ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
মার্কিন প্রশাসন ভুলে যায় যুদ্ধগুলোর কথা

ইরাক যুদ্ধের পাপ তাড়া করে সেনাদের

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৭ পিএম

যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আগ্রাসনের বিশ বছর পর ইরাক যুদ্ধ মার্কিন প্রশাসন ও অনেক আমেরিকানের কাছে বিবর্ণ স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। এই সংঘাতে নিহত বা বাস্তুচ্যুত হওয়া লাখ লাখ ইরাকির পাশাপাশি, ইরাকে হাজার হাজার আমেরিকান মারা গেছে বা আহত হয়েছিল। ইরাকিদের জন্য এই যুদ্ধের পরিণতি এখনও তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অনিবার্য অংশ। কিন্তু ক্ষোভ ও পাপবোধ মার্কিন সেনাদের একটি অংশকেও প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়। যতদিন তারা বেঁচে থাকবেন, ততদিন তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

টিম ম্যাকলাফলিন ইরাকে মেরিন সেনাদের একটি অংশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেটি ইরাকে মার্কিন আক্রমণের প্রথম দিকের কিছু যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। অনেক প্রাক্তন সৈনিকের মতোই এই অভিজ্ঞতা তাকে যুদ্ধের পরের বছরগুলিতে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) রোগ বা আঘাত পরবর্তী মানসিক সংকট এবং যুদ্ধ সম্পর্কে বিরোধপূর্ণ নীতিগত অনুভূতির সামনে দাড় করিয়েছে। ম্যাকলাফলিন ইরাকে তার অভিজ্ঞতা, আক্রমণের প্রথম দিকের সহিংসতা ও সন্ত্রাসের ঘটনাগুলি নথিভুক্ত করে তার ডায়েরি প্রকাশ করেছেন। তিনি নয় মাস ধরে বসনিয়ায় সারাজেভোর পুরানো শহরে কাটিয়েছেন, যা ইরাকের মতোই একটি ভয়ানক সহিংসতার স্থান ছিল। ম্যাকলাফলিন বলেন, ‹আমি শুধু এমন একটি দেশে যেতে সক্ষম হতে চেয়েছিলাম, যেখানে ব্যাপক ক্ষত রয়েছে এবং লোকেরা কীভাবে এটি মোকাবেলা করে, তা দেখতে। আমি যা শিখেছি তা হল, যারা এটি অনুভব করে তাদের জন্য আঘাত কখনোই মুছে যায় না।›

যুক্তরাষ্ট্র যে প্রাথমিক দাবীটি যুদ্ধ শুরু করেছিল, তা ছিল, ইরাক ওয়েপন্স অফ ম্যাস ডেস্ট্রাক্শন বা মহাবিধ্বংসী অস্ত্র মজুত করেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য একটি আসন্ন হুমকি তৈরি করেছিল। সংঘর্ষের শুরুতেই তা অসত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরাকিদের তখন যে অভিজ্ঞতার বাকি ছিল, তা ছিল একটি ধীর, অপ্রতিরোধ্য সামরিক আগ্রাসন এবং বিদ্রোহ, যা ধীরে ধীরে একটি গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল এবং লাখ লাখ লোককে হত্যা, আহত বা বাস্তুচ্যুত করেছিল। সহিংসতার শেষে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন এবং তার পরিবার শেষ হয়ে গেছে। এখন ইরাকে জীবন অনেকের জন্য কঠিন হয়ে গেছে, যাদের যুদ্ধের পরের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। ম্যাকলাফলিন বলেন, ‹আমি ইরাক আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেইনি। আমার শুধু এটি চাকরি ছিল। আমি হতাশ হই, সেই লোকেদের ওপর, যারা এটি করার পথ বেছে ছিল। ইরাকের মানুষ শুধু তাদের জীবনযাপন করছিল। যারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাদের প্রতি আমি হতাশ। অর্থাৎ, আপরারা আমাদের ভুল দেশ আক্রমণ করতে পাঠিয়েছিলেন।’

অনেক আমেরিকান যারা ১১ সেপ্টেম্বরের পর জাতীয় কর্তব্যের অনুভূতি থেকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল, তারা নিজেদেরকে এমন লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হত্যা করতে ও মৃত্যু বরণ করতে দেখেছিল, যাদের হামলার সাথে কোনও সম্পর্ক ছিল না। যুদ্ধে কয়েক লাখ ইরাকি নিহত হওয়ার পাশাপাশি, অনুমান করা হয় যে ইরাকে প্রায় ৪ হাজার ৫শ’ মার্কিন সেনা মারা গিয়েছিল এবং হাজার হাজার আহত হয়েছিল। যুদ্ধাহত সেনাদের প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদী যতেœর প্রয়োজন হয় এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মার্কিন সরকারের কাছ থেকে তারা যে সাহায্যই পাক না কেন, ইরাকে তারা যে মানসিকভাবে বিপর্যয়কর যুদ্ধকালীন আঘাতের শিকার হয়েছিল, তা এমনকি সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়েও নিরাময় করা সম্ভব নয়। তাই ইরাক যুদ্ধ সাধারণ আমেরিকানদের স্মৃতি থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেও, যারা এটি সরাসরি এটি অবলোকন করেছেন, তাদের কাছে এই মানসিক আঘাত এবং শারিরীক ক্ষতগুলি ইরাক যুদ্ধের উত্তরাধিকার রূপে একটি প্রতিদিনের অনুস্মারক।

মার্কিন বিমান বাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তা ডেনিস ফ্রিটজ বলেন, ‹আমাদের কাছে এমন লোক রয়েছে, যারা ক্ষত ভোগ করছে, যার অর্থ তাদের জন্য বাকি জীবন নরকে পরিণত হয়েছে। এদিকে, আমরা এখন জানি, ইরাক আমাদের জন্য কোনো হুমকি ছিল না। আমি আজ অবধি এটি নিয়ে বিচলিত, কারণ আমাদের পরিষেবা সদস্যদের খেলার পুতুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।› ইরাক যুদ্ধের জন্য দায়ীদের অনেকেই ওয়াশিংটনে জেষ্ঠ্য নীতিনির্ধারক হিসাবে পুরস্কৃত ক্যারিয়ার উপভোগ করেছেন বা সরকারে থাকাকালীন তাদের ভূমিকার কল্যাণে বেসরকারী খাতে ভাল বেতনের অর্থোপার্জন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দু’জন লোককে চিনি, যারা যুদ্ধের সময় কর্মকর্তা ছিলেন এবং এই মুহূর্তে পিটিএসডি-তে আক্রান্ত হয়ে নিয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের সৈন্যদের প্রাণ হারানোর কারণে তারা অপরাধবোধে ভুগছেন। কিন্তু তাদের কারণে যে তারা মারা গেছে তা তো নয়; এটা সেই রাজনৈতিক নেতাদের কারণে ঘটেছে, যারা তাদের মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধে পাঠিয়েছে। তাদের বরং পিটিএসডি হওয়া উচিত, কিন্তু তাদের হয় না। তারা কেবল বই লিখে এবং লাভজনক চাকরি পেয়ে জীবন কাটায়। সূত্র: দ্য ইন্টারসেপ্ট।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা

মূল সংস্কার উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার অঙ্গীকার

মূল সংস্কার উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার অঙ্গীকার

সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী রেজাউল করিমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী রেজাউল করিমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৬ ব্যাংকের এমডির নিয়োগ বাতিল, জটিলতার শঙ্কা

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৬ ব্যাংকের এমডির নিয়োগ বাতিল, জটিলতার শঙ্কা

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন পরিচালক ড. ফাহমিদা আকতার

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন পরিচালক ড. ফাহমিদা আকতার