পুরুষ হতে চান সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৩ জুন ২০২৩, ০৮:৫৪ পিএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে সুচেতনা। তিনি রূপান্তরকামী পুরুষ হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছেন। চলতি মাসে পিপলস রিলিফ কমিটির একটি কর্মশালায় অংশ নেন তিনি। এলজিবিটিকিউ প্লাস সমাজের স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় নিজের বক্তব্য পেশ করেন। তাতেই আগল ভেঙে সুচেতনার নতুনভাবে আত্মপ্রকাশের ইঙ্গিত ছিল। এর পর একান্ত ব্যক্তিগত পরিসরে যে বিষয়টি ছিল, বুধবার সেটি প্রকাশ্যে এনেছেন বুদ্ধ-কন্যা। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন, সুচেতন ভট্টাচার্য হিসেবেই পরিচিত হতে চান। আধার, ভোটার কার্ডে এ জন্য পরিবর্তন করতে চান তিনি। আইনি দিক থেকে এই বদলের জন্য পদক্ষেপ নিতে চান। আর সর্বোপরি, অস্ত্রোপচার করে নারী থেকে শরীরে পুরুষ হতে চান সুচেতন। সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে সুচেতন বলেছেন, ‘সম্প্রতি একটি কর্মশালায় গিয়েছিলাম। এ ধরনের সভায় এটাই আমার প্রথম অংশগ্রহণ। সেখানে আমাদের সমাজের মানুষজনের সঙ্গে আলাপ হয়। অনেক কিছু জানতে পারি। এই কর্মশালাই আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছে।’ এখানেই তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমি সুচেতনা নই, সুচেতন। রূপান্তর ঘটাতে কী কী করতে হবে?’

সুচেতনার নারী শরীরে দীর্ঘদিন ধরেই বাস পুরুষ সুচেতনের। ৪১ বছরের সুচেতন ১৮ বছর ধরে এক নারীর সঙ্গে বাস করছেন। সুচেতনের ভাষায়, ‘বন্ধুদের সঙ্গে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছি। নিজের প্রকৃত পরিচয় কীভাবে সামনে আনা যায়, সেটা নিয়ে ভাবনাচিন্তাছিল। ৪০-এর কোঠায় এসে পড়ার পর মনে হয়, এটাই সময়।’ এই দীর্ঘ সময় সুচেতন ও তার সঙ্গী পরিবার এবং স্বজন-বন্ধুদের পাশে পেয়েছেন। কিন্তু বৃহত্তর সমাজের অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর হয়নি। সুচেতন বলেন, ‘আমাদের সমাজ সমকামী নারী ও রূপান্তরকামী পুরুষের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন নয়। তবে রূপান্তকামীদের একটা বড় অংশ যেভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, সেটা আমার ক্ষেত্রে হয়নি।’

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখন খুবই অসুস্থ। স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য রয়েছেন স্বামীর সঙ্গে। সঙ্গীকে নিয়ে আলাদা থাকেন সুচেতন। একটি ইউটিউব চ্যানেলের কাজ নিয়ে তিনি ব্যস্ত। সঙ্গী বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। সুচেতন চান না, রূপান্তরের বিষয়টা নিয়ে তার মা-বাবা কোনো ভাবে বিব্রত হয়ে পড়ুন। তাই নিজের মতো নবপরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।

ছোটবেলা থেকেই সুচতনের মধ্যে পুরুষের সত্তা জেগে উঠেছিল। তখন কেমন ছিল অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া? সুচেতন বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারতাম নিজেকে। মা-বাবাও বুঝেছিলেন। তাদের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি।’ এই অতীতকে পুঁজি করে যৌন সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন একসময়ের বাম রাজনৈতিক কর্মী।

