ঢাকা   শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১১ কার্তিক ১৪৩১

মার্কিন-ইসরাইল সম্পর্ক কঠিন পরীক্ষার মুখে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম

 ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্ষমতার পালাবদল চলতে থাকলেও ডেমোক্র্যাটস ও রিপাবলিকানদের সবসময় একটি ইস্যুতে এক থাকতে দেখা গেছে। সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সম্পর্কের পবিত্রতা। দুই দলের নেতারা সবসময় এই মনোভাব দেখিয়ে এসেছেন যে, ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র নেই এবং ইসরাইলের নিরাপত্তার বিষয়টি সবসময় আলোচনার ঊর্ধ্বে।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের হিসাব বলছে, ১৯৪৮ সাল থেকে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে, যার বেশিরভাগই সামরিক সহায়তা। এই সংখ্যা মার্কিন সহায়তা পাওয়া দেশের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিশরের প্রায় দ্বিগুন। যদিও মিশরের জনসংখ্যা ১১১ মিলিয়ন, আর ইসরাইলের সাড়ে ৯ মিলিয়ন। ‘এটা একটা অবিশ্বাস্য সম্পর্ক,’ বলেন চাক ফ্রাইলিশ। তিনি ইসরাইলের একজন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। বর্তমানে তিনি কলম্বিয়া, নিউইয়র্ক ও তেল আভিভের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন।

ফ্রাইলিশ বলেন, ‘একই মূল্যবোধ’, কৌশলগত স্বার্থ এবং একটি শক্তিশালী লবি যা ইসরাইলকে ওয়াশিংটনের ভালো অনুগ্রহে রাখে, এই সম্পর্কের ‘স্তম্ভ’। ওয়াশিংটনের সবচেয়ে কার্যকর লবি গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি ‘আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি’ বা আইপ্যাক। যুক্তরাষ্ট্রে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন আইপ্যাক সবসময় দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে লবি করে থাকে।

ইউরোপে ইহুদিদের রক্ষায় পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সমালোচনার শিকার হয়েছিল। তাই ১৯৪৮ সাল ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র দ্রুতই তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। ফ্রাইলিশ বলেন, ‘একসময় ইসরাইলকে শুধু একটি দায় হিসেবে বিবেচনা করা হতো’ কারণ স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইসরাইলের সোভিয়েত-ঘেঁষা আরব প্রতিবেশীদের সাথে আঞ্চলিক বিরোধ পারমাণবিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি তৈরি করেছিল। ‘নব্বইয়ের দশক থেকে পেন্টাগন একে একটি কৌশলগত সম্পদ হিসাবে দেখছে,’ বলে মনে করেন তিনি।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরান ও তার প্রক্সিদের মতো কম শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি উপায় হয়ে উঠেছে। এই দায়িত্ব ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল ইতিহাসে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সহযোগিতার’ সূত্রপাত করেছে বলে মনে করেন ফ্রাইলিশ। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে অস্ত্র পাঠিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে শুরুর দিকে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। ‘ইসরাইলের দিক থেকে বিবেচনা করলে বাইডেন দারুণভাবে এগিয়ে এসেছে বলে আমার মনে হয়,’ বলেন ফ্রাইলিশ।

ইসরাইলকে রক্ষায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে মতবিরোধকে একপাশে সরিয়ে রেখেছেন। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। ফলে বিশ্বজুড়ে এর নিন্দা জানানো হচ্ছে। পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও ইসরাইল বিশেষজ্ঞ ইয়ান লাস্টিক মনে করছেন, ইসরাইলকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্র খুব ধীরে এগোচ্ছে। ফলে নির্বাচনি বছরে বাইডেনের উপর এর প্রভাব পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে ডিডাব্লিউকে বলেন তিনি।

ইসরাইল সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে জনমতের বিকাশ শেষ পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্কের গতিপথ সংশোধন করতে বাধ্য করতে পারে। বিভিন্ন জরিপে বয়স্ক ও তরুণ ভোটারদের জনমতে পার্থক্য দেখা গেছে। বয়স্ক বলতে তারা, যারা ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তি দেখেছেন। এই চুক্তির পর অনেকেই দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর তরুণ বলতে তারা, যারা ইসরাইল বলতে সেই দেশকে চেনেন যারা শুধু ফিলিস্তিনের সঙ্গে রাজনৈতিক মীমাংসা এড়াতে তাদের সামরিক সুবিধাকে ব্যবহার করে।

এই তরুণদের মধ্যে আমেরিকার ইহুদিরাও আছেন যারা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারপন্থি হিসেবে দেখেন। সে কারণে তারা সেই ইসরাইল থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে করেন যে ইসরাইল অন্য পথে যাচ্ছে বলে তারা মনে করেন। লাস্টিক বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে, তরুণ প্রজন্ম যে মূল্যবোধগুলি গ্রহণ করবে তা যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন আরও শক্তিশালী হবে। তখন মার্কিন রাজনীতিবিদেরা মনে করবেন, ‘এক মিনিট অপেক্ষা করুন, যদিও ২৫ বছর আগে এটি কাজ করত, আমরা আসলে আইপ্যাকের কথা শোনার চেষ্টা করলে এখন আরও বেশি সমস্যায় পড়বো’।” সূত্র : ডয়চে ভেলে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গফরগাঁওয়ে পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে সংঘর্ষ

গফরগাঁওয়ে পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে সংঘর্ষ

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের উন্নতি

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের উন্নতি

পটিয়ায় পৌরসভার অপরিকল্পিত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ বন্ধের দাবি

পটিয়ায় পৌরসভার অপরিকল্পিত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ বন্ধের দাবি

বাঘারচর বিজিবি ক্যাম্পে ১৭৫ বস্তা ধনিয়া জব্দ মালিকের প্রশ্ন আরো ২০ বস্তা গেলো কোথায়?

বাঘারচর বিজিবি ক্যাম্পে ১৭৫ বস্তা ধনিয়া জব্দ মালিকের প্রশ্ন আরো ২০ বস্তা গেলো কোথায়?

ফেসবুকে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করলেন সাদিয়া আয়মান

ফেসবুকে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করলেন সাদিয়া আয়মান

স্বল্পমূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ‘কৃষকের বাজার’ উদ্বোধন

স্বল্পমূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ‘কৃষকের বাজার’ উদ্বোধন

মানিকগঞ্জে এলাকাবাসীর অর্থায়নে রাস্তা মেরামত

মানিকগঞ্জে এলাকাবাসীর অর্থায়নে রাস্তা মেরামত

হতাহতদের সাহায্যার্থে একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে

হতাহতদের সাহায্যার্থে একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে

ভবদহের পানিবন্দি মানুষকে বাঁচাতে লংমার্চ কাল

ভবদহের পানিবন্দি মানুষকে বাঁচাতে লংমার্চ কাল

বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?

বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?

শ্বশুরবাড়িতে জামাইকে হত্যার অভিযোগ

শ্বশুরবাড়িতে জামাইকে হত্যার অভিযোগ

সরকার সঠিক পথেই এগুচ্ছে

সরকার সঠিক পথেই এগুচ্ছে

বন্যা-নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ ত্রাণ মাত্র ১০ কেজি চাল

বন্যা-নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ ত্রাণ মাত্র ১০ কেজি চাল

ছোট ফেনী নদীর দু’পাড়ে ভাঙন বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ

ছোট ফেনী নদীর দু’পাড়ে ভাঙন বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ

কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু ৪ বছরেও শেষ হয়নি

কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু ৪ বছরেও শেষ হয়নি

এআইর সাহায্যে প্রতিহত হল বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি

এআইর সাহায্যে প্রতিহত হল বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি

হিজবুল্লাহর হামলায় ৫ ইসরাইলি সেনা নিহত, আহত ১৯

হিজবুল্লাহর হামলায় ৫ ইসরাইলি সেনা নিহত, আহত ১৯

৮৫ মুসলিম হত্যার ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন থাই প্রধানমন্ত্রী

৮৫ মুসলিম হত্যার ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন থাই প্রধানমন্ত্রী

পাকিস্তানে ১০ পুলিশকে গুলি করে হত্যা করল জঙ্গিরা

পাকিস্তানে ১০ পুলিশকে গুলি করে হত্যা করল জঙ্গিরা

সাগরতল দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে যাবে সৌরবিদ্যুৎ

সাগরতল দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে যাবে সৌরবিদ্যুৎ