চীনের বিরুদ্ধে টিকটকের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ
২৯ মার্চ ২০২৩, ১১:২৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:০৬ পিএম
১৫ কোটিরও বেশি আমেরিকানের ব্যবহৃত সংক্ষিপ্ত ভিডিও অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ হিসেবে মার্কিন নীতি নির্ধারকরা বলছেন যে, চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটক আমেরিকানদের জন্য হুমকি। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত প্রযুক্তি গবেষক এবং গোপনীয়তা গবেষক অ্যাডভোকেট অ্যাশার উল্ফ যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করে আল জাজিরাকে বলেন, ‹এটি এমন যে, এই নিয়ম আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু আমার জন্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘তাই আমেরিকানরা টিকটক নিয়ে যে গোলমাল করছে, তা অবশ্যই নজরদারি এবং প্রভাবজনক ক্রিয়াকলাপ থেকে নাগরিকদের রক্ষা করার আন্তরিক ইচ্ছা কম এবং সামাজিক মাধ্যমগুলির উপর নজরদারি এবং জাতীয় নিয়ন্ত্রণকে একীভূত করার প্রচেষ্টা হিসাবে বেশি দেখা উচিত।’
বাইডেন প্রশাসন আমেরিকানদের প্রতিদিনের সুরক্ষার জন্য ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিলেন্স অ্যাক্ট (এফআইএসএ) এর ধারা ৭০২ এর পুনর্নবায়ণের জন্যও চাপ দিচ্ছে। মার্কিন আইন প্রণেতারা এমন ক্ষমতার পুনর্নবায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, যা গুগল, মেটা এবং অ্যাপলের মতো সংস্থাগুলিকে বিদেশে অবস্থানরত অ-মার্কিন নাগরিকদের উপর অবিরাম গুপ্তচরবৃত্তির সুবিধার্থে ব্যবহৃত হতে বাধ্য করবে। এফআইএসএ আইন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে বিদেশীদের ইমেল, ফোন এবং অন্যান্য অনলাইন যোগাযোগে সমনবিহীন গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর অনুমতি দেয়। এটি যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো মার্কিন মিত্রদের কাছেও তথ্য হস্তান্তর করতে পারে। মার্কিন সরকারের থেকে প্রাপ্ত সবচেয়ে সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে সরকারী নজরদারির জন্য ২ লাখ ৩২হাজার ৪শ’ ৩২ ‘অ-মার্কিন ব্যক্তিদের’ লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, মার্কিন কর্মকর্তারা আসলে চূড়ান্ত হুমকি হিসেবে চীনকে দেখছেন; টিকটককে নয়। টিকটকের চীনা নির্বাহীর দ্বারা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার আশঙ্কা প্রশমিত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্ট ওরাকলের সাথে মার্কিন তথ্য সঞ্চয় করার জন্য দেশটিতে ‘প্রজেক্ট টেক্সাস› নামে পরিচিত ১শ’ ৫০ কোটি ডলারের প্রকল্পে বাইটড্যান্সের অংশীদারিত্বের উপর নিষেধাজ্ঞা বা জোরপূর্বক বিক্রয় আরোপ করেছে মার্কিন নীতি নির্ধারকরা। অ্যাপটি ইতিমধ্যেই মার্কিন সরকারী প্রযুক্তিগুলির পাশাপাশি কানাডা, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক এবং নিউজিল্যান্ড সহ সরকারী প্রযুক্তিগুলিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নিউ জার্সির সেটন হল ইউনিভার্সিটির আইন এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিশেষজ্ঞ মার্কিন সাংবিধানিক জোনাথন হাফেটজ আল জাজিরাকে বলেন, ‘তারা টিকটক এবং চীনাদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে ব্যাপক পানি ঘোলা করছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রচুর পরিমাণে তথ্য সংগ্রহ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নাগরিকদের গোপনীয়তা বিষয়ক নজরদারি সম্পর্কে উদ্বেগগুলি নিয়ে শোরগোল কিছুটা বিদ্রুপাত্মক। তাদের বেলায় তথ্য সংগ্রহ করা ঠিক আছে, কিন্তু তারা চায় না চীন তা সংগ্রহ করুক।
