ডিপ্রেশন : হাল আমলের অহেতুক এক অসুখ
২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

সম্প্রতি ডিপ্রেশন নামে একটি শব্দ খুব জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। ডিপ্রেশনের বাংলা অর্থ হল বিষণœতা। সাধারণত মন খারাপ কেই অনেকে ডিপ্রেশন বলে থাকেন। কিন্তু শুধু মন খারাপ থাকলেই কী তাকে ডিপ্রেশন বলা যায়? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী ডিপ্রেশনকে যে ক’টি বিষয় দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো: দুঃখ, আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে ফেলা, মানসিক চাপ, অপরাধবোধ, নিজেকে মূল্যহীন লাগা, ঘুম ও ক্ষুধায় বিরক্তি, ক্লান্তি, দুর্বল মনোযোগ। বর্তমান সময়ে কিশোর, তুরুণ, যুবা, বৃদ্ধ সবাই নাকি ডিপ্রেশনে ভুগে। এই ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপে মানুষ যখন জীবনের মানে খুঁজে পায় না। ডিপ্রেশন মানুষের ভেতরটাকে অস্থির ও বিষন্ন করে তোলে, অহেতুক বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। মানুষ যখন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয় তখন এক ধরনের নেতিবাচকতা তাকে পেয়ে বসে। নিজের সম্পর্কে বা নিজের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করে দেয়। যার ফলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে ওঠে, বিষন্নতা, অবসাদ পেয়ে বসে। ফলে সে অশালীন ও অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করে, অযথা উত্তেজিত হয়ে যায়।
সে তখন একাকী থাকাটাকে ভালোবাসে। কিন্তু সঠিক কোনো রাস্তা না পেয়ে সে হতাশ হয়ে যায়। এক সময় সে আর তার এই একাকিত্ব, হাতাশা আর সাইতে পারে না। তখন সেই মানুষ তার অন্তরে পাওয়া দুঃখ ও দুশ্চিন্তার ভার বইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। হতাশা মানুষকে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দিতে চায়। তাই মানসিক চাপে হতাশাগ্রস্থ হলে আল্লাহর সাহায্য কামনা করাই একজন মুমিনের দায়িত্ব । বাস্তবিক পক্ষে প্রকৃত ঈমানদার কোনোদিন ডিপ্রেশনেও ভুগে না, আত্মহত্যা ও করে না। তাই জীবনে চলার পথে হতাশার মুখোমুখি হলে নিম্নোলিখিত বিষয়গুলো ফলো করলে দুশ্চিন্তা, হতাশা ও কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।
ভালো-মন্দ তাকদিরের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা : তাকদীরের উপর বিশ্বাস রাখলে দুশ্চিন্তা কাবু করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন : আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই...। ’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১০৭)।
ধৈর্য ধারণ করা: ধৈর্য মানবজীবনের মহৎ একটি গুণ যা মানবজীবনের সফলতার চাবিকাঠি। ধৈয্যের অনুশীলন ছাড়া ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে সাফল্য অর্জন করা অসম্ভব। তাই জীবনে যখন খারাপ সময় আসবে, তখন ধৈর্য ধারণ করুন। বিশ্বাস রাখুন, আপনার সঙ্গে রব আছেন, কষ্টের পরে তিনিই স্বস্তি দিবেন। মহান আল্লাহ বলেন: নিশ্চয় কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে । ( সূরা আল-ইনশিরাহ ,৬ )। এই দুনিয়াতে মানুষের বিপদাপদ , পেরেশানি, মানসিক চাপ আসা স্বাভাবিক। কিন্তু পরম করুণাময় এর বিনিময়েও মুমিন বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১) তাই মুমিনের উচিত যেকোনো পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করা। আল্লাহর কাছেই সাহায্য।
আল্লাহর রহমতের আশাবাদী হওয়া : বান্দা যাতে কোনোভাবেই হতাশায় ভেঙে না পড়ে এ জন্য আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় আশার বাণী সঞ্চার করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:‘আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না’। (আলে-ইমরান ১৩৯)। অন্য আয়াতে আল্লাহর রহমতের আশা থেকে নিরাশ হতে বারণ করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা যুমার ৫৩)।
আল্লাহর উপর ভরসা করা : সর্বদা আল্লাহর ওপরই নির্ভর করা মুমিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। একজন মুমিনের বিশ্বাস হবে । আর আল্লাহর ওপর ভরসাকারী কখনো হতাশ হয় না। আশা ভঙ্গ হলে মুষড়ে পড়ে না । বিপদ-আপদে ঘাবড়ে যায় না। দুর্যোগ, রোগ-ব্যাধিসহ যেকোনো সংকট হোক, আল্লাহ তায়ালার ওপরই দৃঢ় আস্থা রাখে। তাই বিপদ-আপদে সবার উচিত আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। (সূরা তালাক আয়াত নং-৩)।
হতাশ না হওয়া : দুনিয়ার জীবনে বিপদ-আপদে হতাশ না হওয়াই ঈমানদারকে কাজ। যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ আসতে পারে এ মানসিকতা সব সময় পোষণ করা। ফলে তা মানুষকে বিপদে হতাশা থেকে রক্ষা করে মানসিক চাপমুক্ত রাখে। কুরআনুল কারিমে এসব বিপদ-আপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৬)।
যিকির করা : মানুষ মূলত জান্নাতে সৃষ্ট জীব। তার আত্মাটি পৃথিবীতে বহিরাগত। এখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে তার কষ্ট হয়। পৃথিবীর বৈরিতা মোকাবিলা করার জন্য আল্লাহ মানুষকে হেদায়াতের পথ দান করেছেন। যারা এ পথ অনুসরণ করে তারাই পারে সফলভাবে পৃথিবীর সকল বৈরিতা মোকাবিলা করতে। এরপরও যদি হৃদয় শান্ত না হয় তাহলে এর একমাত্র ওষুধ আছে আল্লাহর জিকিরের মধ্যে।আল্লাহর জিকিরে মুমিন বান্দা প্রশান্তি খুঁজে পায়। আল্লাহ পাক বলেন: ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়; জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)।
সালাতুল হাজাত পড়া : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও...।’ (সূরা বাকারা: ১৫৩)
হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন দুশ্চিন্তায় পড়তেন, নামাজে মগ্ন হতেনহজরত হুজায়ফা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে আবু দাউদ : ১৩১৯)। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা : নির্ভরযোগ্য আলেমের সঙ্গে অভিমত গ্রহণ করুন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি পরামর্শ কামনা করে সে অকৃতকার্য হয় না।’ (ইবনে হিব্বান : হাদীস ৭৬৮)।
তওবা-ইস্তেগফার করা : আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা লাভের অন্যতম মাধ্যম হল তওবা-ইস্তেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। হজরত নূহ (আ.) স্বীয় কওমকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বৃদ্ধি করে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২)। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৫২০)।
দোয়া করা : মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করাও অন্যতম। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। তাহলো- আরবী উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)। অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই। মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে চিন্তা পেরেশানি থেকে মুক্ত রাখুন, আমীন!
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ

ক্রিলিক একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে -এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ

পুলিশ কোনো কিলার ফোর্স হতে পারে না : আইজিপি

হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল তারা এখন সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

সিএজি কার্যালয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের সাঁড়াশি অভিযান