বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করবে রাশিয়া
২৬ মার্চ ২০২৩, ১১:৩২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩৮ এএম
বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করবে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন নিজেই এ কথা বলেছেন। এ পদক্ষেপের কারণে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঠেকাতে যে চুক্তি রয়েছে তা লঙ্ঘিত হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি জানান, রাশিয়া ও চীন সামরিক ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার বৃদ্ধি করছে, তবে এটি ‘কোন সামরিক জোট নয়’
ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র স্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করে পুতিন বলেছেন, মস্কো তার অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ মিনস্কের হাতে দেবে না। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা বিশ্বাস করে না যে, এ ঘোষণার পর রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব কৌশলগত পারমাণবিক অবস্থান সমন্বয় করার কোনো কারণ দেখিনি। আমরা নেটো জোটের সম্মিলিত প্রতিরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বেলারুশ সরকার ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ইউক্রেনে রুশ আক্রমণকে সমর্থন করে। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শনিবার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানেও অস্বাভাবিক কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে এটি করে আসছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের মিত্র দেশগুলোর ভূখ-ে তাদের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করেছে।’
পুতিন জানান, রাশিয়া ১ জুলাইয়ের মধ্যে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ শেষ করবে। তিনি আরও জানান, অল্প সংখ্যক ইস্কান্দার ট্যাক্টিক্যাল মিসাইল সিস্টেম যা পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপের সময় ব্যবহার করা যায়, ইতোমধ্যেই বেলারুশে স্থানান্তর করা হয়েছে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর এই প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করবে মস্কো। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালে ভেঙে যাবার পর অস্ত্রগুলো চারটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তানের কাছে চলে যায় এবং সকল ওয়ারহেড রাশিয়ার কাছে স্থানান্তর শেষ হয় ১৯৯৬ সালে।
এদিকে, পুতিন গতকাল জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া ও চীন সামরিক ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার বৃদ্ধি করছে, তবে এটি ‘কোন সামরিক জোট নয়’। মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যে সহযোগিতা পশ্চিমের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে কিনা জানতে চাইলে রাশিয়া-২৪ টিভি চ্যানেলে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটা একেবারেই অসত্য।’ পুতিন বলেন, ‘আমরা চীনের সাথে কোনো সামরিক জোট তৈরি করছি না। হ্যাঁ, আমরা সামরিক-প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা করি, আমরা এটি অস্বীকার করি না, তবে এটি স্বচ্ছ, সেখানে গোপন কিছু নেই,’ বলেছেন পুতিন। তার মতে, মস্কো যৌথ মহড়াসহ বেইজিংয়ের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতাও গড়ে তুলছে। ‘প্রসঙ্গক্রমে, কেবল চীনের সাথেই নয়, অন্যান্য দেশের সাথেও। ডনবাস, জাপোরোজিয়ে এবং খেরসনের উন্নয়ন সত্ত্বেও আমরা এখন এটি চালিয়ে যাচ্ছি,’ পুতিন বলেছেন।
কিয়েভে সরবরাহ করা অস্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা করছে রুশ সেনা : পশ্চিমারা গোপনে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করছে, কিন্তু রাশিয়ান সৈন্যরা সেগুলো সরবরাহের সময় ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন গতকাল ‘মস্কো, ক্রেমলিন, পুতিন’ প্রোগ্রামে বলেছেন।
‘আমাদের সামরিক বাহিনী সেগুলো ধ্বংস করতে কিছু অভিযান পরিচালনা করে, তবে পুরোটাই নয়। সেগুলো রাতে গোপনে পরিবহন করা হয়। তবে তারা যা পেতে পারে, তারা তা পায়। তবে অবশ্যই এমন একটি লক্ষ্য রয়েছে,’ সাংবাদিকের সাথে একটি সাক্ষাতকারে পুতিন বলেছিলেন। শনিবার রসিয়া-২৪ নিউজ চ্যানেলে সাংবাদিক পাভেল জারুবিনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, পশ্চিমাদের দ্বারা ইউক্রেনে পাঠানো অস্ত্র রাশিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ। ‘এটি একটি খুব উল্লেখযোগ্য পরিমাণ, এটি অনেক,’ তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন।
অস্ত্র না পেলে ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারবে না : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে আরও সামরিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে অন্তত ১৮টি দেশ একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যেখানে পরের বছর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে কমপক্ষে এক মিলিয়ন কামানের গোলা সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে।
