এই সপ্তাহে একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নিয়ন্ত্রিত ভারতীয় সংসদ ১শ’ ৪৬ জন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে এবং ফৌজদারি বিচার ও টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নীতিমালা একতরফাভাবে পাশ করেছে। মোদির ব্যবসায়িক মিত্র ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে সংসদে প্রশ্ন জমা দেওয়ার জন্য অর্থ প্রাপ্তির অভিযোগে একজন বিরোধী সদস্যকে বহিষ্কারের পর এই সাময়িক গণ বরাখাস্তের আদেশ আসে।

বিরোধীরা বিজেপির এই আচরণকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে ক্ষমতাসীন দলের অগণতান্ত্রিক প্রবণতার সর্বশেষ নিদর্শন হিসাবে অভিহিত করেছে। এবং এর প্রদিবাদে ভারতের ২৮টি বিরোধী দলের একটি সাম্প্রতিক জোট, যা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা ইন্ডিয়া নামে পরিচিত শুক্রবার নয়াদিল্লীর রাজপথে নেমে আসে। বিজেপির সর্বশেষ পদক্ষেপকে ক্ষমতার আরেকটি অপব্যবহার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল হিসেবে নিন্দা করে ভারতের বিরোধী দলগুলো।

নয়াদিল্লির বিক্ষোভ সমাবেশে ‹গণতন্ত্র বাঁচাও› ব্যানারের অধীনে মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে বলেন, ‹ভারতে গণতন্ত্র ধ্বংস করার কাজটি মোদি এবং শাহ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। তারা আমাদের সকলকে (সংসদ সদস্যদের) বের করে দিয়েছেন এবং সমস্ত আইন বিনা বাধায় পাস করেছেন।’

ভারতের সংসদে সাময়িক গণ বরখাস্তের ঘটনাটি ১৩ ডিসেম্বরের একটি নিরাপত্তা লঙ্ঘনকে কেন্দ্র করে ঘটেছে, যেখানে দু’জন বেসামরিক ব্যাক্তি দর্শক গ্যালারি থেকে সংসদের নিম্নকক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং কৌটা থেকে রঙিন ধোঁয়া ছেড়ে দেন। স্থানীয় গণমাধ্যম বলেছে যে, অনুপ্রবেশকারীদের ব্যবহৃত অনুমতিপত্রগুলি বিজেপির সাংসদ প্রতাপ সিমহা জারি করেছিলেন। মোদি এবং তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ এই বিষয়ে সংসদে জবাবদিহি করার জন্য বিরোধীদের অনুরোধ বারবার উপেক্ষা করেন।

উর্ধ্বতন বিরোধী নেতারা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য অনুমতিপত্র জারি করা আইন প্রণেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন এবং সংসদে জবাব দিতে অস্বীকার করে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে উপহাস করার জন্য মোদি ও শাহকে অভিযুক্ত করেন। সপ্তাহজুড়ে আরও বেশি সংখ্যক আইন প্রণেতা প্রতিবাদ করতে শুরু করলে ভরতীয় সংসদ এই বহিস্কারাদেশ দেয়। এর আগে, মার্চে বিরোধী কংগ্রেস দলের অন্যতম নেতা রাহুল গান্ধীকে স্থানীয় আদালত মোদির সম্প্রদায়ের মানহানি করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করার পর তিনি তার সংসদ সদস্যপদ হারান। পরে সুপ্রিম কোর্ট গান্ধীর অযোগ্যতা প্রত্যাহার করে নেয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং দিল্লির জওয়াহরলাল নেহ্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ভ্যালেরিয়ান রড্রিগেজের বলেন, ‹এখন এমন একটি প্রক্রিয়া চলছে, যেখানে এমন একজনকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে, যে সংসদের নেতা না হয়ে বরং সংসদের ঊর্ধ্বে, (বলা হয়ে থাকে) তিনি আইনের কাছে দায়বদ্ধ নন। এটা বিপজ্জনক। এটা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে থাকা বড় যুক্তিটির বিরুদ্ধে চলে যায়।’