাল-গজারির গহীন অরণ্য। ছিল নানা প্রজাতির প্রাণীবৈচিত্রের অভয়ারণ্য। সেই গহীন অরণ্য যেমন ধ্বংস করা হয়েছে। তেমনই পশু-পাখি থেকে শুরু করে বাঘ-ভল্লুক, সিংহ-হরিণসহ জীব-জন্তুু জানোয়ারও আজ বিলুপ্তির পথে। পাহাড় ধ্বংস, প্রাণীবৈচিত্রের আবাসস্থলে মানুষের অবৈধ ঘনবসতি গড়ে উঠায় হিংস্র জীব-জন্তুু-জানোয়ার আজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যে পাহাড়ে জীব-জন্তু জানোয়ার থাকতো সে বনেই অবৈধ দখলদাররা ঘনবসতি গড়ায় আবাসস্থল হারিয়ে কিছু কিছু জীব-জন্তুু জানোয়ার খাদ্য ও বাসস্থানের সন্ধাণে চলে আসছে লোকালয়ে। বনাঞ্চল হয়ে পড়ছে জীববৈচিত্র্য শুন্য। আশ্রয় ও খাদ্যের অভাবে বন্যহাতির পাল আসছে লোকালয়ে খাদ্যের সন্ধাণে। ভাঙছে বাড়িঘর। খেয়ে সাবার করছে আবাদি ফসল। হাতি তাড়াতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরিহ জনগণ।

জানা যায়, বন বিভাগের গাফিলতি ও অবহেলা এবং সংরক্ষণের অভাব ও বনাঞ্চল বেদখলে বাড়ি-ঘর নির্মাণের সহযোগিতায় জনবসতি গড়ে উঠায় এবং ধ্বংসের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্যবাহী জীববৈচিত্র্য। প্রবীণ লোকজন বলেন, মাত্র ১ যুগ আগেও এখানকার ছোট-বড় ও মাঝারি পাহাড়ি টিলা ও সমতল পাহাড়ে ছিল অসংখ্য বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

গারো পাহাড়ের শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, আলহাজ শরিফ উদ্দিন সরকার, আলহাজ রেজাউর রহমান মাস্টার, আলহাজ গোলাম মোস্তফা ও সরোয়ারর্দী দুদু মন্ডল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তখন গহীন অরণ্যে অবাধে ঘুরে বেড়াত বাঘ, ভালুক, মেছো বাঘ, হারিণ, বানর, হুনুমান, শিয়ালসহ হিংস্র জীব-জন্তুু-জানোয়ার। পাখ-পাখালীর কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো গারো পাহাড়। অবাধে ঘুরে বেড়াতো হাতি বাঘ, ভালুক, হরিণ, শিয়াল, ময়ূর, বন মোরগ-মুরগি, আরো কত নাম না জানা পাখ-পাখালী। দেখা যেতো বানর, হুনুমান, কাঠবিড়ালী, কাটবানরসহ নানা জীব-জন্তুু-জানোয়ার। তাছাড়া চিল, শকুন, কাঁনিবক, জাইঠাবক, ঘুঘু, শালিক, মাছরাঙ্গাঁ, বউকথাকউ, ধনেশপাখিতো ছিলই।

পাহাড়ি নদী-নালা, খাল-বিল ও ঝড়নায় ছিল বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ। কিন্তুু আজ সেই জীববৈচিত্র বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যাও টিকে আছে তারও অস্তিত্ব হুমকির মুখে। অথচ এককালে গারো পাহাড়জুড়ে ছিল বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য।

কিন্তুু বাড়ছে জনবসতি, মানুষের সংখ্যা, কমছে পশু-পাখি-জীব-জন্তুু-জানোয়ারের সংখ্যা। বিলুপ্ত হয়ে গেছে স্তনপায়ী বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ। পাকপাখালী।

গারো পাহাড়ের নওকুচি গ্রামের মো. আমেজ উদ্দিন ও প্রবীণ কোঁচ নেতা শ্রী ধীরেন্দ্র কোঁচ বলেন, মাত্র ১০-১২ বছর আগেও গারো পাহাড় ছিল গহীন অরণ্য। দিনদুপুরে ও সীমান্তবর্তী গভির অরণ্যে বাঘ-ভালুক, হরিণ, হাতির ভয়ে মানুষ চলাফেরা করতে পারতো না। তখন বাঘ, ভালুক, হাতি, বনগরু ও শিয়ালের ডাক-চিৎকারে পাহাড়ি মানুষের ঘুম ভেঙে যেত। গাছে গাছে, ডালে ডালে ছিল বানরের দল, অবাধে সারা আকাশজুড়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতো শকুন, চিল, বক, ঘুঘু আর কতই না নাম না জানা পাখ-পাখালি। কিন্তুু পাহাড়ে জনবসতি-জনসংখ্যাবৃদ্ধি ও অবাধ বৃক্ষনিধনে বনাঞ্চল ধ্বংসে চরম হুমকির মূখে পড়ে জীববৈচিত্র। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যেই অনেক জীব-জন্তুু-জানোয়ার, পশু-পাখ-পাখালী বিলুপ্তই হয়ে গেছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ফারুক আল মাসুদ বলেন, গারো পাহাড়ের প্রাণীবৈচিত্র্য আমাদের জাতীয় সম্পদ। যে কোনভাবেই হোক এই জাতীয় সম্পদ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা বদ্ধপরিকর। এ জন্য শিকারিরাও যাতে এই জাতীয় সম্পদ শিকার করতে না পারে, সে জন্য স্বজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বন বিভাগকে। আমরা সহযোগিতায় প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বেআইনী শিকার ও তৎপরতা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে