ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১
গত ৩ যুগে হাতির আক্রমণে ৫৫ জন মানুষ ও ৩১ হাতির মৃত্যু

গারো পাহাড়ের বন্যহাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব শেষ হবে কবে?

Daily Inqilab এস. কে. সাত্তার, গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চল থেকে

২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলে প্রায় ৩ যুগ ধরেই চলে আসছে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এ সমস্যার কোন সমাধাই নেই। তাই হতাশ হয়ে পড়ে দেশের গোটা গারো পাহড়ি জনপদের ভাগ্যাহত লোকজন। এই দ্বন্দ্বের জেরে গত ৩ যুগে হাতির আক্রমণে শিশুসহ কমপক্ষে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২ শতাধিক হতরিদ্র লোক।
অন্যদিকে, দৌড়ে পালাতে গিয়ে পাহাড়ি গর্তে পড়ে কিংবা মানুষের তৈরি বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকে কমপক্ষে ৩১টি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। গারো পাহাড়াঞ্চলের বিশেষ করে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী. নালিতাবাড়ী, কামালপুর, রউমারী, রাজিবপুর, হালুয়াঘাট ধোবউরাসহ পুরোগারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলে মানুষ ও হাতির দন্দের অবসান কীভাবে হবে- সে পথ খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে ২০-২৫টি হাতি গারো পাহাড়ে প্রবেশ করে। আর ফিরে যায়নি। সেই থেকেই বন্যহাতিগুলো শেরপুর সীমান্তসহ গোটা গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চল চষে বেড়াচ্ছে ও বসবাস করে আসছে। এক সময় গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলজুড়ে শাল ও গজারিসহ নানা প্রজাতির গাছে ভরপুর বনাঞ্চল ছিল। তখন বন্যপ্রাণিদের খাবারেরও অভাব ছিল না। কিন্তু আস্তে আস্তে বন কর্মকর্তা কর্মচারিদের যোগশাজসে বনের গাছ কেটে সাবাড় করে প্রকৃকি বন কেটে বনায়নের নামে বন পরিষ্কারের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন শুরু হয়। শত শত একর জমিতে চাষাবাদও আরম্ভ হয়। গড়ে উঠে জনবসতি। তখনই হাতির বিচরণ ক্ষেত্রে কমে যায়। ফলে সরকারি বনে দেখা দেয় হাতির খাদ্যাভাব। খাদ্যের সন্ধানে হণ্যে হয়ে হাতির পাল বন থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে নেমে আসতে থাকে। শুরু হয় হাতি ও মানুষের দন্দ সংঘাত। বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য মতে, গারো পাহাড়ে এখন কমপক্ষে ৬০-৭০টির অধিক হাতি রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে হাতি সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।
সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্তরা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বনে এখন খাদ্যের সংকট থাকায় ক্ষুধার্ত ১০-১৫টি করে বন্যহাতি ছাট ছোট পাল বেঁধে লোকালয়ে এসে দিন-রাত হানা দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ-বাড়িঘর ভাঙচুর গোলার ধান চাল খেয়ে সাবাড় ও উঠতি আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে। অপর দিকে হাতির আক্রমনে প্রাণহানি হলে বনবিভাগ থানায় জিডি করার পরামর্শ দিয়েই দায় সারছে। ক্ষতিপূরণ আদায়েও পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
বন্যহাতি আক্রমণে নিহত পরিবারকে বন বিভাগ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা, আহতদের চিকিৎসার জন্য ১ লাখ টাকা ও ফসলের ক্ষতির জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেন। কিন্তু দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে এই ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়েও ব্যাপক হয়রানি ও শঙ্কা রয়েছে। গারো পাহাড়ে বন্যহাতির আক্রমণে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৫ জন বলে জানা গেছে। আহত হয়েছে প্রায় দু’শতাধিক মানুষ। একই সময়ে ৩৩টি বন্যহাতি ও মারা পড়েছে বলে জানা গেছে। হাতি মৃত্যুর ঘটনায় মামলাও হয়েছে একাধিক। এই পরিস্থিতিতে মানুষ ও হাতি রক্ষায় প্রথমে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থলগুলো সুরক্ষিত করতে হবে বলে সুস্থ বিবেক সম্পন্ন চিন্তাশীল মহল মনে করেন। এ প্রেক্ষিতে যেসব বনাঞ্চল দিয়ে হাতি চলাচল করে সেসব বনাঞ্চলের মানুষের বসতি কমিয়ে মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করা যেতে পারে। ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাসহ গরো পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা বলেছেন, আমরা যুগযুগ ধরে পাহাড়েই বসবাস করে আসছি। আগে পাহাড়ে পশু পাখি জীব জন্তু জানোয়ারের প্রচুর খাদ্য ছিল। ফলে খাদ্যের সন্ধাণে বন্যহাতি লোকালয়ে আসতো না। কিন্তু এখন প্রাকৃতিক শাল গজারিসহ পাহাড়ি বন কেটে বিদেশী কাঠ গাছের বনায়ন করায় হাতির খাদ্যের চরম অভাব দেখা দেয়ায় হাতির আক্রমণ অত্যধিক বেড়ে গেছে। ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর লোকদের মতে, হাতিগুলো ফসলের খেতে ও বাড়িঘরে হামলা করছে খাদ্যের জন্য। প্রাকৃতিক বন কেটে বনায়নের নামে বিদেশি কাঠ গাছের বনে খাবার কমে যাওয়ায় হাতিগুলো ক্ষুধার তাড়নায় লোকালয়ে এসে ছোটাছুটি করে পাহাড়ি মানুষের ঘরের ধান চাল ও খাবার পর্যন্ত খেয়ে যাচ্ছে।
‘মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জার অফিসার রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আন্তঃদেশীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাটা তারের বেড়া না দেয়া পর্যন্ত হাতির আক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব নয়। ইকোপার্কের ভেতর ৭০ হেক্টর জমিতে দেশীয় প্রজাতি গাছের বাগান করা হয়েছে। ৬ অক্টোবর থেকে চার-পাঁচ দিন ইকোপার্কে হাতি অবস্থান করে গাছগাছলা খেয়ে সাবাড় করেছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় ১৮ অক্টোবর হাতি কাটাবাড়ী এলাকায় অবস্থান করছিল বলে তিনি জানান।’
‘ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম রসেল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের পুরনো। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ থানায় জিডির পর বন বিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।’
‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানের মতে, হাতি রক্ষায় প্রথমে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থলগুলো সুরক্ষিত করতে হবে। যেসব জায়গায় হাতি চলাচল করে সেসব জায়গায় মানুষের বসতি কমিয়ে মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করতে হবে। তাতে বন্য হাতির তান্ডব কমতে পারে।’
‘এ দিকে বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির অন্যতম সদস্য, তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও শেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা হাতি আক্রান্ত এলাকায়গুলোয় ১০ জন ১০ জন করে অনেকটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তাদেরকে দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে ২৯ তারিখ সার্চ লাইট প্রযোনীয় ডিজেল-কেরোসিন প্রাদান করা হবে মশাল ও সার্চ লাইট জ¦ালিয়ে হাতির আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য। তিনি অবিলম্বে মানুষ-হাতি দন্দ নিরসনের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। ’


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বেতুয়া নদী পুনর্খনন কাজ উদ্বোধন
মোংলায় হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী
প্রিন্সিপালের অনিয়মের বিরুদ্ধে হাতিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ পাকুন্দিয়া পৌরবাসী
সালথায় দু’গ্রুপে সংঘর্ষে আহত ১৫ বাড়িঘর ভাঙচুর
আরও

আরও পড়ুন

ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, গাজায় নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার

ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, গাজায় নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার

সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ, নিরাপত্তা জোরদার

সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ, নিরাপত্তা জোরদার

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৪২ ঘণ্টা পর কর্ণফুলী নদীতে মিলল নিখোঁজ ২ পর্যটকের মরদেহ

৪২ ঘণ্টা পর কর্ণফুলী নদীতে মিলল নিখোঁজ ২ পর্যটকের মরদেহ

পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ড্রোন হামলা, নারীসহ ৮ ফিলিস্তিনির মৃত্যু

পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ড্রোন হামলা, নারীসহ ৮ ফিলিস্তিনির মৃত্যু

সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় নয়: আসিফ মাহমুদ

সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় নয়: আসিফ মাহমুদ

ভারতে শঙ্করাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হস্তক্ষেপ চাইলেন একদল বাংলাদেশি হিন্দু

ভারতে শঙ্করাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হস্তক্ষেপ চাইলেন একদল বাংলাদেশি হিন্দু

অবশেষে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে

অবশেষে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে

হাসিনাকে ভারত কি ফেরত পাঠাবে, আলজাজিরার প্রতিবেদন কি বলছে

হাসিনাকে ভারত কি ফেরত পাঠাবে, আলজাজিরার প্রতিবেদন কি বলছে

সচিবালয়ে সেনাবাহিনী-বিজিবি মোতায়েন

সচিবালয়ে সেনাবাহিনী-বিজিবি মোতায়েন

কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি

কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি

বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?

বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?

সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত

সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত

আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা

আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা

লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা

লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা

গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার

গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার

সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস

সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস

ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ

ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ

সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর

সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট