যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে বিক্ষোভ, ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায়

ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী, বদলাতে হবে ইসরাইলনীতি

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম

গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি হামলায় ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহতের প্রতিবাদে এবং ইসরাইলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিক্ষোভ থেকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাতিল করা হয়েছে গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান। আবার কোথাও প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ভবনগুলো দখল করে রেখেছে। দ্য সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কে শত শত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে শিবির তৈরি করে অবস্থান নিয়েছে। এসব শিবিরে ‘বর্ণবাদীদের জন্য কোনো বিনিয়োগ নয়’ লেখা ব্যানারও টানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন শিক্ষার্থী গ্যাবি আওসে বলেন, ‘ফিলিস্তিনপন্থি যুব সমাবেশে লোকজনের উপস্থিতি দেখতে খুব ভালো লাগছে। তরুণ-তরুণীরারা কিছু করে দেখাচ্ছে যাতে ইসরাইলি আধিপত্যবাদী শক্তির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ককে দায়বদ্ধতার আওতায় আনা যায়।’ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এসব বিক্ষোভ দমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃস্থানীয় লোকজনের সব উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। আবার পুলিশও বিক্ষোভ দমনে বেশ সহিংস আচরণ করছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ছাত্রছাত্রীসহ শিক্ষকদেরও গায়ের জোরে গ্রেপ্তার করছে। শনিবার সকালে বোস্টনে দাঙ্গা পুলিশ নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে একটি শিবির উঠিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা অবজ্ঞাসূচক ‘বু’ শব্দ করার পাশাপাশি জোরে চিৎকার করতে থাকে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে সশস্ত্র পুলিশ। এদিকে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব বিক্ষোভকে ‘ইহুদি-বিদ্বেষ’ হিসেবে চিহ্নিত করে নিন্দা জানিয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা এই অভিযোগ বাতিল করে দিয়ে বলেছে, এসব বিক্ষোভে অনেক ইহুদি কর্মী-সমর্থকও যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে, গত সাত মাস ধরে চলতে থাকা গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বার্লিনে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে শিবির স্থাপন করেছে যুদ্ধবিরোধী কর্মীরা। তারা ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে জার্মান সরকারের প্রতি। প্যারিসের নামকরা সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটিতে মূল ভবনের বাইরে বিক্ষোভের কারণে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ক্লাস নিতে বাধ্য হয়। সুইডেনেও শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ। বিক্ষোভে জনতা ‘ফিলিস্তিন মুক্ত কর’ এবং ‘ইসরাইলকে বয়কট কর’ সেøাগান দেয়। এ ছাড়া শনিবার বিকেলে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে শত শত লোক জড়ো হন। এর আগে এরকম বিক্ষোভ দেখেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। বাইরের একটি ইস্যু নিয়ে উত্তাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ধর্ম-বর্ণ সব ভুলে শিক্ষার্থীরা এক কাতারে। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি একটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলনীতি বদলাতে হবে। যত দ্রুত এটির উদ্যোগ নেয়া হবে তত ভালো। না হলে বিক্ষোভ আর বাড়বে। এদিকে সুত্র বলছে, বিক্ষোভের কারণে বদলে যেতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইল নীতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজিরবিহীন এই ছাত্র বিক্ষোভ দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলনীতি বদলে দিতে পারে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রই ইহুদিবাদী দেশটির বড় পৃষ্ঠপোষক, অস্ত্রদাতা এবং আর্থিক সহায়তাকারী। তবে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনে তাতে পরিবর্তন আসতে পারে। ছাত্র বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এর পর থেকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। আন্দোলন চলছে ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ যেন ইসরাইলকে সরবরাহ করা অস্ত্রের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ না করে এবং তাদের কাছ থেকে তহবিল না নেয়। গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার পরও বিক্ষোভ থামছে না। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চোখ, ত্বকে জ্বালা ধরানো রাসায়নিক পদার্থ ও টেইজার ব্যবহার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, প্রতিবাদের মাধ্যমে তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সর্বপ্রথম বড় ধরনের বিক্ষোভ হয় কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। বিক্ষোভ দমনে গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোচে শফিক বিক্ষোভকারীদের দমনে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে আনেন। তারা শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করলে আন্দোলন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে। এবার ইউনিভার্সিটির সিনেট তাঁকে তিরস্কার করেছে। শুক্রবার দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর প্রতিষ্ঠানটির সিনেট একটি রেজুলেশন অনুমোদন করেছে। এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট শফিক একাডেমিক স্বাধীনতাকেক্ষুণ্ন, পুলিশকে ডেকে এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বন্ধ করে ছাত্র ও অনুষদের সদস্যদের গোপনীয়তা এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকারকে অবজ্ঞা করেছেন। আল-জাজিরা।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি : বাংলাদেশ ব্যাংক

নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি : বাংলাদেশ ব্যাংক

উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট- সালমান এফ রহমানকে লু

উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট- সালমান এফ রহমানকে লু

আনন্দঘন পরিবেশে ক্রিকেট আইকন মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে উপায় এজেন্টদের সাক্ষাৎ

আনন্দঘন পরিবেশে ক্রিকেট আইকন মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে উপায় এজেন্টদের সাক্ষাৎ

সরকার জলবায়ু ঝুঁকি হতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে : পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী

সরকার জলবায়ু ঝুঁকি হতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে : পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী

উইলসন ডিজিজের’ জিন থেরাপি দিচ্ছে বিএসএমএমইউ

উইলসন ডিজিজের’ জিন থেরাপি দিচ্ছে বিএসএমএমইউ

কাদের-চুন্নু জাতীয় পার্টিকে বিক্রি করে দিয়ে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা করেছে : কাজী মামুন

কাদের-চুন্নু জাতীয় পার্টিকে বিক্রি করে দিয়ে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা করেছে : কাজী মামুন

কোলকাতায় এখন মণিপাল হসপিটাল

কোলকাতায় এখন মণিপাল হসপিটাল

ইসলামি দলগুলোর প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন

ইসলামি দলগুলোর প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন

ইউক্রেনের ১৬ হাজারেরও বেশি সাঁজোয়া যান ধ্বংস

ইউক্রেনের ১৬ হাজারেরও বেশি সাঁজোয়া যান ধ্বংস

সিঙ্গাপুরে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের বিনিয়োগ রোডশো

সিঙ্গাপুরে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের বিনিয়োগ রোডশো

এসবিএসি ব্যাংকের ১১তম বর্ষপূর্তিতে স্মার্ট ব্যাংকিং সার্ভিস উদ্বোধন

এসবিএসি ব্যাংকের ১১তম বর্ষপূর্তিতে স্মার্ট ব্যাংকিং সার্ভিস উদ্বোধন

কুষ্টিয়ায় কুলখানির আয়োজন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একজন নিহত

কুষ্টিয়ায় কুলখানির আয়োজন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একজন নিহত

রংপুরে কলেজ ছাত্র হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

রংপুরে কলেজ ছাত্র হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

চাকরিতে বয়স বাড়ানো হোক

চাকরিতে বয়স বাড়ানো হোক

তিস্তা বহুমুখী ব্যারাজ নির্মাণ নিয়ে ভারত-চীনের স্নায়ুযুদ্ধ

তিস্তা বহুমুখী ব্যারাজ নির্মাণ নিয়ে ভারত-চীনের স্নায়ুযুদ্ধ

বাসযোগ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অন্তরায়

বাসযোগ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অন্তরায়

বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে হিজবুল্লাহ

নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে হিজবুল্লাহ

আইসিজেতে গণহত্যা মামলার পক্ষে অবস্থান নিল মালদ্বীপ

আইসিজেতে গণহত্যা মামলার পক্ষে অবস্থান নিল মালদ্বীপ

ইউক্রেন যুদ্ধে গোপনে ভূমিকা রাখছে ব্রিটিশ কমান্ডো দল

ইউক্রেন যুদ্ধে গোপনে ভূমিকা রাখছে ব্রিটিশ কমান্ডো দল