ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১

ফসলি জমির উর্বর মাটি ইটভাটায়

Daily Inqilab আমানত উল্যাহ, রামগতি (লক্ষ্মীপুর) থেকে

২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

নীতিমালার তোয়াক্কা না করে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ৪৩টি বাংলা ইটভাটায়। আবাদি জমির ওপরের অংশ বা উর্বর মাটি বা টপসয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। দ্রুত এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনরা। ব্রিকফিল্ডের অত্যাচারের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। উপজেলার ৪৩টি ইটভাটার অধিকাংশে পরিবেশের আইন অমান্য করে ফসলি জমির মাটি কেটে ইট তৈরি করছে। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়াসহ জমিতে তৈরি হচ্ছে পুকুর সমান গভীর খাদ। এদিকে মাটি পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ট্রলির চাকায় নষ্ট হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলের সড়কসহ রাস্তাঘাট। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ভেস্তে যাচ্ছে।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আয়তন ৩৪৭ বর্গ কিলোমিটার। এ স্থল আয়তনের তিন ভাগের একভাগ মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আটটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা।

এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, এ উপজেলায় সর্বমোট ৪৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি ভাটা সাময়িক বন্ধ থাকলেও এ বছর আবার নতুন করে শুরু করছেন মালিকরা। যার অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্র নাই। সম্পূর্ন অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে। ইট তৈরির প্রধান কাঁচা মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। এছাড়া হাতের নাগালে হওয়ায় কৃষকদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে এ মাটি কিনে নেয় একটি পক্ষ। এরপর তারা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করে থাকেন। মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে এবং অনুজীবের কার্যাবলী আছে তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে।

রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের কৃষক মো. হোসেন ও নুরনবী বলেন, মূলত ফসলি জমির ওপরের অংশের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। এতে করে দেড় থেকে দুই বছর ওই জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হয় না। তবে প্রচুর পরিমাণ জৈব্য সার, খৈল, জিপসাম, ফসফেট ও পটাসসহ বিভিন্ন সার ব্যবহার করা হলে আগের মতো আবাদ হয়ে থাকে।

চর আফজল গ্রামের কৃষক সাঈদুল হক বলেন, তার জমি একটু উঁচু হওয়ায় সবজির আবাদ ভালো হতো। তবে ধানের আবাদ করার জন্য আড়াইবিঘা জমির মাটি ইটভাটাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করায় জমির কী ধরনের ক্ষতি হবে তা তিনি জানেন না।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমির মাটি (টপসয়েল) খনন করে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশর ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়াও কৃষিজমির মাটি আনা নেয়ার জন্য যন্ত্রদানব ট্রাক্টর ট্রলির কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে এলজিইডির নির্মিত পাকাসড়কগুলো ভেঙে তচনচ হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি (টপসয়েল) বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

অভিযোগ রয়েছে, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও প্রশাসনের জোরালো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ সুযোগে বেপরোয়া ইটভাটাগুলোর মালিকপক্ষ। ইটভাটা তৈরিতে একদিকে যেমন কৃষি জমি ধ্বংস করা হচ্ছে অন্যদিকে দখল করা হচ্ছে সরকারি খাল, ভূলুয়া নদী ও খাসজমি। রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা যুক্ত থাকায় খাল-নদী দখল করে দেয়া হচ্ছে রাস্তা তৈরির নতুন নতুন প্রকল্প।

রামগতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক বলেন, এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে। কমপক্ষে ২/৩ বছর ওই জমি থেকে ভালো ফলন আশা করা যায় না। এতে করে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে।

ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি খলিল উল্যাহ’র সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলতে চাইলে তিনি সবগুলো ইটভাটার সবধরনের অনুমতি আছে বলে লাইন কেটে দেন। অন্যদিকে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ তথ্য দিতে অপরগতা প্রকাশ করে তিনিও ফোন কেটে দেন।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, তিনি এ উপজেলায় নতুন এসেছেন। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ তিনি মাঠে নামবেন বলে জানান।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সকল ইউএনওদের বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা এ ব্যাপারে আরও কঠোর হবো।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার