ঢাকা   বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আগাম আলুর পরিচর্যায় ব্যস্ত ডিমলার কৃষক

Daily Inqilab ডিমলা (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা

০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

নীলফামারীর ডিমলায় উচুঁ জমিতে আগাম আলুর পরিচর্যা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক- কিষাণীরা।আলু একটি শীতকালীন ফসল। এ অঞ্চলে সাধারণত ২০ শে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আলু রোপণ করা হয়।কিন্তু আগাম আলুর দাম বেশি হওয়ায় কৃষকেরা উঁচু জমিতে ৯০-১০০ দিনে আসে এমন জাতের ধান রোপন করে।এসব ধান জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত লাগায় এবং নভেম্বরের প্রথমের দিকে ঘরে তোলে।নভেম্বর মাসে জমি খালি হলে ওই জমিতে আগাম আলু লাগায়। এই অঞ্চলের চার থেকে পাঁচ ধরনের আলু চাষ করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে পাকড়ি, কারেজ, গ্রানুলা, রোমানা ও বগুড়া। এসব আলু ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আসে।আলু গাছ দিনদিন বেড়ে উঠে মাঠ জুড়ে সবুজ রং ধারণ করছে। স্বল্প সময়ে উৎপাদন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় আশায় আগাম জাতের আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ আলু খেতে সার ছিটাচ্ছে, কেউ লাঙ্গল টানছে, কেউ আগাছা তুলছে,কেউ নিড়ানি দিচ্ছে, কেউ সেচঁ দিচ্ছে ও কেউ স্প্রে করছে। আলু একটি অর্থকারী ফসল।আগাম আলু চাষ করবার লাভজনক হলেও এর সঠিক পরিচর্যা করতে না পারলে কৃষকেরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আলুতে লাভবান হতে হলে চাষীদের ভালো জাতের বীঁজ সংগ্রহ করে সময় মত লাগাতে হয় ও সঠিক পরিচর্যা করতে হয়। এমনটি জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জানা যায় , ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নতুন আলু বাজারে পাওয়া যাবে ।

ডিমলা উপজেলা পশ্চিম সাতনাই ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন,আমরা প্রত্যেক বছর আগাম আলু লাগাই।প্রতি বিঘায় (৩০শতাংশ)খরচ হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা এবং উৎপাদিত আলো বিক্রি হয় ১০থেকে ১৫ হাজার টাকা। এতে খরচ এর অর্ধেকের বেশিই লাভ থাকে।৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আলু তুলে আবার ভুট্টা লাগানোর যায়। আলুর জমিতে ভুট্টা উৎপাদন খরচ কম লাগে।

ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের কৃষক সাবির আলী (৬০) বলেন, প্রতি বিঘায় ১০০-১২০ কেজি বীঁজ লাগে আলু রোপণের জন্য। রোপণের ৫০- ৬০ দিনের মধ্যে আলু উঠবে বিঘায় ১২থেকে ১৬ মণ পর্যন্ত।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার কীঁটনাশকসহ বীঁজের দাম বেড়েছে। একই সাথে শ্রমিকরা তাদের দিনমজুরি বাড়িয়ে দিয়েছে । ফলে এবার আলুর উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। এতে করে লাভ কম হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।

ডাঙ্গারহাট বাজারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী আকালু (৬০) জানায়, প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ একর জমিতে আলু চাষাবাদ করে থাকেন তিনি। প্রতি একর জমিতে আলু চাষ আবাদ করতে ১৫০-২০০ কেজি বীঁজ আলুর দরকার হয়। এক একর জমিতে আলু আবাদ করতে ১২০-১৫০ কেজি ইউরিয়া, ২০০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি, ৪০ কেজি জিপসাম এবং ৫-৬ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন হয়।

তবে এ সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কমবেশি হতে পারে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এক একর জমিতে ৭-৮ টন জৈবসার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি পাওয়া যায়। আলু উৎপাদনে আগাছা পরিষ্কার, সেচ, সারের উপরি প্রয়োগ, মাটি আলগাকরণ বা কান্দিতে মাটি তুলে দেওয়া, বালাই দমন, মালচিং করা আবশ্যকীয় কাজ।
বালাপাড়া ইউনিয়নে দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামের কৃষক অধীর চন্দ্র রায় (৪৮) বলেন , আগাম আলুর রোগ বালাই কম হয়। সেই সাথে বাজারে ভালো দামও পাওয়া যায়। আমি এ বছর ৩বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি ভালো দামের আশায় আলু ক্ষেতে পরিচর্যা কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছি।

ডিমলা উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ মীর হাসান আল বান্না বলেন , এ সময় আলু চাষের জন্য আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় আগাম ধান কর্তনের পর কৃষকরা আলু চাষ আবাদ শুরু করেন। চলতি মৌসুমে এ বছর ডিমলা উপজেলায় ১ হাজার ৮০০শত ৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১৩শত ৬০হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমিতে ২৮.৫ থেকে ২৯ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাশা করছে। আলু চাষের জন্য কৃষকদের পরামচাষেরর্শ দিতে উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী অফিসাররা মাঠে মাঠেকাজ করছে।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আবারো রাঙ্গুনিয়ায় বন্যহাতির তাণ্ডব : কৃষক দিশাহারা
আগাম আলুর দামে খুশি নীলফামারীর চাষিরা
দৌলতখানে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
মাগুরায় ৩ মাস ২৮ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন
হাবিপ্রবিতে ৩ দিনব্যাপী কর্মশালা
আরও

আরও পড়ুন

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ

খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু

খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু

বাড়তি মেদ কমাতে ‘খাওয়া কমানো’ কতটা কার্যকর

বাড়তি মেদ কমাতে ‘খাওয়া কমানো’ কতটা কার্যকর

কিশোরগঞ্জে সড়ক সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন

কিশোরগঞ্জে সড়ক সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন

আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতে বিক্ষোভ

আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতে বিক্ষোভ

নগর ভবনের দায়িত্বশীলদের অবহেলায় নগরবাসীর দূর্ভোগসহ ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে

নগর ভবনের দায়িত্বশীলদের অবহেলায় নগরবাসীর দূর্ভোগসহ ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে

গ্যাস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টা থাকবে না যেসব এলাকায়

গ্যাস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টা থাকবে না যেসব এলাকায়

চিন্ময় দাস ইস্যুতে উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্নে মামলার তথ্য নেই বলে জানালো যুক্তরাষ্ট্র

চিন্ময় দাস ইস্যুতে উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্নে মামলার তথ্য নেই বলে জানালো যুক্তরাষ্ট্র

রাজশাহীর পুঠিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

রাজশাহীর পুঠিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োলের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োলের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব