৪ লাখ মানুষের জন্য ডাক্তার মাত্র ৭ জন
০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে জোড়াতালির মাঝে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। ফলে বিভিন্ন জটিল রোগ নিয়ে আগত রোগীরা প্রতিদিনই গোঙানি কাতরানির মাঝে সামর্থের মধ্যে কেউ উন্নত চিকিৎসা নিতে রংপুর মেডিকেল কলেজে যাচ্ছেন। কেউবা চিরতরে বিদায় নিচ্ছেন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগি রোগীসহ তাদের স্বজনরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৯৭৫ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থাপিত হয়। এবং ২০১১ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়। ২০১১ সাল থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হলেও শুধু খাবার অনুমোদন দেয়া হয়। জনবল অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। আর ৩১ শয্যায়ও নেই মঞ্জুরীকৃত জনবল।
সূত্র আরও জানায়, ৩১ শয্যার জন্য মঞ্জুরীকৃত জনবল ১৯৯ জন। কর্মরত আছেন ১১৬ জন। শুন্যপদ আছে ৮৩টি। এখানে ১ম শ্রেণির মঞ্জুরীকৃত ৩৩টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১১জন। সেখানেও ৪ জন নেই। তাদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ১ জন, প্রেষণে ১ জন, ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে ১ জন ও সংযুক্তি ঢাকায় ১ জন আছেন।
উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তদন্তকারী আসাদুল হক জানায়, উপজেলায় মোট জনসংখ্যা তিন লাখ ৮৬ হাজার ৭৯০ জন। পুরুষ এক লাখ ৯১ হাজার ৫৪১ জন, মহিলা এক লাখ ৯৫ হাজার ২৪৯ জন ও শুন্য থেকে ১৪ বছরের এক লাখ ২২ হাজার ৫৬৮ জন শিশু আছে।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন রোগ নিয়ে আগত ৪টি রোগীর সারি। তারা বহিঃবিভাগে চিকিৎসার জন্য কেউ টিকিট সরবরাহ করছেন। কেউ ডাক্তার দেখাতে সারিতে দাঁড়িয়েছেন। কেউবা ডাক্তার দেখার পর ওষুধ নিতে সারিবদ্ধ হয়েছেন।
এ সময় শিশু জুঁইয়ের চোখের সমস্যা হওয়ায় তার মা রুবিনা বেগম ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আসেন। আইএসসিআই ও পুষ্টি কর্ণারে রোগী দেখছেন উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার সোহেল। সেখানে চর্ম রোগে আক্রান্ত দেড় বছরের শিশু শুভকে দেখাতে নিয়ে আসেন তার মা নাসরিন আক্তার। আরেক সারিতে প্রশ্রাবের সমস্যায় কাতরাচ্ছেন নাইম ইসলাম।
একই দিনে সকাল ১১.৪৭ মিনিটে জরুরি বিভাগ ফাঁকা। সেখানে নেই কর্তব্যরত কোন চিকিৎসক কিংবা ওয়ার্ডবয়। জরুরি বিভাগের দরজায় সুবল চন্দ্র ও আবু তালেব নামে দু’জন রোগী কাতরাচ্ছেন।
প্রসূতি ওয়ার্ডে রোগীদের জন্য ৮টি বিছানা আছে বলে জানায় মিডওয়াইফ মিনু। সেখানে নয় মাসের গর্ভবতী মনিজা বেগম ওপর পেটের ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। পাশের বিছানায় নয় মাসের গর্ভবতী লায়লা বেগম। তার কোমড় ও নিচ পেট ব্যাথা। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হওয়ায় ভর্তি আছেন আঁখিতারা।
মনিজা, লায়লা ও আঁখিতারা জানায়, আজ এই ওয়ার্ডে আমরা তিনজনেই ভর্তি আছি। আমরা বিভিন্ন রোগ নিয়ে এখানে ভর্তি হলেও নার্সদের ওপর চিকিৎসা নির্ভর থাকতে হয়। শুধুমাত্র সাদা রঙের ২টা বড়ি সকালে নার্সরা দেয়। আর স্যালাইন-ইঞ্জেকশন বাইরে থেকে কিনতে হয়। এই ওয়ার্ডে পানি সাপ্লাই নাই। তাই দুর্গন্ধ, অপরিচ্ছন্নতার মাঝে আমাদেরকে চিকিৎসা সেবার জন্য এখানে থাকতে হচ্ছে।
কিছুদিন ধরে গাইনী ওয়ার্ডে পানি সাপ্লাই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রোগীরা বালতি দিয়ে পানি এনে তাদের চাহিদা মেটাচ্ছেন। আমাদের এখানে ৩টি পাম্প মেশিন আছে। তার মধ্যে ২টি অকেজো বলে নিশ্চিত করেন জুনিয়র মেকানিক্স সেলিম শাহ। জ¦র ও শ^াসকষ্ট নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে রাফিয়া(৩)। দুইদিন ধরে সন্তানের পাশে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন রাফিয়ার বাবা রুহুল আমিন। অপরদিকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০ মাসের সন্তান তাজফিয়াকে ওরস্যালাইন খাওয়াচ্ছেন তার মা লতা বেগম।
এসময় লতা বেগম ও রুহুল আমিন জানান, এখানে রোগ নিয়ে সুস্থ হতে আসলেও অনেকেই যেন রোগী হয়ে ফিরে যায়। এসব নামেই শিশু ওয়ার্ড। দুর্গন্ধ আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ অনেকটা দায়ে পড়ে থাকা। এখানে নেই কোন টয়লেটের ব্যবস্থা। এসব ওয়ার্ডের ভর্তি শিশুদের পায়খানা প্রস্রাবের চাপ আসলেই নিয়ে ছুটতে হয় পুরুষ কিংবা মহিলা ওয়ার্ডে। সেখানেও লাইন খাটতে হয়। পানি থাকেনা। ততক্ষণে পায়খানা প্রস্রাব আর বমিতে বাচ্চার সাথে তাদের বাবা-মাকেও রোগী হতে হয়।
ওষুধ ভান্ডার রক্ষক তহমিদুর রহমান জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এক কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ৮০% অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগ ওষুধ সরবরাহ করে আর ২০% দিয়ে স্থানীয়ভাবে ওষুধসহ বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। তবে যা বরাদ্দ আসে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসান মো. রেজওয়ানুল কবীর ইনকিলাবকে বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের কারণে শতভাগ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক অপ্রতুল। ফলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এখানকার সমস্যা সবাই অবগত হলেও সমাধান হচ্ছে না। পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণের জন্য আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকৌশলকে পত্র মারফত জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পানির পাম্প তারা ঠিক করেনি।’
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা
কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার
ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ
খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু
বাড়তি মেদ কমাতে ‘খাওয়া কমানো’ কতটা কার্যকর
কিশোরগঞ্জে সড়ক সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন
আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতে বিক্ষোভ
নগর ভবনের দায়িত্বশীলদের অবহেলায় নগরবাসীর দূর্ভোগসহ ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে
গ্যাস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টা থাকবে না যেসব এলাকায়
চিন্ময় দাস ইস্যুতে উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্নে মামলার তথ্য নেই বলে জানালো যুক্তরাষ্ট্র
রাজশাহীর পুঠিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১