বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনে সহায়তা প্রদান চালিয়ে যাওয়ার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরেরর অনুদান কর্মসূচি ব্যবহার করার একটি বিকল্প বিবেচনা করছে, সংবাদমাধ্যম পলিটিকো তার সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেস কর্তৃক ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে মার্কিন প্রশাসন অন্যান্য বিকল্প বিবেচনা করছে।

একটি বিকল্পের মধ্যে রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মসূচী, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তার মিত্রদের মার্কিন তৈরি অস্ত্র সংগ্রহের জন্য অনুদান এবং ঋণ প্রদান করা সম্ভব করে তোলে। বুধবার, বাইডেন নিশ্চিত করেছেন যে, কংগ্রেস এই জাতীয় প্রোগ্রামগুলিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করলেও তিনি ইউক্রেনে সহায়তা প্রদান চালিয়ে যাওয়ার জন্য তহবিল খুঁজে পেতে সক্ষম হবেন, তবে এ বিষয়ে তিনি আরও মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন।

ইইউতে যোগদানের জন্য ইউক্রেন খুবই দুর্নীতিগ্রস্ত : ইউক্রেন ইইউতে যোগদান করতে প্রস্তুত নয় কারণ তাদের ‘সমাজের সকল স্তর দুর্নীতিগ্রস্ত’, ইউরোপীয় কমিশনের সাবেক সভাপতি জাঁ-ক্লদ জাঙ্কার বলেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনীয়দের ব্লকে যোগদানের জন্য তাদের প্রার্থিতা নিয়ে ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ দেয়া ‘ইইউ বা ইউক্রেনের পক্ষে ভাল হবে না’।
ইউক্রেনীয়দের ইইউ-এর অংশ হওয়ার জন্য একটি শর্টকাট দেয়া যেতে পারে বলে যারা দাবি করেছিলেন তিনি তাদেরও সামলোচনা করেন। জার্মানির অগসবার্গার অ্যালজেমাইন পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের জনগণকে যারা চরম কষ্টে আছে তাদের কাছে আপনার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত নয়। আমি ইউরোপের কিছু কণ্ঠের জন্য খুবক্ষুব্ধ যারা ইউক্রেনীয়দের বলছে যে তারা অবিলম্বে সদস্য হতে পারে।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রত্যাশী দেশগুলিকে ব্লকে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার আগে দাবিকৃত সংস্কারগুলি সম্পূর্ণ করতে হবে এবং ইউরোপীয় আইনের অনেকগুলি গ্রহণ করতে হবে, যার জন্য এক দশকেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

কিয়েভের যে সংস্কারগুলি গ্রহণ করা উচিত তার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এমন একটি প্রক্রিয়া যা যুদ্ধ অব্যাহত থাকাকালীন সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। উরসুলা ভন ডার লেইন, যিনি জাঙ্কারের কাছ থেকে ২০১৯ সালে কমিশনের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, সম্প্রতি ইউক্রেনের সেই সংস্কারগুলির অগ্রগতির জন্য প্রশংসা করেছেন এবং কিয়েভের প্রার্থীতা সম্পর্কে আরও ইতিবাচক ছিলেন। ‘যে কেউ ইউক্রেনের সাথে কিছু করার চিন্তা করে তারা জানে যে এটি এমন একটি দেশ যা সমাজের সকল স্তরে দুর্নীতিগ্রস্ত। তার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, এটি যোগদানের জন্য প্রস্তুত নয় - এটির জন্য ব্যাপক অভ্যন্তরীণ সংস্কার প্রক্রিয়া প্রয়োজন,’ জাঙ্কার বলেছেন। কিয়েভের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনে ইইউ ডিসেম্বরে ব্লকে তার ভবিষ্যত যোগদানের বিষয়ে ইউক্রেনের সাথে আলোচনার জন্য সবুজ আলো দিতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে।

কিয়েভ সৈন্যদের যে কোনও মূল্যে অগ্রসর হতে চাপ দিচ্ছে পশ্চিমারা : জনসাধারণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, পশ্চিমারা ইউক্রেনের সৈন্যদের যেকোনো মূল্যে অগ্রসর হওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ভালদাই ইন্টারন্যাশনাল ডিসকাশন ক্লাবের এক সভায় বলেছেন। ‘পশ্চিমাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি আগেই বলেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি মাসে ১৫৫ মিমি ক্যালিবারের ১৪ হাজার শেল তৈরি করে এবং ইউক্রেনীয় সৈন্যরা প্রতিদিন সেখান থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত ব্যবহার করছে। পশ্চিমারা তাদের উৎপাদন ৭৫ হাজারে উন্নীত করার চেষ্টা করছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ প্রতি মাসে, তবে এটি এখনও অনেক দূরে। একই কথা ইউরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য,’ পুতিন বলেছিলেন।

‘তারা বলেছে যে, তারা (ইউক্রেনকে) তার প্রয়োজনীয় সবকিছু, সাঁজোয়া যান এবং গোলাবারুদ দিয়েছিল, বলেছিল যে তারা ইউক্রেনের জন্য যা যা করতে পারে তা করেছে। তারা যা বলেছিল, আমি এটি তৈরি করিনি। তারা প্রকাশ্যে বলেছে যে, তারা তাদের কাজ করেছে, এবং এখন এটি ইউক্রেনের উপর নির্ভর করে, যাদেরকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে হবে। এবং, জনসাধারণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তারা যোগ করে যে এটি অবশ্যই ‘যেকোন মূল্যে’ করা উচিত,’ তিনি যোগ করেন। ‘আমাকে বিশ্বাস করুন, আমি জানি আমি কী নিয়ে কথা বলছি। এবং তারা ঠিক এটাই করছে - তারা যে কোনও মূল্যে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে,’ দাবি করেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট।

বিমানে গ্রেনেড বিস্ফোরণ প্রিগোজিনের মৃত্যু হতে পারে : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ভালদাই ইন্টারন্যাশনাল ডিসকাশন ক্লাবের এক সভায় বলেছেন, যে বিমানটি প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনকে বহন করছিল, সেটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কোনো বাহ্যিক প্রভাবের শিকার হয়নি। ‘আমি জানি, কোম্পানির নেতৃত্বের সাথে কী ঘটেছে তা নিয়ে সম্ভবত এমন একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। আমরা বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে জানি। তদন্ত কমিটির প্রধান ঠিক অন্য দিন আমাকে ব্রিফ করেছিলেন। দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশের হাতে গ্রেনেডের টুকরো পাওয়া গেছে। বিমানটিতে কোনো বাহ্যিক প্রভাব ছিল না এবং এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য, রাশিয়ান তদন্ত কমিটি দ্বারা পরিচালিত একটি পরীক্ষার ফলাফল,’ পুতিন বলেছেন।

তিনি আরও বলেন যে, লাশগুলোর অ্যালকোহল এবং মাদকের জন্য পরীক্ষা করা হয়নি, যদিও এই ধরনের পরীক্ষা করা উচিত ছিল। ‘তদন্ত চলমান আছে, কিন্তু, দুঃখজনকভাবে, মৃতদের রক্তে অ্যালকোহল বা মাদক ছিল কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য কোন পরীক্ষা করা হয়নি। যাইহোক, আমরা সবাই জানি যে ঘটনাগুলির পরে আপনি ভালভাবে জানেন যে, এফএসবি (ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস) সেন্ট পিটার্সবার্গে কোম্পানির অফিসে দশ বিলিয়ন রুবল সহ পাঁচ কিলোগ্রাম কোকেন পাওয়া গেছে,’ তিনি বলেন। ‘আমার মতে, এই ধরনের একটি পরীক্ষা করা উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি,’ রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট যোগ করেছেন। ‘এটাই আমি বলতে পারি,’ তিনি যোগ করেন, ‘আমি তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে আমি এটা প্রকাশ্যে বলতে পারি কিনা, এবং তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: ‘হ্যাঁ, আপনি পারেন, এটি একটি প্রমাণিত সত্য’।’ সূত্র : পলিটিকো, রয়টার্স, তাস।