যশোরাঞ্চলে চাষাবাদ ব্যাহত : খাওয়ার পানির তীব্র সংকট

নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

Daily Inqilab মহসিন মিলন, বেনাপোল থেকে

১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম

যশোরাঞ্চলে অধিকাংশ উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ছে।
চলতি বছরে তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ার আগেই এসব এলাকার অধিকাংশ পাম্প ও নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে সুপেয় ও গৃহস্থালির কাজে মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেশির ভাগ পুকুর ও জলাশয় ভরাট, বহুতল ভবন নির্মাণ ও অপরিকল্পিত সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে ক্রমেই নিচে নামিয়ে দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

যশোরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে গত কয়েক বছর ধরেই। চলতি বছর গরম শুরু হওয়ার আগে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই পানির স্তর নিচে নামতে শুরু করে। যা চলতি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।

যশোর পৌরসভার পানি বিভাগের সুপারভাইজার ইসাহক হোসেন বলেন, এ বছর পানি পরিস্থিতি অন্যান্য বছরের চেয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সাধারণত পৌরসভা এলাকায় পানির স্তর ২০ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। যদি তা ২২ থেকে ২৩ ফুটের নিচে নেমে যায়, তাহলে বাসাবাড়িতে সাধারণ পাম্প দিয়ে পানি তোলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। অথচ এই মুহূর্তে পৌরসভার স্থিতি ওয়াটার লেভেল রয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ ফুট। যা নিশ্চয় হতাশাজনক।

যশোর পৌরসভায় গভীর উৎপাদন নলকূপ রয়েছে ২৮টি। তারমধ্যে ১০টি রয়েছে ত্রুটিযুক্ত। ত্রুটিযুক্ত এই ১০টি উৎপাদন গভীর নলকূপ পুনঃখনন জরুরি। শহরে ফুল তারা টিউবওয়েল ১৫০টি ও ৫০টি সেমি তারা টিউবওয়েল রয়েছে। আপাতত এসব টিউবওয়েলে পানি উঠলেও সহসা বড় ধরনের বৃষ্টি না হলে সংকট আরও ঘণীভূত হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল হোসেন বলেন, এই সময়ে প্রতিবছরই পানির ভূগর্ভস্থ স্তর নেমে যায়। এটি সামনে আরও প্রকট হবে বলে তিনি জানান। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবছর অনেক আগে থেকেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তুর নামতে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে বিএডিসি সেচ বিভাগের দেয়া সেচ পাম্প এলাকায় পানির লেভেল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মিটার বলে তিনি জানান। আর এক থেকে দুই মিটার নিচে নেমে গেলে এসব সেচ যন্ত্রে পানি ওঠা দুষ্কর হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, তার সেচের আওতায় এলএলপি গভীর নলকূপ রয়েছে ১২৮টি ও গভীর নলকূপ রয়েছে ১২০টি।

তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে রয়েছে ১৭৮১টি গভীর নলকূপ, ৫০২৬৭ টি অগভীর নলকূপ ও সৌর বিদ্যুৎ চালিত ১৩টি অগভীর নলকূপ। এসব গভীর ও অগভীর নলকূপে পানি তুলতে কৃষকদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্য মতে, সাধারণত পানির স্তর ২২ থেকে ২৫ ফুটের নিচে নেমে গেলে যশোরের শহর ও গ্রামাঞ্চলে নলকূপে পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এবছর এই মুহূর্তে জেলার ৮ উপজেলাতেই পানির স্তর নেমে গেছে ৩৫-৩৮ ফুট। যে কারণে অধিকাংশ টিউবওয়েলেই পানি উঠছে না।

যে কারণে শহর অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি গ্রামের অঞ্চলের মানুষের মানুষকে সুপেয় ও ব্যবহৃত পানি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ওয়াটার টেবিলের লেয়ার নিম্নমুখী। ওয়াটার লেভেল নেমে যাওয়ার কারণে সুপেয় পানির যাতে সঙ্কট না হয় সে জন্য উপজেলা পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সাবমারসিবলের পানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান জেলায় ১২৫০০টি সাবমারসিবল পাম্পযুক্ত নলকূপ চালু আছে। এই মুহূর্তে যশোর সদর উপজেলায় পানির স্থিতিতল ৩৪ ফুট, বাঘারপাড়ায় ২৭ ফুট, ঝিকরগাছায় ২২ ফুট, চৌগাছায় ৩২ ফুট, শার্শায় ৩৪ ফুট, অভয়নগরে ১৮ ফুট, মনিরামপুর উপজেলায়৩০ ফুট ও কেশবপুর উপজেলায় ২৩ ফুট বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, যেসব এলাকায় ৩০ ফুটের নিচে পানির স্তর নেমে গেছে সেখানে ৬নং হ্যান্ড পাম্মযুক্ত নলকূপ এবং সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পযুক্ত নলকূপের পানি উত্তোলনে অসুবিধা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এদিকে পানির ভূগর্ভস্থ স্তর দ্রুত নেমে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। যশোর শহরতলীর আমতলা বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, গত ১৫ দিন ধরে তাদের পাড়ার টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। আধাঘন্টা ধরে চাপাচাপি করার পর সামান্য পানি উঠলেও তা কাজে আসে না। যেকারণে বাধ্য হয়ে পাশেই প্রতিবেশীর সাবমারসিবল পাম্পের পানি নিয়ে খাবার পানির সামাল দিচ্ছি।

তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। যাদের সামর্থ আছে তারা টিউবওয়েলের সাথে মোটর লাগিয়ে পানি তুলছে। আর যারা পারছেন না তারা এসব বাড়িতে গিয়ে পানি আনতে বাধ্য হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে বোরো আবাদে সেচ দিতে। বিশেষ করে যারা স্যালো মেশিনে সেচের কাজ করছেন তারা বিপাকে পড়েছেন।

জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বাসিন্দা বাবলুর রহমান জানান, তাদের এলাকায় অধিকাংশ স্যালো মেশিনে পানি তুলতে কষ্ট হচ্ছে। পানি উঠলেও তার পরিমাণ কম। এর কারণে সেচ খরচ বাড়ছে বলে তিনি দাবি করেন।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রাজবাড়ীতে ভোট চেয়ে বাড়ী ফেরার পথে একজনকে কুপিয়ে জখম

রাজবাড়ীতে ভোট চেয়ে বাড়ী ফেরার পথে একজনকে কুপিয়ে জখম

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু