কিশোরগঞ্জে আলেমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার

কিশোরগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা

২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা লুৎফুর রহমান (৭৫) ছিলেন জেলা শহরের কাচারীবাজার জামে মসজিদের খতিব। গত বুধবার দুপুরে জেলা শহরের চরশোলাকিয়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে গলাকাটা ও রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় শহরের ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদে উনার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় আলেম-ওলামাসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। এর আগে গত ১৯ মার্চ ঘটনার বিষয়টি জানতে পারার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকে তখন পুলিশকে জানানো হয়, দুপুরে মাওলানা লুৎফুর রহমান বাথরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। অনেকক্ষণ পরও তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছিলেন না। পরে উনার স্ত্রী বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখতে পান, রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি পড়ে রয়েছেন। পাশে একটি ছুরি পড়ে রয়েছে। পরে উনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মাওলানা লুৎফুর রহমান নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এমন ধারণাই পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে দেয়া হয়। এছাড়া আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মুহতামিম মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশিদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন। ভাড়া বাসার বাথরুমে নিজেই গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। ছুরিটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে মাওলানা লুৎফুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়টিকে আত্মহত্যা মনে করছেন না অনেকেই। তারা বিষয়টিকে হত্যাকান্ড মনে করছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এর আগেও মাওলানা লুৎফুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। সেবার তিনি উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। ২০২২ সালের ১১ জুলাই রাতে নিজ বাসার ছাদে তিনি ওই আততায়ী হামলার শিকার হয়েছিলেন। হাসপাতালে লাশের ক্ষত প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মাওলানা লুৎফুর রহমানের গলার বেশির ভাগ অংশ কেটে গেছে। নিজের গলায় এ রকমভাবে কাটা কারও নিজের পক্ষে সম্ভব হয়। নিশ্চিতভাবেই তাকে অন্য কেউ ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। কিশোরগঞ্জ শহরে এখন একটাই গুঞ্জন মাওলানা লুৎফুর রহমান সাহেবের মতন একজন আলেমেদ্বীন কখনোই এভাবে আত্মহত্যারমত ইসলাম পরিপন্থী কাজ করতে পারেন না। ২০২২ সালেও তিনি এমন ঘটনার স্বীকার হয়েছিলেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করবে পুলিশ প্রশাসন এমন প্রত্যাশা করছেন কিশোরগঞ্জবাসী। কাউকে রক্ষা করতে বিষয়টি গোপন করা হচ্ছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) টুটুল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে মাওলানা লুৎফুর রহমানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিভাগ : অভ্যন্তরীণ