প্রগতিশীল পরিবারের সদস্য হওয়ায় সমর্থন পেয়েছেন ঠিক কথাই। কিন্তু সেটাই কি আত্মপ্রকাশের পথে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল না? কর্মশালার অন্যতম বক্তা, অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী বলেন, ‘সেলিব্রেটি বাবার সন্তান হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন ছিল। এই সিদ্ধান্ত প্রান্তিক মানুষের লড়াইয়ে শক্তি জোগাবে।’ সিদ্ধান্ত যে কঠিন তা বোঝা যাচ্ছে নেটিজেনদের একাংশের ভাষায়। এই ‘ট্রোল’ দেখে বিচলিত নন সুচেতন। তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আন্দোলনে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘প্রান্তকথা’র কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় কর্মশালায় ছিলেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘নিজেকে সুচেতন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য শরীর পরিবর্তনের দরকার নেই। নিজের মনের প্রকাশই যথেষ্ট। সেই আইনি অধিকার রূপান্তরকামীদের রয়েছে। এই ঘোষণা অনেক মানুষকে উৎসাহ জোগাবে।’ সূত্র : ডয়চে ভেলে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মার্কিন বিমানবাহী রণতরী হামলা হুথিদের, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
বাসার আল-আসাদ ও আসমা’র ডিভোর্সের সংবাদ প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
সাধারণ ক্ষমার বিনিময়ে দোষ স্বীকার করছেন আসাদের সৈন্যরা
অস্তিত্ব সংকটে ট্রাম্প টাওয়ারসহ ৩৫ বিলাসবহুল ভবন
বাংলাদেশের কাছে ২০০ কোটি রুপি পায় ত্রিপুরা, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা
আরও

আরও পড়ুন

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব এর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব এর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত

ভারতের সাথে চুক্তি সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর

ভারতের সাথে চুক্তি সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর

খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে  গণঅভ্যুত্থানে  হত্যাকাণ্ড বিচার নিশ্চিত করতে হবে-বাংলাদেশ ইসলামী দল

খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ড বিচার নিশ্চিত করতে হবে-বাংলাদেশ ইসলামী দল

উগ্রবাদী সাদপন্থীদের বিচার নিশ্চিতকরণ এবং কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি

উগ্রবাদী সাদপন্থীদের বিচার নিশ্চিতকরণ এবং কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি

কালিয়াকৈর নিট এশিয়ায় টেক্সটাইলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

কালিয়াকৈর নিট এশিয়ায় টেক্সটাইলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ডাইং কারখানায় আগুন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ডাইং কারখানায় আগুন

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন

দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন

একনেকে দুই হাজার কোটি টাকায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন

একনেকে দুই হাজার কোটি টাকায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন

মার্কিন বিমানবাহী রণতরী হামলা হুথিদের, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত

মার্কিন বিমানবাহী রণতরী হামলা হুথিদের, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত

ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার

ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি নিয়ে জাতীয় সেমিনার

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি নিয়ে জাতীয় সেমিনার

লোহাগড়ায় কাঠ বোঝাই নসিমন উল্টে হেলপার নিহত

লোহাগড়ায় কাঠ বোঝাই নসিমন উল্টে হেলপার নিহত

বাসার আল-আসাদ ও আসমা’র ডিভোর্সের সংবাদ প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

বাসার আল-আসাদ ও আসমা’র ডিভোর্সের সংবাদ প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

রাজশাহীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মহানগরী জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩

রাজশাহীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মহানগরী জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩

সাধারণ ক্ষমার বিনিময়ে দোষ স্বীকার করছেন আসাদের সৈন্যরা

সাধারণ ক্ষমার বিনিময়ে দোষ স্বীকার করছেন আসাদের সৈন্যরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদুৎস্পর্শে শ্রমিকের মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদুৎস্পর্শে শ্রমিকের মৃত্যু

রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নি¤œমানের খাবার, গভীর রাতে রাস্তায় নেমে ছাত্রীদের বিক্ষোভ

রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নি¤œমানের খাবার, গভীর রাতে রাস্তায় নেমে ছাত্রীদের বিক্ষোভ

কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত

কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত

টিকটক-এ ৭ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ওয়েব সিরিজ ‘প্রেমের বিকাশ’

টিকটক-এ ৭ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ওয়েব সিরিজ ‘প্রেমের বিকাশ’