রোহিঙ্গাদের ঈদ ভাবনা

Daily Inqilab এম আর আয়াজ রবি, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম

ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা মিয়ানমার জান্তা সরকারের জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয় না। যতই দিন এগুচ্ছে, তাদের নিজভূমে ফিরে যাবার সম্ভাবনাও তত ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। তাদের চোখে, মুখে অনিশ্চয়তা, হতাশার ছায়া ঘিরে ধরেছে। উদাস চোখের দুঃষহ স্মৃতি নিয়ে তারা আসন্ন ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে। আসলেই কী তারা ঠিকঠাকভাবে ঈদ উৎসব পালন করতে পারবে?

এরপরেও ঈদ আনন্দে মেতে ওঠার অপেক্ষায় আছেন নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গাসহ এ দেশে আশ্রিতসহ মোট ১৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা।

সরেজমিনে কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের মাঝে ঈদের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা আলম ও তফুরা বেগমসহ অনেকে জানান, এবার তারা নির্ভয়ে ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী ঈদ উদযাপনের উপকরণ সমূহ পেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো-মন্দ খেতে পারবেন। এতে পরিবার পরিজনদের নিয়ে অন্তত ঈদের আনন্দ একটু হলেও ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন তারা।

বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবক মঞ্জুর ও বেলাল হোসেন আসন্ন ঈদ উদযাপন প্রসঙ্গে বলেন, গত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা বিদেশের মাটিতে ঈদ উদযাপন করে আসছি। প্রতি বছর ভালো মন্দ ঈদ করতে পারলেও এ বছর ঈদ করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় পণ্য, দ্রব্যসামগ্রী পাই না। আমাদের সঞ্চিত টাকা থেকে বা স্বর্ণালংকার বিক্রি বা বন্ধক রেখে ঈদের কেনাকাটাসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে হচ্ছে। এ বছর আমাদের প্রয়োজনের অতি নগন্য সামগ্রী বরাদ্দ দিয়েছে যা দিয়ে খেয়ে পড়ে কোনভাবেই ঈদ উদযাপন করা সম্ভব নয়। আমরা দ্রুত সম্মানের সাথে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারলেই বাঁচি।

ইতিমধ্যেই দীর্ঘ ৬ বছরের অধিককাল রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন করছে। এবারও তারা তাদের সীমাবদ্ধ অবস্থান থেকে ঈদ পালনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদুল ফিতর উৎসব পালনের আমেজ তুলনামূলক কিছুটা কম বলেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের বিভিন্ন শপিংমল, মার্কেট ও বিভিন্ন আউটলেট থেকে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা তাদের নানা সীমাবদ্ধের মধ্যেও বাহারী রকমের পোশাক আশাক, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, সৌখিনপণ্য, ঈদের মিষ্টান্ন সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের জন্য পণ্যসামগ্রী ক্রয়ে ব্যস্ত দেখা গেছে। তবে বেচা-বিক্রি অন্যান্য বছরের চেয়ে কম বলে জানান, কুতুপালং এলাকার ব্যবসায়ী আলী।

অন্যদিকে, সবমিলিয়ে এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের বসবাস। তারা এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ঈদ কাটিয়েছেন ক্যাম্পে। রোহিঙ্গাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের ৩২টি ক্যাম্পে অবস্থিত প্রায় ১ হাজার ৪২০টি মসজিদ ও ৯৪০টি নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মক্তব) রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে জানা যায়।

ক্যাম্পের আশপাশে মার্কেট, শপিংমল, বিভিন্ন আউটলেটে গিয়ে দেখা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী এলাকায় চলছে ঈদের কেনা কাটার ধুম। তাছাড়া টেকনাফের জাদিমুড়া, শালবন, নয়াপাড়া, লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের কিছু অংশে বেলুন আর ঈদ মোবারক লেখা ব্যানারে গেট বানিয়ে রঙ-বেরঙের কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে ঈদ শপিংয়ের আউটলেটগুলো।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কামাল জানান, ‘প্রিয় জন্মভূমিতে সত্যিই কি ফেরা হবে? ফেরলে কখন? এমন সংশয় দানাবেঁধে আছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে। তাদের প্রশ্ন, এই দেশের (বাংলাদেশের) বোঝা হয়ে আর কত দিন থাকতে হবে? আক্ষেপ করে তিনি আরো বলেন- ‘জানি না, আবার কখন ফিরে পাবো নিজ দেশে পালিত হারানো ঈদের দিনগুলো ও সুখের অনুভুতি।’

