ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
১০ দফা প্রস্তাব ইমরান খানের

সকল বাধা উপেক্ষা করে লাহোরে সফল সমাবেশ

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৬ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:০৬ এএম

পিটিআই চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শনিবার দেশটির বর্তমান সরকারকে নিন্দা করে বলেছেন যে, তারা একটি ‘ভয়ের পরিবেশ’ তৈরি করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বিদ্যমান সঙ্কট থেকে দেশকে বের করে আনতে তিনি নিজের পক্ষ থেকে ১০ দফা পরিকল্পনা পেশ করেছেন। শনিবার লাহোরে মিনার-ই-পাকিস্তানে সমবেত বিশাল জমায়েতের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে ইমরান খান তার ১০ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১০ দফা প্রস্তাব উত্থাপনের আগে ইমরান খান দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে তাকে এবং তার দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সমস্ত ‘প্রতিকূলতা’ উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর জন্য মিনার-ই-পাকিস্তানের সমাবেশের অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়েছেন।

‘একটি জিনিস পরিষ্কার, যেই ক্ষমতায় থাকুক, তারা আজ একটি বার্তা পাবে যে বাধা এবং কন্টেইনার দিয়ে জনগণের আবেগকে দমন করা যায় না,’ তিনি লাহোরে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রায় ২ হাজার পিটিআই কর্মীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র দলের সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করা।’ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বর্তমান শাসকদের দায়ী করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা কি এ পাকিস্তানের জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন?

তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানে ইমরান খানের হাত বেঁধে অন্যদের সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া নয় বরং এর মানে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মামলার শতক পূর্ণ করেছি, আমি হয়তো ১৫০ পেরিয়েছি। আমার নামে ৪০টি সন্ত্রাসের মামলা দায়ের করা হয়েছে। গরীবরা সারা জীবন এদেশে মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে লড়াই করে কাটায়।’

পিটিআই প্রধান উল্লেখ করেছেন যে, সিন্ধুতে কেউ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেনি। ‘তারা এটাকে জারদারি সিস্টেম বলে।’ ইমরান বলেন, ‘প্রকৃত স্বাধীনতা’ তখনই আসবে যখন দেশে আইনের শাসন থাকবে। তিনি বলেছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ‘বিশ্বজুড়ে ভিক্ষা করছেন’ কিন্তু এখনও কোনও প্রতিকার পাচ্ছেন না। তিনি স্মরণ করেন যে পিডিএম পিটিআই-এর আমলে তিনটি লংমার্চ করেছিল কিন্তু তৎকালীন সরকার তাদের পথে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। ‘আমি এমনকি বলেছিলাম যে আমি তাদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করব।’

তিনি বলেন যে, পিটিআই জামান পার্ক থেকে তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করার জন্য ৮ মার্চ একটি সমাবেশের অনুমতি নিয়েছিল ‘কিন্তু আমরা হঠাৎ জানতে পারি যে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করেছে এবং (টিয়ার গ্যাস) শেলিং ব্যবহার করেছে। তারা কেবল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। আমি আমি রক্তপাত চাই না বলে সমাবেশ স্থগিত করেছি।’ পিটিআই কর্মী জিল্লে শাহের মৃত্যুর বিষয়ে মন্তব্য করে ইমরান বলেছেন যে, তিনি একজন বিশেষ ব্যক্তি, ‘নির্লজ্জ লোকেরা’ তার হত্যার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। ‘জিল্লে শাহের শরীরে ২৬টি নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে এবং তার লাশ রাস্তার উপর ফেলে দেয়া হয়েছিল। কে তাকে খুন করেছে? তাদের আইন অনুযায়ী শাস্তি হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, আদালত থেকে জামিন পেলেও পুলিশ ১৪ মার্চ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে আসে। ‘আমি তাদের বলেছিলাম আমার জামিন আছে। পুলিশ বলেছে তারা আমাকে ইসলামাবাদে নিয়ে যেতে চায়। আমি জামিন বন্ড দিয়েছিলাম যে আমি ইসলামাবাদের আদালতে হাজির হব। তারা আমার জামিন বন্ড নেয়নি। তারা তিন দিক থেকে আমার বাড়িতে হামলা করেছে। তারা কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে। তারা শেল ব্যবহার করে। আমার জীবনে প্রথমবারের মতো আমি অনুভব করলাম ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরের মানুষ কী অনুভব করে।’

ইমরান খানের ১০ দফা প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। আইএমএফ বা কোনো ধরনের ঋণ সহায়তার পরিবর্তে প্রবাসী পাকিস্তানিদের কাছ থেকে দেশে সরাসরি বিনিয়োগ বাড়ানো। পাশাপাশি রফতানিমুখী খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়ানোর কথাও বলেছেন ইমরান খান। ইমরান খান পাকিস্তানের পর্যটন খাতকে চাঙা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত হবে বলেও জানান। এ ছাড়া দেশের খনিজ সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আনা হবে। এর বাইরে দেশের মাঝারি এবং ক্ষুদ্রশিল্প খাতকেও চাঙা করা হবে। পাশাপাশি রাজস্ব বাড়াতে বিভিন্ন কর বাড়ানোর কথাও বলেন ইমরান খান।

পাকিস্তানের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী তার সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশের আবাসন খাত এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতকেও এগিয়ে নেয়ার রূপরেখা প্রণয়ন করেন। তিনি আরও জানান, তার সরকার ক্ষমতায় গেলে চীনের সহায়তা নিয়ে দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়াবে। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে, পিটিআই এর সমাবেশে বাধা দিতে পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কনটেইনার স্থাপন ও ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছিল, ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করেছিল এবং পিটিআই কর্মীদের সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে বাধা দেয়ার জন্য দৃশ্যত কয়েক শত পিটিআই কর্মীকে আটক করেছিল। এর আগে, পার্টি দুবার লাহোরে জনসমাবেশ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু প্রাদেশিক সরকার উভয় অনুষ্ঠানেই ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। সূত্র : ট্রিবিউন, ডন।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার