ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহিতার আত্ত্বতায় আসতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের আহবান জানিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গত শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার বানজুলে মুসলিম বিশ্বের সংস্থা ওআইসি’র ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ফিলিস্তিনের নিরপরাধ জনগণের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বানজুলের স্যার দাওদা কাইরাবা জাওয়ারা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের পক্ষে এ বক্তৃতায় তিনি ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলের আগ্রাসনের অবিলম্বে অবসান, দুর্দশাগ্রস্তের জন্য নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ওআইসি নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।

৪-৫ মে গাম্বিয়ার বানজুলে ওআইসির ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন। পররাষ্ট্র সচিব রাষ্টদূত মাসুদ বিন মোমেন, সৌদি আরবে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও ওআইসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ায়ী, নাইজেরিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাসুদুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ) ওয়াহিদা আহমেদ ও পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া নিজ বক্তব্যে ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা ও শাস্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে গাজায় চলমান সংকট সমাধান সম্ভব বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বব্যপী ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়ার বিস্তারে উৎকন্ঠা প্রকাশ করে এই ফোবিয়ার ক্রমবিস্তার রোধে ওআইসিকে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে ইসলামোফোবিয়া দূরীকরণের জন্য একযোগে কাজ করার আহবান জানান। এ সময় হাছান মাহমুদ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা দায়ের করার জন্য গাম্বিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সেই সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে মামলা পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে অনুরোধ জানান। এবারের ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে গাম্বিয়া সৌদি আরবের নিকট হতে সভাপতিত্ব গ্রহণ করে। উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতায় ওআইসির মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম তাহা মিয়ানমার হতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

এ দিকে ওআইসির ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের সাইডলাইনে গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে হাছান মাহমুদ এবং মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি উতামা হাজি মোহামদ বিন হাজি’র দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এ সময় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক আরো জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। এছাড়াও বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অধিকতর সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে এ দিন ব্রুনাই দারুস-সালামের সেকেন্ড মিনিস্টার ফর ফরেন এফেয়ার্স দাতো সেরি সেইতা হাজি এরউইন বিন পেহিনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এ সাক্ষাৎকালে হাছান মাহমুদ বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রুনাই দারুস-সালামের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক আরো জোরদারকরণের জন্য আহবান জানান। বৈঠকে বাংলাদেশ হতে ব্রুনাই দারুস-সালামে গবাদিপশু রপ্তানি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সংকটসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়াও আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেইহুন বাইরামভ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হাছান মাহমুদ। এ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন দুই দেশের নেতারা। আজারবাইজান হতে জ্বালানি আমদানির সম্ভাবনা নিয়েও উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করেন।

এ দিকে গত শনিবার বানজুলে ১৫তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের সাইভলাইনে ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ হাসান শুকরির সঙ্গে আলোচনা করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে প্রস্তাবনা দিলে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাথমিকভাবে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল ভিসা অব্যাহতি নিয়ে একটি সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হন।

পাশাপাশি উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সংকটসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন। নিয়মিত ফরেন অফিস কনসালটেশন আয়োজনের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে একমত হন তারা। মিশরে বাংলাদেশ মিশনের চ্যান্সারি ভবন নির্মাণে মিশর সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে বলে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দেন।