উখিয়া টেকনাফে অবস্থিত ৩২টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আসন্ন ঈদ উৎসবে সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না পেলেও অনেক প্রভাবশালী রোহিঙ্গা নেতা, প্রভাবশালী সদস্য, বিভিন্ন বৈধ-অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বুনে গেছে। যদিও এরুপ রোহিঙ্গাদের সংখ্যা অতি নগন্য তথাপি তারাই সাধারণ রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে চলছে।

 


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টানা আট ঘণ্টা নির্যাতন করে স্ত্রীকে হত্যা করলেন মন্ত্রী, দেশজুড়ে বিতর্ক

টানা আট ঘণ্টা নির্যাতন করে স্ত্রীকে হত্যা করলেন মন্ত্রী, দেশজুড়ে বিতর্ক

কোক স্টুডিও বাংলা’র নতুন গান ‘মা লো মা’

কোক স্টুডিও বাংলা’র নতুন গান ‘মা লো মা’

বালিশে বুক ঢেকে হোটেল থেকে বের হলেন ব্রিটনি, কী ঘটেছে মাঝরাতে?

বালিশে বুক ঢেকে হোটেল থেকে বের হলেন ব্রিটনি, কী ঘটেছে মাঝরাতে?

কানাডায় নিজ্জর হত্যার ঘটনায় তিন ভারতীয় আটক

কানাডায় নিজ্জর হত্যার ঘটনায় তিন ভারতীয় আটক

শাক্‌সগাম আমাদের, চীনা নির্মাণের উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে আসার পর দাবি ভারতের

শাক্‌সগাম আমাদের, চীনা নির্মাণের উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে আসার পর দাবি ভারতের

ধর্মান্তরিত হওয়ার একদিন পরই নিজ ধর্মে ফিরলেন অভিনেত্রী

ধর্মান্তরিত হওয়ার একদিন পরই নিজ ধর্মে ফিরলেন অভিনেত্রী

সরকার পতনের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলো একাত্ম: ড. মঈন খান

সরকার পতনের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলো একাত্ম: ড. মঈন খান

জনপ্রিয়তায় ব্র্যাড পিটকে হার মানালেন শাহরুখ!

জনপ্রিয়তায় ব্র্যাড পিটকে হার মানালেন শাহরুখ!

জনপ্রিয় কমেডিয়ান ভারতী সিং হাসপাতালে ভর্তি

জনপ্রিয় কমেডিয়ান ভারতী সিং হাসপাতালে ভর্তি

মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তিতে উচ্ছ্বসিত নেটিজেনরা

মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তিতে উচ্ছ্বসিত নেটিজেনরা

ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো দুটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়

ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো দুটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়

সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়াহিদুজ্জামান

সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়াহিদুজ্জামান

ইউরোয় গ্রুপ পর্ব পার হওয়া ফ্রান্সের জন্য কঠিন হবে: দেশ্যম

ইউরোয় গ্রুপ পর্ব পার হওয়া ফ্রান্সের জন্য কঠিন হবে: দেশ্যম

জায়েদ খানের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব, যা বলছেন নেটিজেনরা

জায়েদ খানের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব, যা বলছেন নেটিজেনরা

বনানীতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

বনানীতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

গণমাধ্যমকে নানা কারণে আত্মসমর্পন করতে হয় : বাংলাদেশ ন্যাপ

গণমাধ্যমকে নানা কারণে আত্মসমর্পন করতে হয় : বাংলাদেশ ন্যাপ

পান্ডিয়া হবে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়: আগারকার

পান্ডিয়া হবে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়: আগারকার

গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা, ২৪ ঘণ্টাও শেষ হয়নি উদ্ধার অভিযান

গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা, ২৪ ঘণ্টাও শেষ হয়নি উদ্ধার অভিযান

দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ থমাস

দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ থমাস

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া