ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ফিলিস্তিনি হতাহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে অঞ্চলটিতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম

মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চলমান গাজা যুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ফিলিস্তিনি হতাহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে অঞ্চলটিতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ সিরিয়াতে সোমবার ইসরাইলের একটি হামলায় ইরানের একজন শীর্ষ জেনারেল নিহতের ঘটনা এ আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য হিল এ খবর জানিয়েছে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাইরের একটি এলাকায় সোমবার ইসরাইলি বিমান হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)-এর শীর্ষ কমান্ডার সরদার সায়েদ রাজি মৌসাভি নিহত হন। সিরিয়া ও ইরানের সামরিক জোট সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ইসরাইলের হাতে ইরানি সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার এ ঘটনাকে বিশাল ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইরান। এর প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকারও করেছে দেশটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান, ‘একটি কঠিন ক্ষণগণনার জন্য অপেক্ষা করছে তেল আবিব।’ ইসরাইল এমন সময় এই হামলা করলো যখন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আর এমন পরিস্থিতিতে যেকোনও সম্ভাব্য কারণে এ যুদ্ধ বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এটি যাতে ইসরাইল ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দামেস্কে ইসরাইলের সোমবারের ওই হামলা মার্কিন এ প্রচেষ্টায় গুড়েবালি দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের আঞ্চলিক সংঘাত প্রতিরোধের চেষ্টা করতে গিয়ে এই সংঘাতের গভীর খাদে খোদ যুক্তরাষ্ট্রই আটকে যাচ্ছে। ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর নিরলস আক্রমণের শিকার হচ্ছে ওয়াশিংটন। মিলিশিয়ারা গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ংকর হামলাটি চালিয়েছে বড়দিনে। ওই দিনের ড্রোন হামলায় এক মার্কিন সেনাসহ আরও দুইজন আহত হন। আহত ওই সেনার অবস্থা গুরুতর ছিল। তবে মধ্যপ্রাচ্যে শিগগিরই হুটহাট বৃহত্তর কোনও যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। তবে নববর্ষ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই অঞ্চলে এসব সংঘাত কমে যাবে এমন কোনও লক্ষণ নেই—এসব হামলার ঘটনা অন্তত এটিই নিশ্চিত করছে। স্টিমসন সেন্টারের এক বিশিষ্ট গবেষক এবং থিংক ট্যাংকের প্রকাশিত মিডল ইস্ট ভয়েসেস ব্লগের সম্পাদক বারবারা সøাভিন বলেন, ‘সবাই দাবা খেলছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পক্ষ আছে।’ শিগগিরই যেকোনও সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এ সংঘাতের হিসাব-নিকাশে নাটকীয় কোনও পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন না সøাভিন। তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধে ইসরাইল, গাজা এবং পশ্চিম তীরেই প্রকৃত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আর অন্যান্য হামলাগুলো প্রতীকী, যদিও সেগুলো ভয়ংকর। বর্তমানে চলমান সংঘাতের কিছু অংশের চেয়েও অনেক বেশি প্রতীকী সেগুলো। এটি সর্বদাই পরিবর্তনশীল, সর্বদাই এটি বাড়তে পারে। তবে এই বিকাশ একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ৭ অক্টোবরে হামাসের ওই হামলার পর তার বাহিনী একটি ‘বহুমুখী’ যুদ্ধ করছে। ওই হামলায় দক্ষিণ ইসরাইলে এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। ইসরাইলের দাবি, গাজায় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে লিপ্ত সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে ইরান অর্থায়ন করছে। মঙ্গলবার গ্যালান্ট বলেছিলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন যে কেউই লক্ষ্যবস্তু, কেউই আক্রমণের বাইরে নয়।’ মৌসাভি ইরানের কুদস ফোর্সের নিহত প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানির ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০২০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত হয়েছিলেন তিনি। প্রায় চার বছর আগে সোলাইমানির মৃত্যুর মতো চলতি সপ্তাহে মৌসাভি হত্যার ঘটনাতেও ইরান এবং তার মিত্রদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, মৌসাভির মৃত্যু নিয়ে সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, তেহরান অবশ্যই এই হামলার প্রতিশোধ নেবে। রাইসির দাবি, ‘তার শাহাদাত এই অঞ্চলে দখলদার ইহুদিবাদী শাসকদের হতাশা ও দুর্বলতার আরেকটি লক্ষণ।’ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও জানিয়েছে, মৌসাভির ওপর ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হিজবুল্লাহও। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ইরান যদি ইসরাইলি হামলার জবাব দেয় তবে হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য প্রক্সি গ্রুপের সঙ্গে সংঘাতে জড়াবে ইসরাইল। দ্য হিল।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