জলঢাকায় প্রাথমিকে চলছে দায়সারা পাঠদান
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রাথমিক কিছু বিদ্যালয়ে চলছে দায়সারা পাঠদান। এতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ অনেকেই কিন্ডার গার্ডেন, প্রাইভেট কিংবা কোচিং শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এমন অভিযোগ উঠেছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার অভিভাবক মহলে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, একটিতে চলমান আইনী জটিলতা ছাড়া ২৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪টি কিন্ডার গার্ডেন বিদ্যালয়, ৭টি ইবতেদায়ী মাদরাসা, ৬৫টি বেসরকারি বিদ্যালয়, ১৬টি এনজিও বিদ্যালয় ও একটি ব্রাক বিদ্যালয় আছে। এছাড়া বিভিন্ন অসঙ্গতিতে অনুমোদিতহীন বেসরকারি ২১টি, ১৪টি কিন্ডার গার্ডেন, ৬টি ইবতেদায়ী মাদরাসা ও একটি ব্রাক বিদ্যালয় আছে।
সরেজমিন উপজেলার কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, গত ১২ নভেম্বর পশ্চিম কাঠালী কালির ডাংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে তৃপ্ত ও সৌরভ নামে দু’জন শিক্ষার্থী বসে আছে। অপরদিকে ৫ম শ্রেণিতে পল্লব ও বিথী রানীকে নিয়ে ক্লাশ নিচ্ছেন শিক্ষকা জান্নাতুল আর শিক্ষিকা সোমা রানী ৪র্থ শ্রেণিতে তার একমাত্র উপস্থিত শিক্ষার্থী রত্না রানীকে ছাত্রী হিসাবে পরিচয় করে দিলেও পরে বেড়িয়ে আসে সে তার বাড়ির কাজের মেয়ে। ওই স্কুলের শিক্ষিকা শাহানাজ পারভীন জানান, ‘আমরা প্রধান শিক্ষকসহ ৫ জন কর্মরত আছি। একজন শিক্ষক আজ আসেন নাই, আর প্রধান শিক্ষক বাইরে আছেন’।
গত ১৮ নভেম্বর পূর্ব গোলমুন্ডা আনন্দ কানন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিল্লাত, লাকী ও মিশু জানায়, রোদের কারণে আমাদের সমাবেশ ক্লাশ হয় না। তাই দুপুর ১২টায় আমাদের ২য় শিফট শুরু হয়। ওই শিফটে ৪র্থ শ্রেনিতে ২জন ও ৫ম শ্রেণিতে ৪জন শিক্ষার্থী দেখা গেলেও সেখানে ঘাড়ির কাটা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোন শিক্ষককে ক্লাশে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে তারা খোশ গল্পে ব্যস্ত।
ওইদিন দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে হলদিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণির একমাত্র উপস্থিত শিক্ষার্থী বিজয় চন্দ্র, ৩য় শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী নাই। ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবিবা মৌনতা, তানজিম ও আরফিন জানায়, যোহরের আজানের পর আমাদের ২য় শিফটের ক্লাশ শুরু হয়। তারপর ক্লাশ শেষ হলে কখন ছুটি হয় জানতে চাইলে তারা বলতে পারে না। দ্বিতল ভবনের নিচ তলায় অফিস কক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক এনামুল হক। তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭৮জন। আমিসহ এখানে তিনজন শিক্ষক কর্মরত আছি। আর শিক্ষার্থী না আসলে আমি কি করবো। ধান কাটার মৌসুমে অনেকে ক্ষেতের মাঠে যেতে পারে।
ডাউয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সুলতান নামে একজন শিক্ষক তৃতীয় শ্রেণির ক্লাশ নিচ্ছেন। ৪র্থ শ্রেনির শিক্ষার্থীরা ফজলুল হক স্যারের অপেক্ষায়। আর প্রধান শিক্ষক আইনুল হক না থাকায় ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চলে গেছে।
দক্ষিণ হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ক্লাশ নিচ্ছেন আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন শিক্ষক। ৩য় শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি মেলেনি। আসাদুজ্জামান নামে একজন শিক্ষক অনুপস্থিত। সংবাদকর্মীদের আসার সংবাদে ছুটে আসেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হালিমুর রহমান। তিনি শিক্ষার্থী উপস্থিতির জন্য অভিভাবকদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলেন বলে জানান।
এসব প্রতিষ্ঠান এলাকার অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানান, আমরা সন্তানদের শিক্ষা জীবন নিয়ে খুবই চিন্তিত। বাচ্চাদের ভিত্তিটা যদি ঠিক না হয়। তাহলে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন কিভাবে দেখবো? প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলো অনেকটা কাজির গোয়ালের মতো। কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকি নাই। সহকারী শিক্ষা অফিসার অনেকেই অত্র উপজেলায় থাকেন না। তারা বিভাগীয় শহরে বাস করেন। কর্ম এলাকা হতে যার দুরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার।
উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ এসব সহকারী শিক্ষা অফিসার নিজ দপÍরে আসতে প্রায় দুপুর হয়। তাই শিক্ষকও তার মর্জি মতো প্রতিষ্ঠানে আসেন। তারপর শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতায় তার মতো উপস্থিত-অনুপস্থিত চিহ্ন মারেন। মাস শেষে উপজেলা পর্যায়ে তাদের কাজের প্রতিবেদন দিয়ে তাদের বেতন জায়েজ করেন।
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অনির্বাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সবাই আন্তরিক না হলে কোন কাজই সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতামূলক পরিদর্শন বাড়ানো উচিত। আর শিক্ষাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলে এমন সমস্যা নিরসন করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসার শরিফা আখতার ইনকিলাবকে বলেন, ‘এখানে দাপ্তরিক কাজ বেশী। তারপরেও আমি স্কুলগুলো পরিদর্শন করে থাকি। শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করা হচ্ছে। নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থী আনতে আমরাতো পরামর্শ দিচ্ছি। মা সমাবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু আছে। শিক্ষার্থী তো নিয়ে আসতে হবে। সবখানে এমন অবস্থা নাই। তবে এরকম থাকতে পারে। শিক্ষার্থী কেন নাই অবশ্যই জবাবদিহিতা আছে। স্কুলগুলোর নাম অনুযায়ী তথ্যগুলো দেন আমরা ব্যবস্থা নিব।’
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়