এদিকে, চীন বলেছে যে, এটি টিকটকের জোরপূর্বক বিক্রয়ের বিরোধিতা করবে। দেশটি আরও বলেছে যে, এর পণ্য ও পরিষেবাগুলির পরিবর্তে বিদেশী মালিকানার উপর ভিত্তি করে এমন একটি পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারীদের আস্থার ক্ষতি করবে।
এর আগে, চীন সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে ভ-ামি করার জন্য অভিযুক্ত করেছে এবং প্রিজম-এর মতো গুপ্তচরবৃত্তির মার্কিন প্রযুক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছে, যা ২০১৩ সালে প্রাক্তন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক এডওয়ার্ড স্নোডেন প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। ফেসবুক, গুগল এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলি বিশ^ব্যাপি গ্রাহকদের তথ্য চুরির খবর ফাঁস থেকে শুরু করে বিভিন্ন একাউন্টে তাদের কর্মীদের অনুপ্রবেশ পর্যন্ত ব্যাপক বিতর্কিত বিষয়ে এখন সমালোচনার সম্মুখীন।
যদিও বিদেশীদের মধ্যে যোগাযোগকে লক্ষ্য করার উদ্দেশ্যে, মার্কিন ধারা ৭০২ বাস্তবে মার্কিন নাগরিকদের তথ্যগুলিও নথিবদ্ধ করে, যারা বিদেশীদের সাথে যোগাযোগ করে। কোপেনহেগেনের আইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ভেদ্রান সেকারা বলেছেন যে, টিকটককে সীমাবদ্ধ করার পদক্ষেপগুলি ভাল নীতির চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বলে মনে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেক্ষত্রে কেন তারা (চীন) আমেরিকান সরকারের মতো খোলা বাজারে এটি কিনে নেয় না? রাজনীতিবিদ এবং আইন প্রণেতারা যদি সত্যিই মন্দ বা অপরাধী প্রযুক্তি সংস্থাগুলি থেকে মানুষকে রক্ষা করতে আগ্রহী হন, তবে তাদের কেবলমাত্র একটি কোম্পানির দিকে মনোনিবেশ না করে সামাজিক মাধ্যম এবং সম্পূর্ণ প্রযুক্তি শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত’।
টিটকের মতোই কিছু মাধ্যম তাদের মানবাধিকার রেকর্ডের উপরও যাচাই-বাছাইয়ের সম্মুখীন হয়েছে। টুইটার এবং ইউটিউব উভয়ই সম্প্রতি নয়াদিল্লির অনুরোধে একটি বিবিসি তথ্যচিত্র তুলে নিয়েছে, যা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছিল। মায়ানমারে সহিংসতা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা প্রচারের জন্য তার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার পর ফেসবুকও ধাক্কা খেয়েছে। কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন যে, টিকটকের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নজির অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ তৈরি করবে।
জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ইন্টারনেট গভর্নেন্স প্রজেক্টের ভারত-ভিত্তিক গবেষক জ্যোতি পান্ডে আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘মূলত, যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য স্বৈরাচারী কর্তৃত্ববাদী বা এমনকি সুরক্ষাবাদী সরকারগুলির জন্য একটি নমুনা তৈরি করছে যাতে, বাজারে প্রতিযোগিতা রোধ করার জন্য জাতীয় নিরাপত্তাকে একটি উছিলা হিসাবে ব্যবহার করা যায় এবং মালিকানা ভিত্তিক প্রযুক্তির উপর কব্জা রাখা যায়’।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জুনে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন ১৭ শতাংশ কমেছে
রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট
গারো পাহাড়ের বালু খেকোদের বিরুদ্ধে এসিল্যান্ডের সতর্কবার্তা
রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন