ভূমিদস্যুদের দখলে মহারশী

এস. কে. সাত্তার, গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চল থেকে

৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

সীমান্তাঞ্চল শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মহারশী নদীটি আস্তে আস্তে ভরাট ও চর জেগে উঠায় নদীর ২ পাড়ের বিশাল অংশ ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেছে এবং যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নিরবতার কারণে নদী ভরাটে দু’পাশে জেগে উঠা চরের বিশাল অংশ দখল করে নিয়ে ভূমিদস্যুরা বাড়ি ঘর ও গছপালা রোপন করে বেদখল করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। ভারত থেকে নেমে আসা ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে চলা এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা মহারশী নদী। যা এক কালে বিশাল খরস্রোতা নদী ছিল। তা আজ যেন মরা খালে পরিণত হয়েছে। তখন এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যেতে হলে নদী পারাপারে নৌকার কোন বিকল্প ছিল না।

উপজেলা সদরের পূর্বপাড় ও পশ্চিম পাড়ের লোকদের নৌকায় পারাপার করতে হতো। পারাপারে ঘাটে থাকতো নৌকা। নদীপথে দূরদূরান্ত থেকে আসতো হাটুরেগণ বিভিন্ন মালামাল ক্রয় বিক্রয়ের জন্য। সেই বিশাল নদীটি বর্তমাণে মরা খালে পরিণত হয়েছে। খোদ উপজেলা সদরের পূর্বপাশে নদী সংলগ্ন বাসার মালিকরাও জেগে ওঠা চর দখল করে বাসা বাড়ি নির্মাণ ও গাছপালা রোপন করে নদীর বিপুল পরিমাণ জমি বেদখল করে নিয়েছে। যে নদীতে একসময় পালতোলা নৌকাও চলতো, সেই নদী এখন শুধুই স্মৃতি। যেন মরা খাল! শুধুমাত্র বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে উপচে যায় নদীটি। এছাড়াও শুকনো মওসুমে পায়ে হেটে নদী পারাপার হয় লোকজন। এখন সব কিছুই শুধু স্মৃতি মনে হয়। রুপ কথার গল্পের মত। বর্তমানে নদীতে সাধারণ জনগণ পায়ে হেটে চলাচল করছে। বিশাল অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। এদিকে শহর রক্ষা বাঁধ না থাকায় ফি-বছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে উপজেলা পরিষদ ও সদরসহ বিস্তৃর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে উপজেলা পরিষদ ও সদরের দোকানপাটে ঢলের পানিতে ডুবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই কোন মাথা ব্যাথা। শহর রক্ষা বাঁধের নামে প্রতি বছরই কাঁচা বাঁধ নির্মাণ করা হয় বটে। কিন্তু তা টিকসই বাঁধ না হওয়ায় ফি-বছর ভেঙ্গে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ ও শহর ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। কাজের কাজ যা হয় তা শুধু প্রতি বছরই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের পেট ভরছে। কাাঁচা বাঁধ নির্মাণ করায় ঢলের পানির প্রথম ধাক্কাতেই তা ভেঙে যাচ্ছে। নদীর পাড় না বেড় করে নদীর মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করে অনেকেই সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু করে উপজেলা সদর ও ভাটি অঞ্চলের শত শত বিঘা জমি দখল করে ২ পাড়ে বাড়িঘর গাছপালা ও চাষাবাদ করছে। তৈরি করেছে বাড়ী ঘর ও স্থাপনা। ভারত থেকে নেমে আসা নদীর ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের প্রায় স¤পূর্ন ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীটি বর্তমাণে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অনেক লেখা লেখি ও হয়েছে। বিভিন্ন সময় তৎকালীন সংসদ সংসদ্যরা আশ্বাস দিয়েছেন, এইতো টাকা বরাদ্দ হয়েছে, খুব শীঘ্রই শহর রক্ষা বাঁধ ও খনন শুরু হবে। এইসব কথা শুনতে শুনতে ১৫ থেকে ১৬ বছর চলে গেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এই প্রসঙ্গে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম রাসেল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হবে।

বিভাগ : অভ্যন্তরীণ