নতুন কৌশলে মার্কিনকে ছাড়িয়ে যেতে চায় চীন
০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম
বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাপকাঠিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ আমেরিকা। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এশিয়ার দেশ চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে চীন। আর এই কৌশলের মূল মন্ত্র হচ্ছে ‘নতুন উৎপাদিকা শক্তির’ বিকাশ। এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। খবরে বলা হয়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং গত বছর দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ হেইলংজিয়াং প্রদেশ সফরে যান। এটি চীনের রাস্টবেল্ট অঞ্চলের একটি এলাকা, যেখানকার কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। চীনের অর্থনীতিতে এখন কী ধরনের সমস্যা জেঁকে বসেছে, এই অঞ্চলটি তার একটি উদাহরণ। চীনের মধ্যে সবচেয়ে কম জন্মহার এই হেইলংজিয়াং অঞ্চলের। এর প্রভাব হিসেবে ওই অঞ্চলের বড় বড় শহরে কমছে বাড়ির দাম। ২০২৩ সালে এই প্রদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয়ের পর দেখা যায়, এই অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি একেবারে হয়নি বললেই চলে; উল্টো গভীর মূল্যহ্রাসের কবলে পড়েছে অঞ্চলটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, তারপরও ভয় পাওয়ার কিছু নেই; কারণ শি জিন পিংয়ের পরিকল্পনা আছে। গত বছর সেই সফরে গিয়ে শি জিন পিং প্রাদেশিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন ‘নতুন উৎপাদিকা শক্তির’ বিকাশ ঘটান। এরপর এই শব্দবন্ধ বেশ কয়েকবার সংবাদপত্র ও সরকারি অনুষ্ঠানে উচ্চারিত হয়েছে। গত মাসে দেশটির রাবার স্ট্যাম্প সংসদে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াং জিয়াংকিং এই শব্দবন্ধকে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি ‘নতুন উৎপাদিকা শক্তি’ শীর্ষক সেøাগানকে- ১৯৭৮ সালে যে নব চীনের সূচনা হয়, সেই সময় যে নীতির ভিত্তিতে তা হয়েছিল, তার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সংস্কার ও বাজার উন্মুক্ত করার সেøাগান চীনের জাতীয় জীবনে এখনও জ্বলজ্বলে। নতুন এই সেøাগানও দীর্ঘদিন থেকে যাবে বলে ধারণা। এই শব্দের অর্থ কী? চীনের সরকারি কর্মকর্তারা অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বহু বছর ধরে চীনের উৎপাদক শক্তি ছিল মূলত শ্রমিক ও পুঁজি সংগ্রহনির্ভর। ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে চীনের শ্রমশক্তি আকার বেড়েছে ১০ কোটি; অর্থাৎ এই সময়ে আরও ১০ কোটি মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এশিয়া প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশনের তথ্যানুসারে, ২০০১ সালের পরবর্তী দুই দশকে; অর্থাৎ ২০ বছরে চীনের পুঁজির পরিমাণ জিডিপির ২৫৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৭-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর এই পুঁজি সংগ্রহ হয়েছে মূলত নতুন নতুন সম্পদ ও অবকাঠামো খাতে। চীনের কর্মশক্তি যেমন কমছে, তেমনি সেদেশে সম্পত্তির চাহিদাও কমছে। আগে যত মানুষ গ্রাম থেকে শহরে যেতেন, এখন তত মানুষ যাচ্ছে না। আবাসন খাত থেকে যে ফাটকাবাজি করে মুনাফা করা যাবে, তার নিশ্চয়তা এখন আর নেই এবং সম্ভাব্য বাড়ি ক্রেতারাও এখন আগেভাগে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী নন। কারণ, তাদের মনে ভয়, বিপর্যস্ত আবাসন কোম্পানিগুলো ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার আগে নিঃস্ব হয়ে যায় কি না। আবাসন খাতের সংকট সৃষ্টি হওয়ার পর ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস যেমন কমেছে, তেমনি জমি বিক্রি করে স্থানীয় সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে। কোভিডজনিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরও চীনের অর্থনীতিতে গতি আসছে না। পুনরুদ্ধার যা হচ্ছে, তা সব খাতে সমানভাবে হচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারের ব্যয় এত বেশি নয় যে, সব কর্মক্ষম মানুষের কাজ সৃষ্টি হতে পারে। এসব কারণে টানা তিন ত্রৈমাসিকে চীনের মূল্যহ্রাস হচ্ছে, যেখানে অন্যান্য দেশ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। চীন এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পর্যায়ে আছে, এসব ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ সাধারণত সেবা খাতমুখী হয়; অর্থাৎ উৎপাদন খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সেবা খাত নির্ভর হয়। কিন্তু চীন সরকারের হৃদয় যেন অন্য কোনও খানে লুকিয়ে আছে। মহামারীর কারণে চীনের উৎপাদিত পণ্য, যেমন সার্জিক্যাল মাস্ক থেকে শুরু করে এক্সারসাইজ বাইকের চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দেশের ভেতরেও লিথোগ্রাফি মেশিন থেকে শুরু করে প্লেনে ব্যবহারের উপযোগী স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদনের চাহিদা নতুন করে বেড়েছে। দেশটির ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপিতে উৎপাদন খাতের হিস্যা ধরে রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে; ২০০৬ সালে যা ছিল জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ, ২০২০ সালে যা এক-চতুর্থাংশের কিছুটা ওপরে। দ্য ইকোনমিস্ট।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানিকতা শুরু
ঐতিহ্যবাহী ওষুধ পরীক্ষায় তৃতীয় স্থানে ইরান
একই গাড়িতে শপথ অনুষ্ঠানে পৌঁছলেন ট্রাম্প ও বাইডেন
সৌদি আরবে ব্যাপক ধরপাকড়, ২১ হাজার অভিবাসী গ্রেপ্তার
শেরপুরে ৪ মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবু কারাগারে
শপথের আগে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন পুতিন
গোরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
আবু সাঈদ হত্যা বেরোবির ৫৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, ১৫ জনের বিরুদ্ধে হবে মামলা
বিরলে জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের চুড়ান্ত খেলা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরগঞ্জে তারুণ্যের উৎসব ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
ট্রাম্প ভাঙলেও রীতি রক্ষা করলেন বাইডেন
লক্ষ্মীপুরে কৃষি জমির মাটি কাটায় লাখ টাকা জরিমানা
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প, স্বাগত জানালেন বাইডেন
চকরিয়ায় বসতবাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট, ব্যবসায়ীকে গুলির ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
৬ সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বেড়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
কুমিল্লা নগরীতে দুই প্রতিষ্ঠানকে অর্ধলক্ষ টাকা জরিমানা ভ্রাম্যমান আদালতের
রাষ্ট্র সংস্কারের আগে কোন নির্বাচন নয়: ইসলামী আন্দোলন
ইরান-আফগানিস্তান বাণিজ্য বেড়েছে ৮৪ শতাংশ
‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের যাত্রা সুসংহত করবে বিচার বিভাগ’
ঈশ্বরগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার