ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ | ৯ কার্তিক ১৪৩১

ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর হলফনামা ভারত সরকারের

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮ এএম

ভারতে অবৈধভাবে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গারা শরণার্থী নয়। তাদের দেশ থেকে তাড়ানো হবে বলে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে সাফ জানাল ভারত সরকার। সিএএ আর এনআরসির বির্তকে দেশটি যখন উত্তাল ঠিক তখনই এমন বক্তব্য দিলো মোদি সরকার। সরকারের এমন বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। দেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের মুক্তি চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করেছিলেন প্রিয়ালি সুর। এরপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র বলেছে, যারা অবৈধভাবে দেশে ঢুকেছে তাদের বিরুদ্ধে বিদেশি অনুপ্রবেশ দমন সংক্রান্ত আইনে মামলা হবে। এই মামলায় সুপ্রিমকোর্টে দেওয়া মোদি সরকারের হলফনামায় বলেছে, ‘রোহিঙ্গাদের এদেশে বসবাসের কোনও মৌলিক অধিকার নেই। তাই তাদের ভারতে স্থায়ী বসবাসের অধিকার দেওয়ারও কোনও প্রশ্ন নেই।’ কেন্দ্র সরকার সাফ জানিয়েছে, জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী পুনর্বাসন নীতিকে মানে না ভারত। কেননা, এই নীতিতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। তাই তাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিতে পৃথক কোনও শ্রেণি গঠনের জন্য আইনবিভাগ কিংবা নীতি নির্ধারক কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া উচিত হবে না। ভারতীয় সংবিধানের ২১ ধারা অনুযায়ী একজন বিদেশি নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার থাকলেও এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস অধিকার শুধু ভারতীয় নাগরিকদের জন্য। এই হলফনামায় দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মোদি সরকার। এতে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব অবৈধ রোহিঙ্গাদের অনেকেই এদেশে ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ফেলেছে। মানবপাচার গোটা দেশ জুড়ে চলছে। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভারতীয় ভূখ-ে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং তাদের বসবাস করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। শুধু তাই নয়, দেশের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও তা বিপজ্জনক। বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে তা দেশের সুরক্ষার জন্যে ক্রমশ বিপদ ডেকে আনবে। এই মামলায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তিব্বত ও শ্রীলঙ্কা থেকে আসা শরণার্থীর মতো ব্যবহারের আর্জি খারিজ করে কেন্দ্র বলেছে, ‘কাদের শরণার্থী হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হবে তা সম্পূর্ণ ও নির্ভেজাল নীতিগত সিদ্ধান্ত। আইনসভার বাইরে শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিভাজনের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি বিচারবিভাগের নির্দেশের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। সাংবিধানিক সমতার অধিকার বিদেশি কিংবা বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।’ বর্তমানে ভারতে ইউএনএইচসিআরের স্বীকৃত ১৬ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমান, এ সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। তারা পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের মোট ১২টি রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। ২০২১ সালে ভারতের রাজ্যসভায় সাংসদ অনিল দেশাইয়ের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীর, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, আসাম, কর্ণাটক, কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গারা রয়েছেন। তারা বেআইনি ও অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন। কতজন রোহিঙ্গা ওই সব রাজ্যে বসবাস করছেন, তার সঠিক কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। ২০১৭ সালে এমনই একটি আবেদনের ভিত্তিতে মোদি সরকার সুপ্রিম কোর্টকে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, ভারতে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছেন এবং তাদের কারণে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জাতীয় স্বার্থে এসব শরণার্থীদের নিজ দেশে, অর্থাৎ মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে চায় ভারত সরকার। ওই হলফনামায় আরও বলা হয়েছিল, ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোর যোগসাজশ রয়েছে, যেটি দেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি। ১৭ পৃষ্ঠার ওই হলফনামায় রোহিঙ্গা-জঙ্গি সংযোগের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছিল। এতে আরও বলা হয়, ‘বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভারতীয় নাগরিকদের ওপর মৌলবাদী রোহিঙ্গাদের হামলার আশঙ্কা রয়েছে।’ এনডিটিভি, টিওআই।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সবাই চায় রোডম্যাপ

সবাই চায় রোডম্যাপ

১৬ বছর ধৈর্য্য ধরে এখন ১৬ সপ্তাহেই ধৈর্য্যহারা : আসিফ নজরুল

১৬ বছর ধৈর্য্য ধরে এখন ১৬ সপ্তাহেই ধৈর্য্যহারা : আসিফ নজরুল

সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে সরকারের ৬ নির্দেশনা

সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে সরকারের ৬ নির্দেশনা

তুরস্কের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিতে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা

তুরস্কের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিতে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান

গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আটক ৪

গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আটক ৪

ইলিশ রক্ষা অভিযান: রাজবাড়ীতে ৭ জনের কারাদণ্ড

ইলিশ রক্ষা অভিযান: রাজবাড়ীতে ৭ জনের কারাদণ্ড

নাসিম উসমান মসজিদ নিয়ে ডিসির বিতর্কিত ভূমিকায় এলাকায় ক্ষোভ

নাসিম উসমান মসজিদ নিয়ে ডিসির বিতর্কিত ভূমিকায় এলাকায় ক্ষোভ

বাগেরহাটে সিভিল সার্জনকে প্রত্যাহারের দাবীতে ঝাড়ু মিছিল

বাগেরহাটে সিভিল সার্জনকে প্রত্যাহারের দাবীতে ঝাড়ু মিছিল

উত্তরায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ফ্ল্যাট থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট

উত্তরায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ফ্ল্যাট থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট

যশোরে প্রথম দিনে এইচপিভি টিকা নিলেন ১০৮২৭ জন শিক্ষার্থী

যশোরে প্রথম দিনে এইচপিভি টিকা নিলেন ১০৮২৭ জন শিক্ষার্থী

ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ২০ লাখ টাকা পেলেন দিনাজপুরের মোটর শ্রমিক রানা

ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ২০ লাখ টাকা পেলেন দিনাজপুরের মোটর শ্রমিক রানা

অস্ত্র ও মাদক মামলায় বেনাপোলে ৩ জনের ১৭ বছর কারাদণ্ড

অস্ত্র ও মাদক মামলায় বেনাপোলে ৩ জনের ১৭ বছর কারাদণ্ড

ঘূর্ণিঝড় দানা : ভোলায় ঝড়ো বাতাস, ভারী বর্ষণ, আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ

ঘূর্ণিঝড় দানা : ভোলায় ঝড়ো বাতাস, ভারী বর্ষণ, আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ

টেকনাফের সাবরাংয়ে পুলিশের অভিযানে ৩২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার, ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার

টেকনাফের সাবরাংয়ে পুলিশের অভিযানে ৩২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার, ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার

নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের বিধিভঙ্গ, বাফুফের সতর্কতা

নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের বিধিভঙ্গ, বাফুফের সতর্কতা

যশোরে শাশুড়িকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জামাই গ্রেপ্তার

যশোরে শাশুড়িকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জামাই গ্রেপ্তার

'ঠিক কোথায় আছেন নিপুণ আক্তার মেলেনি সত্যতা'

'ঠিক কোথায় আছেন নিপুণ আক্তার মেলেনি সত্যতা'

ভূমিতে নাগরিক সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে

ভূমিতে নাগরিক সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে

বরিশাল অঞ্চলে ‘জরায়ুমুখ ক্যন্সার’ প্রতিরোধে ৫ লাখ কিশোরীকে ‘এইচপিভি’ টিকাদান কর্মসূচী শুরু

বরিশাল অঞ্চলে ‘জরায়ুমুখ ক্যন্সার’ প্রতিরোধে ৫ লাখ কিশোরীকে ‘এইচপিভি’ টিকাদান কর্মসূচী শুরু