ইন্দোনেশিয়ার তরুণদের মধ্যে হিজরাহ আন্দোলনের মাধ্যমে তথা ইসলামী পুনর্জাগরণের আবেদন বাড়ছে এবং কয়েক বছর ধরে দেশটিতে ইসলাম অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার সরকার দীর্ঘদিন ধরে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্মীয়ভাবে বৈচিত্র্যময় সমাজ বজায় রাখার চেষ্টা করলেও হিজরাহ আন্দোলনকারীদের দ্বারা প্রচারিত হিজরাহ্ উৎসবের জনপ্রিয়তা সরকারী কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ধর্মীয় নেতার মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা আশঙ্কা করছেন যে, এটি ইসলামের নমনীয় আবেদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার সরকার আশঙ্কা করছে যে, হিজরাহ আন্দোলনের পিছনে রয়েছে সউদী আরব থেকে উদ্ভ‚ত ওয়াহাবিবাদ নামক একটি অত্যন্ত সহিংস মৌলবাদী মতাদর্শ। তবে, ইসলাম প্রচারক দেরি সুলাইমান একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, হিজরাহ্ উৎসবের অনুসারীদের ভুল বোঝা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মৌলবাদের কথা বলি না। আমরা সরকারের সাথে লড়াই করি না, আমরা শুধু ইসলাম অনুসরণের পর তাদের অনুভ‚তি কি, সবার কাছ থেকে সেই অভিজ্ঞতা শুনতে আসি।’

ইন্দোনেশিয়ার হিজরাহ্ প্রচারক দেরি সুলাইমান একসময় জনপ্রিয় হেভি মেটাল ব্যান্ডদল বিট্রেয়ারের গিটারিস্ট ছিলেন। তিনি বলেন যে, সেই সময় তিনি প্রতি রাতে পার্টি করতেন এবং তার অনেক বান্ধবী ছিল। ১৯৯৮ সালে হিজরাহ্ অনুসরণকারী অন্যান্য ইন্দোনেশিয়ান সঙ্গীতজ্ঞদের মতো দেরি তার ব্যান্ডদল ছেড়ে ইসলামিক সঙ্গীত তৈরি করতে শুরু করেন, যখন একজন সহশিল্পী তাকে তার ধর্ম বিশ্বাসে ফিরে যেতে পরামর্শ দেন। এখন, তিনি মুসলিম তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক ভাব আনতে টিকটকে কন্টেন্ট তৈরি করেন। দেরি এবছরের হিজরাহ্ সম্মেলনের শেষ দিনটি অনুতাপের জন্য প্রার্থনার নেতৃত্ব দিয়ে সমাপ্ত করেন। তিনি এবং শ্রোতাদের মধ্যে অনেকে তাদের পাপের কথা স্মরণ করে কেঁদে ফেলেন। জাকার্তার সিরিফ হিদায়াতুল্লাহ ইসলামিক স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক দাদি দারমাদি হিজরাহ অনুসারীদের ‘পুনরায় জন্মগ্রহণকারী মুসলিম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ইন্দোনেশিয়ায় হিজরাহ্ অনুসারীদের সংখ্যা সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে, জনপ্রিয় হিজরাহ প্রচারকদের সামাজিক মাধ্যম অনুসরণকারীদের উপর ভিত্তি করে হিসাব করা হলে, তারা কমপক্ষে কয়েক লাখ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার ১২ জন বিশিষ্ট হিজরাহ প্রচারকের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, তাদের কমপক্ষে ৪ কোটি ৫৮ লাখ অনুসরণকারী রয়েছে। আন্দোলনটির জনপ্রিয়তা বাড়াতে দেশটির অন্য ইসলামী দলগুলি আরও কট্টর হয়ে উঠেছে, উদাহরণস্বরূপ, তারা খ্রিস্টান গীর্জা নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শত শত লোককে একত্রিত করেছে। গত বছর তারা ইন্দোনেশিয়ায় বিবাহ বহির্ভূত শারিরীক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করার জন্য একটি আইন পাস করতে সহায়তা করে।

‘হিজরাহ’ হল যাত্রার আরবি শব্দ এবং এটি মক্কায় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে হযরত মোহাম্মদ (সা:)-এর মদিনায় হিজরত করা থেকে অনুপ্রাণিত। হিজরাহ আন্দোলনের অনুসরণকারীরা পোশাক থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের সম্পর্ক পর্যন্ত সমস্ত কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও বেশি ইসলামিক জীবন যাপন করা, যার অর্থ নারীদের আরও বেশি হিজাব বা নেকাব পরিধান করা, এবং পর্দা অনুসরণ করছে। পুরুষরাও দাড়ি এবং ধর্মীয় পোশাক পরিধান করেন। তারা সম্ভাব্য হারাম বা শরীয়ত নিষিদ্ধ সমস্ত কিছু প্রত্যাখ্যান করেন। এই বছর হিজরাহ্ উৎসবে বিক্রয়কর্মীরা হালাল প্রসাধনী এবং কুরআন মুখস্থ করানোর সেবা প্রচার করেছে। তবে, অংশগ্রহণকারীদের রক্ষণশীল পোশাক পরতে হয়েছে। এবং মুসলিম নারী-পুরুষদের আলাদা দলে ভাগ করা হয়েছে। সেখানে একজন ইসলাম প্রচারক বলেছেন যে, তিনি লোকেদের তাদের পরিবারে যেকোন ধরণের সমকামীতা, উভকামীতা এবং লিঙ্গ পরিবর্তন রোধ করার জন্য একটি বিশেষ প্রার্থনা শিক্ষা দেবেন।

ইন্দোনেশিয়ার সরকারীভাবে অন্য পাঁচটি ধর্ম এবং ২শ’রও বেশি অন্যান্য ধর্ম থাকলে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম জাতির দেশটির সমৃদ্ধ ইসলামী সংস্কৃতির সাথে হিজরাহ্ আন্দোলন অসঙ্গতিপূর্ন নয়। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামি কট্টরপন্থার উত্থান সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সরকার ইতিমধ্যে হিজবুত তাহরির এবং ইসলামিক ডিফেন্ডারস ফ্রন্টের মতো দলগুলিকে নিষিদ্ধ করেছে, যারা ইন্দোনেশিয়ায় সহিংস মুসলিম খেলাফতের আহŸান জানিয়েছিল। ফলে, সরকার এই ধরনের উৎসব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের ভয় যে, এটি দেশের বহুধর্মীয় সমাজের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এপ্রেক্ষিতে, ইন্দোনেশিয়ার ধর্ম মন্ত্রণালয় তরুণ ইসলাম প্রচারকদের উৎসাহিত করে বলেছে যে, ইসলামপন্থীদের অবশ্যই বৈচিত্র্যের প্রতি সহনশীল হতে হবে।

কালকিনিতে গ্রাম পুলিশের দফাদারের দুই পা কর্তন
কালকিনি (মাদারীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
গ্রাম্য দলাদলির জেরে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সিডিখান এলাকার নতুন চরদৌলতখান গ্রামে নুরুল আমিন বাদশা (৫০) নামের এক গ্রাম পুলিশের দফাদারের দুই পা কর্তন করেছে প্রতিপক্ষ। সে মৃত হাতেম আলী সরদারের ছেলে এবং সিডিখান ইউপিতে গ্রাম পুলিশে কর্মরত ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাৎক্ষণিক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রাম পুলিশের দফাদার বাদশা বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় ওৎপেতে থাকে প্রতিপক্ষরা। ওইসময় পূর্ব শত্রæতার জেরে প্রতিপক্ষরা তাকে ধরে খোকন তালুকদারের বাড়ির পাশের পাট ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মারধর করার এক পর্যায়ে দুই পা কর্তন করে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামীম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করছে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।