তবে একটি জাপানি সংবাদপত্রে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, পরবর্তী গোলাবারুদ না আসা পর্যন্ত ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলে সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারবে না। রাশিয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনের সাথেও বেলারুশের সীমান্ত রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি বেলারুশের নেতা অ্যালেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেন, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার নতুন আক্রমণের জন্য ঘাঁটি হিসেবে নিজ দেশের ভূখ- ব্যবহার করতে দিতে তিনি প্রস্তুত। এসময় দুই দেশের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে সহযোগিতা বৃদ্ধির ঘোষণা আসে। ঘাঁটি হিসেবে নিজ দেশের ভূখ- ব্যবহারের বিনিময়ে বেলারুশ রাশিয়ার কাছ থেকে একটি এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা উপহার পেয়েছে। এই মূহুর্তে বেলারুশে কয়েক হাজার রুশ সৈন্য রয়েছে এবং সেখানে দু’দেশের সামরিক বাহিনীর যৌথ মহড়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডোনেৎস্কে আত্মসমর্পণ করেছে ৭০ ইউক্রেনীয় সেনা : গত দুই সপ্তাহে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৭০ জন সৈন্য অস্ত্র সমর্পণ করেছে এবং ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর) অঞ্চলে রাশিয়ান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ডিপিআর অঞ্চলের নিরাপত্তা সংস্থার একজন কর্মকর্তা রোববার বার্তা সংস্থা তাসকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ‘প্রায় ৭০ ইউক্রেনীয় সৈন্য গত দুই সপ্তাহে আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের বেশিরভাগই তাদের জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় অস্ত্র জমা দিয়েছে,’ সূত্রটি বলেছে। তার তথ্য অনুসারে, তাদের বেশিরভাগই আভদেয়েভকা, ডোনেৎস্ক এবং উগলেদার ফ্রন্টে লড়াই করেছে।
যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান, পুতিনকে ধন্যবাদ জানালেন এরদোগান : শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক ফোনালাপের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান ইউক্রেনে যুদ্ধের ‘অবিলম্বে’ অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের যোগাযোগ অধিদপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এরদোগান ‘আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত অবিলম্বে বন্ধ করার বিষয়ে তুরস্ক যে গুরুত্ব দিচ্ছেন তা তুলে ধরেছেন’ এবং ‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ’ সম্প্রসারণের বিষয়ে তার ইতিবাচক অবস্থানের জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ হচ্ছে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত জুলাইয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পন্ন একটি চুক্তি যা ইউক্রেনীয় শস্য কৃষ্ণ সাগর দিয়ে নিরাপদে রপ্তানির সুযোগ দেয়। রাশিয়া গত সপ্তাহান্তে আরও ৬০ দিনের জন্য চুক্তিটি পুনর্নবীকরণ করতে সম্মত হয়েছিল তবে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, এটির মেয়াদ আরও বর্ধিত করতে হলে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করতে হবে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোকে ইতিবাচক মনোভাব বলে মন্তব্য করেছেন এরদোগান। ইউক্রেনে তার বছরব্যাপী যুদ্ধের সময় তুরস্ক মূলত রাশিয়ার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, আঙ্কারা গত মাসে সংস্থাগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বারা অনুমোদিত রাশিয়ায় পণ্য পরিবহন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে, ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে।
রাশিয়ার সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় সন্তুষ্ট উগান্ডা : উগান্ডা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রাশিয়ার সাথে তার সহযোগিতার অত্যন্ত সন্তুষ্ট এবং তারা এর প্রশংসা করে। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইওওয়েরি মুসেভেনি তাসের ফার্স্ট ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেল মিখাইল গুসমানের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। ‘আজ, আমরা রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে আমাদের সহযোগিতায় খুব সন্তুষ্ট। আমরা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করি এবং আমরা রাশিয়া থেকে উচ্চমানের অস্ত্র ও প্রযুক্তি কিনি,’ বলেছেন উগান্ডার নেতা। মুসেভেনি আরও জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে আফ্রিকার লড়াইয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। সূত্র : তাস, দ্য হিল, বিবিসি নিউজ, রয়টার্স।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জমজমের পানি পানে সৌদির নতুন নির্দেশনা
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান মুখপাত্র নিহত
গিলেস্পিকে সরিয়ে পাকিস্তানের কোচ হচ্ছেন আকিব জাভেদ
সিনিয়র হামাস নেতারা কাতার থেকে তুরস্কে
ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে: আসিফ
বৃষ্টির কবলে উইন্ডিজ-ইংল্যান্ড শেষ টি-টোয়েন্টি
ইতালির বিপক্ষে হিসাব চুকাল ফ্রান্স,ইংল্যান্ডের গোল উৎসব
হল্যান্ডের হ্যাটট্রিকে গ্রুপ সেরা হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে নরওয়ে
ম্যাককালাম যোগ দেয়ার আগেই চাকরি গেল দুই সহকারী কোচের
এক যুগ পর কিউইদের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার সিরিজ জয়
আ. লীগ নেতা হানিফের সাম্রাজ্য দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড়
‘সবার চোখেই সাদা পোশাকের রঙিন স্বপ্ন’
দাবি মিটিয়ে অমিতের আরেকটি সেঞ্চুরি
হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড ডিবি পুলিশ ও প্রেমিকার পরিবার- অভিযোগ স্বজনদের
না.গঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরো ৯৬ জন আক্রান্ত
অক্টোবরে সড়কে প্রাণ গেছে ৩৭৭ জনের : বিআরটিএ
সাধারণ ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষনা করবে কিনা তা জনগণই নির্ধারণ করবে ____সারজিস আলম
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাথে পেশাভিত্তিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত
নির্বাচনী রোডম্যাপ ছাড়া দেশে স্বস্তি ফিরবে না : বুলু
সড়ক নিরাপদে পদক্ষেপ নিচ্ছে ডিএনসিসি